Friday, January 15, 2021

রিশপ ট্রিপ - Trip to Rishop

 বাইকে করে রিশপ ট্রিপ। নতুন নয়। এর আগে অনেকে করেছে। কিন্তু হিমালয়ে দু'চাকা নিয়ে যাওয়া আমার প্রথম। এর আগে টুকটাক বীরভূম, পুরুলিয়া হয়েছে। সে যাই হোক। ডিসেম্বরের শেষে হাড়কাঁপুনি ঠান্ডায় গিয়ে উপস্থিত হলাম রিশপ। গেছিলাম বছরের শেষদিন। এনজেপি থেকে শিলিগুড়ি আর তারপর শিলিগুড়ি থেকে fz250 বুক করে সোজা কালিম্পং।

রাস্তায় দেখেছিলাম পাইন ভিউ নার্সারি। বলব কি মশাই! রাস্তার হাল যা, তাতে বাইক নিয়ে যে শেষ পর্যন্ত পৌঁছতে পেরেছি এই ঢের। নার্সারি যাওয়ার রাস্তা বেশ ঘাঁটা। তার উপর গুগলও সঙ্গ দিচ্ছে না। মোবাইলের টাওয়ারই নেই তো নেট কানেকশন। অগত্যা স্থানীয়দের জিজ্ঞাসা করে পাইন ভিউ নার্সারি পৌঁছলাম। ক্যাকটাস আর কাঞ্চনজঙ্ঘার মেলবন্ধনে জায়গাটা মোটের উপর অপূর্ব।

সেখান থেকে রওনা দিলাম রিশপের উদ্দেশ্যে। মাঝে পড়েছিল মর্গান হাউস। তবে বুকিং না থাকায় ঢুকতে পারিনি। বাইরে থেকে দেখেই শান্ত থাকতে হল আমাদের। তারপর সেখান থেকে গেলাম ডেলো হয়ে পৌঁছলাম রিশপ। মাঝ রাস্তায় ডেলোর কাছে গাড়ি দাঁড় করিয়ে মোমো খেলাম। সঙ্গে দু'কাপ ভর্তি কপি। ধড়ে যেন প্রাণ এল। অক্সিজেন নিয়ে যাত্রা শুরু করলাম। কারণ এরপর আর হল্ট দেব না।

সোজা রিশপ। কিন্তু যাব বললেই কি যাওয়া যায়? রাস্তার জন্য রিশপ পৌঁছতে বেজে গেল পাঁচটা-সাড়ে পাঁচটা। যদিও তখন সন্ধে নামার কথা নয়। কিন্তু পাহাড়ে ঝুপ করে কখন অন্ধকার নেমে যায় বোঝাই যায় না। এর ফলে বেশ সমস্যায় পড়তে হয়েছিল আমাদের। কারণ রিশপ যাওয়ার রাস্তা বেশ খাড়াই। তার উপর দুপাশে পাইনের জঙ্গল। অন্ধকার তখন আমাদের এমনভাবে গ্রাস করেছে গাড়ির হেডলাইটে তা দূর হচ্ছে নামমাত্র। বাইকে আমরা মাত্র দুজন। সঙ্গে কেউ নেই। গভীর জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে চলেছি। প্রাণপাখিটা তখন গলার কাছে ঠেলা মারছে। যদি জঙ্গল থেকে কোনও বন্যজন্তু বেরিয়ে আসে বেঘোরে পৈত্রিক প্রাণটা খোয়াতে হবে। কিন্তু তা আর হয়নি। হোমস্টে পর্যন্ত পৌঁছেছিলাম।

তবে এখানে বলে রাখি পাইনের ওই জঙ্গল কিন্তু সকালে অসম্ভব সুন্দর। পরের দিন লাভা, কোলাখাম আর ছাংগে ফলস যাওয়ার পথে দেখেছিলাম। ওই দৃশ্য ভোলবার নয়। পরের দিন চারটে থেকে উঠে প্রতীক্ষা করছিলাম সূর্যোদয়ের। বরফ ঠান্ডা জলে প্রাতঃকৃত্য সেরে হোমস্টের ব্যালকনিতে দাঁড়িয়েছিলাম। আমাদের হোমস্টের পাশ দিয়েই টিফিনদারার রাস্তা। কিন্তু স্লিপিং বুদ্ধের উপর সূর্যের প্রথম কিরণ দেখতে গেলে অন্ধকার থাকতে রওনা দিতে হত। দুজন মিলে অন্ধকারে অজানা রাস্তায় পাড়ি দেওয়ার সাহস হয়নি। অগত্যা ব্যালকনিই ভরসা। জানতাম এখান থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায়। দেখা গেলও।

সূর্যের আলো বরফস্নাত কাঞ্চনজঙ্ঘায় পড়ার দৃশ্য যেন সব মন খারাপ, সব ক্লান্তি ভুলিয়ে দেয়। এমন নৈসর্গিক দৃশ্য দেখতে হাজার কষ্ট করা যায়। তবে ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে পুরো দৃশ্য আমরা দেখিনি। সূর্য একটু উঠতেই টিফিনদারার রাস্তায় রওনা দিয়েছিলাম। সম্পূর্ণটা য়াইনি। কারণ তার আগেই স্লিপিং বুদ্ধ আমাদের দর্শন দিয়েছে। মনে হচ্ছিল যেন উজ্জ্বল লাল-সোনালি চাদর চাপা দিয়ে নিশ্চিন্তে নিদ্রা যাচ্ছেন বুদ্ধদেব। এই দৃশ্য দেখার পর ইচ্ছা করেই আর টিফিনদারা যাইনি। কারণ আমরা বাইকে এসেছি। আলো থাকতে হোমস্টেতে ফিরতে হবে। আগের দিন খুব ভোগান্তি হয়েছে। তাই সেখান থেকে নেমে লাভা হয়ে গেলাম কোলাখাম। সেখান থেকে ছাংগে ফলস।


লাভা থেকে কোলাখাম যাওয়ার রাস্তা নেওড়াভ্যালি ন্যাশনাল পার্কের মধ্যে দিয়ে। রাস্তা অত্যন্ত খারাপ। অন্নপ্রাশন নয়, ঝাঁকুনির চোটে গত জন্মের অন্ন উঠে আসতে পারে। আর যে কোনও মুহূর্তে খাদে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও প্রবল। সেসব ফাঁড়া কাটিয়ে পৌঁছলাম কোলাখাম। পাহাড়ের কোলে ছোট্ট গ্রাম। এখান থেকে ঘুমন্ত বুদ্ধ আরও স্পষ্ট। কোলাখাম হয়ে পৌঁছলাম ছাংগে ফলস। জলপ্রপাতের তেজ কম। কিন্তু মনোরম। জায়গাটাকে ঢেলে সাজিয়েছে প্রকৃতি। অল্প জলের উপর দিয়ে দৃশ্যমান পাথর। তার উপর পা দিয়ে টুকটাক এপাশওপাশ যেতে পারবেন। এখানেই কেটে যাবে অনেকটা সময়। এরপর আমরা আর কোথাও যাইনি। ব্যাক টু হোমস্টে।


তারপরের দিন রওনা দিলাম বাড়ির উদ্দেশ্যে। লাভা-গরুবাথান রুটে শিলিগুড়ি ফেরা। এই রাস্তা প্রথমদিনের চেয়ে অনেকটাই ভাল। কিন্তু এখানে একটা কথা বলে রাখি, রোমাঞ্চ ভালবাসলে অবশ্যই রিশপ বাইকট্রিপ করতে পারেন। এখানকার সৌন্দর্য আর রাস্তা আপনাকে প্রতি পদক্ষেপে অ্যাডভেঞ্চারের স্বাদ দেবে। কিন্তু বাইক যদি আপনি ভাল চালান তবেই সাহস দেখান। নাহলে দুর্ঘটনা বসে আছে আপনাকে খপ করে ধরবে বলে।


বি.দ্র. বাইক কিরায়া (sujit da-9735912211)থেকে আমরা বাইক ভাড়া করেছিলাম। সিকিউরিটি বাবদ 2000 টাকা জমা রাখতে হয় (with any original ID PROOF)। এছাড়া বাইক ভাড়া নিয়েছিল (yamaha fz25 1300/day excluding fuel) টাকা প্রতিদিন। রিশপ যাওয়ার পথে রাস্তা বহু জায়গায় বেশ খাড়াই। কোথাও কোথাও রাস্তা ভাঙা। ফলে বাইক খুব ভাল চালাতে জানলে তবেই যান। আমরা ছিলাম গ্রিন পিক রিসর্টে। খাওয়া মোটের উপর ভালই। উত্তর ও পূর্বের ঘর (একতলা 105 ও দোতলা ROOM NO.206) থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায়। সম্ভব হলে এই 2টি ঘরের একটি বেছে নিন। ভাড়া সিজন হিসেবে ভ্যারি করে। হোটেলের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করে বুক করতে পারেন(manager pallab-8170077624) আমরা হোটেলটা ট্রাভেল এজেন্ট মারফৎ বুক করেছিলাম। দু'টদিনের ৪২০০ টাকা পড়েছিল।


Sourav Ghosh

0 comments:

Post a Comment