Tuesday, January 5, 2021

উত্তর সিকিম - North Sikkim

 সিকিম ভ্রমণের অভিজ্ঞতা অনেকের আছে, তাই একটু ছোট করে আমার জীবনের প্রথম উত্তর/উত্তর-পূর্ব ভারত ভ্রমণের বর্ণনা করলাম।

(বর্তমান সিকিমের তিস্তা অববাহিকা অঞ্চলের বীভৎসতা সত্যি মনকে পীড়া দিচ্ছে। আশা করছি সেই অঞ্চলের বাসিন্দারা সুস্থ এবং ভালো আছেন)
কর্মসূত্রে বাইরে থেকেছি কিছু বছর। তখন থেকেই ঘুরে বেরানোর সূত্রপাত। পশ্চিমঘাট পর্বতমালা আর দাক্ষিনাত্য মালভূমির পর্বতশ্রেণীগুলো ছাড়া শিবালিক হিমালয়ের শুভ্র তুষার ছড়ানো চূড়া আগে কোনোদিন দেখিনি বা সুযোগও হয়ে ওঠেনি। তাই ঠিক করলাম যাই হোক, হনিমুনটা উত্তর বা উত্তর পূর্ব ভারতের কোনো এক শৈল শহরেই করবো।
                                                গ্যাংটকে হোটেলের জানলা দিয়ে বাইরের দৃশ্য

2019 এর এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে শিয়ালদা থেকে রাতের ট্রেন এ পৌঁছে গেলাম নিউ জলপাইগুড়ি জংশন। একজন অনভিজ্ঞ মানুষের পক্ষে জানা সম্ভব নয় কোথায় কিভাবে সবকিছু ঠিকঠাক করবো। তাই সময় নষ্ট না করে একটা এজেন্টের সহায়তায় চলে এলাম তাদের অফিসে। সব কিছু ঠিকঠাক করে শিলিগুড়ি থেকে শেয়ার গাড়িতে চেপে পড়লাম।
                                                                M G Marg এ রাত্রি বেলা

প্রথমবার উত্তরবঙ্গে পা রাখলাম, বেশ আলাদাই অনুভূতি ছিল, যখন শহর, জঙ্গল, তিস্তার পাড় পেরিয়ে পৌঁছে গেলাম পশ্চিমবঙ্গ আর সিকিম এর সীমান্তে। এরপর সন্ধে নামার আগেই পৌছালাম গ্যাংটক। হোটেলটি বুক ছিল আগেই, M G Marg এর কাছেই। সেখানে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে পড়লাম মার্গ দর্শনে। ডিনার সেরে ফিরে এলাম, আর সেই যে বৃষ্টি শুরু হলো, ভাবলাম পরের দিনের ঘোরাটা বুঝি বাতিল হলো।
উত্তরের আবহাওয়ার সাথে আগে পরিচয় হয়নি, সকালে উঠে দেখলাম ঝলমলে রোদ। এখানে এরকমই হয়, সকালে রোদ আর দুপুরের পর থেকে আকাশের মুখ ভার। হোটেলেই ব্রেকফাস্ট সেরে বেরিয়ে পড়লাম। আগের দিন রূপেন হোটেলে এসে ছবি আর আইডি প্রুফ এর জেরক্স নিয়ে গিয়েছিল।
টিবেত রোডের অফিসে পৌঁছে গেলাম 8টার মধ্যে, ট্যুরের কিছু টাকা পে করে শেয়ার গাড়ির সামনের সিটদুটোতে আমি আর ও বসে পড়তে গাড়ি ছেড়ে দিলো। মাঝে দাঁড়ালো পারমিট নেয়ার জন্য। তারপর আবার পথ চলা। একে বেঁকে আমরা ছানগু লেক পেরিয়ে দাঁড়ালাম একটা দোকানে। বরফে নামার জিনিসপত্র ভাড়া পাওয়া যায় সেখানে। বাবা মন্দির যাবার পথে বরফ দেখতে পেয়ে, নামতে চাইলে অনেকে ভাড়া করে আর কি। এসব করতে করতে পৌঁছে গেলাম বাবা মন্দির। ভাষায় সব কিছু প্রকাশ কি করবো, তাই কিছু ফটো আর ভিডিও দিচ্ছি। এবার সেখান থেকে বেরিয়ে চলে এলাম ছানগু তে। সেখানেও কিছু সময় কাটিয়ে আবার ফিরে আসা গ্যাংটকে।

পরদিন আমাদের 2 রাত 3 দিনের উত্তর সিকিম যাত্রা শুরু হবে, তাই একটু মনের মধ্যে জোস নিয়ে রাত্রি টা কাটিয়ে দিলাম হোটেলে। পাহাড়ি রাস্তায় বেশি খেলে কষ্ট হয়, তাই সেদিন সকালে অল্প করে খেয়ে 10টা নাগাদ হোটেলে চেক আউট করে চলে এলাম উত্তর সিকিম যাওয়ার স্ট্যান্ডে। একটু দেরিতে গাড়ি ছাড়ে যাতে লাচেন পৌঁছাতে বিকাল গড়িয়ে সন্ধে হয়ে যায়। প্রথমে একজায়গায় লাঞ্চ করলাম তারপর একে একে কাঞ্চনজঙ্ঘা ভিউ পয়েন্ট, নাগা ফলস, চুংথ্যাং দেখতে দেখতে পৌঁছে গেলাম লাচেন। আর পথের শোভা তো আছেই। রাত্রিবাসটা লাচেনেই করলাম, খেয়ে দেয়ে শুয়ে পড়লাম।
                                                                চানগু লেক, বাবা মন্দির যাবার পথে 
                                                                বাবা মন্দিরের প্রবেশ দ্বার

                                                                বাবা মন্দিরের পাশের সিঁড়ি
বৃষ্টি আর সঙ্গে জাঁকিয়ে ঠান্ডা, কাঁপতে কাঁপতে উঠে পড়লাম। তখন বাজে ভোর 4টে। ফ্রেশ হয়ে চা খেয়ে বেরিয়ে পড়লাম গুরুদনগমার এর উদ্দেশ্যে। পথে ব্রেক ফাস্ট করে ঠিক হলো, কালা পাথর দেখে যাওয়া হবে। সেই মতো আমরা চেক পয়েন্ট পেরোতে পেরোতে পৌঁছলাম বরফের রাজ্যে। আগে ভাই এত বরফ দেখিনি, তাই একটু গড়িয়ে নিলাম বরফে। সময় নষ্ট করলে চলবেনা, তাই গাড়িতে উঠে পড়লাম। সুউচ্চ চেক পোস্ট গাইগাঁও পেরিয়ে পৌঁছে গেলাম গুরুদনগমার। সেখানে পথের কষ্ট আর সৌন্দর্য মিলেমিশে একাকার। 17000 ফুট উঠে এসেছি ভাবা যায়, স্বাস নিতে পারছিনা এমন অবস্থা। এরপর ফিরে চলা, ততক্ষনে শরীরের অবস্থা কাহিল। পৌঁছলাম লাচেন, লঞ্চ সেরে আবার চলতে থাকা।
                                                                ছানগু লেক
চুংথ্যাং পৌঁছতে হয়ে গেল প্রায় বিকাল, গাড়িটাও সেখানে হয়ে গেল বিকল। প্রায় 1 ঘন্টা ওখানে ঘুরে আবার ডাক পড়লো গাড়ি ছাড়ার। একটা রাস্তা চলে যাচ্ছে লাচুং। রাস্তায় অমিতাভ বচ্চন ফলস দেখে সোজা এসে গেলাম লাচুঙ্গের হোটেলে।

এখানেও সেই বৃষ্টি পিছু ছাড়ে না, যেন সন্ধে নামলেই তার দেখা। রাত্রহারটা সেরে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম আমরা। পরের দিনটা আমাদের উত্তর সিকিমের শেষ দিন।
                                                      কাঞ্চনজঙ্ঘা ভিউ পয়েন্ট, তবে মেঘে ঢেকে গেছে।
                                                                    নাগা ফলস
                                                                     লাচেন চু

সকাল সকাল বেরিয়ে চলে এলাম য়ুমথ্যাং ভ্যালি। প্রায় অনেকটা সময় এখানেই কাটিয়ে দিলাম, কারণ আর জিরো পয়েন্ট যাবার মতো শক্তি সঞ্চয় করতে পারিনি। আবার ফিরে চললাম গ্যাংটকের পথে। সন্ধে হয়ে গেল পৌঁছাতে। পরের দিন রাতে হাওড়া যাবার ট্রেন ছিল আমাদের, সেই মতো পর দিন দুপুর দুপুর নিউ জলপাইগুড়ির উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়া।


এই ফিরে চলা তো আবার নতুনের সন্ধানের জন্য। পরবর্তী কালে আরো অনেক নতুন জায়গায় যাবো, তার ফটো ভিডিও নিয়ে চলে আসবো আবার তোমাদের কাছে। সেটুকু সময়ের জন্য বিদায় বন্ধুরা।
ভিডিও তুলেছিলাম সেগুলোকে যতটা পেরেছি সাজিয়ে গুছিয়ে আপনাদের সামনে ধরতে চেষ্টা করেছি। কেমন লাগলো লিখে জানাবেন প্লিস।
Sikkim Full Playlist: https://www.youtube.com/playlist...
North Sikkim: https://youtu.be/-513Xqoo19M
#north_sikkim #lachen #lachung #baba_mandir #changu_lake #know_your_planet



Kanchan Dutta

0 comments:

Post a Comment