আজ একটা অন্যরকম ভ্রমণের গল্প বলবো, অফ বিট স্পট ঘুরতে যারা ভালোবাসেন তাদের জন্য এই যায়গা টা অতীব মনোরম......তো চলুন কথা না বাড়িয়ে শুরু করি....
এখন মানুষের জীবনে সব থেকে দামি হলো 'সময়' , আর ঘুরতে যাওয়ার জন্য প্রথম যেটা দরকার সেটা হলো 'সময়'।। তো হাতে ছিল বড়দিনের ছুটি তার সাথে আর একদিন জুড়ে দুদিনের ছুটি বের করলাম, ছুটি তো বেরোলো.... যাবো কোথায়??
অনেক ভিডিও দেখা হয়ে গেলো অনেক রিসার্চ করে ফেললাম....এই করতে করতে একটা সুন্দর যায়গা পেয় গেলাম....নাম "বিসিন্দা", বাঁকুড়া শহর থেকে ৩২কিমি দূরে অবস্থিত ছোট টিলা আর জঙ্গলে ঘেরা এই বিসিন্দা (গঙ্গাজল ঘাটি থেকে ৮.৯ কিমি, ২০মিনিটের রাস্তা)।।
ভোর ৫টা থেকে বেরোনোর তোড়জোড় চলছে কিন্তু বেরোনো হলো সকাল ৭টা নাগাদ , প্রতি বারের মতো এবারেও সময় মতো বেরোনো হলোনা
, তো যাইহোক গাড়ির চাকা ঘোড়া শুরু হলো মাজখানে একবার চা আর একবার জলখাবার এর জন্য গাড়ি দাড়িয়েছিল, বিসিন্দায় যখন পৌঁছলাম তখন প্রায় দুপুর ১টা বাজে, আশপাশের পরিবেশ দেখে তো আমরা এক কথায় বাকরুদ্ধ হয়ে গেছিলাম, আমরা ছিলাম "মা নাচন চণ্ডী অতিথী নিবাসে"(গঙ্গাজল ঘাটি গ্রাম পঞ্চায়েত এর অন্তর্গত এই লজ) বিশাল বড়ো জায়গা জুড়ে দুটো সুন্দর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন দুটি ঘর (এক একটি ঘরে এক্সট্রা বেড নিয়ে ৬জন আরামে থাকা যাবে, একটি বাথরুম একটি বারান্দা)
সামনেই একটি ঘরে রান্না হয়, সামনে চারিদিকে জঙ্গল ছোট ছোট টিলা আর পেছন দিকে ধানক্ষেত, চোখ জুড়িয়ে গেলো সেই দৃশ্য দেখে।।
পৌঁছানোর সাথে সাথেই দুপুরের খাবার রেডি, (আগের দিন জানিয়ে দিতে হয়েছিল খাবারের কথা)
শাল পাতার থালায় পরিবেশন শুরু হলো, প্রথমেই এলো স্যালাড, ভাত, মুগের ডাল, পোস্ত, বেগুন ভাজা, আলু ফুলকপি ভাজা, বাঁধাকপির তরকারি, কালবোস মাছের ঝাল আর শেষ পাতে চাটনি, পাঁপড় ভাজা।।
খাওয়াদাওয়া সেরে হালকা বিশ্রাম নিয়ে বেরিয়ে পরলাম অচেনা গ্রাম পরিদর্শনে, আমাদের লজেই একজন ভদ্রলোকের সাথে আলাপ হলো ওনার নাম বনমালী মন্ডল, উনি ওখানেরই একটি গ্রামের বাসিন্দা।। ওনার কাছে আবদার করে বসলাম দাদা আপনাদের গ্রামের পাড়ায় একটু ঘুরতে চাই, তো ওনার সাথে সাথে চললাম মাঠ ঘাট পেরিয়ে সুন্দর গ্রাম বাংলার পরিবেশ অনুভব করতে করতে তাঁর পাড়ায়, সে কি বলবো আমরা তো এখানে কংক্রিটের জঙ্গল আর পাহাড় থেকে বেড়িয়ে সেই গ্রামে যেতে মনে হলো যেনো কোনো অন্য জগতে চলে এসেছি, চারপাশে মাটির বাড়ি , সন্ধ্যে সন্ধ্যে হচ্ছে তখন, ঠান্ডা ও বাড়ছে, আর বনমালীদার বাড়ির লোক আমাদের চা না খাইয়ে ছাড়বেন না, সেখানে খাটিয়ায় বসে চা খেয়ে যখন উঠলাম
তখন অন্ধকার নেমে এসেছে আর ঠান্ডা তখন তুঙ্গে, প্রায় ১.৫-২ কিমি মাঠ ঘাট জঙ্গলের অন্ধকার রাস্তা পেরিয়ে যখন লজে ফিরলাম তখন প্রায় সন্ধে ৬:৩০টা বাজে, সেই গ্রাম থেকেই চপ নিয়ে এসেছিলাম আর বনমালী দা তাদের ঘরে ভাজা মুড়ি খেয়ে ঘরের সামনে কাঠ জালিয়ে বসে পরলাম আগুন পোহাতে, প্রচন্ড ঠান্ডা সামনে আগুন জ্বলছে পাশ থেকে শেয়ালের ডাক আর জঙ্গলের অন্ধকার যেনো গিলে খেতে আসছে আমাদের, যদিও ভয়ের কোনো কারণ নেই.... সেই অন্ধকার ভয়ংকর পরিবেশ কে উপভোগ করতে বেরিয়ে পরলাম রাতের জঙ্গল ভ্রমণে
আসলে অ্যাডভেঞ্চার প্রীয় মানুষ তো, এইসব ছাড়া টুর সম্পূর্ণ হয়না
রাস্তার দুপাশে জঙ্গল মাথার ওপর চাঁদ, টর্চ জালার কোনো প্রয়োজন হয়নি।।
আর বেশি বাহাদুরি না দেখিয়ে ফিরে এলাম লজে
, আরো বেশ কিছুক্ষণ গল্পগুজব করতে করতে রাত ১০টা বাজলো আর তার সাথে সাথেই ডাক পড়লো রাতের খাবারের জন্য, ঠান্ডায় কাঁপতে কাঁপতে গেলাম রান্নার ঘরে , টেবিলে রাখা কসা মুরগির মাংস আর গরম গরম রুটি দেখে সব ঠান্ডা নিমেষেই গায়েব
ওখানের প্রধান রাঁধুনি হলেন কাঞ্চন দা , ওনার হাতে সত্যিই জাদু ছিল আপনি যেই পদ টা যেভাবে খেতে চাইবেন সেটা সেই ভাবেই উনি আপনাকে পরিবেশন করবেন।।
বিষ্ণুপুর মেলারাতের খাওয়া সেরে ঘুমিয়ে পরলাম, পরেরদিন সকালে খেজুর রসের আবদার করেছিলাম কাঞ্চন দার কাছে, ব্যাস ঘুম থেকে উঠে ভোর ৬টা নাগাদ একটু হাটতে বেড়িয়েছিলাম এসে দেখি খেজুরের রস এসে হাজির
মন্দির বলতে আমরা যা ভবি সেটা নয় সেটা আপনারা ছবিতে বুঝতে পারবেন, কিন্তু খুব সুন্দর লাগবে এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের বিশ্বাস মন থেকে মা এর কাছে যা চাওয়া হয় মা ভক্তকে তাই দেন।। সেই মন্দিরেই থাকেন এক সাধু বাবা, নাম "সন্ত বাংলা প্রসাদ" উনি নিজে আমাদের মন্দির ঘুরে দেখালেন, মন্দির এর ঠিক পাশ দিয়েই একটি ছোট পাহাড়ি রাস্তা উঠে যাচ্ছে ওপরের দিকে, সেই ভাঙাচোরা পাহাড়ের রাস্তা পেরিয়ে উঠে গেলাম পাহাড়ের ওপর, রাস্তা টা একটু দুর্গম কিন্তু সেখান দিয়ে যা দৃশ্য দেখলাম তার কাছে সেই দুর্গম রাস্তা কিছুই নয়, পাহাড় থেকে নামার পর সাধু বাবা আমাদের নিজে হাতে চা বানিয়ে খাওয়ালেন, উনি কোনরকম টাকা পয়সার ভিক্ষা করেন না, ওনাকে যে যেটুকু দান করেন উনি সেটুকুই গ্রহণ করেন।।
সেখান থেকে আসার পর ব্রেকফাস্ট করে বেরিয়ে পরলাম বিষ্ণুপুরের উদ্দেশ্যে, ফেরার সময় একটি জায়গা গেলাম , কোরো পাহাড়ে অবস্থিত তপোবন আশ্রম, এখান থেকেও চারপাশের দৃশ্য বেশ মনোরম, বিষ্ণুপুরের মেলা দেখে ছিন্নমস্তা মা এর মন্দির দর্শন করে (অনেকবার বিষ্ণুপুর ঘুরেছি,তাই আর বেশিক্ষণ দারাইনি) রওনা দিলাম বাড়ির দিকে....বাড়ি যখন ফিরলাম তখন ঘড়িতে সন্ধ্যে ৮:৪৫।।
সব মিলিয়ে বলা যায় কেউ যদি দুদিনের জন্য ব্যাস্ত জীবনযাপন থেকে ছুটি নিয়ে নিরিবিলিতে সময় কাটাতে চান তাঁর জন্য বিসিন্দা পাহাড় হলো এক কথায় সেরা ঠিকানা।। নিচে কিছু মোবাইলে তোলা ছবি দিলাম, দেখতে পারেন আসা করছি খারাপ লাগবেনা আর কিছু ফোন নম্বর দিলাম, যারা আসতে চান তাঁরা কন্টাক্ট করে নিতে পারেন।।
কৈলাস দা- 6297592660(বুকিং এর জন্য ফোন করতে পারেন)
উজ্জ্বল দা - 8617076472
রাজু দা(গাড়ি) - 9836515439 (যদি হাওড়া সালকিয়া অথবা সালকিয়ার আসে পাশে থাকেন তবেই ফোন করবেন)
Sandipan Karar









0 comments:
Post a Comment