Saturday, January 11, 2020

সুন্দরবন - Sundarban

 গত ডিসেম্বর ঘুরে এলাম সুন্দরবন। আমাদের, যাদের 'বাহিরপানে চোখ মেলেছি ' মানসিকতা, তাদের ছটফটানি যেন আরও বেশি। অবশ্য ভিতরপানেও চেয়েছি। আমরা, যারা অফিসে কর্মরতা, তারা দশভুজা না হোক দ্বিভুজা হয়েই সমান দক্ষতায় অফিস ও বাড়ী সামলেছি। তেমনই একজন দক্ষ ও staminaওয়ালা মেয়ের সাথে পরিচয় হয়েছিল সুমেলী টিনা।ওর সাথে এ বছর জানুয়ারিতে দারি়ংবাড়ী গিয়ে বড় ভালো লেগেছিল। তাই এবার সুন্দরবন ভ্রমণ এর কথা বলতেই এক পায়ে খাড়া !

                                                        বিস্তীর্ণ নদীতে সুন্দরবনের চরদ্বীপ

যাক, অনেক ভুমিকা হল। অথ সুন্দরবন কথা। 19শে ডিসেম্বর শনিবার সকাল 6.30মিনিটে বিরাটির মোড় থেকে লাক্সারি রিজার্ভ বাসে উঠে পড়লাম।

সায়েন্স সিটি ছাড়াতেই সুমেলীর pack d bag কোম্পানির ছোট ব্যাগ কেক বিস্কুট ফ্রুটি সহ দেওয়া হল। এরপর বাস গ্রাম গঞ্জ মাছের ভেড়ি পেরিয়ে ভোজের হাট , মালঞ্চ, বাসন্তী ওভারব্রিজ দিয়ে সোজা গদখালি লঞ্চ ঘাট। এখানে মিষ্টি ডাবের জল welcome drink হিসাবে খেলাম। নোনা জলমাটির জন্য সুন্দরবন এলাকায় প্রচুর নারকোল গাছ আছে। এখানকার সর্বত্র ডাব সস্তা আর অনেকটা মিষ্টি জল। একে একে উঠে পড়লাম আমাদের জন্য নির্দিষ্ট তরিনী লঞ্চে। যদিও লঞ্চের খোলে খাট বিছানা পাতা আমরা অধিকাংশ উপরে বসলাম ভাল করে দেখার জন্য।

আহা, আর কি হেরিলাম! লঞ্চ কিছুটা এগিয়ে যেতেই দেখি নদী আরও চওড়া হচ্ছে। সামনে বিস্তৃত জলরাশি,দু পাশে সুন্দরবনের দু একটা দ্বীপ আর ঘন ম্যানগ্রোভ এর জঙ্গল। সূর্যের রোদ জলে পড়ে রুপোর মত ঝকঝক করছে। এর মধ্যে সকালের খাবার চলে এল। গরম গরম লুচি, আলুর তরকারি, ডিম সেদ্ধ, কলা আর নলেন গুড়ের রসগোল্লা। বাসেও একটা করে ভালো কোয়ালিটির সন্দেশ দেওয়া হয়েছিল। ঠাণ্ডা হাওয়ার জন্য বার বার লিকার চা ও দেওয়া হয়েছে।
                                                                       ঝড়খালির প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ 

লঞ্চ ভিড়ল ঝড়খালির ঘাটে।সেখান থেকে হেটে গেলাম প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে। এখানে আহত দুটি রয়াল বেঙ্গল টাইগারকে পরিচর্যা করে যত্নে রাখা হয়েছে। চারপাশে পরিখায় বেশ কয়েকটা কুমির দেখলাম। তারা আবার কেউ কেউ পাড়ে রোদ পোহাচ্ছে। পুরো এলাকাটা লম্বা লম্বা লোহার রড দিয়ে পাঁচিল দেওয়া। সবাই বোটে (স্থানীয় লোকেরা লঞ্চকে বোট বলে) ফিরে আসতে বেশ বেলা হয়ে গেল। এসেই গরম ভাত ডাল পাঁচমিশালী তরকারি, দই কাতলা, চিংড়ির মালাইকারি,চাটনি,ভালো পাতা দই দিয়ে লাঞ্চ করতে করতে বিকেল হয়ে গেল। এখানে লঞ্চে স্থানীয়রা রান্না করেন তাই সব খাবারই গরম, তাছাড়া এনাদের হাতের রান্না খুব ভালো। বিকেলে সূর্যাস্তের সোনালী আলো যেন নদীর জলে গুলে গেল। অপুর্ব সে দৃশ্য! যদিও মোবাইল ক্যামেরায় সে দৃশ্য ঠিক তোলা গেল না। আস্তে আস্তে চরাচরে অন্ধকার নামল। দুরে পাখিরালয় দ্বীপের আলো দেখা গেল। প্রচন্ড ঠান্ডা, তার উপর জলীয় ঠান্ডা হাওয়া বইছে। পাখিরালয় দ্বীপ এসে গেল। আমাদের নামতে হবে। আজ রাতে আমরা এখানে 'আপনজন' রিসর্টে থাকব।

Shikha Sengupta

0 comments:

Post a Comment