Saturday, March 7, 2020

জয়রামবাটি কামারপুকুর Joyrambati Kamarpukur

 এসেছি জয়রামবাটি, আজ অবশ্য কামারপুকুর মানে শ্রীরামকৃষ্ণের জন্মস্থান তাঁর বেড়ে ওঠার জায়গা দেখেছি, আছি জয়রামবাটিতে, হোটেল অনন্যাতে, কাল সারদামনির জন্মস্থান দেখবো, ফেরার পথে মশাটের কাছে রাবড়িগ্রাম হয়ে বাড়ি ফিরে যাবো।

মাঠ এখন হলুদ,সবুজ রঙের কোলাজ। ধান কাটা সারা হয়েছে,জমিতে আলু, হুগলি জেলার আত্মপরিচয়ের ফসল আলু। যদ্দুর চোখ যায় শুধু হলুদ আর সবুজের সমাহার।


বহুকালের ইচ্ছে আজ বাস্তব রূপ পাচ্ছে বলে ভালো লাগছে। দুটো ট্যুর বাতিল হয়েছে, মার্চ মাস থেকে কোভিড ও আম্ফান পরিস্থিতিতে জনবিজ্ঞান সংগঠনের লাগাতার কাজে এবং অফিসের জন্য ঘরের বাইরেই তো কাটলো কিন্তু বেড়াতে যাওয়ার,ফুসরৎ কোথায় হলো। আজ বেরোলাম এতোদিন পরে, পায়ের তলার সর্ষেগুলোর একটু আরাম হলো।

                                                                 রামকৃষ্ণের বসতবাটি

একরাত দুদিনের ট্যুরে বেড়িয়েছি আজ সকালে, বাড়ি পাতিপুকুর থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে জয়রামবাটি, ৩ ঘন্টা সময় নিয়েছে আসতে। রাস্তায় প্রাতরাশ করে দুপুরের খাওয়া হোটেলে সেরে কামারপুকুর। কোভিডের জন্য এখানে এখন সকাল সাড়ে ৮ টা থেকে ১১ টা আবার বিকেল সাড়ে ৩ টে থেকে সাড়ে ৫ টা খোলা থাকে কামারপুকুর,জয়রামবাটির মন্দির।

                                                                লাহা বাড়ি , গদাধরের পাঠশালা
                                                                        গদাধরের পাঠশালা

গাড়ি থেকে নামতেই মহিলা গাইড সঙ্গী হলো, তিনিই বলতে বলতে আমাদের পথ দেখিয়ে স্থান মাহাত্ম বর্ণনা করতে করতে এগিয়ে চললেন।
                                                                            সাদা বোঁদে
শুরু হলো লাহা পাড়া দিয়ে, এখানেই গদাধরের পিতা ক্ষুদিরাম চট্টোপাধ্যায় আশ্রয় নিয়েছিলেন। তিনি থাকতেন কামারপুকুরের ২ মাইল পশ্চিমে ধদেড়েপুর গ্রামে, জমিদার বললেন মিথ্যে সাক্ষি দিতে হবে নাহলে গ্রাম ছাড়তে হবে, ক্ষুদিরাম গ্রামই ছেড়েছিলেন, তাঁর বাড়ি আর ১৫০ বিঘে জমি নিলাম করে দিয়েছিলেন জমিদার। এই অবস্থায় কামারপুকুরে ক্ষুদিরামকে আশ্রয় দিয়েছিলেন বন্ধু সুখলাল গোস্বামী, জমিদার দুর্গাচরণ লাহার সাথেও হয়েছিল বন্ধুত্ব।
                                                                        কামাপুকুর
                                                                    লাহাদের মন্দির

গাইড দেখালেন লাহাদের বাড়ি, মন্দির, বালক গদাধরের পাঠশালা। গদাধরের পঠন পাঠনে তেমন আগ্রহ ছিল না, আর অঙ্কে তো নয়ই, তার ধ্যান জ্ঞান অপার্থিব জগৎ, ঈশ্বর নিয়ে, ছাড়লেন পাঠশালা তবে হাতের লেখা ছিল চমৎকার, দক্ষিণেশ্বরে তার হস্তাক্ষর রক্ষিত আছে।
গদাধরের যখন তখন বাহ্যজ্ঞান লুপ্তিতে, বিপদ আশঙ্কায় মাতা চন্দ্রমনি দেবী গোপেশ্বর শিবমন্দিরে হত্যে দিয়েছিলেন।
কামারেরা পুকুর খনন করেছিলেন বলে নাম কামারপুকুর, এর একদিকে আকাশচুম্বী অট্টালিকার নির্মাণ চলছে এখন।
দুর্গাদাস পাইনের বসতবাটি

দুর্গাদাস পাইন ছিলেন রক্ষণশীল, বাড়ির অন্দরমহলে মহিলাদের কাছে পুরুষদের প্রবেশ নিষেদ,গদাধর মেয়ে সেজে বাড়ির অন্দরমহলে গিয়ে মহিলামহলের সাথে আলাপ করে ফিরে যাওয়ার সময় দুর্গাদাস পাইনকে বলে যান, "এসেছিলাম মহিলামহলে। " দেখলাম সে বাড়ি।
                                                            দানি কামারনীর বাড়ি, মন্দির

গদাধর অভিনয় করেছিলেন শ্রীনাথ পাইনের বাড়ির নাট্টমঞ্চে, বাহ্যজ্ঞান লোপ পাওয়াতে অনুষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়, দেখলাম সে বাড়ি আর নাট্টমঞ্চ।
দানি কামারণী গদাধরকে পরিচর্য্যা করেছিলেন, গদাধরের পৈতের সময় তাকে বলা হলো," তোমার ভিক্ষে মা কে হবেন? " গদাধর বলেছিলেন, দানি মার কথা, আপত্তি হলো, দাদা রামকুমার বললেন, " আমাদের বাহ্মণপরিবারে অন্য বর্ণের মানুষের থেকে ভিক্ষে মা হবার রীতি নেই, বেঁকে বসেছিলেন গদাধর, শেষে বাবা ক্ষুূদিরাম বলেন, " আমাদের পরিবারে এ রীতি নাও থাকতে পারে অন্য বাহ্মণ পরিবারে এ রীতি আছে, ফলে লোক নিন্দে হবেনা। " রইল গদাধরের কথা, ভিক্ষে মা হলেন দানি কামারণী। তাঁর বাড়ি ও মন্দির দেখলাম।
                                                               গোপেশ্বর শিব মন্দির

দেখলাম গদাধর বন্ধুদের নিয়ে যে পুকুরে স্নান করতেন, সেই হালদার পুকুর।
সবশেষে গদাধর - শ্রীরামকৃষ্ণের বসতবাটি, এটিতে নির্মিত হয়েছি মন্দির, পাশে মাটির বাড়ি, খড়ের চালাঘর এখনও আছে। ফুলের সমারোহ চারদিকে, খুব সুন্দর, মনোরম জায়গা, বেরিয়ে উল্টোদিকে রয়েছে অফিস, বুক স্টল, স্মারক স্টল। কিনলাম দুএকটা বই।
                                                                 শ্রীনাথ পাইনের বাড়ি ও নাট্যমঞ্চ

সবশেষে কিনলাম, কামারপুকুরের বিখ্যাত সাদা বোঁদে। ছানার গজা মোটে ৫ টাকা,পেল্লায় সাইজের ল্যাংচা মোটে ১০ টাকা। একধরণের মেয়া বা লড্ডুও বেশ খেতে, দাম ৫ টাকা।
খুব সুন্দর কাটলো বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে পর্যন্ত। বহুদিনের বাধা সরিয়ে আজ যে আসতে পারলাম, খুব ভালো লাগছিল।
আমরা টেম্পো ট্রাভেলরে এসেছি, ৩০ টাকা প্রতি কিলোমিটার বা ৩০০ টাকা প্রতি ঘন্টা দরে। যেটা বেশি সেটাই দিতে হবে, রাতে থাকার জন্য অতিরিক্ত ২০০ টাকা।এরসাথে ড্রাইভারের থাকার ঘর এবং খাওয়া।
ভালোই ভীড় হয়েছিল, হয়েছিল লম্বা লাইন।
আমরা জয়রামবাটিতে হোটেল অনন্যাতে উঠেছি,নির্জনতায় মোড়া, ১ মাইলের মধ্যে কোনও দেকান নেই, মনে হয় ধান আর আলু ক্ষেতের মধ্যই বসে আছি আমরা।আমরা ১২ জন, ৪ টে ডবল রুম ৬০০ টাকা করে, আর একটা ৪ বেডের বিরাট ঘর, এসি সমেত ১২০০ টাকা, খাবার খরচও কম।
আজ সকালে পাতিপুকুর থেকে ডানলপ হয়ে ডানকুনি,ডানকুনি থেকে বাঁদিকে টি এন মুখার্জী রোড হয়ে অহল্যাবাঈ হোলকার রোডে পড়ে চন্ডীতলা,মশাট, শিয়াখোলা,ইলাহীপুর,দীপা,চাঁপাডাঙা,সাইদপুর,পানপেত,জয়রামপুর আরামবাগ,গোগাট, কালীপুর হয়ে কামারপুকুর হয়ে জয়রামবাটি পৌঁছেছি।
কাল জয়রামবাট, সারদামনির জন্মস্থান দেখে হোটেলে দুপুরের খাওয়া খেয়ে মশাটের অদূরে রাবড়ি গ্রামের রাবড়ি আর মশাটের বিখ্যাত দই খেয়ে বাড়ি ফিরে যাবো।

Sourav Chakrabarti

0 comments:

Post a Comment