Monday, January 20, 2020

মৃত্যুর মুখে সুন্দরবনে - ( পর্ব.. এক) - In the face of death in the Sundarbans (1st Part)

 সাল 2007, কোম্পানির টার্গেট করতে পারার জন্য স্টাফদের( দুজন) নিয়ে সুন্দরবন যাবো, ওটাই শর্ত ছিল।

সঙ্গে ভিড়লো আমার পাড়ার দুই বন্ধু। মাস ছিল
সেপ্টেম্বর বা আগস্ট। আমার এক স্টাফ সঞ্জয়ের দিদির বাড়ি রায়দিঘিতে। ব্যাগ গুছিয়ে রওনা দিলাম পাঁচজন। দুদিনের সুন্দরবন ট্যুর। বাড়িতে কোম্পানির ট্যুর বললাম, না হলে যেতে দিতো না।
ছোট অঞ্চল, কিন্তু বেশ জমজমাট ছিল তখন রায়দিঘি। ছোটখাটো গ্রাম থেকে লোকজন ভিড় করে এখানে পাইকারি ব্যবসা আছে বলে।
দিদির বাড়িটাএকটা শাখা নদীর পাশে। মাটির ঘর, খুব সুন্দর একটা উঠোন। গোবর লেপে আলপনা করা। জামাইবাবু রসিক মানুষ। দুপুরের খাওয়া সেরে আড্ডা মারতে মারতেই সন্ধে হবো হবো। আমরা বাইরে বেরোলাম নৌকার খোঁজে।
আমাদের যা চাহিদা , অনেক নৌকাই যেতে রাজি হবে না। সেটা হলো তিনরাত্রি নৌকায় থাকবো, গভীর জঙ্গলে ঢুকবো, একটা নামমাত্র পারমিশন করিয়ে। আপত্তি যতো না জঙ্গলের তার থেকেও
বেশি জলদস্যুর। যারা বাংলাদেশ থেকে
অবৈধভাবে আমাদের জঙ্গলে ঢোকে, মধু, কাঠ নিয়ে ফিরে যায় কিন্তু অন্য নৌকা দেখলে লুঠ করতেও ছাড়ে না। মেরে ফেলে রেখে নৌকা নিয়ে চলে যাবে, লাশ খুঁজেও পাওয়া যাবে না। তাই ফরেস্ট ডিপার্টমেন্ট টুরিস্ট allow করেও না।
খান দু কিমি হেঁটে মাঝির(নাম ভুলে গেছি) বাড়ি পৌঁছলাম। বাবু বাইরে বসে মুড়ি আর বাংলা খাচ্ছিল। জামাইবাবু যাই বলে সে দেখি শুধু মাথা দুদিকে নাড়ায়। কিছুতেই রাজি হচ্ছে না। আরো যে
অপশন নেই তা নয়, কিন্তু ইনি বাইরের জঙ্গল সমন্ধে বেশি অভিজ্ঞতা রাখে। বলে রাখি, এই বাইরের জঙ্গল মানে হলো কোর এরিয়া। সবাই যায় না। (ইনি যান, কাঠ চুরি করতে, কেনে রায়দিঘির কাঠের ব্যবসায়ীরা)।
জামাইবাবু দেখি প্রসঙ্গ ঘুরিয়ে দিলো। একথা সেকথা বলতে বলতে সময় নিলো, বাংলার নেশাটা
চড়তে দিলো। আমি বেশ মজা নিচ্ছি। আধঘন্টা বাদে আবার ওই একই প্রসঙ্গ, এবারও রাজি নয়, তবে কেমন নিস্তেজ। নিমরাজি হয়ে মাঝি সরাসরি
টাকার প্রসঙ্গে চলে গেলো। ভালো টাকার ডিমান্ড করলো। একটু কমিয়ে রফা করে যাত্রা নিশ্চিত করলাম। এবার সবাই মিলে বাজারের পথে। আজ রাতেই রওনা।
রাত আটটা নাগাদ একটা পশলা বৃষ্টি হলো। বেশ শীত শীত করছে। কিন্তু উদ্যম প্রচুর। গেলাসে আওয়াজ তুলে উদ্যম বাড়িয়ে নেওয়া হলো। ইতিমধ্যে মাঝির দুই স্যাঙাত ও এসে গেছে। নির্মেদ চেহারার দুজন, "সুদাম" আর "বাপ্পা"। তিনদিনের রেশন কম তুলি নি। চাল, সবজি, মাংস, ডিম , তেল অনেক মালপত্র। সত্যি বলতে কি, আমি কম কাজই করছি, নির্দেশ দিচ্ছি বেশি। মাঝি যা ডিজেল চেয়েছিল, তার চেয়ে বেশি তুলেছি। হটাৎ আমি খেয়াল করলাম, নৌকার পিছন দিক বড়ো সরো ফাঁক। ভয় পেয়ে গিয়ে মাঝিকে জিজ্ঞেস করতে, খুব গম্ভীর হয়ে বললো, সামনে ঠিক আছে, পিছন ফাঁকা হতেই পারে। বোঝো !!!
রাত এগারোটা নাগাদ, নৌকো স্টার্ট হলো। ছোট একটা শাখা নদী ধরে যাচ্ছি। আমার চোখ বারেবারে পিছন দিকে চলে যাচ্ছে, ফাঁক দিয়ে নদীর জল দেখা যাচ্ছে। আমি আবার সাঁতার জানি না। ঠান্ডা হাওয়া দিচ্ছে, বেশ কাঁপুনি লাগছে। ইঞ্জিনের আওয়াজে কথা একটু জোরে বলতে হচ্ছে। ছাউনির মধ্যে একটা টুনি লাইট জ্বলছে, তাতেই আলোয় আলো। আমরা সব কটা
ছাউনির মধ্যে জড়ো হলাম। চোখ গেল মাঝির দিকে, যতই বাংলা খাক, নৌকার হাল ধরে চুপচাপ,সতর্ক, টানটান। নিশ্চিন্ত হয়ে শরীর টান করলাম, খুব ক্লান্তি শরীরে, শুয়ে পড়লাম। ভোরবেলা ওরা তুলে দেবে। চার, পাঁচ ঘন্টার টানা জার্নি। নেশার চোটে, ঘুমের ঘোরে হটাৎ কবি হয়ে উঠলাম, বিরবিড়িয়ে উঠলাম..
" টানা দু দিন ধরে মুক্ত আমি, দুনিয়া চুলোয় যাক
চিন্তা শুধু একটাই আমার,নৌকার পিছনে ফাঁক"



Personal Experience - Rajib Bashu

0 comments:

Post a Comment