Saturday, January 9, 2021

সান্দাকুফু ট্রেক পর্ব 2 - Sandakphu Trek, Part 2

 সান্দাকুফু ট্রেক পর্ব 2

16th ডিসেম্বর 2020 টংলু
====================
সকালে ঘুম থেকে উঠে দরজা খুলেই বাইরে বেরিয়ে দেখি রোদের আলোতে ঝলমলে কাঞ্চনজঙ্ঘা... আমি যদিও একটা পিক এর নাম জানিনা.. কিন্তু ওই যে তুষার শুভ্র পর্বত ওটাই যেন আমার কাছে সব কিছু, শুধু আমার কাছে কেন আপামর বাঙালি র কাছে একমাত্র আকর্ষন...

চা খেয়েই ক্যামেরা নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম পাশেই একটা উঁচু জায়গা আছে যেখান থেকে পুরো জায়গা টা 360 ডিগ্রি তে দেখা যায়.. সব ভালো শুধু মাত্রাতিরিক্ত ঠান্ডা আর হাওয়ার দাপট টুকু ছাড়া
এই প্রসংগে বলে রাখি টংলু তে GTA এর ট্রেকার Hut এ ছিলাম... বুকিং হবে কলকাতা র গোর্খাভবন থেকে.. ওখানে গিয়েই বুক করতে হবে.. অনলাইন বা ফোন এ হবেনা..তবে আপনি যদি টুমলিং এ থাকেন সেখানে থাকার অনেক Home Stay পেয়ে যাবেন... তবে সুযোগ পেলে টংলু তে থাকুন কারণ ওখান থেকে দেখা সূর্যাস্ত কোনোদিন ভুলতে পারবেন না


সকাল 9.00 AM
============
প্রায় এক কিলোমিটার পথ হেঁটে পৌঁছে গেলাম টুমলিং... এবার ট্রেকিং রাস্তা আর গাড়ি চলাচল এর রাস্তা একইসাথে... কিছুটা গিয়ে সিংগালিলা ন্যাশনাল ফরেস্ট এর অফিস এ পারমিশন মানে Entry পাস নিতে হবে.. রেজিস্টার এ Signe করবেন গ্রুপের হেড.. আধার কার্ড থাকলেই হবে একজনের.. আর লাগবে 120 টাকা প্রতিদিন প্রতিজনের সান্দাকুফু ট্রেক করার জন্য...


আবারো পথ চলা শুরু... প্রায় তিন কিলোমিটার চলে বিরতি নিলাম নেপালের ছোট্ট একটা গ্রাম জৌবারী.... এখানে বেশ কিছু Home স্টে আছে... জায়গা টা খুব সুন্দর ।।চাইলে এখানেও রাত্রিবাস করতে পারেন...
জৌবারী থেকে আরো 3 কিলোমিটার পথ চলে গৈরিবাস, খুব ইন্টারেস্টিং জায়গা.. ভারত আর নেপালের মাঝে এমন একটা গ্রাম... যেখানে হাঁটার সময় ডান পা পড়বে ভারতের মাটিতে... বাম পা পড়বে নেপালের মাটিতে ।।।


পৌঁছে একটু বিরতি নিলাম... এবার আমার স্যাক টা পাঠিয়ে দিলাম কালিপোখরী.. ট্যুরিস্ট গাড়ি ছিলো একটা তাতেই উপায় হলো, তবে এর জন্য 100 টাকা দিতে হলো
গৈরিবাস এও চাইলে রাত্রি বাস করা যায়.. আমরা Momo খেলাম স্থানীয় দোকান থেকে... অপূর্ব স্বাদ
এরপর পথ উঠে গিয়েছে ওপরের দিকে.. গাইড বললো দুই কিলোমিটার এই ভাবেই উঠতে হবে.. আমরা সেই ভাবেই এগিয়ে গেলাম..তবে এক্ষেত্রে সুবিধা হলো মাঝে মাঝে শর্ট কাট গুলো... এই ব্যপারটা শিখেছিলাম বেশ কিছুদিন আগে কেদারনাথ ট্রেক করার সময়


আমরা দুজন অনেকটা এগিয়ে গিয়েছি... সামনে এগোবো কিনা ভাবছি কারণ রাস্তা না ভুল হয়ে যায় ওটাই ভয়... এমন সময় কোথা থেকে হাজির এক পাহাড়ি কুকুর... নিজেই আগে আগে চললো পথ দেখিয়ে.. যদিও আমাদের দেওয়া বিস্কুট সে ভদ্র ভাবেই নাকচ করলো... অভিমান কিনা বুঝতে পারলাম না..
চলতে চলতে নির্জন রাস্তায় হটাৎ মেঘ এসে সব যেন অন্ধকার করে দিলো. দাঁড়িয়ে পড়লাম. তারপর মেঘ কেটে গেলে চলা শুরু.. পৌঁছে গেলাম আরো একটা পাহাড়ি গ্রাম কাইয়াকাটা..


মানুষ দার্জিলিং সিকিম এ যায় বেড়াতে.. কিন্তু এই পর্বে আমার একটা কথা বার বার মনে হচ্ছিলো যারা এই সান্দাকুফু ট্রেক করবে... তাদের কাছে আর কোন কিছুই ভালো লাগবেনা কারণ প্রকৃতি এখানে অনবদ্য অতুলনীয়
।কাইয়াকাটা পৌঁছে স্থানীয় একটা সরাইখানা থেকে কফি নিলাম.. ক্লান্ত শরীরে যেন নতুন উৎসাহের সঞ্চার হলো.. কিছু সময় পরে টিম এর বাকি মেম্বার রা চলে এলো আবারো পথ চলা..
তবে এবার একটু দ্রুত কারণ বেলা পরে আসছে সন্ধ্যার আগে কালিপোখরী পৌঁছাতে হবেই
কিন্তু পথের যেন শেষ নেই.. যদি ও রাস্তা প্রায় সমান... কিন্তু এই শেষ চার কিলোমিটার এর যেন শেষ নেই.. অনেকটা চলার পরে নির্জন রাস্তায় গাড়ির আওয়াজ এ চমক কাটলো, একটা যাত্রী হীন ল্যান্ডরোভার যাচ্ছে... নেহাত মজার ছলে লিফ্ট এর ঈশারা করতেই ড্রাইভার মুচকি হেসে ইঙ্গিত দিলো উঠে বসতে, ব্যাস আর কি চাই.. এই অভিজ্ঞতাও হয়ে যাবে, তবে গাড়ি চলতে যখন শুরু করলো.. বাপরে বাপ... সে ই যে ঝাঁকুনি
ভাগ্যিস রাস্তা খুব সামান্যই ছিলো নাহলে ড্রাইভার কে অনুরোধ করতাম নামিয়ে দিতে


গাড়ি থেকে কালিপোখরী তে নেমেই দেখি চারিদিক রাঙা করে সূর্য অস্তাচলে, আরো এক মহেন্দ্রক্ষনের সাক্ষী হতে যাচ্ছি আমরা. ঠিক গতকাল বিকেলে টংলু তে এই রকমই একটা অভিজ্ঞতা হয়েছে
সেই মুহূর্তে র সাক্ষী থাকলাম আমি সৌরভ আর কালিপোখরী র পুকুর
এরপর ঠান্ডা আর ক্লান্তি কে কোন কস্টে সহ্য করে শরীর টা প্রায় টেনে হিঁচড়ে নিয়ে চললাম একটু কাছেই আজকের আশ্রয় CHEWANG LODGE


এটা বুক করেছিলো আমাদের গাইড.. সত্যি অসাধারণ... ভাড়া বেড পিছু 300 টাকা.. আর ওপরে দুটো রুম এর বেড 800 টাকা.. ওটাই নিলাম.. তারপর আন্টির তৈরি লাল চা. পড়ে দুধ চা খেয়ে শরীর পুরো জুড়িয়ে গেলো... 13 কিলোমিটার পথ চলার জার্নি কোথাও হারিয়ে গেলো
রাতের আহার ছিলো 200 টাকা মিল সিস্টেম সব্জি ভাত ডাল আলুভাজা, চিকেন 4 পিস 100 টাকা
এরপর ঘুমের দেশে


17th ডিসেম্বর..
============
সকালে ঘুম যখন ভাঙল তখন সকাল 8 টা.. উঠে চা খেয়ে পায়ে হেঁটে বেরিয়ে পড়লাম কালিপোখরী লেক টা দিনের আলোতে ভালো করে দেখব বলে
এখানে মোবাইল এ কোন নেটওয়ার্ক নেই.. এই হোম স্টে থেকে বাড়িতে একটা ফোন করেছি. ISD কল 10 টাকা নিয়েছে এক মিনিটে
যাইহোক একটা ব্যাপার খেয়াল করলাম সব জায়গার জল জমে গেলেও কালিপোখরী র জল কিন্তু জমেনি, স্থানীয় মানুষের কাছে এই পুকুর খুব পবিত্র তারা মনে করে এই পুকুরে বাস করে কালনাগ তাই এই জল কোনোদিন জমেনা
একটু পরেই দেখি মোবাইল এ নেটওয়ার্ক এসেছে
দরকারী ফোন গুলো করে নিলাম... ফিরে এসে ব্যাগ গুলো গুছিয়ে তৈরী হয়ে নিলাম সান্দাকুফু ট্রেক এর জন্য.. এর জন্যই তো এতো কষ্ট সহ্য করা.. রাস্তা যদিও 6 কিলোমিটার কিন্তু শুনেছি অনেকে হাঁটতে না পেরে হামাগুড়ি দেওয়ার মতো অবস্থা হয়
কথাটা যে কতোটা সত্যি সেটা চলার পথে বুঝেছিলাম
যাইহোক আগামী পর্বে সেটা নিয়েই লিখব আর ওটাই হবে সান্দাকুফু অভিযানের শেষ পর্ব
বলে রাখি গাড়ি করে যেতেই পারবেন তবে একবার যদি সম্ভব হয় এই ট্রেক টা করে নিয়েন.. অনেকেই বলবে খুব কঠিন অনেকে বলবে খুব সহজ, কিন্তু আপনি কি বলবেন সেটা ই সব থেকে বড়ো কথা
আমিও করেছি প্রতিটা মুহূর্ত ক্যামেরা বন্দী তৈরি করেছি অভিযানের পর্ব গুলো গল্পের মতো করে.. কেন জানেন? বৃদ্ধ বয়সে স্মৃতিচারণের জন্য

জীবনে কিছু থাকবে না. থাকবে এই অভিজ্ঞতা আর প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করার অনুভূতি
এই পর্বের ভিডিও গুলো দেখতে পারেন নিচের লিঙ্ক গিয়ে...তৈরি হতে পারেন আগামী দিনে অভিযানের জন্য
https://youtube.com/c/TravelWithKoushik
ভালো থাকুন সবাই....


Koushik Paul

0 comments:

Post a Comment