• Estuary of Teesta and Rangit Rivers

  • Teesta View Point

  • Chatakpur, Darjeeling

  • Chilapata Forest

Wednesday, November 25, 2020

কানকেব‌ঙ (কালিম্পং) - kankebong (kalimpong)

 অনেকেই হয়তো এই জায়গাটির নাম শোনেননি, কিন্তু হিমালয়ের আঁকাবাঁকে, আনাচে-কানাচে কত অপরূপ সৌন্দর্য নিয়ে যে প্রকৃতি সেজে আছে তা এই গ্রামে এলেই বুঝবেন। কালিম্পং ডিভিশনের এক ছোট্ট গ্রাম কানকেবং আপনাকে অবাক করবে, তার রূপ-লাবণ্যে।

যারা প্রকৃতিকে ভালোবাসেন এবং শুধু এবং শুধুই অবসর কাটানোর ঠিকানা খুঁজছেন এবং পাহাড়ের সেই পরিচিত কাঠপোড়া গন্ধ, সবুজের নিস্তব্ধতা চান তাদের জন্য‌ই এই লোকেশন। পাহাড়ী জীবনের মাটির স্বাদ নিতে ঘুরে আসুন কানকেবং থেকে।

যারা একবার এখানে গেছেন তারা যে সহজেই এই জায়গার সৌন্দর্যের প্রেমে পড়েছেন, বলাই বাহুল্য। কালিম্পং থেকে ঘন্টাখানেকের রাস্তা পেরিয়ে ডাউনহিলে মূলত এই গ্রাম। এছাড়াও বিভিন্ন হিমালয়ান পাখির আস্তানা এই ছোট্ট জনপদ। স্বভাবতই পাখি প্রেমীদের ক্রমেই প্রিয় ডেস্টিনেশন হয়ে উঠবে।

শান্ত স্নিগ্ধ পরিবেশে সবুজের মাঝে দুদিন ঘুরে যেতেই পারেন এই পাহাড়ী গ্রামটিতে। আপনি যদি প্রকৃতি কে ভালোবাসেন তবে আবার ফিরে আসতে হবে। নিউ জলপাইগুড়ি থেকে পৌঁছতে সময় লাগে ঘন্টা চারেক। হোমস্টেটিও চমৎকার।


বাঁশ দিয়ে তৈরী চমৎকার তিনটি কটেজ। খাওয়াদাওয়া, আতিথিয়তাও বেশ ভালো। রাতের বেলা ওপরের পাহাড়ে লোলেগাও, কাফেরগাও এর আলো জ্বলে উঠলে দেখতে বেশ লাগে। তবে এখানে বিশেষ করার কিছু নেই শুধুই অবসর যাপন ছাড়া। হোমস্টে লাগোয়া একটি ছোট্ট সুইমিং পুল‌ও আছে।

এখান থেকে দেখার জায়গার মধ্যে , কালিম্পং, দূরপীন, ডেলো সব‌ই ঘুরে আসা যায়। এছাড়া কাফেরগাঁও, লোলেগাঁও, সামথার প্রভৃতি জায়গা গুলিও ঘুরে আসতে পারেন দিনে দিনেই। ওখানে পৌঁছেই ঠিক করুন, শুধু‌ই অবসর যাপন নাকি সাইটসিংয়ে বেড়িয়ে পড়বেন কিনা গাড়ী নিয়ে।
নিউ জলপাইগুড়ি থেকে দূরত্ব- ৮২ কি.মি
গাড়ী ভাড়া- ৩৫০০-৪০০০/- টাকা।
কালিম্পং থেকে দূরত্ব ১৫ কিমি, গাড়ী ভাড়া আনুমানিক ৮০০-১০০০ টাকা।
হোমস্টেতে থাকা খাওয়ার খরচ ১৫০০/- জনপ্রতি প্রতিদিন সমস্ত মিল সহ।
+916291538880


Himalayan Retreat

Monday, November 23, 2020

টংলু, দার্জিলিং - Tonglu, Darjeeling

 তাজপুরে ঘুরতে গিয়েছিলাম এই আগস্ট মাসের সময়, 6জন বন্ধুমিলে। কিন্তু কয়েকজন বন্ধু যেতে পারেনি, তাদের কথা ভেবেই খারাপ লাগছিল, ঠিক করি সামনের নভেম্বরের ৮ তারিখে বেড়াতে যাব সবাই মিলে টংলু, ১রাত থাকব, বাকি যাওয়া আসা মিলিয়ে যে ছুটি দরকার তাতে আর কাওকে অতিরিক্ত ছুটি নিতে হবে না কারন শুক্রবার বিকেলে বেরিয়ে রবিবার ফেরা । ২০মিনিট কি ৩০ মিনিটের মধ্যে সবার জন্য টিকিট কেটে নেওয়া হয়েছিল। পরে সেই ১রাত থাকার বদলে দুই রাত থাকার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।



সেই দিন এল, অপেক্ষার শেষ, 9জন বন্ধু বান্ধবী ব্যাগ গুছিয়ে খাগড়াঘাট রেল স্টেশন থেকে সন্ধ্যে 6 টার সময় গাড়ি ধরি, দুই বন্ধু আগেই থেকে উঠেছে দুপুরেই এই এক এ গাড়িতে শিয়ালদা থেকে , আর যাদের জন্য এই ট্রিপ টা করেছিলাম তারাও আগের বারের মত এবার যেতে পারেনি বিশেষ জরুরি কারনে। গল্প আড্ডা সেরে, আগেই নিয়ে আসা খাওয়ার খেয়ে ঘুম দিলাম সবাই কারন মাঝরাতে (২ঃ৪০) ট্রেন থেকে নামতে হবে। তবুও বদ অভ্যাস মাঝ রাতে ঘুমনো তাই শেষে 1ঘন্টা ঘুমের পর পৌছলাম NJP Station । ফ্রেশ হয়ে বেরলাম তখন সকাল 5টা প্রায়। লেপচা-জাগাত এর দুটো গাড়ি বলাছিল। তাদের সাথেই মানেভঞ্জনের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। মাঝ পথে লেপচা জাগাতে রবিন ভাইয়ার সাথে দেখা করে নিলাম। উনি একটি হোম স্টে এর মালিক, নাম Pakhrin homestay , যেখান থেকে রাতের ঝলমলে দার্জিলিং শহরটা অপুর্ব লাগে দেখতে। 4বার থেকেছি ওখানে। যাই হোক,



মানেভাঞ্জান পৌছে আনিল ভাইয়ার সাথে কথা বলে দুটি 70বছরের পুরনো land rover গাড়ি নিয়ে রউনা। প্রথম গন্তব্ব টংলু, এখানে এই নিয় 7-8 বার থাকা হলো। এখানে থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার যে দৃশ্য দেখা যাই তার তুলনা হয়না। তো টংলু তে একটাই সরকারি ট্রেকার্স হাট , আর একটা homestay আছে রাজিবের, আর সদ্দ্য বানানো একটা homestay যেটা সরকারি ট্রেকার্স হাট থেকেই সামলানো হয়। আগেই বলে রাখা ছিল সেই রুম গুলই পৌছে ব্যাগ গুলো রেখেই বাইরে এসে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার জন্য



একটু সময় নিয়েই দুপুরের খাওয়ার খেয়ে একটু রেস্ট । তার পর বিকেলে উঠে চললাম কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার জন্য, বিকেলের পরন্ত দদ্দুর সেই কাঞ্চনজঙ্ঘাকে রাঙ্গিয়ে দিতে দিতে এক সময় টক টকে লাল রং এ পরিনত করেছিল। সেটা দেখানোর জন্য সকল কে হাক মারলাম কিন্তু এলো ৫-৬জন। তাদের সাথে সেই দৃশ্য উপভোগ করে ও কিছু ছবি তুলে রুমের মধ্যে আসলাম। সন্ধে টা একটু আড্ডা দিয়ে গান শুনে কাটিয়ে রাতের খাওয়ার খেয়ে ঘুম দিলাম রাত তখন ৯ঃ৩০ , তার মাঝে ভূতের গল্প বেশ জমে উঠেছিল। সকালে ৪ঃ৩০ থেকে সবাই রেডি সানরাইস দেখবে বলে, তখন খুব অন্ধকার। অনেক বলে ওদের আটকে শেষে সকাল ৫ঃ১৫ নাগাদ বেরলাম সবাই। ৫ঃ৩০ এর পর দেখলাম সেই অপূর্ব সোনালি রঙের কাঞ্চনজঙ্ঘাকে।



এবার রউনা দিলাম চিত্রের উদ্দেশ্যে, একটাই homestay , মালিকের নাম phuntsok , মজা করে বলেন আমার নাম phuntsok , কিন্তু wangdu নই (হিন্দি তে) । সেখানে ২ টো রুম নিয়ে বেরলাম চিত্রের মাঠে । সেখানে ৩-৪ ঘণ্টা কাটালাম , দেখলাম কি ভাবে পরিস্কার আবহাওয়া থেকে ঘন মেঘে ঢেকে যাই চারপাশ। কত মেঘ যে গায়ে লেগে বেরিয়ে গেল। আর তার অসাধারন অনুভুতি । সন্ধ্যাই একটু ক্যাম্পফায়ার সেরে রাত্রি ভজন করে আবার বেরলাম বাইরের দৃশ্যটা দেখব বলে, কারন আজই এই ট্রিপের শেষ রাত্রি। ১ ঘণ্টা বাইরে কাটিয়ে রুমে এসে ঘুম, ভোরবেলাই সবার ঘুম ভাঙ্গিয়ে সানরাইস দেখালাম রুম এর ব্যাল্কনি থেকেই। এর পর বাড়ি ফেরার পালা......।

Sumit Das

Sunday, November 22, 2020

সুন্দরবন এর সৌন্দর্য - Beauties of Sundarban

 আপনারা অনেকেই দেখছি এই pandemic এ ঘরবন্দী হয়ে বিরক্ত। আসুন একটু সুন্দরবন ঘুরে আসি ছবির মাধ্যমে। ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে চিহ্নিত এই ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট আজ না থাকলে আমরা থাকতাম না।আইলা, বুলবুল, আম্ফান এই সবের সাক্ষী এই ফরেস্ট। একাধিক বার বাঁচিয়েছে আমাদের বিপর্যয় থেকে। আমরা তার দেখাশোনা করলে ভবিষৎ এও বাঁচাবে।


সুন্দরবন এর পশু পাখির কথা ভাবলেই আমাদের প্রথম মনে দাগ কাটে বেঙ্গল টাইগার। এদের দেখতে পাওয়া যতটা কঠিন, এরাও কিন্তু খুব কষ্ট জীবন কাটায়।
                                                        Peregrine Falcon
                                                                Buffy Fish Owl

ম্যানগ্রোভ এ মানুষ সহ প্রত্যেক টা প্রাণী জীবন সংগ্রাম করে। প্রত্যেক টা দিন একটা লড়াই। পশু ও পাখী প্রেমিকদের জন্য এটি একটি কেন্দ্রস্থল। Buffy ফিশ owl একমাত্র ভাগ্যে থাকলে এখানে সহজেই দেখা যায়।
                                     Smooth- coated Otter family with Egret 
                                                                        Wild Boar family
                                                             Spotted Deer
                                                     Irrawaddy Dolphin 
                                                    Ruddy Kingfisher
                                                                    Fiddler Crab
                                                                    Black Capped Kingfisher 
                                                                Crested Serpent Eagle
                                                               Ornate Flying snake
                                                            
White- bellied sea Eagle
                                                     
Brown-Winged Kingfisher
                                                                    
Mudskipper 
                                                      
Water monitor Lizard 
                                                          
King Kobra
                                                          
Saltwater Crocodile
এছাড়া পরিযায়ী পাখী শীতকালে এখানে প্রচুর আসে। আসুন সুন্দরবন এর মানুষের পাশে দাড়াই। ঘুরে আসুন সুন্দরবন ২ রাতের জন্য, আপনার নিশ্চই খুব ভালো সময় কাটবে।
ধন্যবাদ।...


Himadri Mandal


Friday, November 20, 2020

শ্রীরামপুর ভ্রমণ - Tour to Serampore

 ১৮৭২ সালের ঘটনা। শ্রীরামপুর তখন ডেনমার্কের উপনিবেশ৷ শহরের ঠিক প্রাণকেন্দ্রে, ১৫ হাজার বর্গফুট জমির উপর গড়ে উঠেছিল এই ড্যানিশ ট্যাভার্ন। ট্যাভার্ন অর্থাৎ ‘সরাইখানা’৷ দিনেমার-ইংরেজ আর তারপর মিশ্র সংস্কৃতির হুজুগে সেই ট্যাভার্ন ভেঙে পড়ে একসময়। তার প্রায় দেড়শো বছর পর ওই একই জায়গায়, ড্যানিশ স্থাপত্যের সঙ্গে তালমিল রেখে ভগ্নপ্রায় প্রাচীন ভবনেই গড়ে ওঠে শ্রীরামপুর কফি হাউস৷

                                                                    মাহেশের রথ

কফি খেতে খেতে একসময়ের গড়ে ওঠা ডেনমার্কের এই উপনিবেশের ইতিহাসটা একটু জেনে নেওয়া যাক। তবে ডাচদের আগেও শ্রীরামপুর নিয়ে আছে আরও অনেক গল্প। মুগল আমলের বহু আগে থেকেই সরস্বতী ও হুগলি নদীর মধ্যবর্তী এই অঞ্চলটি ছিল বর্ধিষ্ণু জনপদ। পনেরো শতকে লেখা বিপ্রদাস পিপিলাইয়ের ‘মনসামঙ্গল’ কাব্যে আকনা ও মাহেশ নামের উল্লেখ রয়েছে।

                                                        মাহেশের রথ - জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা

শ্রীচৈতন্যের সমকালীন পুঁথিতে এই দুটি নাম ছাড়াও চাতরার উল্লেখ পাওয়া যায়। টেভার্নিয়ার-এর ভ্রমণবৃত্তান্তে মাহেশের রথযাত্রার বিবরণ রয়েছে। আবুল ফজলের আইন-ই-আকবরী গ্রন্থ থেকে জানা যায়, রাজা মানসিংহ যখন পূর্ব-ভারতে এসেছিলেন তখন ‘শ্রীপুরে’ শিবির স্থাপন করেছিলেন। আবদুল হামিদ লাহোরির ‘বাদশাহনামা’য় এই ‘শ্রীপুর’কে শ্রীরামপুর নামে চিহ্নিত করা হয়েছে। মুগল আমলের আগে থেকেই উল্লিখিত স্থানগুলির প্রসিদ্ধ ছিল। পনেরো শতকে চৈতন্যের বৈষ্ণববাদের প্রভাবে এখানে কয়েকটি বৈষ্ণব তীর্থকেন্দ্র হয়ে ওঠে।
                                                                    মাহেশের রথ
শেওড়াফুলির রাজা মনোহরচন্দ্র রায় ১৭৫২ সালে শ্রীপুরে রামসীতার মন্দির স্থাপন করার পর তাঁর পুত্র রামচন্দ্র দেবসেবার জন্য শ্রীপুর, গোপীনাথপুর ও মনোহরপুর নামক ৩টি মৌজা গাঙ্গুলীদের নামে দেবোত্তর করে দেন। এভাবে ‘শ্রীপুর’, ‘শ্রীরাম’ ইত্যাদি নাম থেকেই ‘শ্রীরামপুর’ নামটির উৎপত্তি বলে অনেকে মনে করেন। পরে দিনেমার কোম্পানি আঠারো শতকের মাঝামাঝিতে দক্ষিণ ভারতের ট্যাঙ্কোবার কুঠি থেকে সোয়েটম্যান নামে একজন প্রতিনিধিকে বাংলার নবাবদের কাছে প্রেরণ করে। তাদের উদ্দেশ্য ছিল বাংলায় বাণিজ্য করার অধিকার সম্পর্কিত ফরমান লাভ।

নবাব আলীবর্দী খানকে নগদ ৫০ হাজার মুদ্রা ও প্রচুর উপঢৌকন প্রদানের বিনিময়ে সোয়েটম্যান বাণিজ্য করার ফরমান লাভ করেন। প্রথম দশ-পনেরো বছর দিনেমার বণিকরা নানা ধরনের প্রতিকূলতার সম্মুখীন হয়। গোড়ারদিকে দিনেমার বণিকগণ শেওড়াফুলি হাট থেকেই পণ্য-সামগ্রী কিনতেন ও সেগুলি ট্যাঙ্কোবার হয়ে ইউরোপের বাজারে রফতানি করতেন। পরেরদিকে তাঁরা পণ্য সংগ্রহের উদ্দেশ্যে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে তাঁদের নিজস্ব প্রতিনিধি পাঠাতে শুরু করেন।

দিনেমারদের প্রথম প্রতিনিধি হিসেবে শোভারাম বসাক ও আনন্দরাম ধোবা নামে স্থানীয় দুই ব্যক্তি নিযুক্ত হন। নন্দলাল চক্রবর্তী ছিলেন তাঁদের প্রথম এজেন্ট। যিনি পরে দিনেমারদের দেওয়ান পদে উন্নীত হন। এসবের সঙ্গে সঙ্গে দিনেমার বণিকরা কাপড়ের কারখানা স্থাপন করে উৎকৃষ্ট বস্ত্রও তৈরি করতে শুরু করেন। দিনেমারদের আয়ের অন্য একটি উৎস ছিল ‘হুন্ডি ব্যবসা’। অন্যান্য ইউরোপীয় বণিকদের পণ্য নিজেদের জাহাজে করে রফতানির মাধ্যমে তারা অর্থ উপার্জন করতেন।
শ্রীরামপুরে নবজাগরণের স্রষ্টা বলা হয় উইলিয়ম কেরি, মার্শম্যান ও ওয়ার্ডকে। ঊনিশ শতকের প্রাক্কালে এই তিনজন ইউরোপীয় ব্যাপটিস্ট মিশনারি শ্রীরামপুরে আসেন। এই তিন মিশনারি খ্রিস্টধর্ম প্রচারের পাশাপাশি শ্রীরামপুর ও আশপাশের পীড়িত ও আর্ত মানুষজনের সেবায় নিজেদের নিয়োজিত করেন। শুধু তাই নয়, সমাজ সংস্কার ও শিক্ষা বিস্তারে আত্মনিয়োগ করেন তারা। শ্রীরামপুরের পার্শ্ববর্তী বিস্তৃর্ণ অঞ্চলে শতাধিক মিশনারি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করেন তারা। হ্যানা মার্শম্যান স্থাপন করেন প্রথম বালিকা বিদ্যালয়। উইলিয়ম কেরী ১৮০০ সালে শ্রীরামপুর মিশন প্রেস স্থাপন করে ছাপাখানার জগতে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনেন। তার ছাপাখানায় পঞ্চানন কর্মকারের তৈরি কাঠের হরফ ব্যবহৃত হত।

১৮১৮ সালে কেরী ও তাঁর দুই সহকর্মী তাঁদের সারা জীবনের সঞ্চিত অর্থ দিয়ে নির্মাণ করেন শ্রীরামপুর কলেজ। এটি এশিয়ার প্রথম ডিগ্রি কলেজ। কেরী বাংলা গদ্যের জনক হিসেবে প্রসিদ্ধি লাভ করেন। বাইবেলের বাংলা অনুবাদ, হিতোপদেশ ও কথোপকথন নামে তিনখানা পুস্তক ছাপা হয় মিশন প্রেস থেকে।






                                                             শ্রীরামপুর রাজবাড়ি

‘কেরী সাহেবের মুন্সী’ রামরাম বসু প্রকাশ করেন প্রতাপাদিত্য চরিত্র, রামায়ণ ও মহাভারতের বাংলা অনুবাদ। কেরির সম্পাদনায় ১৮১৮ সালে প্রকাশিত হয় বাংলা ভাষায় রচিত দ্বিতীয় সাপ্তাহিক সংবাদপত্র ‘সমাচার দর্পণ’।একই সময়ে ‘ফ্রেন্ডস অব ইন্ডিয়া’ নামে আর একটি সংবাদপত্র ইংরেজিতে প্রকাশিত হয় শ্রীরামপুর মিশন প্রেস থেকে। মিশনারিদের আর একটি অবদান হল শ্রীরামপুরে ভারতের প্রথম বাষ্পীয় কাগজ কল স্থাপন করা। ১৮০১ থেকে ১৮৩২ সালের মধ্যে শ্রীরামপুর প্রেস থেকে ৪০টি ভাষায় মোট ২,১২,০০০ গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। ১৮০১ থেকে ১৮৩৯ সালের মধ্যে দিনেমারদের ব্যবসা-বাণিজ্য মার খেতে থাকে। ১৮০৩ সালে যেখানে ১১৩টি জাহাজ শ্রীরামপুর বন্দরে মাল বোঝাই ও খালাস করত, সেখানে ১৮১৫ সালে গিয়ে তার সংখ্যা দাঁড়ায় মাত্র ১টিতে। কলকাতায় অবস্থিত ইংরেজ কোম্পানির বণিকদের অত্যাচার ও আগ্রাসী মনোভাব দিনেমারদের ভারত ছাড়তে বাধ্য করে। ১৮৩৫ সালের ১১ অক্টোবর গভর্নর পীটার হ্যানসেন ইংরেজদের কাছে তাঁদের কেনা সম্পত্তি মাত্র সাড়ে বারো লক্ষ টাকায় বিক্রি করতে বাধ্য হন।
একনজরে দেখে নেওয়া যাক শ্রীরামপুরে কী কী দেখবেন-
রাধাবল্লভ মন্দির----
মুর্শিদাবাদের নবাবের এক হিন্দু কর্মচারী রাধাবল্লভকে জায়গা প্রদান করেন এবং ঠাকুরের নাম অনুসারে এইস্থানের নাম বল্লভপুর রাখেন। ওই সময় বল্লভপুরের বার্ষিক রাজস্ব ছিল বেশ । এর দেড়শ বছর পরে রাজা নবকৃষ্ণ গ্রামটিকে ভারজাই তালুক করে দেন। ১৫৯৯ সালে কলকাতার নয়নচাঁদ মল্লিক রাধাবল্লভের মন্দির নির্মাণ করে দেন।
শ্রীরামপুর রাজবাড়ি----
অষ্টাদশ শতকের মাঝামাঝি। বাঙলার নবাব তখন আলিবর্দী খাঁ। সেসময়ে পাটুলিতে বাস করতেন গৌড়ীয় বৈষ্ণব দর্শনের বিখ্যাত শাস্ত্রজ্ঞ পণ্ডিত শ্রী লক্ষ্মণ চক্রবর্তী। লক্ষ্মণ চক্রবর্তীর বিবাহ হয় নদিয়ার শান্তিপুরের পণ্ডিত ভীম তর্কপঞ্চাননের কন্যার সাথে। ভীম তর্কপঞ্চানন ছিলেন শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভুর পার্ষদ অদ্বৈত আচার্যের বংশধর। পরবর্তীকালে লক্ষ্মণ চক্রবর্তীর পুত্র রামগোবিন্দ তাঁর মাতামহের কাছে বড় হন, সেখানেই ভাগবত শাস্ত্র পাঠ করেন এবং আরও পরে শিষ্যদের দীক্ষা দান করে ‘গোস্বামী’ পদবী গ্রহণ করেন। রামগোবিন্দ গোস্বামী তাঁর গর্ভবতী স্ত্রীকে নিয়ে নৌকা করে শান্তিপুর থেকে কলকাতার দিকে যাচ্ছিলেন। নৌকা শ্রীরামপুরের কাছে এলে রামগোবিন্দর স্ত্রীর প্রসব–বেদনা উপস্থিত হয়। নৌকা তীরে ভেড়ানো হলে রামগোবিন্দর স্ত্রী এক পুত্রসন্তানের জন্ম দেন। এই সময়ে শ্রীরামপুর ছিল শেওড়াফুলির রাজাদের অধীনে এবং ঘটনাচক্রে শেওড়াফুলি ছিল পাটুলির রাজাদের কাছারি বাড়ি।শেওড়াফুলি রাজ দানধ্যানের জন্য বিখ্যাত ছিলেন। তাঁর রাজত্বে পরমভাগবত শ্রী রামগোবিন্দ গোস্বামীর পুত্রসন্তান ভূমিষ্ঠ হয়েছে শুনে তৎকালীন রাজা মনোহর রায় ওই সম্পত্তি রামগোবিন্দকে দান করতে গেলে রামগোবিন্দ সেই দান গ্রহণ করতে অস্বীকার করেন। পরে একটি কড়ির বিনিময়ে সেই সম্পত্তি শেওড়াফুলিরাজের কাছ থেকে কিনে নেন। এভাবেই লক্ষ্মণ চক্রবর্তীর আবির্ভাব শ্রীরামপুরে।তাঁর বংশের বংশধর রঘুরাম গোস্বামী এত বিপুল পরিমাণ অর্থের মালিক হয়েছিলেন যে ১৮৪৫ সালে ড্যানিশ সরকার শ্রীরামপুরের উপনিবেশ বিক্রি করে দিতে চাইলে রঘুরাম ১২লক্ষ টাকার বিনিময়ে তা কিনে নিতে চেয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি রঘুরামের দেওয়া মূল্য থেকে এক লক্ষ টাকা বেশী দিয়ে ১৩লক্ষ টাকায় ডাচদেরর কাছ থেকে শ্রীরামপুর কিনে নেয়। রঘুরাম গোস্বামীর পৌত্র কিশোরীলাল কলকাতা হাইকোর্টে ওকালতি করতেন। কিশোরীলাল ‘রায় বাহাদুর’ উপাধিলাভ করেন।পরে বাংলার গভর্নরের শাসন–পরিষদের সদস্য হয়ে ‘রাজা’ উপাধি লাভ করেন। তিনিই বাংলার শাসন–পরিষদের প্রথম ভারতীয় সদস্য। তিনি ‘রাজা’ উপাধি লাভ করার পর থেকেই রঘুরাম নির্মিত প্রাসাদ ‘রাজবাড়ি’ নামে খ্যাত হয়।আনুমানিক অষ্টাদশ শতকের মাঝামাঝি রামগোবিন্দ গোস্বামী এই বাড়ি সংলগ্ন ঠাকুরদালানে দুর্গাপূজা শুরু করেন। গোস্বামী বাড়ির দুর্গাপুজোয় বসত বিরটা সঙ্গীতের আসর।এই রাজবড়ির সঙ্গীতানুষ্ঠানের আসরে গান গেয়ে গেছেন অ্যান্টনি ফিরিঙ্গী, ভোলা ময়রা থেকে বাগবাজারের রূপচাঁদ পক্ষীর দল।এই বাড়িতে ভূতের ভবিষ্যৎ সিনেমাটির শ্যুটিং হয়েছে।
সেন্ট ওলাভ'স চার্চ----
ইউনেস্কোর সম্মান পেয়েছে এই সেন্ট ওলাভ'স চার্চ। ২৫০ বছর বয়সী সেন্ট ওলাভ'স চার্চ ডাচদের অন্যতম নিশান। ১৮০০ সালে শ্রীরামপুরের গভর্ণর ওলে'বি সেন্ট ওলাভ'স চার্চের ইমারত প্রবর্তিত করেন। ওলে'বি এটি সমাপ্ত অবস্থায় দেখে যেতে পারেননি। ১৮০৫-এ তিনি যখন মারা যান তখন চার্চের টাওয়ার ও সামনের অংশ সম্পুর্ণ হয়। ওলে'বির উত্তরসূরি ক্যাপ্টেন ক্রেফটিং অসমাপ্ত ভবনের দায়িত্ব গ্রহণ করেন । ১৮০৬ সালে গির্জা সমাপ্ত হয় । গির্জার স্থাপত্য গুণগতভাবে ডেনিশ নয় বলেই মনে করেন অনেকে। চার্চের বারান্দার ওপরে একটি বর্গক্ষেত্র ঘণ্টা টাওয়ার আছে আর আছে একটি ঘড়ি। ঘড়িটি নদীর ওপাড়ে ব্যারাকপুর শহর থেকেও নাকি দেখা যায়।
মাহেশের রথযাত্রা ----
পুরীর রথযাত্রার পরেই ভারতে দ্বিতীয় বিখ্যাত রথযাত্রা হল মাহেশের রথযাত্রা। এই উৎসব ১৩৯৬ খ্রিস্টাব্দ থেকে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। রথযাত্রার সময় মাহেশে একমাস ধরে মেলা চলে। মাহেশের জগন্নাথদেবের মূল মন্দির থেকে মাসিরবাড়ি মন্দির অবধি জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার রথটি টেনে নিয়ে যাওয়া হয়। ৮ দিন পর উল্টোরথের দিন আবার রথটিকে জগন্নাথ মন্দিরে ফিরিয়ে আনা হয়। মাহেশের জগন্নাথ মন্দির ও রথযাত্রা উৎসবের পিছনে একটি কিংবদন্তি রয়েছে। সেটি হল: চতুর্দশ শতকে ধ্রুবানন্দ ব্রহ্মচারী নামে এক বাঙালি সাধু পুরীতে তীর্থ করতে গিয়েছিলেন। তাঁর ইচ্ছা হয়েছিল যে তিনি জগন্নাথদেবকে নিজের হাতে ভোগ রেঁধে খাওয়াবেন। কিন্তু পুরীর মন্দিরের পাণ্ডারা বাধ সাধায় তিনি তা করতে পারলেন না। তখন দুঃখিত হয়ে তিনি আমরণ অনশনে বসলেন। তিন দিন পরে জগন্নাথদেব তাঁকে দেখা দিয়ে বললেন, "ধ্রুবানন্দ, বঙ্গদেশে ফিরে যাও। সেখানে ভাগীরথী নদীর তীরে মাহেশ বলে এক জায়গা আছে। সেখানে যাও। আমি সেখানে একটি বিরাট দারুব্রহ্ম বা নিম গাছের কাণ্ড পাঠিয়ে দেবো। সেই কাঠে বলরাম, সুভদ্রা আর আমার মূর্তি গড়ে পূজা করো। আমি তোমার হাতে ভোগ খাওয়ার জন্য উদগ্রীব।" এই স্বপ্ন দেখে ধ্রুবানন্দ মাহেশে এসে সাধনা শুরু করলেন। তারপর এক বর্ষার দিনে সেখানে একটি নিমকাঠ ভেসে এল। তিনি জল থেকে সেই কাঠ তুলে তিন দেবতার মূর্তি বানিয়ে মন্দির প্রতিষ্ঠা করলেন।পরবর্তীকালে ১৭৫৫-এ কলকাতার নয়নচাঁদ মল্লিক মাহেশে জগন্নাথ দেবের মন্দির তৈরি করেছিলেন যা আজও রয়েছে। বর্তমান রথটি প্রায় ১২৯ বছরের পুরনো। সে যুগে ২০ হাজার টাকা ব্যয়ে শ্যামবাজারের বসু পরিবারের সদস্য হুগলির দেওয়ান কৃষ্ণচন্দ্র বসু রথটি তৈরি করিয়ে দিয়েছিলেন। রথটিতে রয়েছে মোট ১২টি লোহার চাকা এবং দু'টি তামার ঘোড়া ৫০ ফুট উচ্চতাসম্পন্ন। ইতিহাস বলে সাধক ধ্রুবানন্দ ব্রহ্মচারী স্বপ্ন পেয়ে গঙ্গায় ভেসে আসা নিমকাঠ দিয়ে দারুমূর্তি তৈরি করেন। প্রতি বছর রথের আগে বিগ্রহের অঙ্গরাগ হয়ে থাকে। রথের দিন জিটি রোড দিয়েই রথ টানা হয়। এই রথযাত্রাকে কেন্দ্র করে আজও বসে মেলা। বিশেষ উল্লেখযোগ্য, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়-এর 'রাধারানি' উপন্যাসের প্রেক্ষাপট ছিল এই মাহেশের রথযাত্রা। ইতিহাস বিখ্যাত বহু মনীষীর পাদস্পর্শে ধন্য হয়েছে এই রথযাত্রা। শ্রী চৈতন্য, শ্রী রামকৃষ্ণ এবং মা সরদার পাদস্পর্শে ধন্য মাহেশের এই রথযাত্রা। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও একবার এই রথযাত্রা দেখতে মাহেশে এসেছিলেন। এসব ছাড়াও একনজরে দেখে নিতে পারেন- শ্রীরামপুরের রাম-সীতা মন্দির, বল্লভপুর শ্মশানকালী মন্দির,হেনরী মার্টিন প্যাগোডা, শীতলা মাতা মন্দির, নিস্তারিণী কালীমন্দির,ঝাউতলা বড় মসজিদ,মানিকতলা মানিকপীর দরগা।
Written By অনিরুদ্ধ সরকার
Clicked and re-shared by - Anujit Dasgupta