• Estuary of Teesta and Rangit Rivers

  • Teesta View Point

  • Chatakpur, Darjeeling

  • Chilapata Forest

Thursday, July 25, 2019

অগ্রদ্বীপের গোপীনাথ ধাম ও জামালপুর বাবা বুড়োরাজ মন্দির পরিক্রমা - Agradwip Gopinath Dham and Jamalpur Baba Buroraj Temple

 অগ্রপশ্চাৎ বিবেচনা না করেই, দ্বীপান্তরী হওয়ার ইচ্ছা জেগেছিলো নির্ঘাৎ, সে কারণেই বাস না করেও, অগ্রদ্বীপ যাওয়ার বাসনা হলো আমার। আসল আকর্ষণটি অবশ্য আলাদা- হ্যাঁ, সঙ্কর্ষণ-অনুজের দর্শন। অগ্রদ্বীপের অধিষ্ঠাতা দেবতা শ্রী শ্রী রাধা-গোপীনাথ জিউ। বিগত পাঁচ শতক ধরে তিনি এখানে স্বমহিমায় বিরাজমান। তাই সাত-পাঁচ না ভেবে, সোজা হাতে ক্যামেরা, পিঠে ব্যাগ। আর, মনে এক মধুগীতি- "আনো তব তাপহরা, তৃষা-হরা সঙ্গ সুধা, বিরহিণী চাহিয়া আছে আকাশে - এসো শ্যামল-সুন্দর!"

শ্রী শ্রী গোপীনাথ মন্দির, অগ্রদ্বীপ
                                                শ্রী শ্রী গোপীনাথ মন্দির, অগ্রদ্বীপ

সকাল ৭.১০ এর বর্ধমান লোকাল ধরে, চলে এলাম ব্যাণ্ডেলে- বেলুড় থেকে। এখান থেকে যাত্রা শুরু করতে হবে, কাটোয়া লোকালে। কাটা কাটা যাত্রা হলেও, কাটোয়া লোকালই এক্ষেত্রে যাত্রার শর্টকাট। সময় ৮.১০। সরাসরি ১০ টার মধ্যে পৌঁছে দিলো অগ্রদ্বীপ।

গোপীনাথ মন্দির প্রতিষ্ঠাতা গোবিন্দ ঘোষঠাকুরের সমাধি মন্দির
                                    গোপীনাথ মন্দির প্রতিষ্ঠাতা গোবিন্দ ঘোষঠাকুরের সমাধি মন্দির

স্টেশনে নেমে টো টো করে না ঘুরে, টোটোর সন্ধান করাটাই সমীচীন বলে মনে করলাম। কিছুটা হেঁটে, পেয়েও গেলাম একখানা। ফেরী ঘাটই এখন গন্তব্য। তবে, রাস্তার অবস্থা কিছু জায়গায়, নয় কহতব্য। সভ্য-ভব্য অবস্থায় হাড় ক'খানা নিয়ে গন্তব্যে পৌঁছানোটাই সম্ভাব্য কী না, সে চিন্তাই যাত্রাপথের কিছুটা সময় আমার মুখ্য উপজীব্য হয়ে উঠলো। জীবনের উত্থান-পতনের সাথে তাল রেখে, এ রাস্তাকেও "ওয়ে অফ লাইফ" বলাই যায়- এ নিছক সমাপতনও নয়।
দোল মন্দির, অগ্রদ্বীপ
                                         দোল মন্দির, অগ্রদ্বীপ

সে যাই হোক, আমার রথীটি হাড়গোড় সমেতই আমায় ভাগীরথীর কূলে পৌঁছে দিলো। আমিও অকূলে কূল পেলাম। এখানের ভাগীরথী একেবারেই শীর্ণকায়া, মন্দস্রোতা। নৌকা পারাপারের বন্দোবস্ত আছে, তবে এ বন্দরটি খুব একটা কেতাদুরস্ত নয়। মাটীর একটু ঢালু পাড়, সামলে না চললে হয় গঙ্গাপ্রাপ্তি আর নয়তো মাটী নেওয়া ঠেকানো মুশকিল। সে যাই হোক, অপর পাড়ে পৌঁছে পারানি দিয়ে যাত্রা শুরু করলাম একটি টোটো-তে।
দোল মন্দিরের সুদৃশ্য চূড়া


বেশ মনোরম রাস্তাটি। মোরামে মোড়া, লালে লাল। একটু যেন রুক্ষ , ধূলিধূসরিত পরিবেশ। প্রায় পনেরো মিনিট বাদে গোপীনাথ মন্দিরের সামনে এসে নামলাম।
শ্রী শ্রী রাধা- গোপীনাথ জিউ বিগ্রহ, অগ্রদ্বীপ
                                        শ্রী শ্রী রাধা- গোপীনাথ জিউ বিগ্রহ, অগ্রদ্বীপ

কিন্তু এ কী?? বিধি বাম। আমার অবতরণিকা যে গৌরচন্দ্রিকাতেই উপসংহার প্রাপ্তি হলো! সমতল ছাদ বিশিষ্ট, সুদৃশ্য দালান মন্দিরটি তালা বন্ধ!
শ্রী শ্রী রাধা- গোপীনাথ জিউ বিগ্রহ, অগ্রদ্বীপ
                                            শ্রী শ্রী রাধা- গোপীনাথ জিউ বিগ্রহ, অগ্রদ্বীপ

এতো তত্ত্ব-তালাশের শেষে, এভাবে যে সব সুর বেতালা হয়ে যাবে, ভাবিনি। হঠাৎই একজন পথচলতি মানুষই বাতলালেন পথ- উপযাচক হয়েই। শ্রী গোপীনাথ এখন মূল মন্দিরের সংস্কার কাজ চলায়, অস্থায়ী ভাবে অবস্থান করছেন দোল মন্দিরে। এটি মূল মন্দিরের অদূরেই অবস্থিত।

দোলাচলচিত্ত না হয়ে, সোজা দোল মন্দিরেই যাত্রা করলাম। এটিও কম নয়নাভিরাম নয়- দালান মন্দিরের মতোই আকৃতি, কিন্তু উপরে রয়েছে মনোহর একটি চূড়া।
ভেতরে বেশ ভীড়। বহু ভক্ত সমাগম হয়েছে। তিলমাত্র কালবিক্ষেপ না করে, যথাসম্ভব শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে, বসলাম বিগ্রহের সামনে!
নটবরের বরানন দেখে আমি তখন স্পিকটি নট! কী অপূর্ব, করুণাঘন মোহনমূর্তি! কোমরের ত্রিভঙ্গ, পরনের পীতধড়া, ঈষৎ বঙ্কিম অধরে শুচিস্মিত হাসি, আয়ত নয়ন, স্বর্ণমুরলী, বর্হাবতংস সহ এক প্রেমঘন ছবি শ্রী শ্রী গোপীনাথ জিউ-এর। পাশে শ্রীরাধারানীর মূর্তিটিও অনুপম। দেবী তপ্তকাঞ্চনবর্ণা, শুভস্মিতা, প্রফুল্লবিম্বাধরা, বরাননা। এই মূর্তি দেখে চোখ আর মনের পিপাসা বেড়ে গেলো অনেকখানি। কিন্তু ভাগ্যের পাশা যে উল্টে যাবে, তা ভাবতে পারিনি তখনো। সে প্রসঙ্গে পরে আসছি।
মন্দিরের প্রতিষ্ঠাকাল আনুমানিক ষোড়শ শতক। মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্যদেবের এক পার্ষদ, শ্রী গোবিন্দ ঘোষঠাকুর এই মূর্তি ও মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা। এক টুকরো মুখশুদ্ধি সঞ্চয়ের কারণে, গৃহত্যাগী পরম বৈষ্ণবের "মাধুকরী " ব্রতবিচ্যুত হন তিনি। অতঃপর, মহাপ্রভুর আদেশেই তিনি অগ্রদ্বীপে এই মনোহর মূর্তিটি স্থাপন করে, সংসারী হয়েও কৃষ্ণধ্যানে মনোনিবেশ করেন। তাঁর শিশুপুত্র মাত্র পাঁচ বছর বয়সে মারা যাওয়ায়, তিনি গোপীনাথ জিউকেই সন্তানস্নেহে পূজার্চনা করতে থাকেন। কালের নিয়মে তিনি যখন মৃত্যুশয্যায়, কথিত আছে, স্বয়ং গোপীনাথ জিউ তাঁর আত্মার শান্তির জন্য পারলৌকিক ক্রিয়াকর্ম স্বহস্তে সম্পাদন করবেন বলে স্বপ্নাদেশ দেন। কোনো এক বারুণী স্নানের পূর্বে, চৈত্র একাদশী তিথিতে ঘোষঠাকুর গোলোকধামে গমন করেন। অতঃপর, সেই সময় থেকে অদ্যাবধি, পরম করুণাময় গোপীনাথ জিউ, শ্রাদ্ধের উপযুক্ত পোশাক পরে কাছা নিয়ে, উক্ত তিথিতে ঘোষঠাকুরের শ্রাদ্ধ করেন। কাতারে কাতারে লোক আসে প্রতি বছর, এ সময়ের বিরাট মেলা ও এই অপার্থিব শ্রাদ্ধানুষ্ঠান দেখতে। তাঁরা বাড়ী ফেরেন বারুণী স্নান সেরে। বিশ্বদেবের এই বাৎসল্যরীতি, এই করুণা, এই মন-ছোঁয়া সহজিয়া আত্মীয়তার মাধুর্য, সত্যি এই মন্দিরকে দিয়েছে অনন্য এক মাত্রা। মূল মন্দিরের পাশেই একটি অনাড়ম্বর মন্দিরে সমাহিত আছেন প্রতিষ্ঠাতা গোবিন্দ ঘোষঠাকুর। গোপীনাথের মনলোভা রূপ, কখনো শোভাবাজারের রাজা নবকৃষ্ণ দেব, কখনো বা পাটুলীর জমিদার বংশ, এমনকি, পূর্ববঙ্গের(অধুনা বাংলাদেশ) বেশ কিছু সম্ভ্রান্ত ভক্তকূলকে আকৃষ্ট করেছে। বিভিন্ন সময় গোপীনাথ জিউকে তাঁরা নিজ গৃহে, বা বাসস্থানে নিয়ে গেছেন- ছলে, বলে, কৌশলে। কিন্তু, ভাগ্যের পরিহাসে ভাগ বসাতে পারেননি কেউই, অগ্রদ্বীপবাসীদের সৌভাগ্যে৷ কোনো না কোনোভাবে, আবার ঠিক স্বস্থানে ফিরে এসেছেন দেবতা। অহঙ্কারীর স্বর্ণদেউল নয়, কপটতাহীন ভক্তহৃদয়েই তাঁর অধিষ্ঠান।
পূজার্চনা, শ্রীকৃষ্ণ স্তোত্রপাঠ, যুগলস্তোত্রপাঠ, মহানাম জপ, রাধাস্তোত্র পাঠ ইত্যাদি সুষ্ঠুভাবে সুসম্পন্ন হলে, পা বাড়ালাম অগ্রদ্বীপ স্টেশনের দিকে। মন্দিরের পুরোহিত মশাইয়ের রেওয়াজি কণ্ঠস্বরে ওস্তাদি ঢংয়ের মার্গসঙ্গীত, ভজন ইত্যাদি আরাত্রিকের সময়কে মাতিয়ে তুলেছিলো।
এবার আসি আমার দুর্ভাগ্যের কথায়। স্টেশন থেকে আসার সময়, প্ল্যাটফর্মে টাঙানো টাইম চার্টে সরাসরি দেখলাম, দুপুর ১.১৪ তে একটি ব্যাণ্ডেল-কাটোয়া লোকাল রয়েছে। কিন্তু ননীচোরা গোপী যে ট্রেনের টাইমটেবলেও পুকুরচুরি করে, আমার মাথায় ভালোমতো টুপি পরাবেন, তা তখনও বুঝিনি। ট্রেনটি ক্যানসেল্ড, পরের ট্রেন ৩.৩৯ এ!
এতোক্ষণ বসে থাকা সম্ভব নয়। আমার আবার নবদ্বীপে সেদিনই, বিখ্যাত "সাত শিবের পৌষল্লা" অনুষ্ঠানটি দেখতে যাওয়ার কথা। কিন্তু, এখন সে-সব বিশ বাঁও জলে। কারণ, ৩.৩৯ এর গাড়ী ধরে যেতে হলে, অন্তত চারটের আগে বিষ্ণুপ্রিয়া হল্ট পৌঁছনো যাবে না। ততোক্ষণে অনুষ্ঠানের অণুমাত্রও অবশিষ্ট থাকবে না।
বিরক্তিতে মনটা ভরে উঠলো। তাই, দ্বিরুক্তি না করে ভাবলাম, "চলো মন রূপনগরে"! রূপসাগরের অরূপরতনের সন্ধান দিয়েছিলেন সাহিত্যিকপ্রবর শ্রী সমরেশ বসু। অগ্রদ্বীপের কাছেই, পাটুলীর জামালপুর গ্রামে অবস্থান করছেন অনাদিলিঙ্গ শিব, বাবা বুড়োরাজ! ধর্মরাজ এর " রাজ", আর বুড়োশিবের "বুড়ো"- এই দুই মিলিয়ে " বুড়োরাজ!" ইনি গ্রামদেবতা হলেও, আলোচ্য স্থানে তিনি অত্যন্ত বিখ্যাত, ও প্রাচীন।

শ্রী শ্রী বুড়োরাজ মন্দির, জামালপুর, পূর্ব বর্ধমান
                                 শ্রী শ্রী বুড়োরাজ মন্দির, জামালপুর, পূর্ব বর্ধমান

প্রাচীনত্বের বিচারে জামালপুরের বুড়োরাজ, অগ্রদ্বীপের গোপীনাথ জিউ-এর সমসাময়িক। তবে, এই লিঙ্গের মূল প্রতিষ্ঠাতা কে, তা জানা যায়নি। এ কারণেই এঁকে "অনাদিলিঙ্গ" নামে ডাকা হয়। কিংবদন্তী অনুসারে, জামালপুরের পার্শ্ববর্তী গ্রাম নিমদহের এক সম্পন্ন গোপালক, শ্রী যদু ঘোষ এই মূর্তির আবিষ্কারক। কথিত আছে, তাঁর দুগ্ধবতী একটি গাভী শ্যামলীর দুধ হঠাৎ করেই কমে যেতে থাকে একসময়৷ বহু অনুসন্ধান করেও এর ব্যাখ্যা খুঁজে না পেয়ে, একদিন যদু ঘোষ নিজেই গোপনে অনুসরণ করেন শ্যামলীকে। অপার বিস্ময়ে তিনি দ্যাখেন, চারণক্ষেত্র থেকে গোপনে শ্যামলী পলায়ন করে, গভীর জঙ্গলে প্রবেশ করে, একটি মৃত্তিকাস্তূপের ওপর অঝোরধারায় দুধ ঢালছে! এই অলৌকিক ঘটনা লক্ষ্য করে, তিনি গ্রামের প্রাচীন ও বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণ শ্রী মধুসূদন চট্টোপাধ্যায়কে আনুপূর্বিক সমস্ত বিবরণ খুলে বলেন। স্থানীয় বাগদি সম্প্রদায়ের সহায়তায় তাঁরাই শিয়াকুল-বাবলা ইত্যাদি গাছের ঘন জঙ্গল পরিষ্কার করে, বাবা বুড়োরাজের শিলামূর্তিটি আবিষ্কার করেন সেই মৃত্তিকাস্তূপের ভেতর থেকে। বাবার স্বপ্নাদেশ অনুযায়ী, একটি বাহুল্যবর্জিত খোড়ো ঘরে মাটীর মেঝেতে, একটি পোহানের মতো গহ্বর খুঁড়ে তাঁর আরাধনা শুরু করা হয়। শুধু পরমান্ন, অর্থাৎ পায়েস দিয়েই এখানে দেবতার ভোগদান করার বিধি। প্রথম পূজা যেহেতু যদু ঘোষের নামেই হয়েছিলো, তাই আজও সেই রীতি বজায় আছে। এখনো বাৎসরিক গাজনের সময় প্রথম বলির পশুটি আসে নিমদহ গ্রামবাসীদের তরফ থেকেই। বুড়োরাজের পূজায় অগ্রাধিকারও তাঁরাই পান- কেননা যদু ঘোষের কোনো বংশধরই আজ আর জীবিত নেই। মধুসূদন চট্টোপাধ্যায়েরও জামাতা বংশ তথা বন্দ্যোপাধ্যায়রাই এখন এই ঠাকুরের সেবায়েত, কারণ চট্টোপাধ্যায় বংশও আজ কালের গর্ভে নিশ্চিহ্ন। একই লিঙ্গে এখানে ধর্মঠাকুর, আর শিবের অবস্থান। একই থালায় নিবেদিত নৈবেদ্যর মধ্যে একটি সূক্ষ্ম দাগ কেটে, দুটি ভাগ যথাক্রমে সূর্য ও শিবমন্ত্রে নিবেদন করা হয় দুই দেবতাকে। আশ্চর্যের ব্যাপার এই যে, শিবের নামে নয়, বরং ধর্মঠাকুরের নামে এখানে একাধিক যূপকাষ্ঠে অজস্র বলিদান করা হয়। পাঁঠা, মোষ, হাঁস, মুরগী থেকে শূকর- সব রকমই বলির বিধি আছে। সমাজের তথাকথিত অন্ত্যজ সম্প্রদায়ের মানুষই অত্যন্ত জাগ্রত ও বিখ্যাত, প্রাচীন এই দেবতার মূল ভক্ত। এই দেবতার গাজন হয় বুদ্ধপূর্ণিমার সময়ে। তখন, ধারালো অস্ত্র হাতে শতসহস্র ভক্তের সমাগম, দণ্ডি কাটা, লাঠিখেলা, ঢিল বাঁধা, হত্যা দেওয়া, বাণ ফোঁড়ানো, মেলা, বলিদান ইত্যাদির ফলে, নিরিবিলি পল্লীগ্রামটি সরগরম হয়ে ওঠে - মানুষের মহামিলন ক্ষেত্রে পরিণত হয়। এছাড়াও, শিবরাত্রি, মাঘী ও বৈশাখ পূর্ণিমাতেও হয় মহোৎসব।

শ্রী শ্রী বুড়োরাজ মন্দিরের ভেতর গোপালমূর্তি।


এ সব তথ্য জানতে পেরেছিলাম শ্রী সমরেশ বসু-র উপন্যাস পড়েই। তাই ভাবলাম, শৈবতীর্থ ভ্রমণেচ্ছা বিকল্প পথে পরিপূর্ণ করতে, এই মন্দিরের অনুকল্প নেই।
একজন সহৃদয় মুসলিম টোটোচালক সহায়তা করলেন আমার৷ তাঁর দিকনির্দেশ অনুযায়ী, প্রথমে অটোযোগে গড়াগাছা মোড় এলাম, অগ্রদ্বীপ স্টেশন থেকে। তারপর সেখান থেকে যাওয়ার কথা ছিলো ছাতনি-র মোড়। কিন্তু, বহুক্ষণ অপেক্ষা করেও যখন বাসের ছাতটুকু দ্যাখার আশাও "নিল" বলে বুঝলাম, তখন প্রায় দ্বিগুণ ভাড়ায় এক টোটোচালককে রাজী করিয়ে, সরাসরি এলাম পাটুলী স্টেশনে। অনভিজ্ঞতার দরুণ, এখানেই হয়ে গেলো মহা ভুল। কারণ পাটুলী স্টেশন থেকে আবারও যখন অটো ভাড়া করে মন্দিরে যাচ্ছিলাম, পথে ঐ ছাতনির মোড়ই পড়লো। দোষটা আমারই, কারণ আমিই টোটোচালক দাদাকে প্রথমে ছাতনির মোড় যাবার কথা বললেও, পরে যখন ওনাকে জানাই যে আমি পাটুলী স্টেশন যাবো, উনি তখন শর্টকাটে বড়ডাঙা থেকে পাটুলীর রাস্তা ধরেছিলেন- যা কিনা ছাতনির মোড়-এর অনেকখানি আগে। জামালপুর যেতে হলে যে ছাতনির মোড় থেকেই টোটো বা অটো পেয়ে যেতাম, সেটা পরে জানলাম। আসলে, "চলো মন রূপনগরে"-তে লেখকবর্ণিত পথটি হুবহু অনুসরণ করাতেই এই প্রমাদ ঘটেছে।
বিভিন্ন আকৃতির গোপাল মূর্তি, শ্রী শ্রী বুড়োরাজ মন্দির
                                     বিভিন্ন আকৃতির গোপাল মূর্তি, শ্রী শ্রী বুড়োরাজ মন্দির

সে যাই হোক, পাটুলী স্টেশন থেকে জামালপুর অনেকখানি পথ, অবস্থাও তথৈবচ। কিন্তু, চারপাশের দৃশ্য খাঁটি অ্যাপেটাইজার। গম্ভীর ভাবে দাঁড়িয়ে থাকা প্রাচীন শালবন, ঝিমঝিমে জলের একটি ছোট্ট ক্যানেল, " সঙ্গীবিহীন অন্ধকারে" একা দাঁড়ানো মাছরাঙাটি, পূর্বরাগের আবেশে উল্লসিত সর্ষেক্ষেত- শীতকালীন আমেজের নাম লিখেছে শেষ দুপুরের মিঠে রোদ্দুরে। এই আবেশে বুঁদ হয়ে বহু পথ পেরিয়ে, অবশেষে এসে নামলাম গন্তব্যে।
পূজা-আর্চার দোকান, মণিহারি সামগ্রীর দোকান ইত্যাদি মিলিয়ে স্থানটি জমজমাট। নাটমন্দির পেরিয়ে প্রাঙ্গণ, তার শেষে একটি ছোট্ট কুটির। এখানেই নিকোনো মাটীর গহ্বরের মধ্যে দেবতার অবস্থান। আমি যখন গেছিলাম, তখন পূজা শেষে মন্দির সাফসুতরো করার কাজ চলছিলো। তবু, আমার অনুরোধে পুরোহিতমশাই আমার পূজাটি দিনের শেষ পূজা হিসেবে উৎসর্গ করলেন। দেবশিলার আকৃতি অনেকটা অশোকস্তম্ভের মতো- একদিকটা কিছুটা উঁচু, অপরদিকে একটি অগভীর গর্ত। যথাক্রমে এই দুটি দিক, বুড়োশিব ও ধর্মরাজের প্রতীক। মাঝখানের অংশটিতে নানারকম আঁকিবুঁকি দাগ।

শ্রী শ্রী বুড়োরাজ মন্দিরের খড়ের ছাত
                                                        শ্রী শ্রী বুড়োরাজ মন্দিরের খড়ের ছাত

মন্দিরের পাশে অন্য একটি জায়গায় পালে পালে গোপাল মূর্তি দেখতে পেলাম। মন্দিরের ওপর অশ্বত্থ ও নিমগাছের ছায়া, পাশে একটি পুকুর, যূপকাষ্ঠে উৎসর্গীকৃত বলির পশুর শুকনো রক্তধারা, দুধ ও গঙ্গাজলের স্রোত- সবটা মিলিয়ে এক ভয়ঙ্কর সুন্দর পরিবেশ। পাশের মাঠে দলে দলে তীর্থযাত্রী ঢাক বাজিয়ে দেবতার মাহাত্ম্য কীর্তন করছে। কোথাও আবার চলছে বনভোজনের ঢঙে বলির মাংসের মহাপ্রসাদ গ্রহণ। আদিত্য হৃদয় স্তোত্রপাঠ, শিবরক্ষা ও শিবপঞ্চাক্ষর স্তোত্রপাঠ শেষে, রওনা হলাম পাটুলী স্টেশনের পথে।
যুগলবিগ্রহ, অনাদিলিঙ্গ, শ্রী শ্রী বুড়োরাজ ঠাকুর
                                        যুগলবিগ্রহ, অনাদিলিঙ্গ, শ্রী শ্রী বুড়োরাজ ঠাকুর

এখানে উল্লেখ্য, এরপর আমি নবদ্বীপে পোড়ামাতলা এবং যোগনাথতলা মন্দিরও দর্শন করেছিলাম, কিন্তু এই মন্দিরগুলির কাহিনী সর্বজনবিদিত হওয়ায়, এবং ইতিমধ্যেই সুদীর্ঘ এই আলোচনার অনাবশ্যক কলেবর বৃদ্ধির আশঙ্কায়, এখানেই ইতি টানছি। শুধুমাত্র ছবিগুলিই থাকলো স্মারক হিসেবে।
সুপ্রাচীন এই দুই মন্দির মানবমিলনের মহাতীর্থ। ভক্তপ্রাণ পায় ভক্তির ফল্গুধারা, ইতিহাসবিদ পান ঐতিহাসিক গবেষণার উপাদান, মানবপ্রেমী পান "প্রকৃতির গভীরে জীবলীলা"-র সন্ধান। আর আমি শুনেছি পথের গান, ঘর ছাড়ার গান, রূপনগরের সন্ধান। তাই আমার সনির্বন্ধ অনুরোধ থাকবে গ্রুপের সমস্ত মাননীয় ভ্রমণবিলাসীদের কাছে, একবার এই " আগুনের পরশমণি " প্রাণে ছুঁইয়ে দ্যাখার!
★★পথনির্দেশ★★
▪️▪️শ্রী শ্রী গোপীনাথ মন্দির ▪️▪️
🎇হাওড়া-কাটোয়া বা শিয়ালদহ-কাটোয়া রেলপথে, কাটোয়ার দু'টি স্টেশন আগে অগ্রদ্বীপে নেমে, টোটো বা অটো ধরে অগ্রদ্বীপ ঘাট এসে, নৌকোয় ভাগীরথী পেরোতে হবে। অন্য পাড়ে উঠে আবারও টোটো ধরে, মন্দির যাওয়া সম্ভব। এছাড়া, শিয়ালদহ-লালগোলা রেলপথে, বেথুয়াডহরি স্টেশনে নেমে, বাসেও এখানে আসা যায়।
▪️মন্দির খোলা ও বন্ধের সময়:
১. সকালে ৮-১২ টা
২.বিকেলে ৫-৮ টা।
🎇 জামালপুর শ্রী শ্রী বুড়োরাজ মন্দির🎇
▪️ ঐ একই রেলপথে, পাটুলী স্টেশন থেকে টোটো বা অটোযোগে সরাসরি মন্দির আসা যায়৷ অথবা, কৃষ্ণনগর বা মায়াপুর থেকে, সরাসরি জামালপুরের বাসেও আসা সম্ভব। তবে অগ্রদ্বীপ স্টেশন থেকে আসতে হলে, প্রথমে টোটো বা অটোয় গড়াগাছা মোড়, তারপর বাস ধরে ছাতনির মোড়, এবং সেখান থেকে আবারও টোটো বা অটোয় বুড়োরাজতলা আসাটাই সুবিধাজনক।
🎇মন্দির খোলা ও বন্ধের সময়🎇
প্রতিদিন সকাল ৮ টা-দুপুর ১.৩০টা। শুধু প্রতি সোমবার করে দুপুর ৩.৩০ টে অবধি মন্দির খোলা। এই মন্দির সন্ধ্যা বেলায় বন্ধ থাকে।
🎇তথ্যাদির ঋণস্বীকার 🎇
১." বাংলার মন্দিরের খোঁজে "-অধ্যাপক শ্রী শ্যামল কুমার ঘোষ।
২. " চলো মন রূপনগরে"- শ্রী সমরেশ বসু।
©️ অর্ঘ্য বিশ্বাস
🎇উৎসাহী পাঠকদের জ্ঞাতার্থে জানাই, যে কেউ চাইলে নির্দ্বিধায় এই লেখাটি শেয়ার, অথবা নামোল্লেখ সহ কপি করতে পারেন, আলাদা করে অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন নেই।


Arghya Biswas

Saturday, July 20, 2019

কাফেরগাঁও, কালিম্পং - Kafer Gaon, Kalimpong

লোঁলেগাও থেকে ৫ কিলোমিটার ডাইনহিলে, কাঞ্চনজঙ্ঘা কে একদম একান্তে কাছে পাওয়ার এক অচেনা ঠিকানা কাফের। কালিম্পং থেকে কাফেরের দূরত্ব প্রায় ৪৫ কিমি। চারিদিকে শুধু সবুজে সবুজ আর একগুচ্ছ পাহাড়ি পাখির সাথে দুটো অলস দিন কাটাতে চাইলে ঘুরে যান কাফের থেকে।

জনবসতি তেমন নেই বললেই চলে, কাফেরের পথে চলতে চলতে নিজেকেই মনে হবে যেন এই বিপুল সবুজ সাম্রাজ্যের অধিকারী আপনি। নিরিবিলিতে দুদিনের ছুটি যেখানে কোন ব্যাস্ততা নেই, অফিস-স্কুলের তাড়া নেই, গাড়ীর হর্ণ নেই এমন এক জায়গা হতে পারে কাফেরগাঁও। এখান থেকে প্রায় বিনা বাধায় কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখবার অভিজ্ঞতা হবে, তাছাড়া ভুটান, কালিম্পং প্রভৃতি জায়গা গুলিও দেখা যায় কাফের থেকে। কাফের এ একটাই হোমস্টে আছে। থাকা- খাওয়ার ব্যবস্থা বেশ ভালো। আতিথিয়তাও চমৎকার, সবমিলিয়ে দুদিনের ছুটি কাটাতে ঘুরে যেতেই পারেন কাফের থেকে।


কাফের এর আশপাশে দর্শনীয় বলতে, খুব কাছেই লোঁলেগাও, দিনে দিনে ঘুরে আসতে পারেন। এখান থেকে লাভার দূরত্ব ২৪ কিমি। চারখোলের দূরত্ব ১৩ কিমি, যদিও রাস্তাটি বেশ দূর্গম, তবে এ এক মনোরম জায়গা। চারখোলে পৌছলে পথের ক্লান্তি ভুলে যেতে বাধ্য। কোলাখাম, রিকিশাম, চুখিম, পেডং, রিশপ সব গ্রাম গুলি এখান থেকে ঘুরে আসা যায়।
এই অঞ্চলগুলি থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা ও তার পার্শ্ববর্তী পিকগুলি এবং ইস্টার্ন হিমালয়ার ভিউ অসাধারন।
এছাড়াও লোঁলেগাও এর ঝান্ডিদারা থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা এবং এভারেস্টের ওপর সূর্যোদয় দেখা এক স্বর্গীয় অনুভুতি।


নিউ জলপাইগুড়ি থেকে কাফেরগাঁও এর দূরত্ব ১২৫ কিমি, গাড়ীতে সময় লাগে ৪-৫ ঘন্টা। গাড়ী ভাড়া আনুমানিক ৪০০০-৪৫০০ টাকা। এছাড়া মালবাজার থেকেও এখানে আসা যায়।
হোমস্টে খরচ ১৫০০/- জনপ্রতি প্রতিদিন (নূন্যতম দুজন) সমস্ত মিল সহ।
06291538880


Himalayan Retreat

Tuesday, July 16, 2019

সিলেরি গাঁও আর ইচ্ছে গাঁও, কালিম্পঙ - Sillery Gaon and Icche Gaon, Kalimpong

 আজ পাহাড় ঘেরা রূপকথার দু'ই গাঁ য়ের গল্প বলবো।গ্রাম দুটির নাম- সিলেরি গাঁও আর ইচ্ছে গাঁও।যেখানে নিশ্চুপ- নিস্তব্ধতার সঙ্গীত বেজে যায় সর্বত্র! পাহাড় এখানে ফিসফিসিয়ে মেঘেদের সাথে কথা বলে, সূর্যের নরম স্পর্শে ঘুম ভেঙ্গে এই গাঁ বলে, চলো বেড়িয়ে পড়ি! শিশির যেন পা ভিজিয়ে নরম মাটির পথে চলতে সাহায্য করে!ভোরের মোরগের ঘুম ভাঙ্গানিয়া ডাক বলে,"উঠে পড় সব্বাই"!

গ্রাম দু'টির অবস্থান কালিম্পঙ এ।প্রথমে বলি সিলেরি গাঁ এর কথা।এর উচ্চতা প্রায় 6000ft.পাইনে ঢাকা এই গ্রামটি কালিম্পঙ থেকে প্রায় 23 km দূরে।পেডং- ঋষি রোড দিয়ে গিয়ে পাহাড়ি পথে প্রায় 7 কিমি আঁকা-বাঁকা পথ পেড়িয়ে এই ছোট্ট গাঁও।এই সাত কিমি পথটি যেন 'মাইকেল জ্যাকসন সরণি'....এই পথে নাচতে না জানা লোক ও নাচের কয়েকটি স্টেপ জেনে ফেলবে!....পেটের মধ্যে হতে থাকবে "মুন ওয়াক"।তবে দুপাশে পাইনের বন,সেদিকে মন দিলে পথের কষ্ট কিছুটা লাঘব হতে পারে!আসলে বৃষ্টি ধারায় পথের পিচ দ্রুত উঠে গিয়ে পথ হয়েছে কন্টকময়।যাইহোক স্বতঃস্ফূর্তভাবে নাচতে নাচতে আমরা সিলেরি গাঁওতে প্রবেশ করলাম।

অতি ছোট্ট একটা গ্রাম, বড়জোর 50/60টি বাড়ি।প্রায় প্রতিটি বাড়ির সাথেই ছোট হোমস্টে।না,এগুলিতে সব সুযোগ সুবিধা পাওয়া যাবেনা,.....তবে পাওয়া যাবে সবার প্রিয় কাঞ্চনজঙ্ঘা......চারিদিকের সবুজ গাছে ভরা প্রাকৃতিক দৃশ্যকে।ও হ্যা ফ্রি তে কিছু জোঁকের কামড়কেও।আমাদের বাচ্চা-বড় অনেককেই জোঁক বাবাজী ধরেছিলেন!শেষে বাচ্চাদের জোকাতঙ্ক ও হয়ে গিয়েছিল।

তবু অসাধারন এই গ্রাম! সিলেরি গাঁও থেকে ঘুরে নেওয়া যায় ঋষিখোলা নদী, আর পেডং।প্রথমে বলি ঋষি খোলার('খোলা'মানে হল নদী) কথা।

নামটা মুনি-ঋষির মত গম্ভীর শোনালেও নদীটি এখানে উচ্ছল তরুণীর মত বয়ে চলেছে।তিস্তার শাখানদী সে। তিস্তা হয়তো কোথাও ধীর স্থির শান্ত,- কিন্ত এ নদী বড়ই চঞ্চলা।আমরাও বা চুপ থাকি কেন, সদলবলে খাড়া পাড় পেড়িয়ে নদীতে নেমে পড়লাম।

নদীর ঠান্ডা জলে পা ভিজিয়ে মনে মনে বললাম --
"নদীর শব্দ শুনি আমি
নদী তুমি কোন কথা কও"!!
এবার নিয়ে যাব পেডং এ।কালিম্পং থেকে আলগারা হয়ে যেতে হয় পেডং এ।উচ্চতা 4000ft.পেডং এ রয়েছে পেডং মনাষ্ট্রী।

                                                                  
পেডং মনাষ্ট্রী

বড় প্রশান্তি আসে এই মনাষ্ট্রীতে.....!সুন্দর গাছ-গাছালিতে ঢাকা এই মনাষ্ট্রী ছাড়িয়ে আমরা যখন পাইনে ঢাকা পথ পেড়িয়ে রামধূরাতে এলাম তখন আবার দেখা হল তিস্তার সাথে।যদিও সারাটা পথে সে ছিল, পাহাড়ের বাঁকে লুকোচুরি খেলছিল!!সিলারি গাঁও আসার আগেই আমরা তিস্তা -রঙ্গিতের মিলনস্থল (Lover's Point)দেখে ফেলেছি।

তাই হয়তো লজ্জায় সব জায়গায় দেখা দিচ্ছিল না তবু বলবো....
"তিস্তা কোথায় জানতে চায় কেউ কখনো যদি
বলবো আমার মনের ভিতর এখন তিস্তা নদী"।
এবার আমরা নিয়ে যাব ইচ্ছে গাঁওতে।কি মিষ্টি নাম না ইচ্ছে গাঁও।

" ইচ্ছে করে পাহাড় তোকে একটুখানি ছুঁই
ইচ্ছে করে পাহাড় তোকে মনের কথা ক ই!"
ইচ্ছে গাঁওতে এসে এরকমই মনে হবে সবার!হাত বাড়ালেই ইচ্ছেমত পাহাড় ছোঁ ওয়া যায়।
সিলেরি গাঁও থেকে দূরত্ব মাত্র 3 কিমি। এর উচ্চতা5800ft. পাহাড়ি পথে ট্রেক করে যাওয়া যায় এইপথ। আমরা সে চেষ্টা আর করিনি কারন সেই জোঁক!


ছোট্ট গাঁ টার কথা বলি,এলাচ ক্ষেত আর ভূট্টা ক্ষেতের পাশ দিয়ে চলে গেছে আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ।সিঁড়িও উঠে গেছে, কিছুটা পথ উঠে মনে হল আরে ঐ পাহাড়ের ঐ দিকটা কাশ্মীরের মত লাগছে না!(নিশ্চয় ই ভাবছো পাহাড় পাহাড় করে মেয়েটার বেশি আদিখ্যেতা!)কিন্তু পাইনের সারি আর সবুজাভ সৌন্দর্য্য কাশ্মীর কে মনে করিয়ে দিচ্ছিল।ছোট্ট বাড়ি দিয়ে সাজানো পাহাড়ি এই গাঁ।অনেক উচুঁতে উঠলে তিস্তার সাথেও দেখা মেলে।তাইতো "-পাহাড়ের প্রেমে ডুবে আছি
পাহাড়ের মাঝে হারিয়েছি আমি".........!

Sampa Basu Das

Monday, July 1, 2019

বর্ধমানের 108টি শিব মন্দির - 108 Shiv Mandir Burdwan, Kalna

 সক্কালবেলায় হাওড়া কাটোয়া লোকাল ট্রেনে কালনা পৌঁছে দেখে নেওয়া যেতে আশেপাশের বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান।তার মধ্যে প্রথমেই দেখা যেতে পারে 108 শিব মন্দির।

বর্ধমানের মহারাজা তেজ চন্দ্র বাহাদুরের বানানো 108টি শিব মন্দির। সব মন্দির গুলো একই দেখতে।
তবে বিশেষ একটি বৈশিষ্ট্য এই মন্দিরকে অন্য সব মন্দির থেকে একে আলাদা করে রেখেছে। তাই হল মন্দির গুলো 20টি বৃত্তে বিভক্ত। বাইরের বৃত্তে রয়েছে 74টি মন্দিরে রয়েছে একটি কৃষ্ন ও একটি শুভ্র বর্ণের শিবলিঙ্গ।আর ভিতরের ছোটবৃত্তে রয়েছে 34টি মন্দির যেখানের প্রত্যেকটি শিব শুভ্র বর্ণের।
কিন্তু 112টি মোট মন্দির থাকলেও শিবলিঙ্গ যুক্ত মন্দির কিন্তু 108টি।
লকডাউনের পর এই সবে মন্দির দর্শন শুরু হয়েছে। অনেক আগাছা রয়েছে এখানে,নতুবা আরোও সুন্দর লাগতো জায়গাটি।






Poushali Bhattacherjee Palit