আজ পাহাড় ঘেরা রূপকথার দু'ই গাঁ য়ের গল্প বলবো।গ্রাম দুটির নাম- সিলেরি গাঁও আর ইচ্ছে গাঁও।যেখানে নিশ্চুপ- নিস্তব্ধতার সঙ্গীত বেজে যায় সর্বত্র! পাহাড় এখানে ফিসফিসিয়ে মেঘেদের সাথে কথা বলে, সূর্যের নরম স্পর্শে ঘুম ভেঙ্গে এই গাঁ বলে, চলো বেড়িয়ে পড়ি! শিশির যেন পা ভিজিয়ে নরম মাটির পথে চলতে সাহায্য করে!ভোরের মোরগের ঘুম ভাঙ্গানিয়া ডাক বলে,"উঠে পড় সব্বাই"!
গ্রাম দু'টির অবস্থান কালিম্পঙ এ।প্রথমে বলি সিলেরি গাঁ এর কথা।এর উচ্চতা প্রায় 6000ft.পাইনে ঢাকা এই গ্রামটি কালিম্পঙ থেকে প্রায় 23 km দূরে।পেডং- ঋষি রোড দিয়ে গিয়ে পাহাড়ি পথে প্রায় 7 কিমি আঁকা-বাঁকা পথ পেড়িয়ে এই ছোট্ট গাঁও।এই সাত কিমি পথটি যেন 'মাইকেল জ্যাকসন সরণি'....এই পথে নাচতে না জানা লোক ও নাচের কয়েকটি স্টেপ জেনে ফেলবে!....পেটের মধ্যে হতে থাকবে "মুন ওয়াক"।তবে দুপাশে পাইনের বন,সেদিকে মন দিলে পথের কষ্ট কিছুটা লাঘব হতে পারে!আসলে বৃষ্টি ধারায় পথের পিচ দ্রুত উঠে গিয়ে পথ হয়েছে কন্টকময়।যাইহোক স্বতঃস্ফূর্তভাবে নাচতে নাচতে আমরা সিলেরি গাঁওতে প্রবেশ করলাম।
অতি ছোট্ট একটা গ্রাম, বড়জোর 50/60টি বাড়ি।প্রায় প্রতিটি বাড়ির সাথেই ছোট হোমস্টে।না,এগুলিতে সব সুযোগ সুবিধা পাওয়া যাবেনা,.....তবে পাওয়া যাবে সবার প্রিয় কাঞ্চনজঙ্ঘা......চারিদিকের সবুজ গাছে ভরা প্রাকৃতিক দৃশ্যকে।ও হ্যা ফ্রি তে কিছু জোঁকের কামড়কেও।আমাদের বাচ্চা-বড় অনেককেই জোঁক বাবাজী ধরেছিলেন!শেষে বাচ্চাদের জোকাতঙ্ক ও হয়ে গিয়েছিল।
তবু অসাধারন এই গ্রাম! সিলেরি গাঁও থেকে ঘুরে নেওয়া যায় ঋষিখোলা নদী, আর পেডং।প্রথমে বলি ঋষি খোলার('খোলা'মানে হল নদী) কথা।
নামটা মুনি-ঋষির মত গম্ভীর শোনালেও নদীটি এখানে উচ্ছল তরুণীর মত বয়ে চলেছে।তিস্তার শাখানদী সে। তিস্তা হয়তো কোথাও ধীর স্থির শান্ত,- কিন্ত এ নদী বড়ই চঞ্চলা।আমরাও বা চুপ থাকি কেন, সদলবলে খাড়া পাড় পেড়িয়ে নদীতে নেমে পড়লাম।
নদীর ঠান্ডা জলে পা ভিজিয়ে মনে মনে বললাম --
"নদীর শব্দ শুনি আমি
নদী তুমি কোন কথা কও"!!
এবার নিয়ে যাব পেডং এ।কালিম্পং থেকে আলগারা হয়ে যেতে হয় পেডং এ।উচ্চতা 4000ft.পেডং এ রয়েছে পেডং মনাষ্ট্রী।
পেডং মনাষ্ট্রী
বড় প্রশান্তি আসে এই মনাষ্ট্রীতে.....!সুন্দর গাছ-গাছালিতে ঢাকা এই মনাষ্ট্রী ছাড়িয়ে আমরা যখন পাইনে ঢাকা পথ পেড়িয়ে রামধূরাতে এলাম তখন আবার দেখা হল তিস্তার সাথে।যদিও সারাটা পথে সে ছিল, পাহাড়ের বাঁকে লুকোচুরি খেলছিল!!সিলারি গাঁও আসার আগেই আমরা তিস্তা -রঙ্গিতের মিলনস্থল (Lover's Point)দেখে ফেলেছি।
তাই হয়তো লজ্জায় সব জায়গায় দেখা দিচ্ছিল না তবু বলবো....
"তিস্তা কোথায় জানতে চায় কেউ কখনো যদি
বলবো আমার মনের ভিতর এখন তিস্তা নদী"।
এবার আমরা নিয়ে যাব ইচ্ছে গাঁওতে।কি মিষ্টি নাম না ইচ্ছে গাঁও।
" ইচ্ছে করে পাহাড় তোকে একটুখানি ছুঁই
ইচ্ছে করে পাহাড় তোকে মনের কথা ক ই!"
ইচ্ছে গাঁওতে এসে এরকমই মনে হবে সবার!হাত বাড়ালেই ইচ্ছেমত পাহাড় ছোঁ ওয়া যায়।
সিলেরি গাঁও থেকে দূরত্ব মাত্র 3 কিমি। এর উচ্চতা5800ft. পাহাড়ি পথে ট্রেক করে যাওয়া যায় এইপথ। আমরা সে চেষ্টা আর করিনি কারন সেই জোঁক!
ছোট্ট গাঁ টার কথা বলি,এলাচ ক্ষেত আর ভূট্টা ক্ষেতের পাশ দিয়ে চলে গেছে আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ।সিঁড়িও উঠে গেছে, কিছুটা পথ উঠে মনে হল আরে ঐ পাহাড়ের ঐ দিকটা কাশ্মীরের মত লাগছে না!(নিশ্চয় ই ভাবছো পাহাড় পাহাড় করে মেয়েটার বেশি আদিখ্যেতা!)কিন্তু পাইনের সারি আর সবুজাভ সৌন্দর্য্য কাশ্মীর কে মনে করিয়ে দিচ্ছিল।ছোট্ট বাড়ি দিয়ে সাজানো পাহাড়ি এই গাঁ।অনেক উচুঁতে উঠলে তিস্তার সাথেও দেখা মেলে।তাইতো "-পাহাড়ের প্রেমে ডুবে আছি
পাহাড়ের মাঝে হারিয়েছি আমি".........!
0 comments:
Post a Comment