• Estuary of Teesta and Rangit Rivers

  • Teesta View Point

  • Chatakpur, Darjeeling

  • Chilapata Forest

Tuesday, June 25, 2019

রিশপ, কালিম্পঙ - Rishop, Rishyap, Kalimpong

 রিশপ (৮৫০০ ফুট ) হলো কালিম্পঙ জেলার একটি ছোট লেপচা গ্রাম I বাংলার পর্যটন মানচিত্রে খুব পরিচিত নাম I বাঁধানো পাকা রাস্তায় লাভা (৭২০০ ফুট ) থেকে রিশপ এর দূরত্ব প্রায় ১১ কিমি I তবে লাভা থেকে রিশপ যাওয়ার দ্বিতীয় আর একটা রাস্তা আছে ৬ mile road ধরে, সে রাস্তায় এই দূরত্ব কমে আসে মাত্র ৫-৬ কিমি তে I যারা ট্রেকিং এ আগ্রহী তারা এই রাস্তায় লাভা থেকে রিশপ যাওয়ার চেষ্টা করতেই পারেন I হলপ করে বলতে পারি বনের মধ্যে দিয়ে পাথুরে অপ্রশস্ত এই রাস্তায় পথ চলা আপনার অনেক দিন মনে থাকবে I


                                                             রিশপ থেকে দেখা কোলাখাম 

রিশপ থেকে আপনি যেতে পারেন টিফিনদারা, গুম্বাদারা, পেডং, ইচ্ছেগাওঁ, রামধুরা, নকদারা, কোলাখাম ও আরো অনেক জায়গা I এই সব জায়গাগুলোয় আপনি একদিনেই গিয়ে রিশপ চলে আসতে পারবেন I তবে তার জন্য আপনাকে আলাদা করে গাড়ি নিতে হবে কারণ এসব জায়গায় যাওয়ার জন্য কোনো শেয়ার গাড়ি আপনি পাবেন না I আর এই সব জায়গায় যেতে আপনাকে গাড়ির জন্য কোনো দাম দর করতে হবে না , কারণ রিশপ ট্যাক্সি ড্রাইভার এসোসিয়েশন এর ফিক্সড চার্ট অনুযায়ী সব গাড়ির ভাড়া এক I
                                                    Green tailed Sunbird / সবুজল্যাজা মৌটুসি
                                                        Grey headed canary Flycatcher
                                                                    Rufers Sibia
                                                        Yellow-billed Blue Magpie/ লম পুছারি

এই জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে ( 2019 ) ২-৩ দিন থেকে আসলাম রিশপ I সেই থাকার অভিজ্ঞতা থেকেই বলছি, লাভাতে থেকে রিশপ একদিনে ঘুরে যাওয়া আর রিশপে ২ রাত কাটানোর মধ্যে অনেক পার্থক্য I যারা birding / বার্ড ফোটোগ্রাফি করেন তাদের জন্য রিশপ স্বর্গরাজ্য I কত ধরণের সব পাখি দেখলাম I কি তাদের রং I কিন্তু পাখি নিয়ে আমার পড়াশোনা না থাকায় অনেক পাখিই চিনতে পারিনি I আর দেখলাম ফুল I
                                                     Fuchsia / ঘন্টা ফুল
                                                                               Pansy.


বিভিন্ন প্রজাতির ফুল I কিছু কিছু চোখে দেখা মুহূর্ত ক্যামেরায় ধরে রেখেছি I আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম I

Abhijit Banerjee

Monday, June 24, 2019

রিংঘিম উত্তর সিকিম - Ringhim, North Sikkim

 উত্তর সিকিমের মাংগান সাব-ডিভিশনের এক ছোট্ট গ্রাম রিংঘিম। রিংঘিমের সৌন্দর্য বর্ণনা করতে গেলে হয়তো বলতে হয় এ যেন উত্তর সিকিমের এক ছোট্ট ঝুলন্ত বারান্দা। যে বারান্দায় বসে আপনি সারাদিন মন ভরে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে পারেন, নানা নাম না জানা পাখির ডাক শুনতে পারেন, প্রিয় জনের সঙ্গে বা একাই হারিয়ে যেতে পারেন সবুজের মাঝে।

রিংঘিমে একবার এলে ইট-কাঠ এর জঙ্গলে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছেটাই হয়তো হারিয়ে ফেলতে পারেন। কখন আপনার জানলায় এসে মেঘেদের লুকোচুরি খেলা কখনও বা এক অচেনা পাখির গানের সুরে হারিয়ে যাওয়া। এ নিয়েই কেটে যায় সময়।

আর অন্যদিকে কাঞ্চনজঙ্ঘা যেন আপনার আরও কাছে এসে তার রূপ-লাবণ্যে আপনাকে করে তোলে বুঁদ। এমনই এক মায়াবী রহস্যে মোড়া রিংঘিম আস্তে আস্তে পরিচিত হচ্ছে ভ্রমণপিপাসু ট্রাভেলারদের মনে। মাংগান থেকে খুব কাছে হওয়ায় যাতায়াতের ও সুবিধা।

নিউ জলপাইগুড়ি থেকে দিনে দিনেই চলে আসা যায়। গাড়ীতে আসতে অনেকটা সময় লাগলেও নর্থ সিকিমের সৌন্দয্য আপনাকে ক্লান্ত হতে দেবে না। রিংঘিমে বেশ কয়েকটি হোমস্টে গড়ে উঠেছে। সারাবছরই কম বেশি মানুষ আসছেন। তবে পাহাড়ে এসে যারা ওয়াইফাই-টিভি, থ্রি স্টার সুবিধা, সাইটসিনের লম্বা তালিকা খোঁজেন এ জায়গা তাদের জন্য নয়। নিরিবিলিতে প্রকৃতিকে নীলকন্ঠের মত যারা পান করে নিতে চান তাদের জন্য আদর্শ। হোমস্টেতে ছবির মত সুন্দর সাজানো বাগান আর সুস্বাদু খাবার, আতিথিয়তা আপনার মন কাড়বে।


কাছে পিঠে দর্শনীয় স্থানের মধ্যে অপূর্ব কটি গ্রাম, জঙ্গু, সিংঘিক এবং টিংচিম। গ্রাম গুলি অবশ্যই ঘুরে আসবেন। আপনার ভ্রমণ স্মৃতির মনের গোপন ডাইরীতে সারাজীবন লেখা থাকবে। টিংচিম এর শতাব্দী প্রাচীন মনাস্ট্রী এবং পবিত্র এমারেল্ড লেক আপনাকে মুগ্ধ করবে। জঙ্গু একটি ছোট ছবির মত সাজানো লেপচা গ্রাম, মূলতঃ পাখিপ্রেমীদের স্বর্গ। নানারকম হিমালয়ান বার্ডের দেখা মেলে এই গ্রামে। প্রকৃতি যে কি অসম্ভব সৌন্দর্য্যে সেজে বসে আছে তা এই গ্রাম গুলিতে না এলে জানতেও পারবেন না। জঙ্গু থেকে ত্রিণভং এর দৃশ্য অসাধারণ। এছাড়া রিংঘিমের হেলিপ্যাড, হেলিপ্যাড থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার দৃশ্য দারুণ। রিংঘিমের মোনাস্টিক স্কুল ও এক দর্শনীয় স্কুলটিও অবশ্যই দেখে আসবেন। এছাড়া লাবরাং মনাস্ট্রী, ফোডোং গুম্ফা, রং লুংটেন লি মিউজিয়াম ইত্যাদি অবশ্যই দেখবেন।


নিউ জলপাইগুড়ি থেকে রিংঘিম এর দূরত্ব ১৪০ কিমি।
গাড়ী ভাড়ী- ৫,০০০- ৫,৫০০/- (আনুমানিক)
গ্যাংটক থেকে গাড়ী ভাড়া- ৩৫০০/- টাকা (আনুমানিক)
হোমস্টে খরচ - জন প্রতি/ প্রতিদিন- ১৫০০ (নূন্যতম দুজন)
06291538880

Wednesday, June 19, 2019

সিটং পর্যটন গাইড - Sittong Tourism Guide

 কমলালেবু গ্রাম সিটং, ৩৬০ ডিগ্রি ভিউওয়ালা আহালদাড়া, রবীন্দ্র স্মৃতি বিজড়িত মংপু, সাথে বাগোরা ফরেস্ট, মাহলদিরাম চা বাগান, শেলফু গ্রাম এবং নীচে শিবাখোলা এডভেঞ্চার ক্যাম্প এবং নদীকে কেন্দ্র ভ্রমন

উত্তরবঙ্গে সিটং এখন জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র । বিশেষ করে শীতকালে নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি কমলালেবুর জন্য বিখ্যাত এই অরেঞ্জ ভ্যালি । সাথে আছে কাঞ্চনজঙ্ঘা দর্শন । এছাড়া জলপ্রপাত (লেপচা), পাহাড়ি নদী (রিয়াং), মনাস্ট্রি এবং পাশেই আহালদাড়ায় ৩৬০ ডিগ্রি হিল ভিউ, কাঞ্চনজঙ্ঘা এবং সূর্যোদয়, পারিপার্শ্বিক রবীন্দ্র মিউজিয়াম, চা বাগান, পাইন ফরেস্ট, শিবাখোলা নদী এডভেঞ্চার ক্যাম্প- সব মিলিয়ে তিনদিনের একটা জনপ্রিয় প্যাকেজ সিটং কে কেন্দ্র করে ।


সিটং পঞ্চায়েত অনেক বড়। তিনভাগে বিভক্ত । সিটং-১ নিচের রিয়াং নদী এবং যোগিঘাট ব্রীজ সংলগ্ন এরিয়া । কাঞ্চনজঙ্ঘা দর্শন হয়না এখান থেকে। সিটং - ২ কমলালেবু বাগান, লেপচা ফলস এরিয়া নিয়ে অনেক গ্রাম নিয়ে আরো উপরে । এখান থেকে অসাধারণ হিলভিউ পাওয়া যায়। সবার উপরে সিটং -৩ । আহালদাড়া এই সিটং ৩ তেই। কাঞ্চনজঙ্ঘা দর্শন এই এরিয়াতেই সবচেয়ে ভালো হয়।



◆◆◆ সিটং এ কি কি দেখবেন:
-----------------------------
★ ১) কমলালেবু বাগান:
শীতকালে নভেম্বর থেকে ফ্রেব্রুয়ারী সিটং এর প্রধান আকর্ষণ কমলালেবু গাছ । বাগানে হাতের নাগালেই কমলালেবু দেখতে অসাধারন লাগে । ক্ষেতমালিকরা অনুমতি দিলে দু একটা কমলালেবু পর্যটকরা সংগ্রহও করতে পারেন । কিন্তু অবশ্যই সেটা অনুমতি স্বাপেক্ষ । দার্জিলিংয়ের লেবু আকারে ছোটো এবং অনেকটাই টক । কিন্তু গাছে কমলা ফল দেখতে পাওয়া অসাধারণ অভিজ্ঞতা ।







★ ২) লেপচা জলপ্রপাত:
সিটং মানেই কমলালেবু জানি । অনেকেই এই জলপ্রপাতের কথা জানি না । বর্ষাকালে অপরূপ সুন্দর । শীতকালেও পর্যাপ্ত জল থাকে । সিটং ২ অঞ্চলে গাড়ি থেকে নেমে পাহাড়ি জঙ্গলে প্রায় ২ কিমি খাড়া চড়াই রাস্তা পেরিয়ে এই জলপ্রপাতে পৌঁছাতে হয় । শারীরিক সক্ষমতা থাকলেই এই ছোটো ট্রেক টা করা যায়। কিন্তু ট্রেক শেষে অসাধারন একটা জলপ্রপাতের স্বাক্ষী হওয়া যায় ।


★৩) রিয়াং নদী এবং যোগিঘাট ব্রীজ:
সিটং ১ অঞ্চলে একদম নীচে রিয়াং নদী এবং তার পাশে যোগিঘাট ব্রীজ পর্যটকদের কাছে বিশেষ আকর্ষণ কেন্দ্র। বাবা রামদেব এই ব্রীজ টা উদ্বোধন করেছিলেন । পাহাড়ী রিয়াং নদীর ধারে এই অঞ্চলটি অবশ্যই একটি বনভোজনের স্পট। পাশেই আছে প্রায় শতবর্ষের পুরানো বাতিল ঝুলন্ত ব্রীজ।


★ ৪) টোরিয়ক মনাস্ট্রি:
সিটং ২ তে টোরিয়ক গ্রামে এই মনাস্ট্রি টা অপূর্ব সুন্দর । এখান থেকে সকালবেলা কাঞ্চনজঙ্ঘা দর্শন পাওয়া যায়। পাশেই আছে নেপালি লালুপাতে ফুলের গাছ ।






★৫) লেপচা ঘর:
সিটং এ কাঠের গুঁড়ির উপর মাটির কাঠিবিহীন লেপচা ঘর বিশেষ আকর্ষণের জিনিস ।

◆◆◆ মংপুতে কি কি দেখবেন:
------------------------------
★১) রবীন্দ্র মিউজিয়াম:
মংপু প্রধান আকর্ষণ রবীন্দ্র মিউজিয়াম । এটি নতুন করে বছর দুই হলো চালু হয়েছে । রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছবি, অনেক কবিতা, স্মৃতি নিয়ে এই মিউজিয়াম টা।



রবীন্দ্র মিউজিয়ামের পাশেই কুইননিন কারখানা ।
★ ২) মংপু মনাস্ট্রি
★ ৩) অর্কিড ফার্ম


◆◆◆ আহালদাড়া তে কি দেখবেন:
----------------------------------
সিটং ৩ তে আহালদাড়া গ্রাম নিজেই একটা ভিউ পয়েন্ট । পাহাড়ের উপর ৩৬০ ডিগ্রী ভিউ নিয়ে অসাধারন সূর্যোদয় এবং কাঞ্চনজঙ্ঘা দর্শনের জন্য আহালদাড়া বিখ্যাত। এখানে ভিউ পয়েন্টেই হোমস্টে গড়ে উঠেছে । রুম থেকে সূর্যোদয় দেখা যায় । দর্শন হয় কাঞ্চনজঙ্ঘার । পাহাড়ের ধাপে চা বাগান গড়ে উঠেছে । আর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মুখের অববয়ে পাহাড়ী ঢালের দর্শন পাওয়া যায় ।


◆◆◆ নামথিংপোখড়ি লেক:
শেলফু অঞ্চলে এই লেকে বর্ষাকালে জল থাকে । বিলুপ্তপ্রায় সালামান্ডারের দেখা পাওয়া কখনো কখনো ।
◆◆◆ শেলফু কমলালেবু বাগান:
------------------------------
আহালদাড়ার পাশে শেলফু গ্রাম সম্পূর্ন একটা কমলালেবু বাগানে ভর্তি । এখানে কমলালেবু কিনতেও পাওয়া যায়। তবে এখানকার কমলালেবু বাগানে ঢুকতে অলিখিত টিকিট লাগে ।
◆◆◆ বাগোরা ফরেস্ট:
-----------------------
দিলারাম দিয়ে সিটং যাওয়ার পথে পড়ে পাইন ফরেস্ট । এটি বাগোরা ফরেস্ট নামে পরিচিত।
◆◆◆ মহালদিরাম চা বাগান:
-----------------------------
বাগোরা ফরেস্টের পর আহালদাড়া যাওয়ার পথে পড়ে মহালদিরাম চা বাগান । সমতলের শিবাখোলা দিয়ে আহালদাড়া যাওয়ার পথেও পাহাড়ের উপরে উঠতে হয় মহালদিরাম দিয়ে । চা বাগানের পাশেই এখন হোম স্টে গড়ে উঠেছে । অনেকে একরাত্রি এই চা বাগানের পাশে মহালদিরাম তে থাকেন ।
◆◆◆ শিবাখোলা তে কি দেখবেন:
--------------------------------
ছোটো একটা নদী শিবখোলা আর তার পাশে মহানন্দার জঙ্গল । তাকে ঘিরেই গড়ে উঠেছে শিবখোলা ট্যুরিস্ট এডভেঞ্চার ক্যাম্প । NJP থেকে টয় ট্রেন ছুটে চলেছে সুকনা, রংটং হয়ে দার্জিলিং । কেউ যদি হেরিটেজ কু ঝিকঝিকে যেতে চান, তাহলে গন্তব্য টয়ট্রেনে রংটং । সেখান থেকে গাড়ী নিয়ে শিবখোলা । আর NJP থেকে গাড়ী নিয়ে গেলে ওল্ড হিলকার্ট রোড ধরে (সুকনা মোড় থেকে) , রংটং, সিপাইঝোরা চা বাগান হয়ে শিবখোলা এডভেঞ্চার ক্যাম্প । শিলিগুড়ি থেকে মাত্র ২৭ কিমি দূরে সবুজের মাঝে, শিবখোলা নদীর ধারে, নরবুং চা বাগানের মাঝে এক টুকরো স্বর্গ । এক কালে ২০ ঘরের বসতি ছিলো বলে নাম ছিলো বিশঘরের গ্রাম । এখন বসতি বেড়েছে । জনা পঞ্চাশেক ঘর নিয়ে শিবখোলা গ্রাম । শিবখোলা উচ্চ বিদ্যালয় টি কিন্তু গ্রামের মধ্যে নজরে পড়বে । বেশ বড়ো । নামকরণ হয়েছে নেতাজীর আই এন এ(ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মি) এর নামে । এক কিমি দূরে নদীর ধারে শিবমন্দির । সাথে দুর্গা মাতাও আছেন । এরপর গন্তব্য পাশের নরবুং চা বাগান এবং চা ফ্যাক্টরি । চা বাগান টি খুবই আকর্ষণীয় ।
নদীর ধারে রাতের শিবখোলার টেন্ট লাইফ অসাধারন। এক দিকে ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক, অন্য দিকে কুলকুল করে বয়ে যাওয়া শিবখোলা নদী । এই দুয়ের শব্দ শুনতে শুনতে কখন যে ঘুমের আমেজ চলে আসবে বোঝায় যাবেনা ।
●●● ট্রিপ প্ল্যান:
----------------
★ প্রথমদিন : আগেরদিন নিউ জলপাইগুড়ি গামী ট্রেনে উঠে প্রথমদিন সকালে নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে নামুন।
প্রথমদিন রাত্রিবাস সিটং তে । আজ দেখে নিন মংপু রবীন্দ্র মিউজিয়াম, মংপু মনাস্ট্রি, অর্কিড ফার্ম । তারপর পথেই পড়বে রিয়াং নদী এবং যোগিঘাট ব্রীজ ।
তারপর সিটং এ হোমস্টে পৌঁছান ।
দ্বিতীয়ার্ধে ঘুরে নিন সিটং এই লোকাল লেপচা জলপ্রপাত, কমলালেবু বাগান, লেপচা ঘর এবং টোরিয়ক মনাস্ট্রি।
★ দ্বিতীয়দিন : আজকের রাত্রিবাস আহালদাড়া তে ।
সিটং থেকে সকালে বিদায় নিয়ে প্রথমে আসুন বাগোরা পাইন ফরেস্ট । তারপর মহালদিরাম চা বাগান । সেখান থেকে নামথিংপোখড়ি লেক, শেলফু গ্রামে কমলালেবু বাগান। তারপর পৌঁছে যান আহালদাড়া। হোমস্টে তেই ভিউ পয়েন্ট। দ্বিতীয়ার্ধে পুরো আহালদাড়া পাহাড়, ভিউ পয়েন্ট ঘুরে নিন। রাতের আহালদাড়া অসাধারণ।
তৃতীয়দিন: আজ সকালে আহালদাড়া থেকে দর্শন করুন সূর্যোদয় এবং সকালে দেখুন কাঞ্চনজঙ্ঘা। তারপর আহালদাড়া থেকে বিদায় নিয়ে নেমে আসুন শিবাখোলা । অসাধারন শিবাখোলা নদীর ধারে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করুন। হাতে সময় থাকলে তৃতীয়দিন শিবাখোলা এডভেঞ্চার ক্যাম্পে রাত্রিবাস করতে পারেন । সেটাই সবচেয়ে ভালো । আর সময় না থাকলে শিবাখোলা ঘুরে নেমে আসুন সমতলে। ফেরার ট্রেন ধরুন। উল্লেখ শিবাখোলা ছাড়াও আহালদাড়া থেকে লাটপাঞ্চার (হর্নবিলের জন্য বিখ্যাত) ঘুরে/রাত্রিবাস করে ফেরা যায়।
◆◆◆ কিভাবে যাবেন সিটং:
---------------------------
১) শেয়ার গাড়িতে সিটং যেতে চাইলে দার্জিলিং গামী শেয়ার গাড়িতে উঠে দিলারাম মোড়ে নামুন। সেখান থেকে সিটং যাওয়ার গাড়ি বুক করতে হবে। এটি বাগোরা হয়েই সিটং যাবে। বিকেলের দিকে দিলারাম থেকে সিটং শেয়ার গাড়ি পাওয়া যায়।
২) গাড়ি রিজার্ভ করলে উপরের রুটের চেয়ে সেভক হয়ে মংপু দিয়েই সিটং যাওয়া যায়। উল্লেখ NH ৩১ গ্যাংটক যাওয়ার রাস্তায় কালীঝোরা দিয়ে লাটপাঞ্চার, বিরিক দিয়ে শেলফু, আহালদাড়া এবং রাম্বিঝোরা দিয়ে মংপু হয়ে যোগীঘাট হয়ে সিটং যাওয়া যায় ।
এছাড়া রংটং দিয়ে শিবাখোলা ঘুরে মহালদিরাম চা বাগান দিয়ে উঠেও আহালদাড়া/সিটং যাওয়া যায় ।
◆◆◆ কোথায় থাকবেন:
------------------------
● সিটং:
-------
সিটং এ থাকার প্রচুর হোমস্টে। সবচেয়ে নাম করা সিটং ৩ এর বিশেষ হোমস্টে। এছাড়া সিটং ২ তে শেরপা হোমস্টে , টোরিয়ক রায়াং হোমস্টে, রাশিকা হোমস্টে, মেঘবিতান হোমস্টে খুবই ভালো অবস্থানে।
এছাড়া সিটং ১ এ যোগিঘাট ব্রীজের কাছে আছে মুখিয়া হোমস্টে ।
● আহালদাড়া:
--------------
ভিউ পয়েন্টেই গুরুং হোমস্টে, সানরাইজ হোমস্টে।
● মহালদিরাম চা বাগানে:
------------------------
সালামান্ডার হোমস্টে
● শিবাখোলা:
-------------
শিবাখোলা এডভেঞ্চার ক্যাম্প
● শেলফু:
----------
নেচার লাভার হোম স্টে
● লাটপাঞ্চার:
-------------
আহালদাড়ার গুরুং হোমস্টের ই হর্নবিল হোমস্টে ।
প্রতি হোমস্টের নাম্বার গুগলে পাওয়া যাবে।
★★★ খরচ:
-------------
হোমস্টে পারডে পার হেড খরচ ১০০০-১৩০০/- ।
গাড়ি খরচ পার ডে ৩০০০/- (তেলের দাম এবং দরদামের উপর নির্ভরশীল)

Subhojit Tokdar


Friday, June 7, 2019

কলকাতার ফিরিঙ্গি কলোনি বো ব্যারাক - Bow Barracks, Central Kolkata

 বড়দিনে, অন্য ইতিহাসের সন্ধানে- কলকাতার ফিরিঙ্গি কলোনি বো ব্যারাকে।

বড়দিন হয়ত খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব, কিন্তু এই উৎসবের আবেদন সার্বজনীন, এবং বিশ্বজনীন। সারা পৃথিবী জুড়েই জাতি-ধর্ম-বর্ন নির্বিশেষে এই উৎসব পালিত হয়।বড়দিনের উৎসবে ক্রিসমাস ট্রি, রঙিন টুনি দিয়ে যেমন ঘর সাজানো হয়, তেমনি কেক কাটা, পিঠে পুলি তৈরি, বিশেষ ডিনারের ব্যবস্থা,প্রিয়জনকে গ্রিটিংস কার্ড, উপহার দেওয়া ইত্যাদি যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। বড়দিনে প্রিয়জনকে উপহার দেওয়া নিয়েই তো লেখা হয়েছে পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ছোটগল্প " দ্য গিফট অফ দ্য ম্যাগি"। তবে বড়দিনের আগ্রহ ও আনন্দ বোধহয় সবচেয়ে বেশি উপভোগ করে , ছোট ছোট বাচ্চাগুলি। সান্তা ক্লজের কাছ থেকে পাওয়া যায় কত উপহার আর চকলেট।
বো ব্যারাকে বড়দিনের সন্ধ্যায়


সেই কোন সুদূর উত্তর মেরু থেকে সান্তা বুড়ো রওয়ানা দিয়েছে তাঁর নয়টা বলগা হরিণে টানা স্লেজ গাড়ি চেপে, পিঠের ঝোলায় ভরা কত উপহার। পৃথিবীর দেশে দেশে বাচ্চারা জেগে বসে থাকে সান্তা বুড়োর জন্য। কিন্তু বুড়ো যে ঠিক কখন চুপিচুপি এসে উপহার দিয়ে যায়, সেটা আর কোনদিন তাদের দেখা হয়না। ঘুম থেকে উঠে উপহার দেখে বাচ্ছাগুলির বিস্ময়ে ভরা গোল গোল চোখ আর মুখে যে হাসি দেখা যায়, আর কোন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে তা দেখা যায় কিনা জানিনা।
এবারে আসি বড়দিন ও এঙ্গলো ইন্ডিয়ান কলোনি বো ব্যারাকের প্রসঙ্গে।

সে প্রসঙ্গে যাবার আগে ছোট্ট করে এখানকার এবং সামগ্রিক ভাবে এঙ্গলো ইন্ডিয়ান সম্প্রদায়ের সম্মন্ধে কিছু নির্জলা সত্যি কথা জানাই।
কথা হচ্ছে এঙ্গলো ইন্ডিয়ান কারা ? সাদামাটা ভাবে বলা যায় মিশ্র রক্তের ইউরোপিয়ান( পড়ুন ইংরেজ পিতা) এবং এশিয়ান ( পড়ুন ভারতীয় মাতার) সঙ্কর জাত ইউরেশিয়ান সম্প্রদায় যারা জন্মেছিল ভারতে, ধর্মে ছিল খ্রিস্টান এবং মাতৃভাষা ছিল ইংরেজী। যেহেতু এরা দেখতে ছিল অনেকাংশে ইউরোপিয়ানদের মতন, ভাষা ও ধর্ম ভিন্ন , তাই ভারতীয়রা তাঁদের আপনজন বলে কখনও স্বীকার করেনি।


কিন্তু কেন এই বৈষম্য ?
স্বাধীনতার পূর্বোত্তর থেকে স্বাধীনতা পরবর্তীতেও দেশ ও দশের উন্নয়নের কাজে অসংখ্য ফিরিঙ্গির অবদান আছে। যেমন হেনরী লুই ডিরোজিও, জেমস কিড(যাঁর নাম থেকেই কিডের পুর বা খিদিরপুর), লেসলী ক্লডিয়াস, ফ্রাঙ্ক এন্থনী, রজার বিন্নী, কার্লটন চ্যাপমান, উইলসন জোন্স এবং এরকম আরো অনেকেই আছেন।বেশি পিছনে যাবার দরকার নেই, স্বাধীন ভারতের প্রথম অলিম্পিক গোল্ড আসে লন্ডন অলিম্পিকে, ১২ ই আগস্ট, ১৯৪৮ এ, ফিল্ড হকি থেকে, ৪-০ গোলে ব্রিটেন কে হারিয়ে। সেই খেলা নিয়ে তৈরি গোল্ড সিনেমা তো অনেকেই দেখেছেন, কিন্তু জানেন কি, সেই টিমে সর্বমোট ৯ জন এঙ্গলো ইন্ডিয়ান প্লেয়ার খেলেছেন। ফাইনালে বলবীর সিং দুটি গোল করেন। বাকি দুটি গোল করেন দুই এঙ্গলো ইন্ডিয়ান খেলোয়াড় Jansen এবং Pinto ,একটি একটি করে। আর হকিতে বিলাসপুর/ কলকাতার লেসলি ক্লডিয়াসের তিনটি সোনা এবং একটি রুপোর মেডেল জয়ের রেকর্ড হকির জাদুগর ধ্যানচাঁদেরও নেই।

সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক ব্যাপার ছিল, খাঁটি ইংরেজরা এঙ্গলো দের সঙ্গেও দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকদের মতন ব্যাবহার করতেন।ইউরেশিয়ান দের নিয়োগ করা হতো রেল, খনি, পোস্ট অফিস ইত্যাদি চাকরিতে, কিন্তু খাঁটি ইংরেজরা সামাজিক বিত্ত এবং সম্মানের প্রশ্নে যোজন দূরত্ব বজায় রাখতেন ইনাদের সঙ্গে। বন্ধুবর অমিতাভ পুরকায়স্থ চমৎকার বলেছেন- " শাসক ও শাসিতের মধ্যে যে দৃঢ় সামাজিক ভেদরেখা তৈরি করতে চাইছিলেন ব্রিটিশ শাসকেরা, তা বারবার গুলিয়ে যাচ্ছিল এই মিশ্র রক্তের জনগোষ্ঠীর জন্য"। অর্থাৎ এদের ট্রাজেডি ছিল- এরা না ঘরকা, না ঘাটকা।
যাইহোক ফিরে আসি বো ব্যারাকে।
এই শহরের মধ্যেই লুকিয়ে আছে আরেকটি অন্য শহরের ইতিকথা। আত্মশ্লাঘায় ভরপুর বাঙালি, প্রায় সারা বছর তার কোন খোঁজই রাখেনা। প্রথম মহাযুদ্ধের সময় আমেরিকান সেনাদের থাকার জন্য মিলিটারি ব্যারাক হিসাবে প্রায় তিনবিঘা জায়গার ওপর দুই সারিতে, সাতটি ব্লকের এই লাল রঙের বাড়িগুলি তৈরি করা হয়। যেহেতু মিলিটারি ব্যারাক হিসাবে তৈরি, তাই এই বাড়িগুলির নান্দনিকতা নিয়ে কেউ মাথা ঘামায় নি।যুদ্ধের প্রয়োজনে ক্যালকাটা ইম্প্রুভমেন্ট ট্রাস্ট এগুলিকে তৈরি করে। যুদ্ধের শেষে আমেরিকান সেনারা দেশে ফিরে গেলে, হাত বদল হয়ে এগুলিতে চলে আসেন কলকাতার কিছু এঙ্গলো ইন্ডিয়ান সম্প্রদায়ের লোকজন।তবে যেকথা আগেই লিখলাম, এঁদের সম্মন্ধে আমরা নিতান্তই উদাসীন।
২০১৭ সালের বড়দিনে ছিলাম বো- ব্যারাকে । তখন দেখেছিলাম এখানকার বাড়িগুলির দশা নিতান্তই করুণ।এই অবহেলিত, জীর্ণ বাড়িগুলি দেখে আমার হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের গাওয়া বিখ্যাত গানটির কথা মনে হয়-
" শোন বন্ধু শোন, প্রাণহীন এই শহরের ইতিকথা,
ইঁটের পাঁজরে, লোহার খাঁচায় দারুন মর্মব্যথা।
এখানে আকাশ নেই, এখানে বাতাস নেই,
এখানে অন্ধ গলির নরকে মুক্তির আকুলতা।"
এই আকুলতাকেই সঙ্গী করে এই বাড়িগুলিতে এখনও প্রায় ১৩২ টি পরিবার বাস করছে, যার বেশিরভাগই এঙ্গলো ইন্ডিয়ান সম্প্রদায়ের। তবে বো ব্যারাক কিন্তু একেবারে কসমপলিটান চরিত্রের। তাই এখানে এঁরা বাদ দিয়েও, বাঙালি, অবাঙালি, ভারতীয় চীনা সবাই মিলে মিশে আছেন।শুধু তাই নয়, এখানেই আছে ১ নম্বর বুদ্ধিস্ট টেম্পল স্ট্রীটের উপর " বৌদ্ধ ধর্মাঙ্কুর সভা"। সেন্ট্রাল মেট্রো স্টেশন থেকে হাঁটা পথে, চিত্তরঞ্জন এভেন্যু এবং বৌবাজারের মোড়ে, বউবাজার থানার পিছনেই অবস্থিত এই জীর্ণ বাড়িগুলিরই গাল ভরা নাম- বো ব্যারাক।
দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পরে একসময় এই বাড়িগুলি ভেঙে ফেলার কথা উঠেছিল। ভাগ্যিস ভেঙে ফেলা হয়নি, তাইতো এখনও খাঁটি হোম মেড ওয়াইন এবং এঙ্গলো ইন্ডিয়ান হেঁশেলের স্বাদ নিতে , বড়দিনের সময় সারা কলকাতার ইন্টেলেকচুয়াল বাঙালি হামলে পরে এখানে। তবে সত্যি কথা, ওয়াইন, কেক, বিভিন্ন ধরনের মাংসের রোস্ট ইত্যাদি বাদ দিলে, এদের কিচেনেও প্রায় ষোল আনা বাঙালি স্বাদ পাবেন খাবারে। মনে পড়ছে ম্যাকলাস্কিগঞ্জে ববি গর্ডনের বাড়িতে, ববির মায়ের হাতের রান্নার সঙ্গে আমার মায়ের হাতের রান্নার স্বাদের আদৌ কোন তফাৎ লাগেনি। চীনা রান্নার বিভিন্ন পদও এরা সাগ্রহে তৈরি করে।
কেউ কেউ বলেন যে, কে আই টি নাকি এই ফ্লাট গুলি বাসিন্দাদের বিক্রি করে দিয়েছে, আবার indian Express এ দেখছি তা নয়। এখানে এখনো মান্ধাতা আমলের বাড়ি ভাড়া ৩০/- টাকা বজায় আছে, যা কে আই টি নিতে অস্বীকার করে।KIT এবং KMDA ১৯৯৯ সাল থেকে এই বিপদজনক বাড়িগুলি ভেঙে,বর্তমান বাসিন্দাদের জন্য, নতুন করে হাউসিং কমপ্লেক্স তৈরির চেষ্টা করেছিল। ২০১৭ সালে মোটামুটি ৪০ মিনিটের জন্য পানীয় জল ছাড়া আর কোন পরিষেবা KIT থেকে পাওয়া যেত না। এছাড়া পুরো কমপ্লেক্স পরিষ্কারের কাজে তখন একজন মাত্র সুইপার বহাল ছিল ।
পরিষেবা বন্ধ, জীবন হাতের মুঠোয় নিয়ে বেঁচে থাকা, অধিকাংশ বাসিন্দাই বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, তবুও এঁদের বেঁচে থাকার অদম্য ইচ্ছাশক্তি এবং মনোবল অটুট। নিজেদের মধ্যে ক্লাব, হাউসি, পার্টি, হোম মেড ওয়াইন, বলডান্স ইত্যাদি নিয়ে এরা হৈ হুল্লোড় করেই থাকেন। আর যখন ঘরে একা থাকেন, তখন নীরবে চোখের জল ফেলেন- ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড প্রবাসী ছেলে-মেয়ে, নাতি নাতনীর জন্য।
এক নামি পরিচালক কিছুদিন আগে বো ব্যারাক নিয়ে একটি ছবি করেছিলেন ।অনেকেই হয়ত ছবিটা দেখেছেন।অনেকের হয়ত মনে হতে পারে, এরা যখন এত হুল্লোড়ে তখন হয়ত কিছুটা উশৃঙ্খল এঁদের জীবনযাত্রা। কিন্তু আদপেই তা নয়। এরা অত্যন্ত অবহেলিত সম্প্রদায়, মাছে- মাংসে- ভাতে এরাও কিন্তু আমাদেরই মতন ছাপোষা ভদ্রলোক।
আমরা যতই গান গাইনা কেন- শক হন দল পাঠান মোগল একদেহে হোল লিন- স্বাধীনতার পূর্বে এবং পরেও, এই ফর্সা, কটা চোখের ট্রেনের ড্রাইভার/ গার্ড/ কলিয়ারীর ওভারম্যান/সওদাগরি অফিসের টাইপিস্ট বা পি এ দের কখনও অন্তর থেকে আপন করে নিতে পারিনি, আমাদের চোখে এই হতভাগ্য লোকগুলি কলোনিয়াল যুগের প্রতিভূ। সেজন্য একদা যে লোকগুলি নিজেদের মুলুক তৈরি করেছে ভারতে, রাঁচির কাছে ম্যাকলাস্কিগঞ্জে, সগর্বে বলেছে ইন্ডিয়া ইজ আওয়ার মাদারল্যান্ড, অসংখ্য ইংরেজি মাধ্যমের ভালো স্কুল স্থাপনা থেকে প্রথম অলিম্পিক গোল্ড মেডাল অর্জনে যাঁদের বিশাল ভূমিকা ছিল, তাঁরা কিন্তু পরিষ্কার বুঝে গেছে এদেশে এখনও তাঁরা অবাঞ্ছিত। রাজনৈতিক ও সামাজিক পালাবদলের ঝড় এই মানুষগুলির পক্ষে শুভ সংকেত বয়ে আনেনি। এরই নিটফল আজকের এঙ্গলো ইন্ডিয়ান নতুন জেনারেশনের ম্যাসিভ এক্সডাস বা দেশত্যাগ। কলকাতার বো ব্যারাক থেকে রাঁচির ম্যাকলাস্কিগঞ্জ সর্বত্র একই ইতিহাস। ক্রিসমাসের সময়ের বো ব্যারাকের রঙীন ছবিই সব নয়। অন্য সময় এসে এঁদের সঙ্গে আলাপ করেই দেখুন না।ক্রিসমাসের সময় দুপুর/বিকালে এসে এঁদের হেঁশেলের স্বাদ নিতে পারেন। সন্ধ্যার পরে কেবল হৈ চৈ, তখন আবার অন্য এক ধরণের মজা, থিকথিক করছে লোক, ক্যামেরা, ফটোগ্রাফার, মিডিয়ার ভিড়ে জায়গা পাওয়াই দায়।
বো ব্যারাক শুধুমাত্র একটি বিশ্বযুদ্ধের ঐতিহাসিক স্মারক নয়। এঙ্গলো ইন্ডিয়ান সম্প্রদায়ের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যবাহী বহমান ইতিহাসের সাক্ষী এটি।
সান্তাক্লজ রিকশা চেপে একমাত্র বোধহয় এইখানেই নামেন। খ্রিস্টমাসের অন্তত ১ সপ্তাহ আগে থেকেই এখানে সাজোসাজো রব পরে যায়, খেলাধুলা থেকে জাতি ধর্ম নির্বিশেষে ফুড প্যাকেট বিতরণ করা , সংগীতানুষ্ঠান ইত্যাদি বহু অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। পার্ক স্ট্রিট কার্নিভালের গ্রান্জার এখানে পাবেননা, পাবেন ইতিহাসের মোড়কে এক হৃদয়স্পর্শী অনুভূতি।
কেন যে বো ব্যারাকের বাড়িগুলিকে হেরিটেজ বলা হচ্ছেনা, জানিনা।
চলুন এবার বড়দিনে- অন্য ইতিহাসের সন্ধানে- বো ব্যারাকে।
ছবি: বো ব্যারাকে বড়দিনের সন্ধ্যায়।
ঋণ স্বীকার:-
1)খিদিরপুরের কিড সাহেব, amitava.wordpresd.com/2017/08/08
2)ইঁটের পাঁজরে বিশ্বযুদ্ধের অজস্র ছাপ, কলকাতার নস্টালজিয়ায় 'অ্য।্লো্' পাড়ার রঙিন ইতিহাস।দোলন চট্টোপাধ্যায়। News18BANGLA, August 2, 2017
3) Rehabilitation of Bow Barracks residents hang in balance. Madhuparna Das, Mon Dec 15 2008, archive.indianexpress.com/news/rehabilitation

Tilak Purkayastha