Wednesday, June 19, 2019

সিটং পর্যটন গাইড - Sittong Tourism Guide

 কমলালেবু গ্রাম সিটং, ৩৬০ ডিগ্রি ভিউওয়ালা আহালদাড়া, রবীন্দ্র স্মৃতি বিজড়িত মংপু, সাথে বাগোরা ফরেস্ট, মাহলদিরাম চা বাগান, শেলফু গ্রাম এবং নীচে শিবাখোলা এডভেঞ্চার ক্যাম্প এবং নদীকে কেন্দ্র ভ্রমন

উত্তরবঙ্গে সিটং এখন জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র । বিশেষ করে শীতকালে নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি কমলালেবুর জন্য বিখ্যাত এই অরেঞ্জ ভ্যালি । সাথে আছে কাঞ্চনজঙ্ঘা দর্শন । এছাড়া জলপ্রপাত (লেপচা), পাহাড়ি নদী (রিয়াং), মনাস্ট্রি এবং পাশেই আহালদাড়ায় ৩৬০ ডিগ্রি হিল ভিউ, কাঞ্চনজঙ্ঘা এবং সূর্যোদয়, পারিপার্শ্বিক রবীন্দ্র মিউজিয়াম, চা বাগান, পাইন ফরেস্ট, শিবাখোলা নদী এডভেঞ্চার ক্যাম্প- সব মিলিয়ে তিনদিনের একটা জনপ্রিয় প্যাকেজ সিটং কে কেন্দ্র করে ।


সিটং পঞ্চায়েত অনেক বড়। তিনভাগে বিভক্ত । সিটং-১ নিচের রিয়াং নদী এবং যোগিঘাট ব্রীজ সংলগ্ন এরিয়া । কাঞ্চনজঙ্ঘা দর্শন হয়না এখান থেকে। সিটং - ২ কমলালেবু বাগান, লেপচা ফলস এরিয়া নিয়ে অনেক গ্রাম নিয়ে আরো উপরে । এখান থেকে অসাধারণ হিলভিউ পাওয়া যায়। সবার উপরে সিটং -৩ । আহালদাড়া এই সিটং ৩ তেই। কাঞ্চনজঙ্ঘা দর্শন এই এরিয়াতেই সবচেয়ে ভালো হয়।



◆◆◆ সিটং এ কি কি দেখবেন:
-----------------------------
★ ১) কমলালেবু বাগান:
শীতকালে নভেম্বর থেকে ফ্রেব্রুয়ারী সিটং এর প্রধান আকর্ষণ কমলালেবু গাছ । বাগানে হাতের নাগালেই কমলালেবু দেখতে অসাধারন লাগে । ক্ষেতমালিকরা অনুমতি দিলে দু একটা কমলালেবু পর্যটকরা সংগ্রহও করতে পারেন । কিন্তু অবশ্যই সেটা অনুমতি স্বাপেক্ষ । দার্জিলিংয়ের লেবু আকারে ছোটো এবং অনেকটাই টক । কিন্তু গাছে কমলা ফল দেখতে পাওয়া অসাধারণ অভিজ্ঞতা ।







★ ২) লেপচা জলপ্রপাত:
সিটং মানেই কমলালেবু জানি । অনেকেই এই জলপ্রপাতের কথা জানি না । বর্ষাকালে অপরূপ সুন্দর । শীতকালেও পর্যাপ্ত জল থাকে । সিটং ২ অঞ্চলে গাড়ি থেকে নেমে পাহাড়ি জঙ্গলে প্রায় ২ কিমি খাড়া চড়াই রাস্তা পেরিয়ে এই জলপ্রপাতে পৌঁছাতে হয় । শারীরিক সক্ষমতা থাকলেই এই ছোটো ট্রেক টা করা যায়। কিন্তু ট্রেক শেষে অসাধারন একটা জলপ্রপাতের স্বাক্ষী হওয়া যায় ।


★৩) রিয়াং নদী এবং যোগিঘাট ব্রীজ:
সিটং ১ অঞ্চলে একদম নীচে রিয়াং নদী এবং তার পাশে যোগিঘাট ব্রীজ পর্যটকদের কাছে বিশেষ আকর্ষণ কেন্দ্র। বাবা রামদেব এই ব্রীজ টা উদ্বোধন করেছিলেন । পাহাড়ী রিয়াং নদীর ধারে এই অঞ্চলটি অবশ্যই একটি বনভোজনের স্পট। পাশেই আছে প্রায় শতবর্ষের পুরানো বাতিল ঝুলন্ত ব্রীজ।


★ ৪) টোরিয়ক মনাস্ট্রি:
সিটং ২ তে টোরিয়ক গ্রামে এই মনাস্ট্রি টা অপূর্ব সুন্দর । এখান থেকে সকালবেলা কাঞ্চনজঙ্ঘা দর্শন পাওয়া যায়। পাশেই আছে নেপালি লালুপাতে ফুলের গাছ ।






★৫) লেপচা ঘর:
সিটং এ কাঠের গুঁড়ির উপর মাটির কাঠিবিহীন লেপচা ঘর বিশেষ আকর্ষণের জিনিস ।

◆◆◆ মংপুতে কি কি দেখবেন:
------------------------------
★১) রবীন্দ্র মিউজিয়াম:
মংপু প্রধান আকর্ষণ রবীন্দ্র মিউজিয়াম । এটি নতুন করে বছর দুই হলো চালু হয়েছে । রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছবি, অনেক কবিতা, স্মৃতি নিয়ে এই মিউজিয়াম টা।



রবীন্দ্র মিউজিয়ামের পাশেই কুইননিন কারখানা ।
★ ২) মংপু মনাস্ট্রি
★ ৩) অর্কিড ফার্ম


◆◆◆ আহালদাড়া তে কি দেখবেন:
----------------------------------
সিটং ৩ তে আহালদাড়া গ্রাম নিজেই একটা ভিউ পয়েন্ট । পাহাড়ের উপর ৩৬০ ডিগ্রী ভিউ নিয়ে অসাধারন সূর্যোদয় এবং কাঞ্চনজঙ্ঘা দর্শনের জন্য আহালদাড়া বিখ্যাত। এখানে ভিউ পয়েন্টেই হোমস্টে গড়ে উঠেছে । রুম থেকে সূর্যোদয় দেখা যায় । দর্শন হয় কাঞ্চনজঙ্ঘার । পাহাড়ের ধাপে চা বাগান গড়ে উঠেছে । আর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মুখের অববয়ে পাহাড়ী ঢালের দর্শন পাওয়া যায় ।


◆◆◆ নামথিংপোখড়ি লেক:
শেলফু অঞ্চলে এই লেকে বর্ষাকালে জল থাকে । বিলুপ্তপ্রায় সালামান্ডারের দেখা পাওয়া কখনো কখনো ।
◆◆◆ শেলফু কমলালেবু বাগান:
------------------------------
আহালদাড়ার পাশে শেলফু গ্রাম সম্পূর্ন একটা কমলালেবু বাগানে ভর্তি । এখানে কমলালেবু কিনতেও পাওয়া যায়। তবে এখানকার কমলালেবু বাগানে ঢুকতে অলিখিত টিকিট লাগে ।
◆◆◆ বাগোরা ফরেস্ট:
-----------------------
দিলারাম দিয়ে সিটং যাওয়ার পথে পড়ে পাইন ফরেস্ট । এটি বাগোরা ফরেস্ট নামে পরিচিত।
◆◆◆ মহালদিরাম চা বাগান:
-----------------------------
বাগোরা ফরেস্টের পর আহালদাড়া যাওয়ার পথে পড়ে মহালদিরাম চা বাগান । সমতলের শিবাখোলা দিয়ে আহালদাড়া যাওয়ার পথেও পাহাড়ের উপরে উঠতে হয় মহালদিরাম দিয়ে । চা বাগানের পাশেই এখন হোম স্টে গড়ে উঠেছে । অনেকে একরাত্রি এই চা বাগানের পাশে মহালদিরাম তে থাকেন ।
◆◆◆ শিবাখোলা তে কি দেখবেন:
--------------------------------
ছোটো একটা নদী শিবখোলা আর তার পাশে মহানন্দার জঙ্গল । তাকে ঘিরেই গড়ে উঠেছে শিবখোলা ট্যুরিস্ট এডভেঞ্চার ক্যাম্প । NJP থেকে টয় ট্রেন ছুটে চলেছে সুকনা, রংটং হয়ে দার্জিলিং । কেউ যদি হেরিটেজ কু ঝিকঝিকে যেতে চান, তাহলে গন্তব্য টয়ট্রেনে রংটং । সেখান থেকে গাড়ী নিয়ে শিবখোলা । আর NJP থেকে গাড়ী নিয়ে গেলে ওল্ড হিলকার্ট রোড ধরে (সুকনা মোড় থেকে) , রংটং, সিপাইঝোরা চা বাগান হয়ে শিবখোলা এডভেঞ্চার ক্যাম্প । শিলিগুড়ি থেকে মাত্র ২৭ কিমি দূরে সবুজের মাঝে, শিবখোলা নদীর ধারে, নরবুং চা বাগানের মাঝে এক টুকরো স্বর্গ । এক কালে ২০ ঘরের বসতি ছিলো বলে নাম ছিলো বিশঘরের গ্রাম । এখন বসতি বেড়েছে । জনা পঞ্চাশেক ঘর নিয়ে শিবখোলা গ্রাম । শিবখোলা উচ্চ বিদ্যালয় টি কিন্তু গ্রামের মধ্যে নজরে পড়বে । বেশ বড়ো । নামকরণ হয়েছে নেতাজীর আই এন এ(ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মি) এর নামে । এক কিমি দূরে নদীর ধারে শিবমন্দির । সাথে দুর্গা মাতাও আছেন । এরপর গন্তব্য পাশের নরবুং চা বাগান এবং চা ফ্যাক্টরি । চা বাগান টি খুবই আকর্ষণীয় ।
নদীর ধারে রাতের শিবখোলার টেন্ট লাইফ অসাধারন। এক দিকে ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক, অন্য দিকে কুলকুল করে বয়ে যাওয়া শিবখোলা নদী । এই দুয়ের শব্দ শুনতে শুনতে কখন যে ঘুমের আমেজ চলে আসবে বোঝায় যাবেনা ।
●●● ট্রিপ প্ল্যান:
----------------
★ প্রথমদিন : আগেরদিন নিউ জলপাইগুড়ি গামী ট্রেনে উঠে প্রথমদিন সকালে নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে নামুন।
প্রথমদিন রাত্রিবাস সিটং তে । আজ দেখে নিন মংপু রবীন্দ্র মিউজিয়াম, মংপু মনাস্ট্রি, অর্কিড ফার্ম । তারপর পথেই পড়বে রিয়াং নদী এবং যোগিঘাট ব্রীজ ।
তারপর সিটং এ হোমস্টে পৌঁছান ।
দ্বিতীয়ার্ধে ঘুরে নিন সিটং এই লোকাল লেপচা জলপ্রপাত, কমলালেবু বাগান, লেপচা ঘর এবং টোরিয়ক মনাস্ট্রি।
★ দ্বিতীয়দিন : আজকের রাত্রিবাস আহালদাড়া তে ।
সিটং থেকে সকালে বিদায় নিয়ে প্রথমে আসুন বাগোরা পাইন ফরেস্ট । তারপর মহালদিরাম চা বাগান । সেখান থেকে নামথিংপোখড়ি লেক, শেলফু গ্রামে কমলালেবু বাগান। তারপর পৌঁছে যান আহালদাড়া। হোমস্টে তেই ভিউ পয়েন্ট। দ্বিতীয়ার্ধে পুরো আহালদাড়া পাহাড়, ভিউ পয়েন্ট ঘুরে নিন। রাতের আহালদাড়া অসাধারণ।
তৃতীয়দিন: আজ সকালে আহালদাড়া থেকে দর্শন করুন সূর্যোদয় এবং সকালে দেখুন কাঞ্চনজঙ্ঘা। তারপর আহালদাড়া থেকে বিদায় নিয়ে নেমে আসুন শিবাখোলা । অসাধারন শিবাখোলা নদীর ধারে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করুন। হাতে সময় থাকলে তৃতীয়দিন শিবাখোলা এডভেঞ্চার ক্যাম্পে রাত্রিবাস করতে পারেন । সেটাই সবচেয়ে ভালো । আর সময় না থাকলে শিবাখোলা ঘুরে নেমে আসুন সমতলে। ফেরার ট্রেন ধরুন। উল্লেখ শিবাখোলা ছাড়াও আহালদাড়া থেকে লাটপাঞ্চার (হর্নবিলের জন্য বিখ্যাত) ঘুরে/রাত্রিবাস করে ফেরা যায়।
◆◆◆ কিভাবে যাবেন সিটং:
---------------------------
১) শেয়ার গাড়িতে সিটং যেতে চাইলে দার্জিলিং গামী শেয়ার গাড়িতে উঠে দিলারাম মোড়ে নামুন। সেখান থেকে সিটং যাওয়ার গাড়ি বুক করতে হবে। এটি বাগোরা হয়েই সিটং যাবে। বিকেলের দিকে দিলারাম থেকে সিটং শেয়ার গাড়ি পাওয়া যায়।
২) গাড়ি রিজার্ভ করলে উপরের রুটের চেয়ে সেভক হয়ে মংপু দিয়েই সিটং যাওয়া যায়। উল্লেখ NH ৩১ গ্যাংটক যাওয়ার রাস্তায় কালীঝোরা দিয়ে লাটপাঞ্চার, বিরিক দিয়ে শেলফু, আহালদাড়া এবং রাম্বিঝোরা দিয়ে মংপু হয়ে যোগীঘাট হয়ে সিটং যাওয়া যায় ।
এছাড়া রংটং দিয়ে শিবাখোলা ঘুরে মহালদিরাম চা বাগান দিয়ে উঠেও আহালদাড়া/সিটং যাওয়া যায় ।
◆◆◆ কোথায় থাকবেন:
------------------------
● সিটং:
-------
সিটং এ থাকার প্রচুর হোমস্টে। সবচেয়ে নাম করা সিটং ৩ এর বিশেষ হোমস্টে। এছাড়া সিটং ২ তে শেরপা হোমস্টে , টোরিয়ক রায়াং হোমস্টে, রাশিকা হোমস্টে, মেঘবিতান হোমস্টে খুবই ভালো অবস্থানে।
এছাড়া সিটং ১ এ যোগিঘাট ব্রীজের কাছে আছে মুখিয়া হোমস্টে ।
● আহালদাড়া:
--------------
ভিউ পয়েন্টেই গুরুং হোমস্টে, সানরাইজ হোমস্টে।
● মহালদিরাম চা বাগানে:
------------------------
সালামান্ডার হোমস্টে
● শিবাখোলা:
-------------
শিবাখোলা এডভেঞ্চার ক্যাম্প
● শেলফু:
----------
নেচার লাভার হোম স্টে
● লাটপাঞ্চার:
-------------
আহালদাড়ার গুরুং হোমস্টের ই হর্নবিল হোমস্টে ।
প্রতি হোমস্টের নাম্বার গুগলে পাওয়া যাবে।
★★★ খরচ:
-------------
হোমস্টে পারডে পার হেড খরচ ১০০০-১৩০০/- ।
গাড়ি খরচ পার ডে ৩০০০/- (তেলের দাম এবং দরদামের উপর নির্ভরশীল)

Subhojit Tokdar


0 comments:

Post a Comment