পাহাড় , নদী , জঙ্গল , ঝর্ণা , লেক , ড্যাম এই সব যদি একসঙ্গে দেখতে চান , আর যদি চান কলকাতার খুব কাছে , তাহলে আছে একটি মাত্র জায়গা , ঝাড়খণ্ডের পূর্ব সিংভূম জেলার ঘাটশিলা। ছোটনাগপুর মালভূমির অংশবিশেষ আর খনিজ সম্পদেও পরিপূর্ণ। উইকএন্ড এর ছুটিতে এমনকি ১ দিনের ট্রিপেও এই স্পট গুলোর কিছু ঘুরে আসতে পারেন।
**আমাদের প্ল্যান
গত ২৫ এ ডিসেম্বর ১১ জন বন্ধু মিলে ৩ দিনের জন্য ঘুরে এলাম ঘাটশিলা আর টাটানগর। ২৫ এ সকালের ট্রেনে ঘাটশিলা পৌছালাম , ৩ ঘন্টার যাত্রাপথ। আমাদের গাড়ি বুক ছিল , প্রথম দুদিন ঘাটশিলার বিভিন্ন স্পট ঘুরলাম আর তৃতীয় দিন সকালে ঘাটশিলা হোটেল থেকে চেকআউট করে টাটানগর ঘুরে , টাটানগর থেকে রাতের ট্রেনে বাড়ি ফিরলাম।
স্বর্ণরেখা ভিউ পয়েন্ট
->প্রথম দিন ঘুরলাম: ধারাগিরি ফলস , বুরুডি লেক বা ড্যাম , সুবর্ণরেখার সান সেট পয়েন্ট , চিত্রকূট টিলা (সঙ্গে সিদ্ধেশ্বর মন্দির) আর বিভূতি ভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় এর বাড়ি গৌরী কুঞ্জ।
এছাড়াও এই রাস্তায় পড়বে ঘাটশিলা রাজবাড়ী (সান সেট পয়েন্ট এর কাছে) আর রামকৃষ্ণ মঠ , দেখে নিতে পারেন ।
মেন্ রোড থেকে ধারাগিরি যাবার রাস্তা লাল মাটির , শাল মহুয়ার জঙ্গল ও দেখতে পাবেন। রাস্তা সরু আর কিছুটা খারাপও। তাই অটোতে যেতে সময় লাগবে আর কষ্টও হবে। আর এই রাস্তায় প্রথমে পড়বে বুরুডি লেক আর তারপর ধারাগিরি।
বুরুডি লেক
->দ্বিতীয় দিন ঘুরলাম: ফুলডুঙরি টিলা , হিন্দুস্তান কপার লিমিটেড এর গেট , স্বর্ণরেখা ভিউ পয়েন্ট , সিদ্ধেশ্বর পাহাড় (পাহাড়ের ওপর একটা মন্দির আছে) , রঙ্কিনী দেবীর মন্দির।
সময় থাকলে narwa ফরেস্ট , গালুডিহি ড্যাম ঘুরতে পারেন। আমরা পরের দিন গালুডিহি ড্যাম ঘুরে টাটানগর গেছি।
->তৃতীয় দিন ঘুরলাম: গালুডিহি ড্যাম , আর টাটানগর এ ডিমনা লেক , চান্ডিলা ড্যাম
রঙ্কিনী দেবীর মন্দির
সময় থাকলে দলমা বেস , জয়দা মন্দির , সাই বাবা মন্দির ঘুরতে পারেন।
**কিভাবে যাবেন?
হাওড়া থেকে ঘাটশিলার ট্রেন পেয়ে যাবেন , তবে সকালের ট্রেনে যাওয়া খুব সুবিধের। ৩ ঘন্টায় পৌঁছে , হোটেলে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে পড়তে পারবেন।
চিত্রকূট টিলা
যদি ঘাটশিলা শুধু ঘোরেন , গাড়ি বুক করতে পারেন বা স্টেশন এর বাইরে অটো আছে , বুক করুন। অটো এর রেট চার্টও দেয়া আছে।
গালুডি ড্যাম ডিমনা লেক
যদি ঘাটশিলা থেকে টাটানগর আসতে চান , ট্রেনেও আসতে পারেন , এক ঘন্টা সময় লাগে। ফেরার দিন টাটানগর থেকে হাওড়া এর টিকিট কেটে রাখুন , অনেক ট্রেন আছে , তবে বিকালের টায় কাটা ভালো।
ডিমনা লেক
সুতরাং ফেরার দিন সকালের ট্রেনে ঘাটশিলা থেকে টাটা আসুন বা আগের দিন রাতে আসতে পারেন , তবে তাতে আবার আপনাকে টাটা তে হোটেল বুক করতে হবে।
গৌরী কুঞ্জ - বিভূতিভূষণ এর বসতবাটি
টাটানগর থেকে গাড়ি ভাড়া করে স্পট গুলো ঘুরে নিন।
**কোথায় থাকবেন?
আমরা ছিলাম হোটেল কৌশল্যা তে (ফুলডুঙরির সামনে)। সেটা হাই রোডের ওপর , আসে পাশে সেরকম কিছু নেই , তাই সাজেস্ট করবো না। আগে অন্য হোটেল বা গেস্ট হাউস দেখুন , যা পিক টাইম ছাড়া পাওয়া যায়। নয়তো কিছুদিন আগে থেকে বুক করে নিন।
ফুলডুঙরি টিলা**কোথায় খাবেন?
আমরা প্রথম দিন খেয়েছিলাম হোটেল রেইন বার্সে তে , দ্বিতীয় দিন হোটেল রঙ্কিনী তে (ফুলডুঙরির উল্টো দিকে)। আর তৃতীয় দিন টাটানগর যাবার দিন হাই রোডের ওপর পাঞ্জাবি ধাবায়। তবে দ্বিতীয় দিনের হোটেল টা ভালো ছিল।
**কখন যাবেন?
শীতকালের সূর্যের আলোতেও গরম লাগে , তাই বলবো শুধু শীতকালেই যান , ঘুরতে পারবেন।
ফটো আমার আর আমার বন্ধুদের তোলা
সব স্পট ঘুরতে সময় লাগবে , তাই কিছু স্পট মিস ও হতে পারে। আর খরচ বেশি হবে না , তাই ছোট্ট ছুটিতে এই শীতকালেই ঘুরে আসতে পারেন ঘাটশিলা। আর যদি আমাদের এই ঘাটশিলা ভ্রমণ পর্ব দেখতে চান তাহলে আমাদের ইউটুবে এ দেখতে পারেন , লিংক দিলাম।