• Estuary of Teesta and Rangit Rivers

  • Teesta View Point

  • Chatakpur, Darjeeling

  • Chilapata Forest

Wednesday, August 26, 2020

সিটং কার্সিয়ং দার্জিলিং - Sittong, Kurseong, Darjeeling

 কমলালেবুর গ্রাম সিটং। শীতে কমলালেবুর মরশুমে যখন কমলালেবু হয়, গোটা গ্রামটি যেন কমলা রং ধারণ করে। পাহাড়ী পথের আঁকে-বাঁকে যারা পাঁয়ে হেঁটে ঘুরতে ভালোবাসেন তাদের জন্য অসাধারণ একটি গন্তব্য হতে পারে সিটং।

রিয়াং নদীর ধারে বসে অদ্ভুত এক নিস্তব্ধতা উপলব্ধি করতে করতে আপনি হারিয়ে যেতে পারেন মনের কোনো অজানা আস্তানায়। পথের ধারে কমলালেবুর বাগান আর পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া রিয়াং নদীর সাথে পা মিলিয়ে আপনি চলতেই পারেন কোন নাম না জানা পথে।

সিটং এ করার তেমন কিছু নেই, প্রকৃতিকে উপভোগ করা ছাড়া। তবে নেচার ওয়াক, বার্ডিং, ফিসিং এবং জনকোলাহল থেকে লুকিয়ে প্রকৃতির খুব কাছে থাকা যায় সিটং এ। এছাড়া যারা পাখি ভালোবাসেন তাদের জন্য এক দারুণ আস্তানা এই সিটং। সিটং এ দেখা পেয়ে যাবেন হর্ণবিল বা ধনেশ পাখির।


সিটং লাটপাঞ্চার এইসব অঞ্চলে এদের অবাধ বিচরণ ক্ষেত্র। আর আপনি যদি কমলালেবু ভালোবাসেন তবে যত খুশি কমলালেবু খেতে পারেন। হিমালয়ান পাখি এবং বিভিন্ন প্রজাতির প্রজাপতির দেখা মিলবে সিটং এ। শহুরে কোলাহল থেকে দূরে সিটং এ ভালোই লাগবে।

দর্শনীয় স্থান: মাত্র ২০ কিমি দূরেই মংপুতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাড়ী ঘুরে আসতে পারেন। এছাড়া লাটপাঞ্চার, অহলডারা, নামথিং পোখরি লেক, শেল্ফু হিলস ও ঘুরে আসুন গাড়ী ভাড়া করে। নামথিং পোখরি লেকে দেখা মিলবে পৃথিবীর প্রাচীন জীবগুলির মধ্যে অন্যতম স্যালামেন্ডারের। দিলারাম, বাগোরা, চটকপুরের মতো গ্রাম গুলিও কাছেই। চাইলেই ঘুরে আসতে পারেন।

সিটং এ কমলালেবু দেখার সেরা সময় নভেম্বর থেকে জানুয়ারী। গাছে গাছে কমলালেবু গোটা গ্রামটাকেই কমলা করে রাখে। মাত্র ৪০০০ ফুট উচ্চতায় হওয়ায় ঠান্ডার তীব্রতাও খুব বেশি নয়।

নিউ জলপাইগুড়ি থেকে
লাটপাঞ্চার হয়ে গেলে দূরত্ব ৫৫ কিমি।
মংপু হয়ে গেলে দূরত্ব ৭৫ কিমি।
গাড়ী ভাড়া ৩০০০/- টাকা।
হোমস্টেতে খরচ-
*রুম ডল শেয়ারিং জনপ্রতি প্রতিদিন ১৫০০/-
* রুম ট্রিপল শেয়ারিং জনপ্রতি প্রতিদিন ১২৫০/-
*রুম ফোর শেয়ারিং জনপ্রতি প্রতিদিন ১২০০/-
টেন্টে থাকার খরচ ১২০০/- জনপ্রতি প্রতিদিন।
+91 6291538880
info@himalayanretreat.co.in

Monday, August 17, 2020

লেপচাখা, আলিপুরদুয়ার - Lepchakha, Alipurduar

 আজ আপনাদের পরিচয় করাবো আলিপুরদুয়ারের উওর দিকে এক পাহাড়ি গ্ৰাম "লেপচাখা"। এই নাম শোনেননি এমন ভ্রমনরসিক বাংঙ্গালি আজকের দিনে খুবই বিরল।বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের অন্তরগত সান্তালাবাড়ির থেকে মাত্র ৭ কি.মি দূরে অবস্থিত লেপচাখার পার্থিব সৌন্দর্যের সাথে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেব।

লেপচাখা ভারত-ভুটান সীমান্তের নিকটবর্তী বক্সা পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত একটি ছোট গ্রাম তবে অত্যন্ত সুন্দর। বক্সা দুর্গ থেকে আরও 3 কিলোমিটার ট্র্যাক আপনাকে লেপচাখার মনোরম গ্রামে নিয়ে যাবে।লেপচাখার মূল আকর্ষণ হ'ল পাহাড়ের টেবিল এর মতো শীর্ষ অঞ্চল সেখান থেকে আপনি ডুয়ার্স অঞ্চলের সমস্ত নদী প্রবাহ দেখতে পাবেন। এটি একটি অসাধারণ সুন্দর দৃশ্য। এবং আমি মনে করি লেপচাখাকে বর্ণনা করার জন্য ব্যবহৃত সমস্ত বিশেষণগুলি ন্যায়সঙ্গত। উপরের দিক থেকে, আপনি বক্সা টাইগার রিজার্ভ, ভুটান পাহাড় এবং সুন্দর পার্শ্ববর্তী একটি প্যানোরামিক ভিউ পাবেন। গ্রামে একটি সাদা বৌদ্ধ স্তূপও রয়েছে যা ছোট্ট গ্রামের বাড়ির মাঝে দর্শনীয় দেখায়।


লেপচাখা মূলত ডুকপা অধিবাসীদের একটি ছোট্ট গ্ৰাম।এক ঝলক দেখলে মনে হবে আপনি ভূটানের কোনো গ্ৰামে অবস্থান করছেন।প্রসঙ্গত বলে রাখি অতীতে লেপচাখা ভূটানের অধিনে ছিল।পরবর্তীতে ইংরেজ শাসন কালে ভারতের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে।বর্তমানে লেপচাখাতে প্রায় ৭০ টি ডুকপা পরিবার বসবাস করেন।এরা মূলত বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী।গ্ৰামে ঢুকতেই একটি মনাষ্ট্রি আপনাকে স্বাগত জানাবে আপনার কিছু ক্ষণের জন্মে মনে হতে পারে আপনি হয়ত ভুটানের কোনও গ্রামে এসে পড়েছেন। প্রায় ৩০০০ ফুট হওয়ার জন্য এখানকার আবহাওয়া সারা বছরই বেশ মনোরম থাকে। গ্রামবাসীরা খুব শান্তিপূর্ণ এবং বন্ধুত্বপূর্ণ, বিশেষত বাচ্চারা। মানুষ দেখে তারা বেশ খুশি হয়। অনেকেই জয়ান্তী,বক্সাফোর্ট ঘুরতে এসে অনেকেই লেপচাখায় দু-এক দিনের জন্য ঢুঁ মেরে যায়।সৌন্দর্যের মাঝে লেপচাখায় একটি রাত কাটাতে এই জায়গায় পৌঁছানোর সমস্ত ঝামেলা পুরোপুরি মূল্যবান। লেপচাখায় সূর্যাস্ত নিঃসন্দেহে খুব সুন্দর।


লেপচাখা শান্ত ও নিরিবিলি গ্ৰামের জন্য পর্যাটকদের কাছে দিন দিন খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।সন্ধ্যায় যদি আপনার আলিপুরদুয়ার ও হাসিমারার আলোর রোশনাই চোখে পড়ে তাহলে পরদিন সকালে পূর্বে সংকোশ নদী থেকে পশ্চিমে তোর্ষানদীর মাঝে বিস্তির্ন বক্সা বাঘবন চোখে পড়বে। কপাল ভালো থাকলে রাজ ধনেশের দেখা পেতে পারেন লেপচাখার আশেপাশে।

স্থানীয় বাসিন্দারা ধর্মীয় ও সংস্কৃতিক ভাবে বেশ রক্ষনশীল।তাই বছরের বিভিন্ন সময় পূজা পার্বন অনুষ্ঠিত হয়।বিশেষত, লোসার (নববর্ষ) ও চৈত্র সংক্রান্তিতে পূজার রীতিনীতি।কোন এক দুপুর বা বিকেলে হটাৎই শুনতে পারবেন "ওম মানি পদ্মে হুম" ।
লেপচাখা কে কেন্দ্র করে আপনি "ওছলুম, কাতলুং,রুপম ভ্যালি" ঘুরে আসতে পারেন।এছাড়াও উওরবঙ্গের উল্লেখযোগ্য শিব তীর্থস্থান "মহাকাল" দর্শন করে জয়ান্তী যেতে পারেন।


সবশেষে দকারি একটি কথা, আপনি ভাবছেন খুব সুন্দর জয়গা যেকোনো সময় যে কোনো বেক্তি পৌঁছে জেতে পারেন. তাহলে একটু ভুল হবে সান্তালাবাড়ির পর থেকে কোনো গাড়ি চলাচল করে না (গাড়ি চলাচলের উপযুক্ত রাস্তা না থাকার জন্য)। তাই যারা নিজের পায়ে ৪ কিলোমিটার রাস্তা হেঁটে মায়ের মায়া ভরা কোলে যেতে চাইছেন, তাদের জন্য লেপচাখা তার সৌন্দর্যের ডালি নিয়ে অপেক্ষা করছে।


Jajabor Deb

Friday, August 7, 2020

বক্সা টাইগার রিজার্ভ - Buxa Tiger Reserve - Alipurduar

 বক্সা টাইগার রিজার্ভ - পর্ব ২:

দুপুরে খেয়ে বেরিয়ে পরি পোখরি হ্রদের দিকে। প্রকৃতি আবার আমাকে অবাক করল যখন জানতে পারলাম ১৪০০ ফিট উচ্চতায় অবস্থিত এই হ্রদের জল ১২ মাস একই থাকে। অবুঝ মনুষ্য জাতি এখানেও ভগবানের দোহাই দিয়ে দুটো ছোটো মন্দির স্থাপন করেছে।

জানতে পারলাম ওই হ্রদে একসাথে ঘর করে মাগুর আর কচ্ছপের দল। কিন্তু এখানেও আমার মন কাড়লো জঙ্গল আর প্রকৃতির নির্ভেজাল সুন্দর্য্য। গাড়ি থেকে নেমে ১.৫ কিমি পাহাড়ের গা বেয়ে আর জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে ট্রেক করে উঠতে হয়, সে রাস্তায় শুনেছিলাম শুকনো পাতার ওপর পরা পায়ের শব্দ, স্বাদ পেয়েছিলাম এক অসীম স্বাধীনতার, গন্ধ নিয়েছিলাম গন্ধহীন সেই জঙ্গলের , দেখেছিলাম ছোটো বড় অনেক সুন্দর সুন্দর কিট পতঙ্গের দল, অনুভব করেছিলাম নিজের অস্থিত্ব।

নিচে জয়ন্তীর কলকল শব্দ শুনতে শুনতে ওপরে ওঠার সময় গাছের ফাঁক দিয়ে একবার নিচের দিকে চোখ রাখলে দেখা যায় দিগন্ত বিস্তৃত এক জঙ্গল যার রূপে রঙে এত ভিন্নতা তাকে একটি ছোটো অ্যামাজন করে তুলেছে। সবার মত আমিও মুড়ি খাওয়ালাম মাংসাশী সেই মাগুরদের।

বাবার ডাকে ফিরে আসলাম বর্তমান সময়, সেই মায়াবী রাতে। বাধ্য মেয়ের মত ঘরে ঢুকে ঘুম লাগলাম। পরের দিন সকালে উঠে কোকিলের ডাক শুনছি এমন সময় ফোন আসলো মোহন দার, বললো সকালে ভুটিয়া আর চুনিয়া বসতি ঘুরে আসা যেতে পারে। ৩০ মিনিটের মধ্যে বেরিয়েও পরলাম।

ভুটিয়া বসতি আরো নিস্তব্ধ। জঙ্গলের গায়ে মাথা রেখে খুব শান্ত ভাবে ঘুমাচ্ছে গ্রামটা। এই বসতি চারিদিক দিয়ে শুধু সবুজে ঘেরা। এখানেও একটা থাকার ব্যবস্থা আছে। রাতের ঘুটঘুটে অন্ধকারে রাত কাটানোর মজাটা এখানে পুরো আলাদা। ভুটিয়া বসতি ছেড়ে আমরা চললাম চুনিয়া নদীর ওপর দিয়ে চুনিয়া ওয়াচ টাওয়ারের দিকে। চুনিয়ার শুকনো বুকের ওপর বেড়ে উঠেছে আরেক সুন্দর জঙ্গল। প্রত্যেক বর্ষায় সে জঙ্গল রূপ বদলায়। সাদা পাথরের পথ, আকাশে নিলের ছাউনী আর দুপাশে সবুজের ব্যারিকেড। যত দেখছি তত অবাক হচ্ছি। সেই জঙ্গলে শুধু আমরা, চার পাশে অনেক দুর অবধি নজর রাখলেও দেখা যায় না কোনো মনুষ্য প্রাণ। এই যাত্রাও শেষ হলে ঘণ্টা দেড়েকের মাথায়।

আজ এই স্বর্গীয় আস্থানা ছেড়ে দেবো। তার আগে শেষ বারের মত জঙ্গলকে আলিঙ্গন করব জয়ন্তী বনের সাফারীতে গিয়ে। স্নান খাওয়ার পর বেরিয়ে পরলাম জয়ন্তী নদীকে বিদায় জানিয়ে। ম্লান হয়ে গেল সকল উত্তেজনা। শেষ বারের মত চিকন কালো পাকা রাস্তা ছেড়ে জঙ্গলের কার্পেটে পা রাখলো আমাদের জিপসি। এই বনের কাছ থেকে বিদায় নেওয়ার বেলা এসে গেছে।

বিদায় জানাতে হবে এই চারিপাশের অপরূপ সবুজকে, চারিপাশে উরে যাওয়া পাখি, প্রজাপতির দলকে, সেই ময়ূর মায়ুরীদের। হরিণের একদল হঠাৎ জঙ্গল থেকে বেরিয়ে ছুটতে লাগলো আমাদের গাড়ির সামনে। প্রকৃতি শেষ বারের মত একটা উপহার দিয়ে জানো বলতে চাইল, "আবার আসিস"। আসবো তো নিশ্চই, এই জঙ্গল কি আর ভোলা যায়? নাড়ির টান তৈরি হয়ে গেছে জানো তার সাথে। বক্সা রিজার্ভের বন এখনও কুমারী, অনাবিষ্কৃত, অপরিচিত কিন্তু আমার মতে এ আমাজনের ছোটো জ্ঞাতি ভাই। দুয়ার্স আগে অনেক বার দেখেছি কিন্তু এরকম প্রকৃতির অস্থিত্ব আর কোথাও টের পাইনি।

বক্সা টাইগার রিজার্ভ ছেড়ে আমরা এবার পারি দিলাম সিকিয়াঝোরার দিকে। ওখানে যাওয়ার একমাত্র উদ্দেশ্য সিকিয়াঝোরার নদীর সাফারি। সিকিয়াঝোরা নদীটিকে দুপাশ দিয়ে ঘিরে রেখেছে বক্সা জঙ্গলের শাখা প্রশাখা। উচ্ছতায় নিম্ন হলেও ঘনত্ব কোনো অংশে কম না। মাঝি ভাইদের কাছে শোনা গেলো এই জঙ্গল থেকে হাতি নেমে মাঝে মাঝেই এই জলে স্নান করে, খেলা করে যায়।

নদী সাফারির শুরুতে একটু কেমন মরা মরা লাগছিল সব কিছু, বক্সার ঘোর কাটিয়ে উঠতে পারিনি ঠিক। কিন্তু মানব সমাজের তৈরি কৃতিম নৌকার ঘাট পেরিয়ে একটু এগোতেই আবার সেই বক্সার কথা মনে পরে গেলো। কুমারী সেই জঙ্গলের নিস্তব্ধতার আওয়াজ শুনতে শুনতে হটাৎ রাঙিয়ে গেলাম চারিদিকের সবুজে। গাছের ছাউনির মাঝে মাঝে দেখা যাচ্ছে ছোট্ট একটু নিল আকাশ। জলের ওপর দিয়ে খুব ধীর গতিতে চলতে লাগলাম। চোখ বন্ধ করলেই অনুভব করা যাচ্ছিল প্রকৃতির শেষ আদর। নানান পাখির কোলাহল শুনতে শুনতে এই যাত্রা টাও শেষ হয়ে গেলো। চারিদিকের সেই নির্ভেজাল গাঢ় সবুজকে শেষ বারের মত মন ভরে দেখে বিদায় নিলাম প্রকৃতির এত যত্ন করে সাজানো এই ভূস্বর্গ থেকে।

এই বেড়ানোটির প্রতিটি অনুভূতি ব্যক্ত করতে গেলে গল্পো উপন্যাসের রূপ নেবে। একটা কথা বলতে পারি দৃঢ়তার সাথে যে আমাদের মত যারা সপ্তাহে দুটি দিন বাঁচার জন্য বাকি পাঁচটি দিন নিজের সাথে আর পৃথিবীর সাথে লড়াই করেন তাদের জন্য এই জয়গা আদর্শ। পরিণত লেখকদের মত না পারলেও চেষ্টা করলাম নিজের পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের অভিজ্ঞতা যথা সম্ভব লেখাই তুলে ধরতে। জানাবেন কেমন লাগলো।


Pritha Guha