আজ আপনাদের পরিচয় করাবো আলিপুরদুয়ারের উওর দিকে এক পাহাড়ি গ্ৰাম "লেপচাখা"। এই নাম শোনেননি এমন ভ্রমনরসিক বাংঙ্গালি আজকের দিনে খুবই বিরল।বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের অন্তরগত সান্তালাবাড়ির থেকে মাত্র ৭ কি.মি দূরে অবস্থিত লেপচাখার পার্থিব সৌন্দর্যের সাথে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেব।
লেপচাখা ভারত-ভুটান সীমান্তের নিকটবর্তী বক্সা পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত একটি ছোট গ্রাম তবে অত্যন্ত সুন্দর। বক্সা দুর্গ থেকে আরও 3 কিলোমিটার ট্র্যাক আপনাকে লেপচাখার মনোরম গ্রামে নিয়ে যাবে।লেপচাখার মূল আকর্ষণ হ'ল পাহাড়ের টেবিল এর মতো শীর্ষ অঞ্চল সেখান থেকে আপনি ডুয়ার্স অঞ্চলের সমস্ত নদী প্রবাহ দেখতে পাবেন। এটি একটি অসাধারণ সুন্দর দৃশ্য। এবং আমি মনে করি লেপচাখাকে বর্ণনা করার জন্য ব্যবহৃত সমস্ত বিশেষণগুলি ন্যায়সঙ্গত। উপরের দিক থেকে, আপনি বক্সা টাইগার রিজার্ভ, ভুটান পাহাড় এবং সুন্দর পার্শ্ববর্তী একটি প্যানোরামিক ভিউ পাবেন। গ্রামে একটি সাদা বৌদ্ধ স্তূপও রয়েছে যা ছোট্ট গ্রামের বাড়ির মাঝে দর্শনীয় দেখায়।
লেপচাখা মূলত ডুকপা অধিবাসীদের একটি ছোট্ট গ্ৰাম।এক ঝলক দেখলে মনে হবে আপনি ভূটানের কোনো গ্ৰামে অবস্থান করছেন।প্রসঙ্গত বলে রাখি অতীতে লেপচাখা ভূটানের অধিনে ছিল।পরবর্তীতে ইংরেজ শাসন কালে ভারতের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে।বর্তমানে লেপচাখাতে প্রায় ৭০ টি ডুকপা পরিবার বসবাস করেন।এরা মূলত বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী।গ্ৰামে ঢুকতেই একটি মনাষ্ট্রি আপনাকে স্বাগত জানাবে আপনার কিছু ক্ষণের জন্মে মনে হতে পারে আপনি হয়ত ভুটানের কোনও গ্রামে এসে পড়েছেন। প্রায় ৩০০০ ফুট হওয়ার জন্য এখানকার আবহাওয়া সারা বছরই বেশ মনোরম থাকে। গ্রামবাসীরা খুব শান্তিপূর্ণ এবং বন্ধুত্বপূর্ণ, বিশেষত বাচ্চারা। মানুষ দেখে তারা বেশ খুশি হয়। অনেকেই জয়ান্তী,বক্সাফোর্ট ঘুরতে এসে অনেকেই লেপচাখায় দু-এক দিনের জন্য ঢুঁ মেরে যায়।সৌন্দর্যের মাঝে লেপচাখায় একটি রাত কাটাতে এই জায়গায় পৌঁছানোর সমস্ত ঝামেলা পুরোপুরি মূল্যবান। লেপচাখায় সূর্যাস্ত নিঃসন্দেহে খুব সুন্দর।

লেপচাখা শান্ত ও নিরিবিলি গ্ৰামের জন্য পর্যাটকদের কাছে দিন দিন খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।সন্ধ্যায় যদি আপনার আলিপুরদুয়ার ও হাসিমারার আলোর রোশনাই চোখে পড়ে তাহলে পরদিন সকালে পূর্বে সংকোশ নদী থেকে পশ্চিমে তোর্ষানদীর মাঝে বিস্তির্ন বক্সা বাঘবন চোখে পড়বে। কপাল ভালো থাকলে রাজ ধনেশের দেখা পেতে পারেন লেপচাখার আশেপাশে।
স্থানীয় বাসিন্দারা ধর্মীয় ও সংস্কৃতিক ভাবে বেশ রক্ষনশীল।তাই বছরের বিভিন্ন সময় পূজা পার্বন অনুষ্ঠিত হয়।বিশেষত, লোসার (নববর্ষ) ও চৈত্র সংক্রান্তিতে পূজার রীতিনীতি।কোন এক দুপুর বা বিকেলে হটাৎই শুনতে পারবেন "ওম মানি পদ্মে হুম" ।
লেপচাখা কে কেন্দ্র করে আপনি "ওছলুম, কাতলুং,রুপম ভ্যালি" ঘুরে আসতে পারেন।এছাড়াও উওরবঙ্গের উল্লেখযোগ্য শিব তীর্থস্থান "মহাকাল" দর্শন করে জয়ান্তী যেতে পারেন।
সবশেষে দকারি একটি কথা, আপনি ভাবছেন খুব সুন্দর জয়গা যেকোনো সময় যে কোনো বেক্তি পৌঁছে জেতে পারেন. তাহলে একটু ভুল হবে সান্তালাবাড়ির পর থেকে কোনো গাড়ি চলাচল করে না (গাড়ি চলাচলের উপযুক্ত রাস্তা না থাকার জন্য)। তাই যারা নিজের পায়ে ৪ কিলোমিটার রাস্তা হেঁটে মায়ের মায়া ভরা কোলে যেতে চাইছেন, তাদের জন্য লেপচাখা তার সৌন্দর্যের ডালি নিয়ে অপেক্ষা করছে।
Jajabor Deb
0 comments:
Post a Comment