• Estuary of Teesta and Rangit Rivers

  • Teesta View Point

  • Chatakpur, Darjeeling

  • Chilapata Forest

Sunday, December 23, 2018

দু 'চাকায় বাংড়িপোসি : (দ্বিতীয় ও শেষ পর্ব)

 আজ 8 ই নভেম্বর, সকাল সকাল ঘুমটা ভেঙে গেল। রিসর্টের জানালা দিয়ে দেখলাম গরুমহিষানী পাহাড়ের শ্রেণীর ওপর সূর্যের আলো যেন ঝলমল করছে । বেরিয়ে এলাম বারান্দায়। সূর্যের আলোয় চারপাশের রূপ যেন ফেটে পড়ছে।


তাড়াতাড়ি প্রস্তুত হয়ে চলে এলাম রিসর্টের রেস্টুরেন্টে । আলু পরোটা আর গরম গরম চা দিয়ে ব্রেকফাস্ট টা দারুন হলো। শুরু করে দিলাম দ্বিতীয় দিনের যাত্রা। চললাম ভ্রমণ কুণ্ড-এর দিকে। আবার সেই দুপাশে পর্বতের সারি আর জঙ্গলের পথ।



সন্ধ্যেবেলা যেটাকে খুব গ্লুমি মনে হচ্ছিল আজ তার রূপ অবর্ণনীয় হয়ে উঠেছে। এগিয়ে চললাম ভ্রমণ কুন্ডের দিকে। একটা ভাঙাচোরা ব্রিজ দিয়ে বুড়িবালাম পেরিয়ে আবার এক নতুন পথ ধরলাম। এখানে জঙ্গল যেন আরো ঘন। মাঝে মাঝে দু-একটা আদিবাসী বাড়ি ।



রাস্তায় দেখতে পেলাম আদিবাসী বাচ্চারা খেলা করছে আর মেয়েরা গৃহকর্মে নিযুক্ত। যেতে যেতে আমরা এটাই আলোচনা করছিলাম এরা সকাল-বিকেল কত সুন্দর সৌন্দর্যই না দেখতে পায়। কিন্তু পরমুহুর্তেই ভাবলাম শুধু সৌন্দর্য দিয়ে তো আর পেট ভরে না । এদের জীবন যাপনের পদ্ধতি এতটাই কঠিন যে আমরা তা কল্পনাও করতে পারি না।



ইলেকট্রিসিটি নেই, মোবাইলের টাওয়ার পর্যন্ত নেই। না আছে ভালো পানীয় জলের ব্যবস্থা । তার মধ্যেই চলেছে এদের জীবন সংগ্রাম । চলেছি জঙ্গলের মধ্য দিয়ে । চারপাশ নাম-না-জানা পাখির কলকাকলিতে পরিপূর্ণ । একটা জায়গাতে নদীর একটা চমৎকার ভিউ পেলাম। একটু দাঁড়িয়ে আবার এগিয়ে চললাম। যদিও গুগল ম্যাপ দেখাচ্ছিলো বাংড়িপোসি থেকে এটা 22 কিলোমিটার ,কিন্তু প্রায় 30 কিলোমিটার পর পৌঁছলাম ভ্রমণ কুন্ডে।



আর পৌছেই একরাশ মুগ্ধতা আমাদের ঘিরে ধরল। ছোট্ট একটা টিলার ওপর থেকে জল ঝাঁপিয়ে পড়ছে আর তাতেই সৃষ্টি হয়েছে এই কুন্ডের। জল এতটাই স্বচ্ছ, যে মাটি অব্দি পরিষ্কার দেখা যায় । চারপাশে পাথরের স্তুপ। সে এক চমৎকার দৃশ্য ।



আমরা নিজেদেরকে রেসিস্ট করতে পারলাম না । জুতো খুলে নেমে পড়লাম জলে। শুনেছিলাম ভ্রমণ কুন্ডের জলে স্নান করলে নাকি পাপ ক্ষয় হয় । পাপ ক্ষয় হল কিনা জানিনা, কিন্তু ওই জনে আমাদের মন প্রাণ জুড়িয়ে গেল ।


আর কুন্ডের জলে অসংখ্য বড় বড় মাছ । স্থানীয় লোকদের কাছে শুনলাম ,ওই মাছগুলি নাকি ভগবানের নামে উত্সর্গীকৃত । কুন্ডের চারপাশের পরিবেশ জাস্ট অসাধারণ। মনে মনে ভাবছিলাম, এখানে ক্যাম্পিং করতে পারলে দারুন হত ।



ওখানকার ওই সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে সূর্য উঠে এল মাথার ওপর। এবার ফেরার পালা। আবার সেই জঙ্গল ,আবার সেই পাহাড়, আবার সেই বুড়িবালামের তীর, চললাম রিসর্টের দিকে। স্নান সেরে, লাগেজ নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম।

গতকালের মত আজও লাঞ্চটা দারুন হলো। বিল মিটিয়ে, সিমিলিপাল রিসর্ট কে বিদায় জানিয়ে, ধরলাম বাড়ি ফেরার পথ। মনের মধ্যে রইল একরাশ মুগ্ধতা আর পরিপূর্ণ স্মৃতি। আসার পথে মুখ ঘুরিয়ে বলে এলাম, ভালো থেকো সুন্দরী বাংড়িপোসি, আবার আসিব ফিরে ।।!!

দ্বিতীয় দিনের কিছু ছবি সবার জন্য.

Abhishek Santra

Monday, December 3, 2018

দু' চাকায় বাংড়িপোসি : (প্রথম পর্ব)

লকডাউন শিথিল হওয়ার পর থেকেই মনটা বেড়াতে যাওয়ার জন্য ছটফট করছিল । কিন্তু কিছুতেই পরিকল্পনাগুলো সফল হচ্ছিল না । অবশেষে 7 ই নভেম্বর শনিবার সকালবেলা বেরিয়ে পড়লাম মনে একরাশ উত্তেজনা আর বাইকের ট্যাংক ফুল করে।

এগিয়ে চললাম খড়্গপুরের উদ্দেশ্যে আমাদের ডেস্টিনেশন ছিল উড়িষ্যার বাংড়িপোসি । বেশ কয়েকদিন ধরেই যেন বাংড়িপোসি আমাদের টানছিল ।মোট তিনটি বাইক আর আমরা সাতজন। তো যাই হোক আটটা নাগাদ খড়গপুর থেকে NH6 ধরে এগিয়ে চললাম । বেশ কিছুটা এগোতেই দেখা হলো জঙ্গলের সঙ্গে ।

সাথে সাথেই আমাদের উত্তেজনা যেন আরো বেড়ে চলল । একটু পরেই পৌঁছে গেলাম লোধাশুলি জঙ্গলে । নাহ্, এবার একটু নামতেই হচ্ছে । তো আমরা সবাই নেমে পড়লাম এবং চললো আমাদের ম্যান্ডেটরি ফটো আর ভিডিও শুট। ওখানে ওই সবুজ জঙ্গলের মাঝে বুক ভরে শ্বাস নিয়ে আবার এগিয়ে চললাম আমরা। সকাল থেকে চা ছাড়া কিছুই খাওয়া হয়নি তাই খিদে টাও যেন একটু চাগাড় দিয়ে উঠেছিল ।

অবশেষে বহড়াগোড়া'র একটু আগে একদম নতুন তৈরি নটরাজ ধাবাতে দাঁড়ালাম ব্রেকফাস্ট এর জন্য। হাতে গরম রুটি আর তড়কা দিয়ে সেরে নিলাম ব্রেকফাস্ট। সাথে ছিল স্টিলের কাপ ভরা গরম চা। নটরাজ ধাবা কে কে বিদায় জানিয়ে আবার এগিয়ে চললাম আমরা ।

পশ্চিমবঙ্গ বেরিয়ে পরলাম ঝাড়খন্ডে। এবার চললাম NH46 ধরে । আর কিছুটা এগোতেই জামশোল বর্ডার পেরিয়ে প্রবেশ করলাম উড়িষ্যায় । উড়িষ্যায় প্রবেশের একটু পর থেকেই সামনে দেখা যেতে লাগলো দিগন্তবিস্তৃত ধানক্ষেত আর ওই দূরে দূরে পাহাড়ের সারি । উফ অসাধারণ অনুভূতি ।

বাইকের স্পিডোমিটারের কাঁটা তখন বেড়েই চলেছে। যত এগোতে লাগলাম সামনের পাহাড়ের সারি আরো স্পষ্ট হয়ে উঠল আমাদের চোখের সামনে। একটু পরেই পৌছে গেলাম গেলাম আমাদের ডেস্টিনেশন বাংড়িপোসি তে । উঠলাম আগে থেকে বুক করে রাখা সিমিলিপাল রিসর্টে। এতটা বাইক রাইডিং এ একটু ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম নিশ্চয়ই, কিন্তু স্নান সেরে নিতেই সবাই ঝরঝরে হয়ে উঠলাম। লাঞ্চের অর্ডার দিয়ে চললাম দুয়ারসিনি মাতার মন্দির দেখতে ।

রিসোর্ট থেকে একটু এগোতেই সামনে পড়ল বাংড়িপোসির সেই বিখ্যাত ঘাটি। একপাশে জঙ্গল আর একপাশে খাদ সাথে নিয়ে উঠতে লাগলাম আমরা । পৌঁছে গেলাম দুয়ারসিনি মাতার মন্দিরে । মাকে প্রণাম জানিয়ে এগিয়ে চললাম ঘাটি বরাবর । ডান পাশে পাহাড়ের সারি বারবার চোখ টানছিল আমাদের। কিন্তু অন্যমনস্ক হওয়ার জো নেই, তাই গাড়ি থামিয়ে উপভোগ করতে লাগলাম দুপুরের সোনালী আলোয় পাহাড়ের সারি।

বর্ষা কদিন আগেই গিয়েছে, তাই জঙ্গল যেন এখন আরো সবুজ । সেই চিরহরিৎ পাহাড় বনানী'র দিকে তাকিয়ে দিকে তাকিয়ে মনের মধ্যে এক অদ্ভুত আনন্দের অনুভুতি হচ্ছিল । ফটোশুট তো সাথে সাথেই চলল। এবার ফিরে চললাম রিসর্টে। বাসমতি চালের ভাত আর চিকেন সহযোগে লাঞ্চটা ভরপেট হল । একটু বিশ্রাম নিতেই রিসর্টের জানালা দিয়ে দেখলাম বেলা পড়ে আসছে। আবার বেরিয়ে পড়লাম পড়ন্ত বিকেলে পাহাড়ের সৌন্দর্য উপভোগ করতে।

এবার ধরলাম সিমলিপাল এর জঙ্গলের দিকে যাওয়ার রাস্তাটা । একটু এগোতেই বামদিকে পরল সেই বিখ্যাত বুড়িবালাম নদী, যার তীরে বাঘা যতীনের সংগ্রাম অমর হয়ে আছে । এগিয়ে চললাম জঙ্গলের রাস্তা ধরে । পড়ন্ত বিকেলে সামনে গরুমহিষানী মাউন্টেন রেঞ্জ আমাদের সামনে এক অতুলনীয় সৌন্দর্য তুলে ধরেছিল বারবার ।

আমরা যত এগিয়ে চলেছি সূর্য ধীরে ধীরে ধীরে পৌঁছে যাচ্ছে পাহাড়ের একদম মাথায়। একটা জায়গাতে আমরা দাঁড়িয়ে পড়লাম। পাহাড়ের মাথায় সূর্যাস্ত, সে এক অবর্ণনীয় সৌন্দর্য। দেখা হল এক পাল গরু আর ভেড়ার সাথে । গোধূলি বেলায় সে এক অভূতপূর্ব অনুভূতি। কিন্তু সূর্য পাঠে নামতেই ঝুপ করে অন্ধকার নামলো।

পাহাড়ের সৌন্দর্য দেখতে দেখতে কখন যে প্রায় 35 কিলোমিটার চলে এসেছি বুঝতেই পারিনি । নাহ্, এবার ফেরার পথ ধরতেই হবে। জঙ্গলের মাঝখান দিয়ে রাস্তা। ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক, মাঝে মাঝে দু একটা শিয়ালের ডাক ,ব্যাপারটা দুঃসাহসিক মনে হচ্ছিল কিন্তু আমরা খুব উপভোগ করছিলাম। মনটা একটু চা চা করতেই দাড়িয়ে গেলাম একটা বাজার দেখে।

এক পেয়ালা চা খেয়ে একটু চাঙ্গা বোধ করলাম । এগিয়ে চললাম রিসর্টের দিকে। রিসর্টে যখন পৌঁছলাম সন্ধে ঘন হয়েছে। সন্ধ্যেটা কাটলো স্নাক্স আর সারাদিনের স্মৃতি রোমন্থন করে। রাতে ডিনার করে শুয়ে পড়লাম সবাই। কাল আরও কিছু পরিকল্পনা রয়েছে। সেগুলো পরের পোস্টে।

রাইড টু বাংড়িপোসি, প্রথম দিনের কয়েকটা ছবি রইল তোমাদের জন্য!!....


Abhishek Santra


Saturday, September 22, 2018

চারখোল, কালিম্পং - Charkhole, Kalimpong

লোঁলেগাও থেকে অনতিদূরে ৫৫০০ ফিট উচ্চতায় কালিম্পং সাব-ডিভিশনের ছোট্ট পাহাড়ি হ্যামলেট চারখোল। ঘন সবুজে ঘেরা এই পাহাড়ী জনপদের বাঁকে-বাঁকে নিঃস্তব্ধ সৌন্দর্যের মূর্ত প্রতীক হয়ে রয়েছে যেন প্রকৃতি। পাইন, ওক, শাল, সাইপ্রাস, রডোডেনড্রনে মোড়া নেওয়াভ্যালি ন্যাশানাল পার্কের অন্তর্ভুক্ত চারখোল বিভিন্ন প্রকার হিমালয়ান পাখির অবাধ বিচরণ ক্ষেত্র। যেদিকেই চোখ যাবে শুধু সবুজ আর তারই মাঝে নানারকম পাখির সুরেলা শিষ আপনার ছুটি কাটানোর আমেজকে করে তুলবে স্বর্গীয়।


প্রকৃতির এই নিঃস্তব্ধ, নিশ্চিন্ত আস্তানায় পায়ে হাঁটা পাহাড়ী পথে দেখা পেয়ে যাবেন ব্লু ফ্রন্টেড রেডস্ট্রাট, গ্রীণ ব্যাকড্ টিট, ভার্ডিটার ফ্লাইক্যাচার, হিমালয়ান বুলবুল প্রভৃতি পাখির। এছাড়া কয়েকশ প্রজাতির প্রজাপতি এই অঞ্চল কে এক অনন্য রূপদান করেছে। ফলে একদিকে যেমন পাখিপ্রেমি অন্যদিকে যারা কাছেপিঠে অফবিট লোকেশনের খোঁজ করেন তাদের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে চারখোল। চারখোল থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা র ভিউও অসাধারণ, এমনকি আকাশ পরিস্কার থাকলে এখান থেকে মাউন্ট এভারেস্টের কিছু অংশ ও দেখা যায়। গুটি কয়েক পরিবারের বাস এই চারখোলে, মূলতঃ চাষবাস করেই জীবিকা নির্বাহ করেন। তাদের সহজ সরল জীবনযাত্রা এবং উষ্ম আতিথিয়তা আপনার ভালো লাগবেই।



মূলতঃ পায়ে হেঁটেই ঘুরতে হবে, নিঃস্তব্ধ প্রকৃতিকে উপলব্ধি করাই মূল এখানে। এছাড়া নেওড়াভ্যালি ফরেস্টের নানা রকম পাখি দেখতে দেখতেও সময় কেটে যায়।

কাছে পিঠে দর্শনীয় বলতে, চারখোলের খুব কাছেই লাভা, লোঁলেগাও, রিশপ, কোলাখাম, রিকিশাম, পেডং প্রভৃতি সুন্দর পাহাড়ী গ্রাম গুলি। দিনে দিনেই ঘুরে আসা যায়। এই অঞ্চল গুলি থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা ও তার পার্শ্ববর্তী পিকগুলি এবং পুরো ইস্টার্ন হিমালয়ার ভিউ অসাধারণ।



এছাড়া লোলেগাঁও এর ঝান্ডিদারা থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা এবং এভারেস্টের ওপর সূর্যোদয় দেখা এক স্বর্গীয় অনুভুতি।
নিউ জলপাইগুড়ি থেকে চারখোলের দূরত্ব ৮৬ কিমি, কালিম্পং থেকে ৩৫ কিমি।
চারখোলে থাকার জন্য রয়েছে একটি ভারী সুন্দর রিসর্ট। রিসর্টের আতিথিয়তা একেবারে বাড়ীর মতো। সত্যিই যেন হোম অ্যওয়ে ফ্রম হোম অনুভূতি। ঘর গুলিও চমৎকার। এই রিসর্টে কটেজের ব্যাবস্থাও আছে। খাওয়াদাওয়া ও বেশ ভালো। সব মিলিয়ে রোজগার একঘেয়ে জীবন থেকে মুক্তির স্বাদ নিতে চারখোল হতে পারে এক আদর্শ ডেস্টিনেসন।

রিসর্টের ভাড়া- ডবল বেড রুম- ১৯০০/- টাকা প্রতিরাত
ডবল বেড কটেজের ভাড়া- ২৪০০/- টাকা প্রতিরাত
একস্ট্রা পার্সন- ৩০০/- টাকা অতিরিক্ত। (ম্যাক্সিমাম ১ জন)
ডরমিটরি রুম ১০ জনের ভাড়া- ৬,০০০/- টাকা প্রতিরাত।
খাওয়া খরচ- আনুমানিক ৬০০/- টাকা জন প্রতি প্রতিদিন।
গাড়ী ভাড়া নিউ জলপাইগুড়ি থেকে চারখোল- ৩৫০০/- (বোলেরো, ম্যাক্স, সুমো)
06291538880


Himalayan Retreat

Friday, July 27, 2018

গুরুদংমার লেক, সিকিম - Gurudongmar Lake, Sikkim

 ড্রাইভার দাদা আগের দিন রাতেই inform করেছিলেন ভোর থাকতেই বেরোতে হবে। কারণ বেলা যতই বাড়তে থাকে gurudongmar লেকের আবহাওয়া পরিস্থিতি ততই খারাপ হতে থাকে। সেজন্য আমরা রাত তিনটের সময় উঠে পড়েছিলাম। সবার রেডি হয়ে বেরোতে বেরোতে চারটে বাজলো।


ছোট্ট শহর lachen ছেড়ে আমাদের গাড়ি gurudongmar লেক এর দিকে এগিয়ে চলল। হ্যা আমরা কিন্তু কেউ হোটেলের রুম তালাদিলাম না।লাচুংয়েও একই রকম ছিল আসলে এরা চুরি জিনিসটা কি বোধয় শিখে ওঠেনি আমাদের এখানকার মত। কিছুটা এগোতেই বুঝতে পারলাম রাস্তা খুবই খারাপ আর চড়াই উৎরাই। শুধুমাত্র গাড়ীর ইন্জিন এর শব্দ আর বহু নিচে তিস্তার উপনদী লাচুংয়ের( যেটা ভুটানের Donga range থেকে উৎপত্তি) বয়ে চলার শব্দ ছাড়া তখনও পুরো পাহাড় ঘুমিয়ে আছে। আসলে দিনের বেলাও এখানে খুব বেশি কোলাহল হোয় বলে মনে হলনা।


চারদিকে অন্ধকার, হেড লাইটের আলো ছাড়া আর কোনো আলোর উৎস নেই। তখনো দুচোখ জুড়ে ঘুম, আসলে ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস তো নেই 8 টার আগে ,অসমান রাস্তায় গাড়ির ঝাকুনিতে মাথা ঠুকে ঘুম ভেঙে যাচ্ছে বার বার। সাড়ে চারটে বা 5 টা ঠিক মনে নেই ঐরকম সময় আস্তে আস্তে বাইরে আলোর রেখা দেখলাম ।শ্বেত শুভ্র স্নিগ্ধ বরফে মোড়া পাহাড়ের চূড়া গুলো যেন আলতো চোখ মেলে আকাশ পানে চেয়ে আছে আসলে বোধয় ওরাও আমার মত ঘুম কাতুরে। কিছুটা এগোতে দেখলাম পাহাড় চুড়ার বরফের সঙ্গে রোদের অপুর্ব রঙেরখেলা। Thangu পৌঁছে আমরা চা খেলাম। ড্রাইভার দাদা বেশি সময় দাঁড়াতে রাজি হলেন না অগত্যা আমাদের যাত্রা আবার শুরু হলো।

আঁকাবাঁকা চড়াই-উৎরাই রাস্তায় চলতে চলতে হঠাৎ খেয়াল করলাম পাহাড় থেকে ছোট ছোট যে জলের ধারা গুলো রাস্তায় নেমে এসেছে রাতের ঠান্ডায় সেগুলো জমে বরফে পরিণত হয়েছে আর গাড়ির চাকা পড়ার সঙ্গে সঙ্গে বরফের টুকরো গুলো দুদিকে ছিটকে যাচ্ছে বর্শা র ফলার মত। উচু থেকে নিচের রাস্তা গুলো ছবিতে দেখা জিগজ্যাগ ভালির রাস্তার সঙ্গে মিল পাচ্ছিলাম। রাস্তার পাশে যেখানে একটু সমতল জমি আছে সেখানে দেখছিলাম ইয়াক বাধা আছে ঠিক যেমন আমাদের গ্রামাঞচলে খুঁটিতে গরু বাধা থাকে। সকালের আলোয় খাদের ওপারের পাহাড় গুলোর বরফ এত সাদা লাগছিলো দেখে মনে হচ্ছিল কে যেনো পাহাড়ের গায়ের মাঝে মধ্যে সাদা চুনকাম করে গেছে। দুপারের alpain আর নামনা জানা বেগুনি ঘাসফুলের এর রূপে মোহিত হয়ে চলতে থাকলাম আমরা। আটটার মধ্যে gurudongmar lake এর আগের আর্মি ক্যাম্পে চলে আসলাম।এখান থেকে মাত্র পাঁচ কিলোমিটার দূরে ইন্দো-চায়না(তিব্বত) border।


মিলিটারি ক্যাম্পে already armyder তৎপরতা শুরু হয়েছে। সবাই কে না ছুটে হাঁটতে দেখলাম হয়ত উচ্চতার কারণে। এত উচ্চতায় এমনিতেই শ্বাস প্রশ্বাসের কষ্ট। প্রয়োজনীয় চেকিং সেরে আমদের গাড়ি একটু এগোতেই ,"যাহা দেখিলাম তা জন্ম জন্মান্তরে ও ভুলিবো না" যেন লাদাখের দৃশ্য দেখতে পেলাম ।পুরো অঞ্চল জুড়ে গাছপালার চিহ্নমাত্র নেই যতদূর চোখ যায় উচ্চ মালভূমি আর দূরে গাড়ো নীল আকাশ। প্রকৃতি পরম যত্নে যেনো ছবি একেছে তার ক্যানভাসে। যেন তার বহুদিনের সাধনার ফসল এই ছবি। চোখ ধাঁধানো সৌন্দর্য। কোন কোন পাহাড়ের চূড়া বরফে মোড়া কোনটা আবার পুরো নাড়া। এই দৃশ্যগুলো আসলে ভাষা দিয়ে ঠিক বোঝানো যায় না শুধুই অনুভব করা যায়। বারেন ল্যান্ডের যে এত রূপ থাকতে পারে না দেখলে বিশ্বাস হয় না। এত নীল পরিষ্কার আকাশ আগে দেখিনি। যাই হোক অবশেষে লেকে পৌছালাম আমরা ।

গাড়ি থেকে নেমে যান শক খেলাম এত ঠান্ডা ! Zero te snow থাকলেও তাপমাত্রা এত ঠান্ডা ছিল না। লেকের কিছুটা অংশ বাদে বাকিটা বরফ জমা। কেউ যেনো সাদা চাদর বিছিয়ে রেখেছে লেক জুড়ে। লেকের পাশে মনেস্ট্রি যদিও ভেতরটা শিখ গুরুদ্দয়ার এর মত দেখতে। আসলে এরও একটা ইতিহাস আছে শিখ রেজিমেন্ট ১৯৯৬- ৯৭ এ এখানে গুরুদ্দোয়ার স্থাপন করেন যেহেতু তাদের বিশ্বাস গুরু নানক এই অঞ্চল দিয়ে একসময় যাত্রা করেছিলেন। এই ঘটনায় সিককিমিজ রা খুদ্ধ হন কারণ তাদের বিশ্বাস এটি তাদের অর্থাৎ বৌদ্ধ দের পবিত্র স্থান।শেষে সিকিম সরকার এ ব্যাপারে উচ্চ কমিটি গঠন করেন তাদের দেওয়া রিপোর্টে এর ভিত্তিতে স্থানীয় দের দাবি মেনে নেওয়া হয় এবং ইন্ডিয়ান আর্মি ২০০১ সালে এই কনস্ট্রাকশন টিকে লাচেন মনাস্ট্রি ক হ্যান্ড over করে। Lachen মনাস্ট্রী একজন লামা নিযুক্ত করে লেক দেখাশোনার জন্যে। এই লেক এর পরিধি 5.34 কিমি কিন্তু হিলি topography জন্য অতটা অতোটা বড় দেখায় না।


হিমবাহের জল এই গুরুদাম্বার লেক কে পরিপুষ্ট করে রেখেছে,আবার পরোক্ষ ভাবে তিস্তার জলের ধারার অন্যতম উৎস এই লেকের জল। লেকের পাড় দিয়ে বরফ ঢাকা পাহাড় চূড়া।Gurudongmar lake এমন একটি হ্রদ যা হিন্দু বৌদ্ধ এবং শিখ 3 ধর্মের মানুষের কাছে পবিত্র। কথিত আছে , যেহেতু লেকের উপরিভাগ প্রায় সারাবছর বরফে জমে থাকে সেহেতু এই হ্রদের জল ব্যাবহার করা যেত না এবং স্থানীয় অধিবাসীদের পানীয় জলের খু্ব কষ্ট ছিল প্রাচীন কালে। অষ্টম শতাব্দী তে গুরু পদ্মসম্বাবা তথা গুরু Rinpoche যখন তিব্বত থেকে ফেরার সময় এখান দিয়ে যাচ্ছিলেন তখন স্থানীয়রা গুরুদেব কে তাদের কষ্টের কথা জানান এবং তিনি তাদের সাহায্যের জন্যে রাজি হন।তার হাতের লাঠির ছোঁয়ায় লেকের একটা অংশের বরফ গলিয়ে দেন এবং সেখান থেকেই লেকের ঐ অংশ শীতকালেও জমে না। স্থানীয় দের বিশ্বাস লেকের জল পান করলে সুস্থ থাকা যায়।

অন্য লোকগাথা আছে যে গুরু পদমাসাম্ভাবা এই হ্রদ কে খুবই শুভ লক্ষণ হিসেবে দেখেন এবং বর্তমান সিকিম তৎকালীন দেমজাং এ প্রবেশেকরেন।আমার তাড়াতাড়ি ফেরার কোনো ইচ্ছা ছিল না কিন্তু আমাদের সহযাত্রীদের একজনের শ্বাসকষ্ট শুরু হওয়ায় বেশিক্ষণ আর থাকতে পারলাম না ।

আর হ্যাঁ লেক থেকে অদ্ভুত গম্ভীর আওয়াজ শুনতে পাচ্ছিলাম গুম গুম করে আমাদের ড্রাইভার দাদা ব্যাপারটা রহস্যজনক ধর্মীয় ব্যাপার এর সঙ্গে জড়িয়ে দিয়েছিলেন যদিও পরে জানলাম ওটা বরফ ভাঙ্গার শব্দ আর হ্যাঁ ইন্ডিয়ান army ওখানে যে ক্যান্টিন চালায় সেটা সম্ভবত পৃথিবীর উচ্চতম ক্যান্টিন ।ফ্রী তে সবার জন্যে চায়ের ব্যাবস্থা এছাড়াও পকৌড়া কিছু স্ন্যাকস খুব সস্তায় পাওয়া যায়। ( Thank u Indian army)। ইচ্ছা রইল আবার আসবো বার বার আসবো এই সৌন্দর্যের মায়া জগতে।(২০১৭ সালের ঘুরতে যাই উইকিপডিয়া থেকে কিছু তথ্য সংগ্রহ করা একটি ছবি সিকিম tourism websiteথেকে নেওয়া)


Pranab Sana