লকডাউন শিথিল হওয়ার পর থেকেই মনটা বেড়াতে যাওয়ার জন্য ছটফট করছিল । কিন্তু কিছুতেই পরিকল্পনাগুলো সফল হচ্ছিল না । অবশেষে 7 ই নভেম্বর শনিবার সকালবেলা বেরিয়ে পড়লাম মনে একরাশ উত্তেজনা আর বাইকের ট্যাংক ফুল করে।
এগিয়ে চললাম খড়্গপুরের উদ্দেশ্যে আমাদের ডেস্টিনেশন ছিল উড়িষ্যার বাংড়িপোসি । বেশ কয়েকদিন ধরেই যেন বাংড়িপোসি আমাদের টানছিল ।মোট তিনটি বাইক আর আমরা সাতজন। তো যাই হোক আটটা নাগাদ খড়গপুর থেকে NH6 ধরে এগিয়ে চললাম । বেশ কিছুটা এগোতেই দেখা হলো জঙ্গলের সঙ্গে ।
সাথে সাথেই আমাদের উত্তেজনা যেন আরো বেড়ে চলল । একটু পরেই পৌঁছে গেলাম লোধাশুলি জঙ্গলে । নাহ্, এবার একটু নামতেই হচ্ছে । তো আমরা সবাই নেমে পড়লাম এবং চললো আমাদের ম্যান্ডেটরি ফটো আর ভিডিও শুট। ওখানে ওই সবুজ জঙ্গলের মাঝে বুক ভরে শ্বাস নিয়ে আবার এগিয়ে চললাম আমরা। সকাল থেকে চা ছাড়া কিছুই খাওয়া হয়নি তাই খিদে টাও যেন একটু চাগাড় দিয়ে উঠেছিল ।
অবশেষে বহড়াগোড়া'র একটু আগে একদম নতুন তৈরি নটরাজ ধাবাতে দাঁড়ালাম ব্রেকফাস্ট এর জন্য। হাতে গরম রুটি আর তড়কা দিয়ে সেরে নিলাম ব্রেকফাস্ট। সাথে ছিল স্টিলের কাপ ভরা গরম চা। নটরাজ ধাবা কে কে বিদায় জানিয়ে আবার এগিয়ে চললাম আমরা ।
পশ্চিমবঙ্গ বেরিয়ে পরলাম ঝাড়খন্ডে। এবার চললাম NH46 ধরে । আর কিছুটা এগোতেই জামশোল বর্ডার পেরিয়ে প্রবেশ করলাম উড়িষ্যায় । উড়িষ্যায় প্রবেশের একটু পর থেকেই সামনে দেখা যেতে লাগলো দিগন্তবিস্তৃত ধানক্ষেত আর ওই দূরে দূরে পাহাড়ের সারি । উফ অসাধারণ অনুভূতি ।
বাইকের স্পিডোমিটারের কাঁটা তখন বেড়েই চলেছে। যত এগোতে লাগলাম সামনের পাহাড়ের সারি আরো স্পষ্ট হয়ে উঠল আমাদের চোখের সামনে। একটু পরেই পৌছে গেলাম গেলাম আমাদের ডেস্টিনেশন বাংড়িপোসি তে । উঠলাম আগে থেকে বুক করে রাখা সিমিলিপাল রিসর্টে। এতটা বাইক রাইডিং এ একটু ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম নিশ্চয়ই, কিন্তু স্নান সেরে নিতেই সবাই ঝরঝরে হয়ে উঠলাম। লাঞ্চের অর্ডার দিয়ে চললাম দুয়ারসিনি মাতার মন্দির দেখতে ।
রিসোর্ট থেকে একটু এগোতেই সামনে পড়ল বাংড়িপোসির সেই বিখ্যাত ঘাটি। একপাশে জঙ্গল আর একপাশে খাদ সাথে নিয়ে উঠতে লাগলাম আমরা । পৌঁছে গেলাম দুয়ারসিনি মাতার মন্দিরে । মাকে প্রণাম জানিয়ে এগিয়ে চললাম ঘাটি বরাবর । ডান পাশে পাহাড়ের সারি বারবার চোখ টানছিল আমাদের। কিন্তু অন্যমনস্ক হওয়ার জো নেই, তাই গাড়ি থামিয়ে উপভোগ করতে লাগলাম দুপুরের সোনালী আলোয় পাহাড়ের সারি।
বর্ষা কদিন আগেই গিয়েছে, তাই জঙ্গল যেন এখন আরো সবুজ । সেই চিরহরিৎ পাহাড় বনানী'র দিকে তাকিয়ে দিকে তাকিয়ে মনের মধ্যে এক অদ্ভুত আনন্দের অনুভুতি হচ্ছিল । ফটোশুট তো সাথে সাথেই চলল। এবার ফিরে চললাম রিসর্টে। বাসমতি চালের ভাত আর চিকেন সহযোগে লাঞ্চটা ভরপেট হল । একটু বিশ্রাম নিতেই রিসর্টের জানালা দিয়ে দেখলাম বেলা পড়ে আসছে। আবার বেরিয়ে পড়লাম পড়ন্ত বিকেলে পাহাড়ের সৌন্দর্য উপভোগ করতে।
এবার ধরলাম সিমলিপাল এর জঙ্গলের দিকে যাওয়ার রাস্তাটা । একটু এগোতেই বামদিকে পরল সেই বিখ্যাত বুড়িবালাম নদী, যার তীরে বাঘা যতীনের সংগ্রাম অমর হয়ে আছে । এগিয়ে চললাম জঙ্গলের রাস্তা ধরে । পড়ন্ত বিকেলে সামনে গরুমহিষানী মাউন্টেন রেঞ্জ আমাদের সামনে এক অতুলনীয় সৌন্দর্য তুলে ধরেছিল বারবার ।
আমরা যত এগিয়ে চলেছি সূর্য ধীরে ধীরে ধীরে পৌঁছে যাচ্ছে পাহাড়ের একদম মাথায়। একটা জায়গাতে আমরা দাঁড়িয়ে পড়লাম। পাহাড়ের মাথায় সূর্যাস্ত, সে এক অবর্ণনীয় সৌন্দর্য। দেখা হল এক পাল গরু আর ভেড়ার সাথে । গোধূলি বেলায় সে এক অভূতপূর্ব অনুভূতি। কিন্তু সূর্য পাঠে নামতেই ঝুপ করে অন্ধকার নামলো।
পাহাড়ের সৌন্দর্য দেখতে দেখতে কখন যে প্রায় 35 কিলোমিটার চলে এসেছি বুঝতেই পারিনি । নাহ্, এবার ফেরার পথ ধরতেই হবে। জঙ্গলের মাঝখান দিয়ে রাস্তা। ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক, মাঝে মাঝে দু একটা শিয়ালের ডাক ,ব্যাপারটা দুঃসাহসিক মনে হচ্ছিল কিন্তু আমরা খুব উপভোগ করছিলাম। মনটা একটু চা চা করতেই দাড়িয়ে গেলাম একটা বাজার দেখে।
এক পেয়ালা চা খেয়ে একটু চাঙ্গা বোধ করলাম । এগিয়ে চললাম রিসর্টের দিকে। রিসর্টে যখন পৌঁছলাম সন্ধে ঘন হয়েছে। সন্ধ্যেটা কাটলো স্নাক্স আর সারাদিনের স্মৃতি রোমন্থন করে। রাতে ডিনার করে শুয়ে পড়লাম সবাই। কাল আরও কিছু পরিকল্পনা রয়েছে। সেগুলো পরের পোস্টে।






0 comments:
Post a Comment