• Estuary of Teesta and Rangit Rivers

  • Teesta View Point

  • Chatakpur, Darjeeling

  • Chilapata Forest

Friday, March 19, 2021

বাঁশবেড়িয়ার হংসেশ্বরী মন্দির, হুগলী - Hangseshwari Temple, Bansberia, Hooghly

 আমাদের ধারে-কাছে অনেক সুন্দর সুন্দর বেড়ানোর জায়গা আছে যেখানে সকালে বেরিয়ে বিকালে ফিরে আসা যায়। এই রকমই একটা সুন্দর ঘোরার জায়গার সন্ধ্যান পেয়েছিলাম বাঁশবেড়িয়ার হংসেশ্বরী মন্দির। ব্যান্ডেল থেকে প্রায় ৯ কিলোমিটার দূরে হুগলী নদীর তীরে অবস্থিত প্রাচীন জনপদ বংশবাটী যার বর্তমান নাম বাঁশবেড়িয়া। সময় করে রবিবারের একটি ছুটির দিনে ক্যামেরাকে সঙ্গী করে একাই বেরিয়ে পড়লাম বাঁশবেড়িয়ার উদ্দেশ্যে। প্রথমেই প্রবেশ করলাম বাংলার টেরাকোটা সমৃদ্ধ প্রাচীন অনন্তবাসুদেব মন্দিরটিতে। পোড়ামাটির কাজে সজ্জিত এই মন্দিরের আদল অনেকটা বিষ্ণুপুরের মন্দিরের মতো। এই অনন্ত বাসুদেব মন্দির চত্বরেই রয়েছে এখানের বিখ্যাত হংসেশ্বরী মন্দির। মন্দিরের চারপাশে রয়েছে বড় পরিখা বা চলতি ভাষায় গড় যা আজ নোংরায় ভরে আছে। প্রবেশের মুখে চারপাশে রয়েছে ফুল-মালা, পূজার ডালা, সিঁদুর- আলতা নানারকম পুজোর সরঞ্জাম নিয়ে অনেক দোকান। মন্দিরে ঢোকার মুখে রয়েছে জীর্ণ বিশাল নহবতখানা। নহবতখানা থেকে কয়েক পা হেঁটে এগোলেই হংসেশ্বরী মায়ের মন্দির পাশেই রয়েছে রাজবাড়ী। বর্তমানে এই রাজবাড়ীর বড়ই জীর্ণ দশা। তবে সেখানে এখনো রাজপরিবারের সদস্যরা থাকেন। নির্জন পরিবেশ, সুন্দর ও মনোরম। 

ঘুরতে যাওয়ার আগে মন্দিরের সামান্য ইতিহাস জেনে রাখা ভালো। ১৬৭৯ খ্রীষ্টাব্দে জমিদার তথা রাজা উপাধি ধারক রামেশ্বর রায় তথাকথিত বংশবাটী যা বর্তমানের বাঁশবেড়িয়ায় একটি টেরাকোটার কারুকার্যখচিত বিষ্ণু মন্দির নির্মাণ করান, যেটি এখন অনন্ত বাসুদেব মন্দির নামে পরিচিত। অনন্ত বাসুদেব মন্দিরের পূর্ব দিকে রয়েছে হংসেশ্বরী মন্দির। ১৭৯৯ খ্রীস্টাব্দে এই হংসেশ্বরী মন্দিরটির নির্মান শুরু করেন রাজা রামেশ্বর রায়ের প্রপৌত্র নৃসিংহদেব রায়। কিন্তু মন্দির নির্মাণ শুরুর বছর তিনেক পরে ১৮০২ খ্রীষ্টাব্দে নৃসিংহদেব পরলোকগমন করায় মন্দিরের কাজ অসমাপ্ত থেকে যায়। পরবর্তীকালে নৃসিংহদেবের দ্বিতীয় স্ত্রী রাণী শঙ্করী ১৮১৪ খ্রীস্টাব্দে তাঁর এই অসমাপ্ত মন্দিরটির কার্য সম্পূর্ণ করেন।এই মন্দিরটিতে "হং" অর্থাৎ শিব এবং "সা" অর্থাৎ শক্তি এই দুটিকে অনুসরণ করে তৈরি হয়েছে বলে মন্দিরটির নামকরণ করা হয়েছে “হংসেশ্বরী”। এই মন্দিরটিতে মোট তেরোটি চূড়া রয়েছে। হংসেশ্বরী দেবীর মন্দিরে প্রতিদিন পূজাপাঠের ব্যবস্থা আছে। ইচ্ছে হলে সপ্তাহের যেকোনো দিন ভোগ নিবেদন করা যায়। দুপুরে মূল মন্দিরে প্রবেশের কোন বাধা নাই কিন্তু গর্ভগৃহ বন্ধ থাকার কারনে তখন মায়ের বিগ্রহ দেখা যায় না।

প্রয়োজনীয় তথ্য :

মন্দির খোলা থাকে সকাল ৭টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত এবং বিকাল ৪ টা থেকে সন্ধ্যা ৭ টা পর্যন্ত। রাত্রিতে বন্ধ হওয়ার পরে আর কোনো কারণেই খোলা হয় না। নিত্যপূজা সকাল ১০ টা, পুষ্পাঞ্জলি সকাল ১১ টা। ভোগের জন্য সকাল ১০টার মধ্যে কুপন সংগ্রহ করতে হবে, অগ্রিম কুপন দেওয়া হয় না। দুপুর সাড়ে ১২টায় ভোগ নিবেদনের পরে ভোগ দেওয়া হয় এবং দুপুর দেড়টার মধ্যে গ্রহণ করতে হবে।

মনে রাখবেন জুতো পরে মন্দিরে প্রবেশ করতে দেয় না। এখানে ২ টাকার বিনিময়ে জুতো রাখার সুবন্দোবস্ত আছে এবং ৫ টাকার বিনিময়ে স্নানের ব্যবস্থাও আছে।


পথ নির্দেশ :

হাওড়া অথবা ব্যান্ডেল থেকে কাটোয়া লোকালে বাঁশবেড়িয়া স্টেশন। দিনের প্রায় সারাদিনই ট্রেন পরিষেবা আছে। শিয়ালদহ থেকেও সকালবেলায় সরাসরি একটি কাটোয়া লোকাল চলে। বাঁশবেড়িয়া স্টেশন থেকে বেরিয়েই পাওয়া যাবে টোটো। জনপ্রতি ১০ টাকায় পৌঁছে দেবে মন্দিরে। ব্যান্ডেল স্টেশন থেকেও হংসেশ্বরী মন্দির যাবার অটো পাওয়া যায়। এছাড়া নৈহাটী-ব্যান্ডেল ট্রেনের হুগলীঘাট স্টেশন নেমে অথবা চুঁচুড়া লঞ্চঘাট থেকে অটোস্ট্যান্ডে গিয়ে চুঁচুড়া-ত্রিবেণী অটোতে করেও যাওয়া যায়। ভাড়া জনপ্রতি ১৫ টাকা। সড়কপথে যেতে হলে কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ে ধরে ঈশ্বর গুপ্ত সেতু দিয়ে গঙ্গা পার হয়ে বাঁ দিকে পড়বে হংসেশ্বরী মন্দির যাবার ছোট রাস্তা। বালি থেকে দিল্লি রোড হয়েও যাওয়া যায়।_______________________________________________

ছবি ও তথ্য : নিজস্ব (মন্দিরের ইতিকথা গুগল থেকে সংগৃহিত)।


Nirmal Kumar Saha

Thursday, March 18, 2021

ভালকি মাচান, পূর্ব বর্ধমান - Valkimachan, East Burdwan

করোনা আবহে কোথাও না যেতে পেরে দমবন্ধ লাগছিল। তাই খানিকটা অক্সিজেনের সন্ধান পেতেই ঘুরে এলাম পূর্ব বর্ধমান জেলার ভালকি মাচান জঙ্গল থেকে। আমার অভিজ্ঞতা বলার আগে জায়গাটার সম্মন্ধে যা কিছু জানানোর জানিয়ে দিই।



কিভাবে যাবেন 

ট্রেনে করে - হাওড়া আসানসোল গামি ট্রেনে চেপে নামুন মানকার স্টেশন এ। স্টেশন থেকে ভালকি মাচানের রিক্সা করুন

রাস্তা ধরে - NH 2 (National Highway 2) ধরে দুর্গাপুরের দিকে এগোতে থাকুন। গালসি অবধি গিয়ে ডানদিকে ঘুরে যান।

#GoogleMap follow করতে পারেন। ঠিক রাস্তাই দেখায়। Google Map এ destination এ দিন "Aranyasundari Valkimachan"। যে রাস্তা দেখাবে ফলো করতে পারেন।

আমি রাস্তা ধরে গাড়ি করেই গিয়েছিলাম।



কোথায় থাকবেন 

এখানে থাকার একমাত্র জায়গা "অরণ্য সুন্দরী ভালকি মাচান"। এখানে থাকার ঘর ২-৩ বেডের ঘর আছে। দাম ৯৫০-১২০০ এর মধ্যে।

সব ডিটেইলস ওদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট এ পাবেন - http://www.valkimachan.com/  



কতদিন থাকবেন 

আমার মতে এখানে একবেলা থেকে একদিন থাকাই যথেষ্ট।

খাওয়া দাওয়া 

"অরণ্য সুন্দরী ভালকি মাচান" রিসর্ট এর নিজস্ব হোটেল আছে। এছাড়া কাছাকাছির মধ্যে কোনো খাবার জায়গা নেই। হোটেলের মেনুর একটা ছবি দিয়ে দিলাম দেখে নিয়ে পারেন।

আমরা নিয়েছিলাম কিছু veg থালি আর কিছু non-veg থালি। Veg থালিতে ছিল - ভাত, ডাল, বেগুন ভাজা, আলু পোস্ত, আমড়ার চাটনি আর পাঁপড়। non-veg থালিতে এর সাথে অতিরিক্ত সংযোজন মুরগীর ঝোল।

আমার অভিজ্ঞতা টা নিচে লিখছি।



কি কি দেখার আছে 

আপনার অরণ্য ভালো লাগলে ভালকি মাচান ভালো লাগবেই।

প্রধান আকর্ষণ - রিসর্টের চারপাশে শাল পিয়ালের ঘন জঙ্গল আর তার সাথে জঙ্গল থেকে ভেসে আসা নানা পাখির ডাক।

এছাড়াও আছে

১. "অরণ্য সুন্দরী ভালকি মাচান" রিসর্ট এর পিছনে একটি জলাশয় বা পুকুর, আর চারপাশে বাঁধানো রাস্তা

২. ভালকি রাজাদের শিকার করার জন্য বানানো ওয়াচ টাওয়ার এর ধ্বংসাবশেষ ( এই গল্প টা এর পরে আলাদা করে লিখছি)

৩. যাওয়ার পথে চোখে পড়া নিখাদ গ্রাম্য পরিবেশ। যেমন ধান চাষ, ছাগল পালন, ভেড়া পালন, গ্রামের পরিষ্কার পুকুর, মাটির দোতলা বাড়ি এইসব, যা আমাদের ইট কাঠ পাথরের জঙ্গলে থেকে দেখা বন্ধ হয়ে গেছে।



ভালকি মাচানের ইতিহাস আর গল্প

শোনা যায় এখানে আগে রাজত্ব করতেন গোপ রাজারা। তখন এই গোটা অঞ্চল ছিল জঙ্গলে ঘেরা। সেই জঙ্গলের এক শিশুর কান্না শুনতে পেয়ে এক ব্রাহ্মণ তাকে লালনপালন করে মানুষ করেন। সেই শিশুর পা দুটি নাকি ভাল্লুকের মত ছিল তাই থেকে তার নাম রাখা হয় ভল্লুপদ। পরবর্তীকালে তার রাজধানী হয় ভালকি। এছাড়াও আরো অনেক মত প্রচলিত আছে।

সেই ভল্লুরাজা ইট দিয়ে মাচা তৈরি করেন। যা থেকে তিনি নিয়মিত শিকার করতে আসতেন। এখন তার ভগ্নাবশেষ পড়ে আছে।

সেই ভগ্নাবশেষ এর নিচে আছে একটি সুড়ঙ্গ পথ। অনেক গল্প আছে তাকে নিয়েও।

এখানে স্থানীয় লোকজনকে জিজ্ঞেস করে জানলাম যে এখানে এখনও মাঝে মাঝে রাতে বোন মোরগ, হায়না, শিয়াল নাকি বেরোয়। আগে নাকি ভাল্লুক ও ছিল এখন আর নেই।



আমার অভিজ্ঞতা আর মতামত

#জায়গা - যেতেই পারেন এক দিনের জন্য, এই কঠিন পরিস্থিতিতে কিছুটা oxygen এর মত কাজ করবে। আমি একবেলা ছিলাম। সকালে পৌছে লাঞ্চ করে তারপর ফিরে এসেছি। আমি কোনো ঘর ভাড়া করিনি। Toilet ব্যাবহার করার দরকার যখন পড়েছে ওরা ওদের dormitory র টয়লেট ব্যবহার করতে দিয়েছে।

#খাবার - খাবার বেশ ভালোই। বেশ একটা গ্রামের খাবারের স্বাদ। আমার তো আলু পোস্ত আর চিকেন খুব ই ভালো লেগেছিল। এখানে সব খাবার এরা কাগজের প্লেটে দিচ্ছে। যেটা বর্তমান পরিস্থিতি হিসাবে বেশ সচেতন পদক্ষেপ।

#রাস্তা - যেহেতু যাবার অধিকাংশ রাস্তাটাই NH 2 ধরে, তাই বলাই যায় যে যাবার রাস্তা ভালো। NH 2 ছাড়ার পর বাকি রাস্তার খুব সামান্য অংশই সামান্য খারাপ, তবে ওইটুকু মানিয়ে নেওয়া যায়।

তাই সব মিলিয়ে আমার মত, এই শীতকালে একদিন বা একবেলার জন্য ঘুরে আসতেই পারেন। ভালো লাগবে।

Soumendu Ghosh