আমাদের ধারে-কাছে অনেক সুন্দর সুন্দর বেড়ানোর জায়গা আছে যেখানে সকালে বেরিয়ে বিকালে ফিরে আসা যায়। এই রকমই একটা সুন্দর ঘোরার জায়গার সন্ধ্যান পেয়েছিলাম বাঁশবেড়িয়ার হংসেশ্বরী মন্দির। ব্যান্ডেল থেকে প্রায় ৯ কিলোমিটার দূরে হুগলী নদীর তীরে অবস্থিত প্রাচীন জনপদ বংশবাটী যার বর্তমান নাম বাঁশবেড়িয়া। সময় করে রবিবারের একটি ছুটির দিনে ক্যামেরাকে সঙ্গী করে একাই বেরিয়ে পড়লাম বাঁশবেড়িয়ার উদ্দেশ্যে। প্রথমেই প্রবেশ করলাম বাংলার টেরাকোটা সমৃদ্ধ প্রাচীন অনন্তবাসুদেব মন্দিরটিতে। পোড়ামাটির কাজে সজ্জিত এই মন্দিরের আদল অনেকটা বিষ্ণুপুরের মন্দিরের মতো। এই অনন্ত বাসুদেব মন্দির চত্বরেই রয়েছে এখানের বিখ্যাত হংসেশ্বরী মন্দির। মন্দিরের চারপাশে রয়েছে বড় পরিখা বা চলতি ভাষায় গড় যা আজ নোংরায় ভরে আছে। প্রবেশের মুখে চারপাশে রয়েছে ফুল-মালা, পূজার ডালা, সিঁদুর- আলতা নানারকম পুজোর সরঞ্জাম নিয়ে অনেক দোকান। মন্দিরে ঢোকার মুখে রয়েছে জীর্ণ বিশাল নহবতখানা। নহবতখানা থেকে কয়েক পা হেঁটে এগোলেই হংসেশ্বরী মায়ের মন্দির পাশেই রয়েছে রাজবাড়ী। বর্তমানে এই রাজবাড়ীর বড়ই জীর্ণ দশা। তবে সেখানে এখনো রাজপরিবারের সদস্যরা থাকেন। নির্জন পরিবেশ, সুন্দর ও মনোরম।
ঘুরতে যাওয়ার আগে মন্দিরের সামান্য ইতিহাস জেনে রাখা ভালো। ১৬৭৯ খ্রীষ্টাব্দে জমিদার তথা রাজা উপাধি ধারক রামেশ্বর রায় তথাকথিত বংশবাটী যা বর্তমানের বাঁশবেড়িয়ায় একটি টেরাকোটার কারুকার্যখচিত বিষ্ণু মন্দির নির্মাণ করান, যেটি এখন অনন্ত বাসুদেব মন্দির নামে পরিচিত। অনন্ত বাসুদেব মন্দিরের পূর্ব দিকে রয়েছে হংসেশ্বরী মন্দির। ১৭৯৯ খ্রীস্টাব্দে এই হংসেশ্বরী মন্দিরটির নির্মান শুরু করেন রাজা রামেশ্বর রায়ের প্রপৌত্র নৃসিংহদেব রায়। কিন্তু মন্দির নির্মাণ শুরুর বছর তিনেক পরে ১৮০২ খ্রীষ্টাব্দে নৃসিংহদেব পরলোকগমন করায় মন্দিরের কাজ অসমাপ্ত থেকে যায়। পরবর্তীকালে নৃসিংহদেবের দ্বিতীয় স্ত্রী রাণী শঙ্করী ১৮১৪ খ্রীস্টাব্দে তাঁর এই অসমাপ্ত মন্দিরটির কার্য সম্পূর্ণ করেন।এই মন্দিরটিতে "হং" অর্থাৎ শিব এবং "সা" অর্থাৎ শক্তি এই দুটিকে অনুসরণ করে তৈরি হয়েছে বলে মন্দিরটির নামকরণ করা হয়েছে “হংসেশ্বরী”। এই মন্দিরটিতে মোট তেরোটি চূড়া রয়েছে। হংসেশ্বরী দেবীর মন্দিরে প্রতিদিন পূজাপাঠের ব্যবস্থা আছে। ইচ্ছে হলে সপ্তাহের যেকোনো দিন ভোগ নিবেদন করা যায়। দুপুরে মূল মন্দিরে প্রবেশের কোন বাধা নাই কিন্তু গর্ভগৃহ বন্ধ থাকার কারনে তখন মায়ের বিগ্রহ দেখা যায় না।
প্রয়োজনীয় তথ্য :
মন্দির খোলা থাকে সকাল ৭টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত এবং বিকাল ৪ টা থেকে সন্ধ্যা ৭ টা পর্যন্ত। রাত্রিতে বন্ধ হওয়ার পরে আর কোনো কারণেই খোলা হয় না। নিত্যপূজা সকাল ১০ টা, পুষ্পাঞ্জলি সকাল ১১ টা। ভোগের জন্য সকাল ১০টার মধ্যে কুপন সংগ্রহ করতে হবে, অগ্রিম কুপন দেওয়া হয় না। দুপুর সাড়ে ১২টায় ভোগ নিবেদনের পরে ভোগ দেওয়া হয় এবং দুপুর দেড়টার মধ্যে গ্রহণ করতে হবে।
মনে রাখবেন জুতো পরে মন্দিরে প্রবেশ করতে দেয় না। এখানে ২ টাকার বিনিময়ে জুতো রাখার সুবন্দোবস্ত আছে এবং ৫ টাকার বিনিময়ে স্নানের ব্যবস্থাও আছে।
পথ নির্দেশ :
হাওড়া অথবা ব্যান্ডেল থেকে কাটোয়া লোকালে বাঁশবেড়িয়া স্টেশন। দিনের প্রায় সারাদিনই ট্রেন পরিষেবা আছে। শিয়ালদহ থেকেও সকালবেলায় সরাসরি একটি কাটোয়া লোকাল চলে। বাঁশবেড়িয়া স্টেশন থেকে বেরিয়েই পাওয়া যাবে টোটো। জনপ্রতি ১০ টাকায় পৌঁছে দেবে মন্দিরে। ব্যান্ডেল স্টেশন থেকেও হংসেশ্বরী মন্দির যাবার অটো পাওয়া যায়। এছাড়া নৈহাটী-ব্যান্ডেল ট্রেনের হুগলীঘাট স্টেশন নেমে অথবা চুঁচুড়া লঞ্চঘাট থেকে অটোস্ট্যান্ডে গিয়ে চুঁচুড়া-ত্রিবেণী অটোতে করেও যাওয়া যায়। ভাড়া জনপ্রতি ১৫ টাকা। সড়কপথে যেতে হলে কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ে ধরে ঈশ্বর গুপ্ত সেতু দিয়ে গঙ্গা পার হয়ে বাঁ দিকে পড়বে হংসেশ্বরী মন্দির যাবার ছোট রাস্তা। বালি থেকে দিল্লি রোড হয়েও যাওয়া যায়।_______________________________________________
ছবি ও তথ্য : নিজস্ব (মন্দিরের ইতিকথা গুগল থেকে সংগৃহিত)।












