করোনা আবহে কোথাও না যেতে পেরে দমবন্ধ লাগছিল। তাই খানিকটা অক্সিজেনের সন্ধান পেতেই ঘুরে এলাম পূর্ব বর্ধমান জেলার ভালকি মাচান জঙ্গল থেকে। আমার অভিজ্ঞতা বলার আগে জায়গাটার সম্মন্ধে যা কিছু জানানোর জানিয়ে দিই।
কিভাবে যাবেন
ট্রেনে করে - হাওড়া আসানসোল গামি ট্রেনে চেপে নামুন মানকার স্টেশন এ। স্টেশন থেকে ভালকি মাচানের রিক্সা করুন
রাস্তা ধরে - NH 2 (National Highway 2) ধরে দুর্গাপুরের দিকে এগোতে থাকুন। গালসি অবধি গিয়ে ডানদিকে ঘুরে যান।
#GoogleMap follow করতে পারেন। ঠিক রাস্তাই দেখায়। Google Map এ destination এ দিন "Aranyasundari Valkimachan"। যে রাস্তা দেখাবে ফলো করতে পারেন।
আমি রাস্তা ধরে গাড়ি করেই গিয়েছিলাম।
কোথায় থাকবেন
এখানে থাকার একমাত্র জায়গা "অরণ্য সুন্দরী ভালকি মাচান"। এখানে থাকার ঘর ২-৩ বেডের ঘর আছে। দাম ৯৫০-১২০০ এর মধ্যে।
সব ডিটেইলস ওদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট এ পাবেন - http://www.valkimachan.com/
কতদিন থাকবেন
আমার মতে এখানে একবেলা থেকে একদিন থাকাই যথেষ্ট।
খাওয়া দাওয়া
"অরণ্য সুন্দরী ভালকি মাচান" রিসর্ট এর নিজস্ব হোটেল আছে। এছাড়া কাছাকাছির মধ্যে কোনো খাবার জায়গা নেই। হোটেলের মেনুর একটা ছবি দিয়ে দিলাম দেখে নিয়ে পারেন।
আমরা নিয়েছিলাম কিছু veg থালি আর কিছু non-veg থালি। Veg থালিতে ছিল - ভাত, ডাল, বেগুন ভাজা, আলু পোস্ত, আমড়ার চাটনি আর পাঁপড়। non-veg থালিতে এর সাথে অতিরিক্ত সংযোজন মুরগীর ঝোল।
আমার অভিজ্ঞতা টা নিচে লিখছি।
কি কি দেখার আছে
আপনার অরণ্য ভালো লাগলে ভালকি মাচান ভালো লাগবেই।
প্রধান আকর্ষণ - রিসর্টের চারপাশে শাল পিয়ালের ঘন জঙ্গল আর তার সাথে জঙ্গল থেকে ভেসে আসা নানা পাখির ডাক।
এছাড়াও আছে
১. "অরণ্য সুন্দরী ভালকি মাচান" রিসর্ট এর পিছনে একটি জলাশয় বা পুকুর, আর চারপাশে বাঁধানো রাস্তা
২. ভালকি রাজাদের শিকার করার জন্য বানানো ওয়াচ টাওয়ার এর ধ্বংসাবশেষ ( এই গল্প টা এর পরে আলাদা করে লিখছি)
৩. যাওয়ার পথে চোখে পড়া নিখাদ গ্রাম্য পরিবেশ। যেমন ধান চাষ, ছাগল পালন, ভেড়া পালন, গ্রামের পরিষ্কার পুকুর, মাটির দোতলা বাড়ি এইসব, যা আমাদের ইট কাঠ পাথরের জঙ্গলে থেকে দেখা বন্ধ হয়ে গেছে।
ভালকি মাচানের ইতিহাস আর গল্প
শোনা যায় এখানে আগে রাজত্ব করতেন গোপ রাজারা। তখন এই গোটা অঞ্চল ছিল জঙ্গলে ঘেরা। সেই জঙ্গলের এক শিশুর কান্না শুনতে পেয়ে এক ব্রাহ্মণ তাকে লালনপালন করে মানুষ করেন। সেই শিশুর পা দুটি নাকি ভাল্লুকের মত ছিল তাই থেকে তার নাম রাখা হয় ভল্লুপদ। পরবর্তীকালে তার রাজধানী হয় ভালকি। এছাড়াও আরো অনেক মত প্রচলিত আছে।
সেই ভল্লুরাজা ইট দিয়ে মাচা তৈরি করেন। যা থেকে তিনি নিয়মিত শিকার করতে আসতেন। এখন তার ভগ্নাবশেষ পড়ে আছে।
সেই ভগ্নাবশেষ এর নিচে আছে একটি সুড়ঙ্গ পথ। অনেক গল্প আছে তাকে নিয়েও।
এখানে স্থানীয় লোকজনকে জিজ্ঞেস করে জানলাম যে এখানে এখনও মাঝে মাঝে রাতে বোন মোরগ, হায়না, শিয়াল নাকি বেরোয়। আগে নাকি ভাল্লুক ও ছিল এখন আর নেই।
আমার অভিজ্ঞতা আর মতামত
#জায়গা - যেতেই পারেন এক দিনের জন্য, এই কঠিন পরিস্থিতিতে কিছুটা oxygen এর মত কাজ করবে। আমি একবেলা ছিলাম। সকালে পৌছে লাঞ্চ করে তারপর ফিরে এসেছি। আমি কোনো ঘর ভাড়া করিনি। Toilet ব্যাবহার করার দরকার যখন পড়েছে ওরা ওদের dormitory র টয়লেট ব্যবহার করতে দিয়েছে।
#খাবার - খাবার বেশ ভালোই। বেশ একটা গ্রামের খাবারের স্বাদ। আমার তো আলু পোস্ত আর চিকেন খুব ই ভালো লেগেছিল। এখানে সব খাবার এরা কাগজের প্লেটে দিচ্ছে। যেটা বর্তমান পরিস্থিতি হিসাবে বেশ সচেতন পদক্ষেপ।
#রাস্তা - যেহেতু যাবার অধিকাংশ রাস্তাটাই NH 2 ধরে, তাই বলাই যায় যে যাবার রাস্তা ভালো। NH 2 ছাড়ার পর বাকি রাস্তার খুব সামান্য অংশই সামান্য খারাপ, তবে ওইটুকু মানিয়ে নেওয়া যায়।
তাই সব মিলিয়ে আমার মত, এই শীতকালে একদিন বা একবেলার জন্য ঘুরে আসতেই পারেন। ভালো লাগবে।






0 comments:
Post a Comment