• Estuary of Teesta and Rangit Rivers

  • Teesta View Point

  • Chatakpur, Darjeeling

  • Chilapata Forest

Sunday, June 7, 2020

মহলদিরাম দার্জিলিং - Mahaldiram Darjeeling

 ঘুরতে যাবার প্রস্তাব টা হঠাৎ করেই আসে আমার কাছে দিদি জামাই বাবুর কাছ থেকে...পরিকল্পনা মতোই আমাদের যাওয়ার দিন ঠিক হলো 16 ই মার্চ... ট্রেনের টিকিট পেয়ে গেলাম হাওড়া থেকে আগরতলা হামসাফার এক্সপ্রেস... হাতে ছুটি বলতে খুব বেশি দিন ছিল না.. কোন ভাবে অফিসে ম্যানেজ করে দু দিনের ছুটি মঞ্জুর করলাম.. এবং 16 ই মার্চ সন্ধ্যেবেলা পরিকল্পনা মতোই বেরিয়ে পড়লাম ট্রেন ধরতে..

ওহহ বলতে ভুলে গেছি আসল জিনিসটাই এবারের আমাদের গন্তব্য....
*#মহলদিরাম*
নামটা একদমই অজানা তাই না!!!!
জায়গাটাও একদমই অজানা!!!
দার্জিলিং জেলার একটি ছোট্ট পাহাড়ি গ্রাম নাম #মহলদিরাম*

17 ই মার্চ সকাল সাড়ে ছয়টায় ট্রেন নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে পৌঁছালো... আমাদের যে গাড়ি বলা ছিল সেই গাড়িতে করে মহলদিরাম পৌঁছতে মোটামুটি 3 ঘণ্টা লেগে গেল.. রাস্তার দুপারের পাইন জঙ্গল, খাদ, নদী এইসব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য চোখ ভরিয়ে দিল... রাস্তাও ছিল অনেকটাই চড়াই..
অবশেষে আমরা পৌঁছালাম আমাদের গন্তব্য স্থান *#মহলদিরাম*|||

সিটং ও লাটপাঞ্চার পেরিয়ে এই গ্রাম.....জায়গাটির উচ্চতা সমতল ভূমি থেকে প্রায় সাড়ে 6 হাজার ফুট..
মূলত এখানে থাকার জায়গা হোমস্টে *"স্যালামান্ডার জঙ্গল ক্যাম্প"* কিন্তু আমরা আকস্মিক ভাবেই সাধারন
হোমস্টের থেকে অনেক বেশি সুযোগ-সুবিধা পেয়েছি... চা বাগান এর মধ্যেই তৈরি হোমস্টে..
পৌঁছানোর সাথে সাথেই হোমস্টের ম্যানেজার বাপি বাবু আমাদের গলায় উত্তরীয় জড়িয়ে আমাদের অভ্যর্থনা জানালেন...
যেমন আতিথেয়তা তেমন ব্যবহার আর ঘরের ভেতর পৌঁছে আমরা অবাকই হলাম আমরা কল্পনাও করতে পারিনি যে এখানে এসে আমরা এত সুযোগ স্বাচ্ছন্দ পেতে পারি.. ঘর বাথরুম পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন এবং সুন্দর করে সাজানো...

কিন্তু পৌঁছে থেকেই মনটা কেমন একটা খারাপ খারাপ লাগছিল কারন আকাশে মেঘ থাকার কারণে আমাদের কাঞ্চন মানে "কাঞ্চনজঙ্ঘা" কে একদমই দেখা যাচ্ছিল না... দুপুরের স্নান করে একদম বাঙালি খাবার পেট ভরে খেয়ে আপ্লুত হয়ে বেরিয়ে পড়লাম আশপাশে গ্রাম ঘুরতে... সন্ধ্যে এখানে নামে খুব তাড়াতাড়ি.. সন্ধ্যেবেলা ভেজ পকোড়া আর চায়ের সাথে আড্ডা টাও জমে গেল... রাতে আমাদের অনুরোধ মেনেই ম্যানেজার বাবু চাউমিন এবং চিলি চিকেন করে দিলেন খাবার জন্য...
রাতে ঘুমোতে গেলাম মনে এই আশা নিয়ে কাল সকালে উঠে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে পাবো...

কিন্তু পরদিন সকালে উঠে দেখলাম আবহাওয়া আরো খারাপ.. পুরো আকাশ মেঘে ঢেকে রয়েছে.... সকালে গাড়ি নিয়ে সাইটসিন এ বেরোনো হল গন্তব্য ছিল 'ডাওহিল' আর কার্শিয়াং "ফরেস্ট মিউজিয়াম"...
ফিরে লাঞ্চ কমপ্লিট করে বিকেলে গেলাম কাছের একটি "মনস্ট্রি"তে... মানুষজনের ব্যবহার এতই ভালো মন ভালো হয়ে গেলো...
সন্ধ্যাবেলা আকস্মিকভাবেই প্রবল ঝড় বৃষ্টি শুরু হল... সাথে পেলাম শিলাবৃষ্টিও...

রাতের খাবার খেয়ে ছাদে উঠতেই মনটা হঠাৎ আনন্দে ভরে গেল.. দেখলাম আকাশ একদম পরিষ্কার... সাথে দেখতে পেলাম দূরে প্রচুর গ্রাম এবং গ্রামগুলিতে ঝকমক করে আলো জ্বলছে... যেন পূর্ণিমার আকাশে অসংখ্য তারা একসাথে জ্বলছে... ফ্রেমবন্দি করলাম ওই রাত 11.30 tar সময়...এক মনোরম আলো-আঁধারি পরিবেশে সম্মুখীন হলাম... মনের তীব্র আশা জাগলো কাল সকালে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে পাবো...
অবিশ্বাস্য ভাবে হতাশ হতে হলো না কিছুটা হলেও আমরা কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে পেলাম... চলে আসতে হবে ভেবে মন খারাপ হয়ে যাচ্ছিল জায়গাটি ছেড়ে আসতে একদমই ইচ্ছা করছিল না...

কিছু জায়গা থাকে যেখানে একা বসে থাকলেই মন ভালো হয়ে যায় মহলদিরাম জায়গাটি তাদের জন্যই... এক অপূর্ব নিস্তব্ধতা, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পরিবেশ সামনে চা বাগান, সন্ধের আলো-আঁধারি পরিবেশ এবং ছাদ থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে পাওয়ার মজাই আলাদা...
হোমস্টের কেয়ারটেকার মঙ্গলের হাতের রান্না এবং ব্যবহার আলাদা কৃতিত্বের দাবি রাখে...
19 তারিখ সকালে মহলদিরাম কে বিদায় জানিয়ে আমরা এগোলাম.... গন্তব্য দার্জিলিং.. এখান থেকে 3 ঘন্টা দার্জিলিং... বাতাসিয়া লুপ ঘোরা, টয়ট্রেন আর গ্লেনারিস এ লাঞ্চ যেন আলাদা নস্টালজিয়া খুব বেশি সময় না থাকায় এতেই সন্তুষ্ট থাকলাম... দুপুর 3 টা নাগাদ রওনা দিলাম নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন এর উদ্দেশ্যে.. ঠিক সন্ধ্যে সাড়ে সাতটায় পদাতিক এক্সপ্রেস এ উঠে পড়লাম এবং পরদিন সকালে চলে গেলাম শিয়ালদা স্টেশন...

***শুধু এটাই বলব *#মহলদিরাম* তুমি এ রকমই থেকো ভিড়ের মধ্যে হারিয়ে যেও না....
অপরিচিত জায়গা গুলো সব সময় হয়তো এতটা ভালোই হয় আর তাই জায়গাগুলো অপরিচিত থাকাই ভালো....

Ayan Bishayee

Friday, June 5, 2020

লাভা, কালিম্পঙ - Lava, Kalimpong

 ছবিটি লাভা তে তুলেছিলাম । কয়দিন থেকেই লাভা নিয়ে লেখার খুব ইচ্ছা হচ্ছিল । বন্ধু সুমি বলছিল ও লাভা খুব ভালবাসে । অথচ লাভা যায় নি । ব্যাপারটা খুব আশ্চর্য । আশ্চর্য নয় কি ? আসলে লাভা কথাটির অর্থই এক সুন্দর কবিতার মত । লা - ঈশ্বর , ভা - উপস্থিতি ।

                                                            Just after leaving Garubathan

আমার ভ্রমণ যাওয়া আর ফিরে আসা । এই পথ দেখতে দেখতে যাওয়া আর আসাই আমার ভ্রমণ ।সুমি , তুমি যেমন কোনদিন লাভা না গিয়েও লাভাকে নিয়ে কবিতা লিখতে পার , আশ্চর্য সুন্দর করে গান গাইতে পার , ওমনি আমিও মাত্র দু ঘন্টা ঘুরেছিলাম । ঠিক করেছিলাম আবার আসব লাভা । সেবার বুড়ো মামাকে নিয়ে খুব অসুবিধায় পড়েছি । মামা শুধু বলে আমি বসি , তুমি ঘোর । আরে তা কি করে হবে । আমি হাঁটতে থাকব , তারপর রাস্তায় গাড়ি পেলে উঠে পড়ব । তোমাকে কোথায় বসিয়ে রাখব । বছর সাত হয়ে গেছ জান , লাভা ঘুরেছিলাম । এখন আমিও বুড়োর খাতায় । তুমি এবার হাত ধরে থেকো । বাস্তবে না পার , তুমি স্বপ্নতেই আমার হাত ধর । আবার আমি লাভা যাব । সুমি এবার তোমার হাত ধরে । নতুন করে ছবি আঁকব ।

                                                            Looks so Dangerous

বেশী জন লাভার দিকে যায় , এন জি পি থেকে তিস্তা বাজার , কালিম্পং হয়ে লাভা । আমি নিয়ে যাব তোমায় ডামডিম হয়ে । সে এক আশ্চর্য সফর করেছিলাম আমরা । খুলে বলি । এত দিন পরও একটু চোখ বুজলেই আমার সব ছবি আর পথের কথা মনে পড়ে যায় । সকাল বেলাতেই সেদিন আমরা চালসার হোটেল ছেড়েছি । হোটেল মালিক বলেছিল বেলা ৮-৩০ একটা ট্রেকার আসবে । ওটা কালিম্পং নিয়ে যাবে । আমি উঠি ভোর পাঁচটার আগে । এত সময় নষ্ট করব ? চালসা মোড়ে এক পথচারী পরামর্শ দিল , এখনই (৬) একটা গাড়ি পাবে মালবাজার যাবে । ওখান থেকে আবার গাড়ি পাবে শিলিগুড়ি যাবার । পথে ডামডিম নেমে যাবে । ওখান থেকে আবার গাড়ি । আমার তো এমন পথের নিশানা পেয়ে মন নেচে উঠল । ডামডিম নেমে এক দোকান এ নাস্তা ।
                                                                    After Landslide
ভাগ্যিস ভাল ভাবে নাস্তা করেছিলাম । তারপর সারাদিন মামাকে আধপেটা করে রেখেছিলাম গো । যাক গল্পটা করি । দোকানদারকে এবার ধরলাম লাভা কি ভাবে যাব । দোকানদার সেই গাড়িটার কথাই বলল । যেটা আমরা চালসা থেকেই ধরতে পারতাম । আমি জানতে চাইলাম আর কোন উপায় নাই । এতক্ষন এভাবে বসে থাকব ? তখন দোকানদার বলল , এখান থেকে সব ম্যাজিক্ গাড়ি যাবে । ওটাই উঠে গরুবাথান যেতে পার । ওখান থেকে লাভার গাড়ি পাবে । শুনে ভালই লাগল । অল্প সময় হলেও গরুবাথানও ঘোরা হবে । গরুবাথান যাবার পথটাও কি সুন্দর । দু ধারে চা বাগান । গাড়ি মাঝে মাঝে দাঁড়াচ্ছে । লোকাল লোকজন উঠছে । মন্দ লাগছিল না জানো । লোকাল লোকজনদের সাথে গাড়িতে দু একটা করে কথা বার্তাও শুরু হল । জানতে পারলাম আজ গরুবাথানে হাট বসবে । এখন আর মনে নেই । সেদিন কি বার ছিল । খুব সম্ভব রবিবার । আমার হিসাব তাই বলছে । যাই হোক ডুর্য়াসে হাট দেখা নিয়ে আমি খুব উত্তেজিত হয়ে গেলাম । সেই সব দিনকাল হয়ত এখন আর নেই । তবু হাটে কত রকম মানুষ জন । নিশ্চয় ভাল কিছু ছবি তোলার আশায় রইলাম ।
                                                                        At Lava

গরুবাথানে একটা লাভা যাবার গাড়ি এখুনি ছাড়বে । হাতে মাত্র ১০-১৫ মিনিট । টিকিট কেটে মামাকে গাড়িতে রেখে আমি হাটে এলাম । হাট এত সকালে তেমন জমে নি । আর গরুবাথানের এই শহর অঞ্চলটি একবারে ঘিঞ্জি । একটু হতাশই হলাম । একটা দুটো পর্টেট তুললাম । আমাদের গাড়িও ছেড়ে দিল । একবারে টাইমের গাড়ি । আর আমার ভাগ্য আজ গাড়িতে লোকজন কম । আর আমি একটা জানালার ধারে ।
ঘিঞ্জি শহরটা শেষ হতেই গাড়ি পাহাড়ী রাস্তা ধরল । আলাদীনের আশ্চর্য প্রদীপ এর মত পুরো পৃথিবী ১০-১৫ মিনিটের মধ্যে পাল্টিয়ে গেল ।
                                                                Father and son

যাবার পথে এই রাস্তায় ( চলন্ত) গাড়ি থেকে এত এত ছবি তুলেছি বলার নই । তবু একটা ছবি গাড়ি থেকে নেমে কাছে গিয়ে না তোলার আফশোষ এখনও আছে । সুমি এই ছবিটা দেখো । ওদের ছোট পৃথিবী । মহিলার পিঠে একটা বাচ্চা । ওরা স্বামী স্ত্রী লাঙ্গল করছে । পাহাড় থেকে মেঘ নেমে এসেছে । কি অসাধারণ ল্যান্ড স্কেপ ছিল । এই সাত বছরে আমার প্রায় মনে পড়েছে এখানে একবার যাব । ভাবতাম আবার যেদিন যাব , সেদিন যদি মেঘ না নেমে আসে ? ওরা দুজন যদি সেদিন লাঙ্গল না দেয় । আর ভয় নেই সুমি । তুমি সাথে থাকবে এবার । এবার ওখানে নামব । গাড়ি চলে যায় যাবে । ওখানে রাত থাকব । মেঘ নামবে । বৃষ্টি হবে । মাঝ রাতে মেঘ ভেঙে চাঁদ দেখা দেবে । জান্নাত নেমে আসবে মাটির পৃথিবীতে ।
                                                                At Lava

আসুন এর এই সকালে ক্যামেরাটাকে আর খারাপ না করে লাভার বাকি গল্পটুকু করে নিই । আজকের মত সেদিন ডামডিম থেকে লাভা ওঠার শেষ ধাপগুলিও ছিল ভয়ংকর । সামনে থেকে এক গাড়ি দেখে মনে মনে ভাবছিলাম যে কোন সময় পাহাড়ে ধস নামতে পারে । আর গাড়ি সমেত -
                                                            Beautiful Lava

ভাবনাটা ভাবার কিছু সময়ের মধ্যেই দেখি গাড়ির জ্যাম । ড্রাইভার বলে দিলেন রাস্তায় ধস নেমেছে । গাড়ি থেকে নামলাম । রাস্তার ধস পরিষ্কার শুরু হয়েছে । কিছু পর রাস্তা কিছু পরিষ্কার করে গাড়ির যাতায়াত শুরু হল । ড্রাইভার জানালো এবার এই রাস্তা বন্ধ হয়ে যাবে । পুরো বর্ষাকাল বন্ধ থাকে । আমরা লাভা ঢুকলাম মেঘ কুয়াশার মধ্যে । অনেক গুলি কুয়াশার ছবি নিলাম চলন্ত গাড়ি থেকে । চলন্ত গাড়ি থেকে অল্প আলোয় ছবিগুলি খুব একটা ভাল হয় নি ।
                                                                    Beautiful Lava

লাভা আমরা ঘন্টা দেড় -দুই ছিলাম । আমাদের তাড়া ছিল কাল্মিপং যাওয়ার । ফের ওখান থেকে শিলিগুড়ি ফেরার । সন্ধ্যা সাতটায় কলকাতা ফেরার ট্রেন । একটা দিনের মধ্যে চালসা থেকে লাভা হয়ে শিলিগুড়ি ভায়া লোকাল গাড়ি , খুব সহজ ব্যাপার নই । সবটাই সম্ভব হয়েছিল সময়ে সময়ে গাড়ি পেয়ে যাওয়া ।

লাভা নিয়ে একটু বলে লেখা শেষ করব । লাভা খুব বড় জায়গা নই । কিন্ত অন্তত এক রাত দু দিন না থাকলে লাভার সৌন্দর্যকে উপভোগ করা যাবে না । লাভা থেকে চারিদিকে অনেক গুলি পয়েন্ট ঘোরার আছে । কিছু ছবি দিয়ে লেখা শেষ করছি । ছবিগুলি দেখে বুঝতে পারছি , আজ ভাঙা ক্যামেরা দিয়েও আরও ভাল ছবি তুলতে পারতাম । অনেক ছবি শুধু অভিজ্ঞতার অভাবে নষ্ট হয়েছে ।

Sk Munna