Friday, June 5, 2020

লাভা, কালিম্পঙ - Lava, Kalimpong

 ছবিটি লাভা তে তুলেছিলাম । কয়দিন থেকেই লাভা নিয়ে লেখার খুব ইচ্ছা হচ্ছিল । বন্ধু সুমি বলছিল ও লাভা খুব ভালবাসে । অথচ লাভা যায় নি । ব্যাপারটা খুব আশ্চর্য । আশ্চর্য নয় কি ? আসলে লাভা কথাটির অর্থই এক সুন্দর কবিতার মত । লা - ঈশ্বর , ভা - উপস্থিতি ।

                                                            Just after leaving Garubathan

আমার ভ্রমণ যাওয়া আর ফিরে আসা । এই পথ দেখতে দেখতে যাওয়া আর আসাই আমার ভ্রমণ ।সুমি , তুমি যেমন কোনদিন লাভা না গিয়েও লাভাকে নিয়ে কবিতা লিখতে পার , আশ্চর্য সুন্দর করে গান গাইতে পার , ওমনি আমিও মাত্র দু ঘন্টা ঘুরেছিলাম । ঠিক করেছিলাম আবার আসব লাভা । সেবার বুড়ো মামাকে নিয়ে খুব অসুবিধায় পড়েছি । মামা শুধু বলে আমি বসি , তুমি ঘোর । আরে তা কি করে হবে । আমি হাঁটতে থাকব , তারপর রাস্তায় গাড়ি পেলে উঠে পড়ব । তোমাকে কোথায় বসিয়ে রাখব । বছর সাত হয়ে গেছ জান , লাভা ঘুরেছিলাম । এখন আমিও বুড়োর খাতায় । তুমি এবার হাত ধরে থেকো । বাস্তবে না পার , তুমি স্বপ্নতেই আমার হাত ধর । আবার আমি লাভা যাব । সুমি এবার তোমার হাত ধরে । নতুন করে ছবি আঁকব ।

                                                            Looks so Dangerous

বেশী জন লাভার দিকে যায় , এন জি পি থেকে তিস্তা বাজার , কালিম্পং হয়ে লাভা । আমি নিয়ে যাব তোমায় ডামডিম হয়ে । সে এক আশ্চর্য সফর করেছিলাম আমরা । খুলে বলি । এত দিন পরও একটু চোখ বুজলেই আমার সব ছবি আর পথের কথা মনে পড়ে যায় । সকাল বেলাতেই সেদিন আমরা চালসার হোটেল ছেড়েছি । হোটেল মালিক বলেছিল বেলা ৮-৩০ একটা ট্রেকার আসবে । ওটা কালিম্পং নিয়ে যাবে । আমি উঠি ভোর পাঁচটার আগে । এত সময় নষ্ট করব ? চালসা মোড়ে এক পথচারী পরামর্শ দিল , এখনই (৬) একটা গাড়ি পাবে মালবাজার যাবে । ওখান থেকে আবার গাড়ি পাবে শিলিগুড়ি যাবার । পথে ডামডিম নেমে যাবে । ওখান থেকে আবার গাড়ি । আমার তো এমন পথের নিশানা পেয়ে মন নেচে উঠল । ডামডিম নেমে এক দোকান এ নাস্তা ।
                                                                    After Landslide
ভাগ্যিস ভাল ভাবে নাস্তা করেছিলাম । তারপর সারাদিন মামাকে আধপেটা করে রেখেছিলাম গো । যাক গল্পটা করি । দোকানদারকে এবার ধরলাম লাভা কি ভাবে যাব । দোকানদার সেই গাড়িটার কথাই বলল । যেটা আমরা চালসা থেকেই ধরতে পারতাম । আমি জানতে চাইলাম আর কোন উপায় নাই । এতক্ষন এভাবে বসে থাকব ? তখন দোকানদার বলল , এখান থেকে সব ম্যাজিক্ গাড়ি যাবে । ওটাই উঠে গরুবাথান যেতে পার । ওখান থেকে লাভার গাড়ি পাবে । শুনে ভালই লাগল । অল্প সময় হলেও গরুবাথানও ঘোরা হবে । গরুবাথান যাবার পথটাও কি সুন্দর । দু ধারে চা বাগান । গাড়ি মাঝে মাঝে দাঁড়াচ্ছে । লোকাল লোকজন উঠছে । মন্দ লাগছিল না জানো । লোকাল লোকজনদের সাথে গাড়িতে দু একটা করে কথা বার্তাও শুরু হল । জানতে পারলাম আজ গরুবাথানে হাট বসবে । এখন আর মনে নেই । সেদিন কি বার ছিল । খুব সম্ভব রবিবার । আমার হিসাব তাই বলছে । যাই হোক ডুর্য়াসে হাট দেখা নিয়ে আমি খুব উত্তেজিত হয়ে গেলাম । সেই সব দিনকাল হয়ত এখন আর নেই । তবু হাটে কত রকম মানুষ জন । নিশ্চয় ভাল কিছু ছবি তোলার আশায় রইলাম ।
                                                                        At Lava

গরুবাথানে একটা লাভা যাবার গাড়ি এখুনি ছাড়বে । হাতে মাত্র ১০-১৫ মিনিট । টিকিট কেটে মামাকে গাড়িতে রেখে আমি হাটে এলাম । হাট এত সকালে তেমন জমে নি । আর গরুবাথানের এই শহর অঞ্চলটি একবারে ঘিঞ্জি । একটু হতাশই হলাম । একটা দুটো পর্টেট তুললাম । আমাদের গাড়িও ছেড়ে দিল । একবারে টাইমের গাড়ি । আর আমার ভাগ্য আজ গাড়িতে লোকজন কম । আর আমি একটা জানালার ধারে ।
ঘিঞ্জি শহরটা শেষ হতেই গাড়ি পাহাড়ী রাস্তা ধরল । আলাদীনের আশ্চর্য প্রদীপ এর মত পুরো পৃথিবী ১০-১৫ মিনিটের মধ্যে পাল্টিয়ে গেল ।
                                                                Father and son

যাবার পথে এই রাস্তায় ( চলন্ত) গাড়ি থেকে এত এত ছবি তুলেছি বলার নই । তবু একটা ছবি গাড়ি থেকে নেমে কাছে গিয়ে না তোলার আফশোষ এখনও আছে । সুমি এই ছবিটা দেখো । ওদের ছোট পৃথিবী । মহিলার পিঠে একটা বাচ্চা । ওরা স্বামী স্ত্রী লাঙ্গল করছে । পাহাড় থেকে মেঘ নেমে এসেছে । কি অসাধারণ ল্যান্ড স্কেপ ছিল । এই সাত বছরে আমার প্রায় মনে পড়েছে এখানে একবার যাব । ভাবতাম আবার যেদিন যাব , সেদিন যদি মেঘ না নেমে আসে ? ওরা দুজন যদি সেদিন লাঙ্গল না দেয় । আর ভয় নেই সুমি । তুমি সাথে থাকবে এবার । এবার ওখানে নামব । গাড়ি চলে যায় যাবে । ওখানে রাত থাকব । মেঘ নামবে । বৃষ্টি হবে । মাঝ রাতে মেঘ ভেঙে চাঁদ দেখা দেবে । জান্নাত নেমে আসবে মাটির পৃথিবীতে ।
                                                                At Lava

আসুন এর এই সকালে ক্যামেরাটাকে আর খারাপ না করে লাভার বাকি গল্পটুকু করে নিই । আজকের মত সেদিন ডামডিম থেকে লাভা ওঠার শেষ ধাপগুলিও ছিল ভয়ংকর । সামনে থেকে এক গাড়ি দেখে মনে মনে ভাবছিলাম যে কোন সময় পাহাড়ে ধস নামতে পারে । আর গাড়ি সমেত -
                                                            Beautiful Lava

ভাবনাটা ভাবার কিছু সময়ের মধ্যেই দেখি গাড়ির জ্যাম । ড্রাইভার বলে দিলেন রাস্তায় ধস নেমেছে । গাড়ি থেকে নামলাম । রাস্তার ধস পরিষ্কার শুরু হয়েছে । কিছু পর রাস্তা কিছু পরিষ্কার করে গাড়ির যাতায়াত শুরু হল । ড্রাইভার জানালো এবার এই রাস্তা বন্ধ হয়ে যাবে । পুরো বর্ষাকাল বন্ধ থাকে । আমরা লাভা ঢুকলাম মেঘ কুয়াশার মধ্যে । অনেক গুলি কুয়াশার ছবি নিলাম চলন্ত গাড়ি থেকে । চলন্ত গাড়ি থেকে অল্প আলোয় ছবিগুলি খুব একটা ভাল হয় নি ।
                                                                    Beautiful Lava

লাভা আমরা ঘন্টা দেড় -দুই ছিলাম । আমাদের তাড়া ছিল কাল্মিপং যাওয়ার । ফের ওখান থেকে শিলিগুড়ি ফেরার । সন্ধ্যা সাতটায় কলকাতা ফেরার ট্রেন । একটা দিনের মধ্যে চালসা থেকে লাভা হয়ে শিলিগুড়ি ভায়া লোকাল গাড়ি , খুব সহজ ব্যাপার নই । সবটাই সম্ভব হয়েছিল সময়ে সময়ে গাড়ি পেয়ে যাওয়া ।

লাভা নিয়ে একটু বলে লেখা শেষ করব । লাভা খুব বড় জায়গা নই । কিন্ত অন্তত এক রাত দু দিন না থাকলে লাভার সৌন্দর্যকে উপভোগ করা যাবে না । লাভা থেকে চারিদিকে অনেক গুলি পয়েন্ট ঘোরার আছে । কিছু ছবি দিয়ে লেখা শেষ করছি । ছবিগুলি দেখে বুঝতে পারছি , আজ ভাঙা ক্যামেরা দিয়েও আরও ভাল ছবি তুলতে পারতাম । অনেক ছবি শুধু অভিজ্ঞতার অভাবে নষ্ট হয়েছে ।

Sk Munna

0 comments:

Post a Comment