• Estuary of Teesta and Rangit Rivers

  • Teesta View Point

  • Chatakpur, Darjeeling

  • Chilapata Forest

Thursday, February 20, 2020

টাইম ট্রাভেলঃ অগ্নিযুগে ফিরে যাওয়া - Time Travel - Went back to the time of Firing Revolution

 সদ্য কিছুদিন আগে হাতে পেয়েছিলাম বর্তমান যুগ্ম কমিশনার সুপ্রতিম সরকারের লেখা অচেনা লালবাজার বই টি, রুদ্ধশ্বাসে বইটি কয়েক ঘণ্টায় পড়ে শেষ করার পরে স্তব্ধবাক হয়ে বসেছিলাম অনেকক্ষণ, বলা যেতে পারে একটা ঘোরের মধ্যে ছিলাম, তাই আজ যখন গিন্নি এসে বলল “কি গো আজও ঘরে বসেই কাটাব ?” তখন কোথায় যাব সেটা মনস্থির করতে এক সেকেন্ডের ভগ্নাংশের বেশি সময় লাগেনি। যদিও মনে একটা সামান্য আশংকা ছিল, যে সে রাজী হবে কিনা বা তার ভাল লাগবে কিনা ?, কিন্তু তা যে নিতান্তই অমূলক ছিল তা বোঝা গিয়েছিল গন্তব্যে পৌঁছানোর খানিকক্ষণের মধ্যেই। আজ আপনাদের সাথে সেই অভিজ্ঞতার কিছু মুহূর্ত ভাগ করে নেওয়ার প্রচেষ্টা।

কলকাতা পুলিশ মিউজিয়াম
ছুটির দিনে কলকাতার বুকে যদি হাতে কিছু ঘণ্টা সময় থাকে , আর যদি ইতিহাসের সাক্ষ্য হতে চান, তাহলে ঘুরে আসুন এখানে। ১১৩ আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় রোডে , রাজা রাম মোহন রায়ের বাড়িতে , এখানেই বর্তমানে কলকাতা পুলিশের মিউজিয়াম,

 বিস্মৃত ইতিহাসের অজস্র সাক্ষ্য নিয়ে আপনার অপেক্ষায়। এই ডেসটিনেশন খুব একটা পপুলার নয় এখনও তাই এই করোনা কালে আশা করা যায় ফাঁকায় ফাঁকায় নির্ভয়ে ঘুরে আসতে পারবেন। আমি ও আমার স্ত্রী গিয়েছিলাম ২৬শে ডিসেম্বর এবং কার্যত পুরো সময়টায় আমরা দুজন ছাড়া বিশেষ কাউকে চোখে পড়েনি। দু এক জন এসেছেন অনেক পরে এবং তারা খুব অল্প সময়েই চলেও গেছেন। যদি শুধু দ্রষ্টব্য দেখতে চান তাহলে ঘণ্টা দুয়েক সময় থাকলেই অনায়াসে ঘুরে দেখতে পারবেন এই ২০০০ স্কোয়ার ফিটের উপরে গড়ে তোলা এই মিউজিয়াম। রিসার্চ ওয়ার্ক করতে চাইলে অনেক বেশী সময় লাগবে। আমি বেশ কিছু নোট নিয়েছি ও খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখেছি বলে আমার অনেক বেশী সময় লেগেছে।
কেন যাবেন ?
এই মিউজিয়াম মুলত ব্রিটিশ আমলের কলকাতা পুলিশ ফোর্স থেকে আজকের আধুনিক কলকাতা পুলিশের ( ১৮৫৬ সালের প্রথম ব্রিটিশ পুলিশ কমিশনার স্যামুয়েল ওয়াকহপ থেকে শুরু করে বর্তমান পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা ) ক্রমবিবর্তনের ইতিহাসের প্রামান্য দলিল, তবে এর সব থেকে আকর্ষণীয় অংশটি হল, ব্রিটিশ আমলে, অগ্নিযুগের বিপ্লবীদের থেকে বাজেয়াপ্ত, অস্ত্র, বোমা, নথি, চিঠি ও অন্যান্য ব্যবহৃত জিনিষ, যা শুধু দেখার নয়, অনুভবেরও। যা আমার মতে প্রতিটি ভারতীয়ের দেখা ও জানা উচিৎ।
কি দেখবেন ?
এই মিউজিয়ামের কোনে কোনে ছড়িয়ে আছে দেশাত্মবোধের আবেগ, স্বাধীনতার যুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামের, দুঃসাহসিক ও রোমাঞ্চকর অভিযানের সাক্ষ্য ও অবিভক্ত বাংলার সেই অকুতোভয় বিপ্লবীদের বীরগাথা, যারা একদিন হাসতে হাসতে দেশের জন্য প্রান দিয়েছিলেন, হয়ত ,যাদের অবদান স্বাধীন দেশের নাগরিক হয়ে আমরা প্রায় বিস্মৃত হতে বসেছি। দেখবেন অত্যাচারী ডগলাস কিংসফোর্ডকে মারতে ১৯০৮ সালে বিপ্লবী হেমচন্দ্র দাস কি অসামান্য দক্ষতায় বানিয়েছিলেন প্রথম ইম্প্রভাইসড এক্সপ্লসিভ ডিভাইস, বই বোমা, যা ভাগ্যের পরিহাসে কাজে আসেনি। পরে প্রফুল্ল চাকী ও ক্ষুদিরাম বসু সেই অসমাপ্ত কাজের ভার নেন, বা .৪৪২ বোরের Webley RIC রিভলভার ও .৪৫০ বোরের ব্রিটিশ বুলডগ রিভলভার যা দুঃসাহসিক ভাবে প্রহরীর চোখ এড়িয়ে জেলের মধ্যে পৌঁছে দিয়েছিলেন সুধাংশুজীবন রায় ও শ্রীশচন্দ্র ঘোষ , যা দিয়ে কানাইলাল দত্ত ও সত্যেন বসু উচিৎ শিক্ষা দিয়েছিলেন বিস্বাসঘাতক নরেন গোস্বামী কে। দেখতে পারবেন ১৯১৪ সালে R.B. Rodda কোম্পানি থেকে লুঠ হয়ে যাওয়া ৫০ টি মাউজার পিস্তলের মধ্যে দুটি কে যা সেই সময়ে ভিত কাঁপিয়ে দিয়েছিল সমগ্র ব্রিটিশ প্রশাসনের। যার ঘটনাপ্রবাহ হার মানাতে পারে কোন রুদ্ধশ্বাস থ্রিলার সিনেমাকেও। মানসচক্ষে দেখতে পাবেন এই .৩০ ক্যালিবারের C96 ব্রুমহ্যান্ডেল পিস্তল দিয়ে, বুড়িবালামের তীরে বীরবিক্রমে বিশাল ব্রিটিশ বাহিনীর সাথে লড়ছেন পাঁচ অকুতোভয় বাঙালি তরুণ। বাঘা যতীন, চিত্তপ্রিয় রায় চৌধুরী, জ্যোতিষ পাল, মনোরঞ্জন সেনগুপ্ত ও নীরেন দাশগুপ্ত। বা ধরুন সেই বীরাঙ্গনাকে, “বীণা দাস” যিনি কলেজের সমাবর্তন উৎসবে, স্ত্যানলি জ্যাকসন কে লক্ষ্য করে ছুঁড়ে দিয়েছিলেন গুলি। তার ব্যবহৃত .৩৮০ বোরের বেলজিয়ান বুলডগ প্যাটার্ন রিভলভারটিও আছে সংগ্রহে। তালিকা দীর্ঘ করব না , আরও অনেক রিভলভার, পিস্তল , বন্দুক ও রাইফেল আছে যা কোন না কোন সময়ে ব্যবহার হয়েছিল সশস্ত্র স্বাধীনতা সংগ্রামে। খানিকক্ষণ এখানে দাঁড়ালে , চোখের কোনা সিক্ত হয়ে ওঠে, মাথা নেমে আসে শ্রদ্ধায়।
বন্দুক , পিস্তল ছাড়াও রাখা আছে ২৬ কেজি ওজনের কাঠের মুগুর, যা নিয়ে বিপ্লবীরা শরীর চর্চা করতেন, তাঁদের শারীরিক ক্ষমতার কিছুটা আন্দাজ পাবেন সেটি দেখার পরে, এছাড়া কলকাতা পুলিশ বাহিনীর ব্যবহৃত অস্ত্রশস্ত্র ও সরঞ্জাম , ২য় বিশ্বযুদ্ধে কলকাতায় ফেলা জাপানী বোমা, হেতাল পারেখ ও দেবযানী বনিক হত্যাকাণ্ডের আরটিফ্যাক্ট ,
বম্ব স্কোয়াডের স্যুট ,উদ্ধার করা দুষ্প্রাপ্য মূর্তি , শচীন তেন্ডুলকারের সই করা ব্যাট , ইত্যাদি অসংখ্য জিনিষ আছে সংগ্রহে। নবতম সংযোজন , নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর উপরে ৬৪ টি ক্লাসিফায়েড ফাইল উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে জনসাধারণের জন্য, তবে তা পরতে গেলে আপনাকে কম্পিউটারের সাহায্য নিতে হবে।

পরিশেষ
যারা এই লেখা পড়ে যেতে ইচ্ছুক তাঁদের জ্ঞাতার্থে
১। ভেতরে কোন রকম ছবি তোলা (ক্যামেরা ও মোবাইল) কঠোর ভাবে নিষিদ্ধ ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ, তাই ছবি তোলার চেষ্টা করবেন না। আমিও কোন ছবি তুলিনি, সাথের সব ছবি কলকাতা পুলিশের ওয়েবসাইট ও ইন্টারনেট থেকে নেওয়া।
২। সঙ্গে ভ্যালিড সচিত্র পরিচয় পত্র রাখবেন, দেখাতে হতে পারে।
৩। কোন প্রবেশ মুল্য নেই, সোমবার ছাড়া যে কোন দিন যেতে পারেন , সময় ১১ টা থেকে বিকেল ৫টা অত্যন্ত পরিস্কার পরিচ্ছন্ন এবং ওয়েল মেনটেনড মিউজিয়াম,
মিউজিয়ামে কলকাতা পুলিশের যে কজন অধিকারিক আছেন তারা অত্যন্ত অমায়িক ও বন্ধুবৎসল, বিশেষ করে দুজনের কথা না বললে এই রিভিউ অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। বর্তমান অধিকারিক অমিতাভ ভট্টাচার্য মহাশয়, যিনি আমাকে সব রকম সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন এবং ভবিষ্যতেও যে কোন রকম রিসার্চওয়ার্কে সাহায্য করবেন বলে জানিয়েছেন। এবং সুদর্শন চক্রবর্তী মহাশয়। অসম্ভব বিনয়ী এই মানুষটি টানা চার ঘণ্টা ধরে আমার প্রশ্নবান সহ্য করেছেন, ও হাসিমুখে তার যথাসাধ্য উত্তর দিয়েছেন , তার প্রতি আমার কৃতজ্ঞতার শেষ নেই।
ধন্যবাদ কলকাতা পুলিশকেও, এত সুন্দর একটি মিউজিয়াম উপহার দেওয়ার জন্য, ভবিষ্যতের কথা ভেবে দুটি অনুরোধ রাখলাম , যদি বাস্তবায়িত করা যায় খুব খুশি হব।
১। অল্প বিবরন সহ প্রধান প্রধান সংগ্রহের ছবিসহ একটা তালিকা বুকলেট আকারে প্রকাশ করা যায় কি ? , তাহলে ভেতরে ছবি না তোলার দুঃখের কিছুটা উপশম হয় এবং প্রয়োজনে রেফার করতে কিছুটা সুবিধা হয়।
২। স্বাধীনতা সংগ্রামে ব্যবহৃত অস্ত্র ও অন্যান্য জিনিষের সাথে সম্পর্কিত ইতিহাসের একটা শর্ট ফিল্ম করে কিছু নির্দিষ্ট স্লটে দেখানো সম্ভব হলে হয়ত বিস্মৃত ইতিহাসের কিছুটা পূনরুজ্জীবন হবে ও অনেক সাধারন মানুষ উপকৃত হবেন ও উৎসাহ পাবেন বলে আমার ধারনা।

Saptarshi Datta

Thursday, February 6, 2020

মৃত্যুর মুখে সুন্দরবনে - ( পর্ব.. দুই) - In the face of death in the Sundarbans (2nd Part)

 ঘুম ভাঙলো খুব সকালে, আলোর আভা পেলেও সূর্য এখনো ওঠেনি। নৌকা একটা নদীর একপাশে নোঙ্গর করা। 'সুদাম' চা বানিয়ে হাতে ধরালো, এক চুমুক মারতেই, ব্যাস, তৎক্ষণাৎ নিম্নচাপ এসে হাজির। নৌকোর পিছনে ছোট ঘেরা জায়গাও আছে, ক্রিয়াকর্ম করার। স্মার্টলি গামছা পরে ভিতরে মাথা নিচু করে ঢুকেই আত্মারাম খাঁচা। মধ্যিখানে ছোট গর্ত, আর দুদিকে পা রাখার জায়গা প্রায় নেই। গর্ত দিয়ে নদীর জল দেখতে পাচ্ছি। সাঁতার জানি না, ঘাবড়ে গিয়ে প্রেসার হাওয়া। ফেরত চলে এলাম। সুদামকে কাছে টেনে বললাম, হবে না, ভাই, কিছু কর। সঙ্গে সঙ্গে সুদাম

সমস্যার সমাধান করে দিলো। সমাধানটা হলো, কোমরে দড়ি বেঁধে নৌকার সাইডে পা এর সাপোর্ট রেখে নদীর দিকে পশ্চাৎদেশ রেখে ঝুলে পরা। এতো সহজে আমার সমস্যা মিটে যাবে, বুঝি নি।
গামছা ছেড়ে প্যান্ট পরে নিলাম। আমার দ্বারা সম্ভব নয়।
আস্তে আস্তে চোখের সামনে নদী ফুঁড়ে সূর্য উঠছে। পুরো লাল। চট করে নৌকার ছাউনির মাথায় উঠে গেলাম। আমার দেখাদেখি মাঝিও এলো। সামনে আমাদের বিশাল নদী, নাম "ঠাকুরানী"। সুদাম আবার চা নিয়ে এসে আমার বিরোক্তিসূচক আওয়াজ শুনে দু পা পিছিয়ে গেল।
খেয়াল করেছেন তো ? সমস্যাটা কিন্তু এখনো আছে। পেট থেকে নানান শব্দ হচ্ছে, ও বেচারির কোনো দোষ ও নেই, ও তো এইসব ব্যাপারে অভ্যস্ত নয়। মাঝিকে বলেই ফেললাম, কিছু একটা করুন প্লিজ। মাঝি মুচকি হেসে বললো, নৌকো নিয়ে কোনো গ্রাম সংলগ্ন চড়ে দাঁড়াচ্ছি, কাদামাটিতে নেমে আড়াল দেখে সেরে ফেলুন। পাশ থেকে কে একজন বললো, হ্যা, হ্যা ঠিক আছে। মাথা ঘুরিয়ে দেখি, আরো দুজন কখন ছাউনিতে উঠে বসে আছে।
সে কি বলবো, আপনাদের। নৌকা পুরো চড়ে ঠেকলো না, শুধু গামছা পরে আমরা ঝাঁপ মারছি নৌকো থেকে, আর পড়েই হাঁটু অবধি গেঁথে যাচ্ছি। নিজেকে সামলে ছিলাম নাকি গামছা সামলে ছিলাম, ঠিক মনে নেই। সামনেই গ্রামের বাঁধ বাঁধানো রাস্তা। অনেক ছোট ছোট গাছ জন্মেছে বাঁধের গায়ে। খেয়াল করলাম গ্রামের অনেকেই কাজ সারে এখানে। একটা ছোট্ট গাছের আড়ালে গিয়ে বসে পড়লাম। হাতে গাছটা ধরে আছি, গড়িয়ে পড়লেই গড়াতে গড়াতে,মাখতে মাখতে কাদামাটিতে পরবো । গ্রামের লোকজন কিছুটা মাথার উপরের রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করছে। হাসির আওয়াজও পাচ্ছি। আমি মাথা গুঁজে নিয়েছি , হটাৎ খেয়াল করলাম, ছোট্ট গাছের গুঁড়িটা আমার হাতে উপড়ে আসছে।
সুদাম জাল নিয়ে এসেছিল, জানতাম না। ঝুপঝুপ করে নদীতে জাল ফেলছে, আর কুচো চিংড়ি উঠে আসছে। বা রে, মুড়ি,আলু ভাজা, কুঁচো চিংড়ি ভাজা আর সঙ্গে চা। আহা, গোগ্রাসে গিলছি। আলো পুরোদমে ফুটে গেছে। নদীটা খেয়াল করলাম ভালো করে। ভাবলাম ওপারেই গভীর জঙ্গল। কিন্তু মাঝি নিরাশ করে বললো, আরো যেতে হবে, মাতলা হয়ে দেউলবাড়ি বা কলস দ্বীপের কাছাকাছি।
জঙ্গলের কিছু নিজস্ব নিয়ম আছে। যেমন, 1,কারুর নাম ধরে ডাকা যাবে না। তাতে সে "বড়ে মিয়াঁর" টার্গেট হয়ে যাবে। 2, জঙ্গলে সরাসরি হিসু করা যাবে না, প্রথমে কোনো গাছের পাতায়, তারপর সরাসরি। জঙ্গল কে সম্মান জানানোর জন্য 3, নদীতে এক নৌকা আরেক নৌকাকে সব share করবে, কিন্তু ইঞ্জিনের তেল দেবে না।(ডিজেল)। সব কটাই কুসংস্কার হলেও ওই পরিবেশে না বলার স্পর্ধা কারুর হবে না।
ঠিক মনে নেই, আমরা কুলতলি বা তার আশপাশ থেকে ফরেস্ট ডিপার্টমেন্টের পারমিশন করলাম। অফিসার খুব সন্দেহের দৃষ্টি দিয়ে আমাকে দেখছিলেন। প্রত্যেকটা নিয়মকানুন ভালো করে মুখস্থ করালেন, পরীক্ষা নিলেন। পাস করলাম। তারমধ্যে দুটো শর্ত ছিল, কোর এরিয়া ছেড়ে বাফার জোনে ঘুরতে হবে আর দ্বিতীয়টি ছিল ভুলেও খাঁড়িতে ঢোকা যাবে না। আমি মাথা নেড়ে সম্মতি জানালাম কিন্তু জানতাম কোর এরিয়া তেই আমরা যাচ্ছি। কেন ওনারা সাবধান করেন, আমার গল্পটাই সাক্ষী।
যাই হোক, নৌকা রওনা দিলো মাতলার দিকে। নদীর একটা ঠান্ডা হাওয়া হয়, আমরা সবাই রোদ পোয়াছি। গ্লাসে আবার আওয়াজ উঠেছে সঙ্গে গরম কুঁচো মাছ ভাজা। বেশ ঘন্টাখানেক গেছি, হটাৎ নৌকা ধা করে বাঁয়ে ঘুরে গেল। সামনেই জঙ্গল। মাঝির দিকে তাকালাম, উত্তর দিলো "বনবিবির" মন্দির, একটু ধুপ জ্বালিয়ে নেবো।
আমি বললাম, এই জঙ্গলে ? বললো, হ্যা, চলুন না, আমরা আছি তো, আপনার ভয় কি আর তাছাড়া জঙ্গলের মজা নিতেই তো এসেছেন। ভাবলাম,যুক্তি আছে...ঠিক ঠিক।
নৌকোটার সামনের অনেকটা অংশ গাছপালার মধ্যে ঢুকে গেল। যেই ইঞ্জিন বন্ধ হলো, অমনি হটাৎ নিস্তব্দ হয়ে গেল। ফিসফিসিয়ে কথা বলছি আমরা। জঙ্গলের একটা ছোট অঞ্চল পরিষ্কার করা। সেখানে কাদামাটির তৈরি একটা ঘেরা জায়গার মধ্যে বনবিবির মূর্তি বসানো। সবাই নামলাম। কোনো অপ্রয়োজনীয় আওয়াজ ছাড়াই ধুপ জ্বালিয়ে পুজো হলো। কিন্তু তারপরই যেটা হলো , সেটার জন্য মোটেই তৈরি ছিলাম না। বাবুরা হটাৎ "হেতাল" গাছের গুঁড়ি কাটতে উদ্যোগী হলো। কি সব ওষুধ তৈরি করবে। আমি ওদের যেতে দেব না, আর ওরা যাবেই। একপ্রকার তর্ক শুরু হয়ে গিয়েছিল প্রায়। সিদ্ধান্ত হলো, ওরা সবাই যাবে আর আমি একা নৌকায় থাকবো। মাথা গরম হয়ে গেল। এই গভীর জঙ্গলে আমার সঙ্গে আসা চারজনের মধ্যে একজনেরও কিছু হয়ে গেলে আমি আর বাড়ি ফিরতে পারবো না। দু চারটে দু অক্ষর,চার অক্ষর মুখ দিয়ে বেরিয়েই গেল। মাঝি আমার খুব কাছে এসে বললো..বাবু, এই জঙ্গলে আমি রেগুলার আসি আর আমার হাতের এই চপার টা দেখুন, আমিও একটা বাঘ। আমি উত্তেজিত হয়ে কিছু বলতে যাচ্ছিলাম, ওরা সেটাকে ভ্রূক্ষেপ না করে গভীর জঙ্গলে ঢুকে গেল।
কিছুক্ষন ওদের গলার আওয়াজ পেলাম তারপর সব মিলিয়ে গেল। আমি একা, নদীর ঠান্ডা হাওয়াটা আরো ঠান্ডা লাগছে। সিরসিরিয়ে উঠছি।
চারিদিক নিস্তব্দ। পাতায় পাতায় একটা জঙ্গুলে আওয়াজ হচ্ছে, বুকের মধ্যে দ্রিম দ্রিম আওয়াজ স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছি। বনবিবির মন্দিরের আশপাশে অনেক লাল, সাদা, বুনো ফুল ফুটে আছে। নদীর হওয়ায় সব গাছগুলো দোল খাচ্ছে, হটাৎ তারমধ্যে একটা ফুলগাছ একটু বেশিই নড়ে উঠলো। ঘাবড়ে গিয়ে নৌকোর মধ্যিখানে খোপ কেটে যেখানে ইঞ্জিন বসানো, ওর পাশটায় চলে গেলাম। কিছু এলে ইঞ্জিন ব্লকে ঢুকে যাবো। কানটা ভালো করে পেতে শুনতে পেলাম, খুব মৃদু একটা পায়ে চলা আওয়াজ আমার দিকে এগিয়ে আসছে....
ক্রমশ....



Personal Experience - Rajib Bashu