০৯/০৯/২০১৯:-
আমরা ৮জন বন্ধু মিলে হাওড়া থেকে অমরাবতী এক্সপ্রেসে (হাওরা- গোয়া,ভাস্কো দা গামা) করে রাত এগারটা পঁয়তাল্লিশের ট্রেনে রওনা দিই ওড়িশার ব্রম্ভপুরের উদ্দেশ্যে।
Harabhangi ResorvoirHarabhangi Dam
১০/০৯/২০১৯
পরদিন সকালে স্টেশনে নেমে ওখান থেকে অটো রিজার্ভ করে প্রায় ১৫-১৬ কিলোমিটার দূরে পৌঁছে গেলাম প্রায় নির্জন ও নিরিবিলি #গোপালপুর_সীবিচ। উঠেছিলাম হোটেল #অশোকা_ইন 'এ। প্রায় সারাটাদিন আমরা সমুদ্রে দাপাদাপি করে কাটিয়ে দিলাম । (পরেরদিন সকালেও আবার গিয়েছিলাম সমুদ্রতটে)।
Jeerang Monestry১১/০৯/২০১৯
পরের দিন সকাল ১১টা নাগাদ গোপালপুর থেকে প্রায় ১৫০ কিলোমিটার দূরবর্তী দারিংবারির উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করি, #ডিয়ারস_ইকো_হোম থেকে পাঠানো বোলেরো গাড়িতে করে।
ওখানে পৌঁছে দিনটা আমরা বিশ্রাম করে কাটালাম, আগামীদিনের শক্তি সঞ্চয়ের লক্ষ্যে।
১২/০৯/২০১৯
প্রথম অর্ধ:-
প্রকৃত ভ্রমন শুরু হয় এইদিন। গাড়ী নিয়ে ড্রাইভার দেবানন্দ সকাল ন'টায় আমাদেরকে কর্টেজ থেকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। সবুজ পাহাড়ের বুক চিরে এঁকেবেঁকে আমাদের গাড়ী ওপরের দিকে উঠতে শুরু করে। পাহাড়ের গায়ে ভাসমান মেঘরাজির মধ্যদিয়ে আমাদের গাড়ি চলতে থাকে। কোথাও কোথাও মেঘেরা চারিদিক অন্ধকার করে আমাদেরকে এমনভাবে ঘিরে ধরছিল যেন তাদের দেশে আমাদের অনধিকার প্রবেশে নিষেধ জানাচ্ছিল, একহাত দূরের রাস্তা পর্যন্ত দেখা যাচ্ছিল না। যাইহোক, মেঘমালাকে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে আমরা এগিয়ে চলি। অবশেষে, এক বাঁধানো সিড়িওয়ালা রাস্তার সামনে এসে গাড়ী থেকে নেমে পড়ি।
Hill View Pointতখন হাল্কা বৃষ্টি পড়ছিল। গাছের পাতায় বৃষ্টি পড়ার শব্দকে ছাপিয়ে অন্য একটা মৃদু শব্দ কানে আসছিল। পাহাড়ের ঢাল বেয়ে সিড়ি দিয়ে যতই নীচের দিকে নামতে থাকি সেই শব্দের প্রাবল্য ততই বাড়তে থাকে। বেশ কিছুটা নেমে একটা বাঁক ঘুরতেই সেই গর্জনের উৎস #মিদুবান্দা_জলপ্রপাত অর্থাত্ (#Dashingbadi_waterfall) এর সামনে এসে দাঁড়ালাম। যা দাসিংবাড়ি জলপ্রপাত নামেও পরিচিত। অসম্ভব সুন্দর এক নৈসর্গিক দৃশ্য এই জলপ্রপাতের!
Ram Mandir beside Khasada Waterfallsএরপর আবার চলা শুরু। কিছুক্ষণ পরেই রাস্তার মধ্যেই আমাদের গাড়ী দাঁড়িয়ে পড়ে। জায়গাটা ছিল #হিল_ভিউ_পয়েন্ট। অসম্ভব সুন্দর এই ভিউ পয়েন্ট। সামনে মেঘের সাদা মাফলার ও গাছপালার গাঢ় সবুজ জ্যাকেট পরিহিত বিস্তৃত পাহাড়ের সারি। অনেক নীচে আঁকা বাঁকা লাল রাস্তা!
Magnetic Vally(Silent Vally), Mandasaruদারিংবাড়ি-ব্রাম্ভনিগাম রোড ধরে দারিংবারি চারিচৌক (চৌমাথা) এর দিকে এগিয়ে যেতে যেতেই রাস্তার ডানপাশে পেয়ে গেলাম পাহাড়ের ঝাউবাগান, #পাইনের_জঙ্গল। নির্জন নিস্তব্ধ পাইনের জঙ্গলের পাশেই পেয়ে গেলাম এক পাহাড়ী স্রোতস্বিনী ডুলুরি নদীকে। সত্যি, চিরসবুজ পাইনের ক্যানভাসে দুলুরি নদীর সৌন্দর্য্য যেন হাজার গুণ বেড়ে গিয়েছে!
Coffee Gardenগাড়িতে করে পাইনের জঙ্গল ছেড়ে সামান্য এগিয়ে যেতেই এবার রাস্তার বামদিকে পেয়ে গেলাম #কফি_বাগান। কফি বাগানের মধ্যে রয়েছে সুউচ্চ সিলভার ওক গাছ। তার গা পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে অনেকটা পানের মত দেখতে লতানে গোলমরিচ বেয়ে বেয়ে ওপরে উঠে ওক গাছের মতই যেন আকাশ ছোঁয়ার চেষ্টা করছে।
Shal Forest, Mandasaruপরবর্তী গন্তব্য ছিল, #লাভার্স_পয়েন্ট। অসমতল, উঁচু-নীচু পাথুরে ভূমিরূপের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে এক পাহাড়ি নদী, সৃষ্টি হয়েছে অনেকগুলি ছোট ছোট অনুচ্চ জলপ্রপাত। বর্ষাকাল বলে নদীতে জলের প্রবাহ বা পরিমাণও ছিল যথেষ্ট বেশী। আমি এখানে স্নান সেরে নিতে একটুও ভুল করলাম না।
প্রথম অর্ধের শেষ গন্তব্য ছিল, #এমু_পার্ক (#এমু_বার্ডস_জু)। প্রায় ১০-১২টি এমু পাখী এখানে রাখা হয়েছে। তখন বাজে প্রায় বিকেল তিনটে। পেটে ছুঁচো অনেক্ষণ ধরে ডন দিচ্ছে। ওখান থেকে সোজা চলে এলাম হোটেল হিল টপ'এ মধ্যাহ্নভোজ সারতে । উদরপূর্তি সেরেই আবার বেরিয়ে পড়লাম হৃদয়পূর্তির জন্য।
Taptapani Shiva Templeদ্বিতীয় অর্ধ:-
প্রথমেই এলাম প্রকৃতি উদ্যানে। #প্রজাপতি_পার্ক, ভেষজ উদ্ভিদের উদ্যান, আদিবাসী পার্ক, বাচ্চাদের জন্য বিভিন্ন ধরনের রাইডস ইত্যাদিতে সাজানো এই প্রকৃতি উদ্যান।
এই উদ্যানের ঠিক পাশেই রয়েছে হিল ভিউ পার্ক। ছোট্ট এই পার্কটি বেশ সুন্দর অার পরিপাটি করে সাজানো। নামেই বোঝা যায় এই পার্কের ভিউ পয়েন্ট থেকে পাহাড়ের ভিউ পাওয়া যায় যা বেশ মনোমুগ্ধকর।
Sunset Pointকাছাকাছি রয়েছে, #দারিংবারি_নেচারস্_ক্যাম্প। বেশ উঁচুতে পাহাড়ের ঢালে ওটিটিডিসি এর টকটকে লাল রঙের প্রায় ১০-১২টি সুন্দর সুন্দর কটেজ। এখান থেকে পুরো দারিংবারিকে অপূর্ব সুন্দর দেখতে লাগে!
ওখান থেকে বেরিয়ে পৌঁছে গেলাম দিনের শেষ গন্তব্য #সানসেট_পয়েন্ট। এখান থেকে পাহাড়ের কোলে সূর্য ঢলে পড়ার দৃশ্য নাকি অবর্ণনীয়। যদিও মেঘলা আকাশ সেই দৃশ্য অবলোকনের সৌভাগ্য থেকে আমাদেরকে বঞ্চিত করেছে। সন্ধ্যা নামতেই ফিরে এলাম হোটেলে। আবারও গান - গল্প - আড্ডার আরেক মনোরম সন্ধ্যা কাটালাম আমাদের কয়েকদিনের অস্থায়ী আশ্রয়স্থল দারিংবাড়ির বিখ্যাত #ডিয়ারস্_ইকো_হোম নামক সুন্দর একটি কটেজে।
Midubanda Waterfalls (Dasingbari Waterfalls)১৩/০৯/২০১৯
এদিন সকাল দশটা নাগাদ হোটেল থেকে বেরোলাম। গন্তব্য #মন্দাসরু_ইকোপার্ক। দারিংবাড়ি থেকে সিমানবাড়ি হয়ে প্রায় ৩০-৩২ কিলোমিটার ঠান্ডা অার ছায়াভরা চড়াই উতরাই রাস্তা পেরিয়ে (এর মধ্যে কিছুটা খারাপ রাস্তাও ছিল) আমরা পৌঁছে গেলাম মন্দাশুরু ইকোপার্ক। জায়গাটা অনেকটা কেরালার সাইলেন্ট ভ্যালির মতই। পার্কে ঢুকতে গেলে প্রথমে ১০ টাকার টিকিট কাটতে হয়। গেটের সামনেই বামদিকে রয়েছে শাল গাছের জঙ্গলের মধ্যে ছোট্ট একটি পার্ক,
Daringbari Nature Parkরয়েছে একটা ছোট মন্দির । এখনকার মুখ্য আকর্ষণ হল #ম্যাগনেটিক_ভ্যালি। যাইহোক, মন্দাসুরু ইকো ট্যুরিজম সেন্টার হল একটা প্রকৃতি উদ্যান। এখানে পাহাড়ি পরিবেশকে উপভোগ করতে একটা সারাটা দিনও যথেষ্ট নয়। এখানে থাকবার জন্য OTTDC এর খুব সুন্দর সুন্দর কাঠের বাংলো রয়েছে।
Daringbari Natures Camp, OTTDCলাঞ্চ এখানেই সেরেছি আমরা অার ঋদ্ধ হয়েছি বাংলোর কর্মচারীদের আতিথেয়তা ও আন্তরিকতায়। বিকেলের দিকে বালিগুড়া হয়ে আমরা পৌঁছে গেলাম #ডোকরা গ্রামে। যেখানে ডোকরার জিনিসপত্র কিভাবে বানানো হয় তা দেখলাম, কয়েকটা জিনিসও কিনলাম। যদিও এই ডোকরা গ্রামে ভ্রমন আমার কাছে ততটা উপভোগ্য মনে হয়নি।
Lovers Point১৪/০৯/২০১৯
ঠিক সকাল সাড়ে দশটায় আমরা হোটেল থেকে চেক আউট করি। দারিং বাড়ি থেকে দরিংবাড়ি - ব্রাম্ভনিগাঁও রোড ধরে এগিয়ে আড়াবা হয়ে পৌঁছে গেলাম #হরভাঙ্গী_জলাধার। নয়নাভিরাম এর সৌন্দর্য। চারদিকে সবুজ পাহাড় দিয়ে ঘেরা এই জলাধার।
Hill View Parkওখান থেকে মহানা হয়ে আমরা চলে এলাম #জীরাং_মনাস্ট্রি। মনে হবে যেন এক টুকরো তিব্বত! অবর্ণনীয় সৌন্দর্য্য এই মনাস্ট্রির! ইচ্ছে করে সারাটা দিন এখানে চুপচাপ বসে থাকতে।
Zirang Monestry
মনাষ্ট্রি থেকে আরো প্রায় চার কিলোমিটার এগিয়ে গিয়ে হাজির হলাম #খাসাড়া_জলপ্রপাত 'এর সামনে। বিশাল বড়ো না হলেও বেশ সুন্দর এই জলপ্রপাতটি। উল্টোদিকে পাহাড়ের চূড়ায় রয়েছে একটা রাম মন্দির।
Gopalpur Beachওখান থেকে চাঁদিপুট, লুহাঙ্গুরী হয়ে এসে গেলাম #তপ্তপানি। একে একে দেখে নিলাম তপ্তপানি শিবমন্দির, তপ্তপানি হট স্প্রিং। অন্ধকার নেমে গিয়েছে, তখন প্রায় সাতটা বাজে, বৃষ্টি শুরু হয়েছে ঝিমঝিমিয়ে । এখনও কিছুটা রাস্তা বাকি রয়েছে বেরহামপুর স্টেশনে পৌঁছাতে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত যশবন্তপুর- হাওরা এক্সপ্রেস ঠিক সময়ে চলছে। ৮-১৫ তে পৌঁছাবে ট্রেন। তাই তপ্তপানি ডিয়ার পার্ক লিস্ট থেকে বাদ দিয়ে বেরহামপুর স্টেশনের দিকে গাড়ী ছুটিয়ে দিলাম।
লেখক ও আলোকচিত্রকর :- ©চক্রধর কয়াল










































