Monday, October 7, 2019

শান্তিনিকেতনের পৌষ মেলা - Poushmela at Shantiniketan

 মেলা শব্দটি শোনার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের মনে আনন্দের অনুভূতি হয়। মেলার আক্ষরিক অর্থ মিলন। মেলায় একে অন্যের সঙ্গে ভাব বিনিময় হয়। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, ‘প্রতিদিন মানুষ ক্ষুদ্র দীন একাকী। কিন্তু উৎসবের দিন মানুষ বৃহৎ, সেদিন সে সমস্ত মানুষের সঙ্গে একত্র হইয়া বৃহৎ, সেদিন সে সমস্ত মনুষ্যত্বের শক্তি অনুভব করিয়া মহৎ’।

লাল মোরাম বিছানো রাস্তা, বিশ্বভারতীর প্রানকেন্দ্রে..
                                            লাল মোরাম বিছানো রাস্তা, বিশ্বভারতীর প্রানকেন্দ্রে..

তবে যে মেলার কথা না বললে বাংলার মেলা সম্পূর্ণতা পায় না, তা হল শান্তিনিকেতনের পৌষ মেলা। শুধুমাত্র বিশ্বকবির স্মৃতিবিজড়িত বলেই নয় বরং সাহিত্যিক রবীন্দ্রনাথের বাইরে সমাজ সংস্কারক রবীন্দ্রনাথের যে পরিচয়, তা এখানে বিশেষভাবে অনুভূত হয়। জানা যায় ১২৫০ সালের ৭ পৌষ মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর রামচন্দ্র বিদ্যাবাগীশের কাছে ব্রাহ্মধর্মে দীক্ষা গ্রহণ করেন। সেই দিনটিকে কেন্দ্র করে উৎসব ও মেলার ভাবনা ছিল দেবেন্দ্রনাথের। শান্তিনিকেতনের আশ্রম ডিডেই তার প্রমাণ মেলে। সেখানে ট্রাস্টিগণ ওই জমিতে মেলা বসানোর উদ্যোগ নেবেন বলে লেখা আছে।
ঘন্টাঘর
                                                                    ঘন্টাঘর

এক সময় এ মেলা ভুবনডাঙার মেলা হিসেবে পরিচিত ছিল। ১৯৫১ সালে বিশ্বভারতীর অন্যান্য কার্যক্রমের সঙ্গে মেলারও শ্রীবৃদ্ধি ঘটে। ১৯৬১ সালে মেলা উঠে আসে পূর্বপল্লির মাঠে। এখন অবশ্য তাতেও স্থান সংকুলান হয় না, প্রকৃতপক্ষে পৌষ মেলা চলে গোটা শান্তিনিকেতন জুড়েই। ৭ পৌষ সকালে এখানে ব্রহ্মোপাসনার মাধ্যেমে মেলার সূচনা হয়। আশ্রমিকদের কথায় এটা পৌষ উৎসবের সপ্তমী। বক্তৃতা, স্মৃতিতর্পণ যেমন চলে, তেমনই চলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। আসেন বিভিন্ন রাজ্য ও বাংলাদেশের শিল্পীরা। থাকে বাউল-ফকিরদের গান।
বৈতালিকী
                                                                বৈতালিকী

রীতি মেনে বৈতালিককের গান, সানাইয়ের সুর, ছাতিমতলায় উপাসনা এসব তো আছেই, সেই সঙ্গে আছে স্বর্গত আশ্রমিকদের জন্য শ্রদ্ধাশীল স্মরন।
মহর্ষি ভবনে ব্রাম্ম্মূহূর্তে সাঁনাই বাদন
                                                        মহর্ষি ভবনে ব্রাম্ম্মূহূর্তে সাঁনাই বাদন

ঐতিহ্য ও আধুনিকতার এক অনন্য নিদর্শন এই মেলাটি অন্য অনেক মেলা থেকে এক সম্ভ্রমসূচক দূরত্বে দাড়িয়ে আছে।।
মেলা থেকে সময় করে ঘুরে আসুন আধঘণ্টা দূরে আজকে হেজে যাওয়া মজে যাওয়া কবির প্রানের নদী "কোপাই" । সেই কোপাই, রবীন্দ্রনাথের ভাষায় যার ‘প্রাচীন গোত্রের গরিমা নেই তার৷’ তবে দু’পাড়ের বাসিন্দাদের সঙ্গে নদীর সম্পর্ক নিবিড়৷ রবীন্দ্রনাথের বর্ণনায় ‘রাস্তা যেখানে থেমেছে তীরে এসে /সেখানে ও পথিককে দেয় পথ ছেড়ে৷’
কালোঘর
                                                        কালোঘর

দু’ধারের চাষবাস , প্রকৃতিতেও কোপাই -নির্ভরতা দেখেছিলেন রবীন্দ্রনাথ৷ ‘শণের খেতে ফুল ধরেছে একেবারে তার গায়ে গায়ে/জেগে উঠেছে কচি কচি ধানের চারা / ...... অদূরে তালগাছ উঠেছে মাঠের মধ্যে ,/তীরে আম জাম আমলকির ঘেঁষাঘেঁষি৷’
তাহলে আর কি ভাবছেন ? পড়ুন ই না বেরিয়ে..!!
আর হ্যাঁ ! "কাসাহারা"তে খেতে ভুলবেন না !!
(পুনশ্চঃ - ছবিগুলো তোলা হয়েছিল দুবছর আগে পৌষমেলায়। এবছর অতিমারীর কারনে এই পৌষমেলা বাতিল করতে হয়েছে। এর আগেও প্রানের মেলা-পৌষমেলা বাতিল হয়েছে দু-দুবার )


Subir Saha

0 comments:

Post a Comment