বাংলার গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন - গনগনি
একদিকে জঙ্গল আর একদিকে 70ফুট গভীর গিরিখাত।
প্রায় পঞ্চাশটা সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে মনে হলো অজন্তাগুহার সামনে দাঁড়িয়ে আছি।বিকেলের পড়ন্ত রোদে তখন ল্যাটেরাইট মাটির ভূমির ক্ষয়িষ্ণুরূপ আগুন রঙা রূপ ধারণ করেছে।সামনে তখন ইতিহাস,ভূগোল ও পৌরনিক লোককথা যেন মিলেমিশে একাকার।
কথিত আছে মহাভারতের ভীম এখানেই বকাসুরকে বধ করেছিলেন।নদীর ওপারে আছে ভিখনগর।এই শিলাবতীর পাড়ে একজন গ্রামের মানুষকে কাঁদতে দেখে যুধিষ্ঠির তার কান্নার কারন জানতে চান।তখন তিনি বলেন বকাসুর নামে এক রাক্ষস প্রতিদিন একজন করে মানুষকে ভক্ষণ করছে,আজ তার পালা।সেই শুনে রেগে গিয়ে যুধিষ্ঠির ভীমকে পাঠিয়েছিলেন বকাসুরকে বধ করতে। লোকমুখে শোনা যায়,ভীম ও বকাসুরের যুদ্ধের ফলে এই গিরিখাতের সৃষ্টি হয়েছে ।
এতো গেলো লোককথা,এই গিরিখাতের ঐতিহাসিক গুরুত্ব কিছু কম নয়।চুয়ার বিদ্রোহের অন্যতম নায়ক অচল সিং দলবল নিয়ে এখানে আস্তানা গড়েছিলেন।এখান থেকেই তিনি গেরিলা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন ইংরেজদের বিরুদ্ধে।ইংরেজসেনা কামান দেগে শালবন উড়িয়ে দিলেও অচল সিংকে দমন করতে পারেনি।বর্গীর শেষ রাজা ছত্র সিং ইংরেজদের কাছে অচলসিং ও তার সঙ্গীদের ধরিয়ে দেয়।এই গনগনির মাটিতেই তাদের ফাঁসি হয়।
বাস্তবে,সুন্দরী শিলাবতী নদীর জল ও বাতাসের ক্ষয়কার্যের ফলে গঠিত হয়েছে এই নদী উপত্যকা।যান্ত্রিক আবহবিকারের ফলে এই ভুমিরূপ গঠিত হয়েছে।যা মনকে মুগ্ধ করবেই।মনে হয় যেন কোন ভাস্কর তার স্থাপত্যের ছোয়ায় ভাস্কর্য সৃষ্টি করেছে। কাঁকুড়ে মাটির তরঙ্গের সাথে গনগনের হাল্কা প্রবাহ ,তাই নাম গনগনি।গুহার পাশ দিয়ে লাল পাথুরে সরু পথ সাথে ঝোপঝাড় নদীর দিকে চলে গেছে।নদীর ধারে দাঁড়িয়ে সূর্যের পড়ন্ত আলোয় মন ভরে যাবেই- উপত্যকা ও গিরিখাতের রূপ দেখে।যার বর্ণনা করা আমার পক্ষে অসাধ্য।
আমরা বিষ্ণুপুর থেকে গাড়ি নিয়ে গিয়েছিলাম।যাবার পথে জয়পুর জঙ্গলের রাস্তা খুব সুন্দর।দুধারে শালের বন।এছাড়া ট্রেনে গড়বেতা নেমেও অটো ,টোটো বা গাড়ি ভাড়া করে যাওয়া যায়।আমরা বিষ্ণুপুরে ছিলাম।এছাড়া ওখানেও দুটো একটা হোটেল আছে।তবে সূর্যাস্তের সময় গেলে আগুনে লাল রঙের আভা ছড়িয়ে পড়া আলো গিরিখাতের গায়ে দেখা যাবে।সূর্যাস্তের পরিবেশও মনোরম।গাড়ি পার্কিংএর জায়গায় প্রতি চারচাকার গাড়ির জন্য 50/করে লেগেছে।ওখানেও ছোট ছোট খাবার দোকান আছে।
মোটকথা একদিনের ঘোরার জন্য আদর্শ জায়গা বলা যায়।তবে একটা জিনিস খুব খারাপ লাগলো।ওখানে পিকনিক করতে এসে কিছু মানুষ,প্লাস্টিকের প্যাকেট,বোতল,থার্মোকলের থালা ফেলে পরিবেশ দূষণ করছে।স্থানীয় কতৃপক্ষের এব্যাপারে নজর দিয়ে জায়গাটির রক্ষণাবক্ষেণের দায়িত্ব নেওয়া উচিৎ।
গড়বেতাতে কিছু থাকার জায়গা:-
সোনাঝুরি গেস্ট হাউস:-9547514030
শ্রী শ্যামভবন ধর্মশালা :-9740325102
গড়বেতা স্টেশন থেকে অটোতে 500/-550/ নেবে ,পুরো ঘুরিয়ে স্টেশনে পৌছে দেবে।
Rajib Saha
Somnath Saha


















