• Estuary of Teesta and Rangit Rivers

  • Teesta View Point

  • Chatakpur, Darjeeling

  • Chilapata Forest

Wednesday, February 27, 2019

মুকুটমনিপুর(বাঁকুড়া) - Mukutmonipur(Bankura)

 ঝাড়খন্ড সীমান্ত লাগোয়া বাঁকুড়া জেলায় কংসাবতী ও কুমারী নদীর সঙ্গম স্থলে অবস্থিত অতি পরিচিত নাম মুকুট মনি পুর।আপনার ব্যস্তময় জীবনের একঘেয়েমি কাটাতে এখানে হারিয়ে যেতে পারেন দিন দুয়েকের জন্য।

ড্যাম এর একদিকে নীল জল , কোথাও ফুঁড়ে উঠেছে ছোট ছোট টিলা
                                        ড্যাম এর একদিকে নীল জল , কোথাও ফুঁড়ে উঠেছে ছোট ছোট টিলা

ড্যাম : প্রায় 11 কিমি দীর্ঘ এই বাঁধ টিতে গাড়ী বা পায়ে হেঁটে ঘুরে বেড়ান। একদিকে সবুজে মোড়া পাহাড় ও ক্ষেত আরেকদিকে নীল জল আর জল ফুঁড়ে উঠেছে ছোট ছোট টিলা।
সূর্যের সোনালী রঙে এই জলরাশি যখন রেঙ্গে ওঠে তাকিয়ে থাকুন সেদিকে। নৌকা বিহারেও সূর্যাস্তের এই অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন।

মুসাফি রানা : বাঁধ লাগোয়া একটি পাহাড়ের উপর এই ভিউ পয়েন্ট টি।সিমেন্টের সিড়ি বেয়ে উপরে উঠতে হবে টিকিট কেটে। মাশরুম আকৃতির শেডে বসে উপভোগ করুন চোখ জুড়ানো প্রাকৃতিক দৃশ্য কে।

পরেশ নাথ মন্দির :
আরও কিছুটা এগোলে এবার বামদিকে পিতৃ পাহাড়ের উপর এই শিব মন্দির । এই উন্মুক্ত মন্দির স্থানীয়দের কাছে অতি পবিত্র স্থান। আবার অনেকে জৈন সংস্কৃতির নিদর্শন হিসেবেও মনে করেন। এখান থেকেও নিচের মোহনা ও দূরের বন পুকুরিয়া এর দারুন ভিউ পাওয়া যায়।


সোনা ঝুরি প্রকৃতি ভ্রমন কেন্দ্র :
এটি মুকুট মনি পুরে অবস্থিত WBFDC এর একটি নেচার রিসোর্ট। মুকুট মনি পুরে থাকবার একটি আদর্শ জায়গা।শাল ও পিয়ালে ছাওয়া একটি পাহাড়ের বিভিন্ন অংশে বনবিভাগের কটেজ গুলি আপনার মন জয় করে নেবে। আর এখানের হিলটপ থেকে ড্যাম ও চারপাশের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করতে পারবেন ।
(বি: দ্র: - শারীরিক অসুবিধে বা বয়স্ক মানুষ থাকলে বুকিং না করা ভালো)এর ডিটেলস রয়েছে আমাদের ভিডিও তে, দেখতে হলে লিংকে ক্লিক করুন

Koushik Mishra

Monday, February 11, 2019

Silk Route Travel

 আমি চিরকাল যাঁরা tour conduct করেন তাঁদের হিংসে কোরে এসেছি, মনে হতো তাঁরা কি মজাতে সব জায়গায় ঘুরে বেড়াতে পারেন. কিন্তু এবারে সিল্ক রুট ঘুরতে গিয়ে বুঝলাম তাঁদের কাজটা আদপেই সহজ নয়.

সিলারিগাঁও হোমস্টে
                                                                সিলারিগাঁও হোমস্টে

আমি গত ফেব্রুয়ারী মাসের 28 থেকে দোসরা মার্চ জুলুক, সিলারিগাঁও, রিশিখোলা ঘুরে এসেছিলাম. সেবার সেই গ্রুপের মধ্যে সবথেকে adventure প্রিয় ছিলাম আমি, ফলত আমার জন্য মাঝে মাঝেই tension তৈরী হতো.

মেঘলোকের ওপরে..


তারপর lockdownএ প্রায় ঘর বন্দী জীবন, যদিও আমি টুকটাক সফর করার একটা সুযোগও ছাড়িনি. কিছুদিন ধরে আমার কিছু আত্মীয় স্বজন এর সাথে বেড়াতে যাওয়ার পরিকল্পনা চলছিল. তাদেরকে সিল্ক রুটে বেড়ানোর প্রস্তাব দিলে একটু গাঁইগুঁই করে সকলেই রাজি হল.
মেঘলোকের ওপরে..


গতবার যাদের মাধ্যমে ঘুরে ছিলাম সেই দাদাদের শরণাপন্ন হলাম, এবং তাঁরা আশ্বাস দিলেন কোনো চিন্তা নেই সব ঠিক হয়ে যাবে. কিন্তু তাঁরা আশ্বাস দিলেও আমাদের সাথে চারটে বাচ্চা, চারজন কুক্কুট ভক্ষণ করেননা, দুজনের ঠান্ডা লাগার ধাত, এবং প্রত্যেকেই মদামোদপ্রিয়.
কুক্কুট
                                                                        কুক্কুট

ফলত আমি বুঝতে পারছিলাম এরকম একটা 14জনের গ্রুপকে সামলানো মোটেই সহজ হবেনা. তাই বারবার দুই দাদাকে বিভিন্ন প্রশ্ন, আবদার করে জর্জরিত করেছি. তাঁরাও বারবার অভয় দিয়ে গেছেন. এই process চলতে চলতেই আমাদের যাওয়ার দিন এগিয়ে এলো,আমরাও নির্দিষ্ট দিনে দার্জিলিং মেইলে বাক্সপ্যাঁটরা গুছিয়ে উঠে পড়লাম.
নাথাং ভ্যালি
                                                                          নাথাং ভ্যালি

নিউজলপাইগুড়ি থেকে আমাদের সারথি হলেন তেনজিঙ ভাই. সারথি ভালো হলে যুদ্ধ যে অনেকটা সহজ হয়ে যায় এযাত্রায় সেটা আমি খুব ভালোভাবে উপলব্ধি করেছি.
বাবা হরভজন সিং জি
                                                              বাবা হরভজন সিং জি

প্রথমে আমরা পৌঁছালাম সিলারিগাঁও, সেখানে মাউন্টেন ভিউ হোমস্টের সদস্যরা আমাদের স্যানিটাইজার দিয়ে অভ্যর্থনা জানালেন. সেদিন আবহাওয়া মেঘলা থাকার জন্য সবার বহু প্রতীক্ষিত কাঞ্চনজঙ্ঘা আমাদের দেখা দিলেননা.

কাঞ্চনজঙ্ঘা
                                                                                কাঞ্চনজঙ্ঘা 

ইতি মধ্যেই কার রুমে গরম জল চাই, কে চিকেন এর বদলে ডিম খাবে সেসব বুঝিয়ে দেওয়ার পালা শুরু হয়ে গেছিলো. দুপুরের খাওয়ার পর্ব চুকতে বিকেল গড়িয়ে গেলো তাই রামিতি ভিউ পয়েন্টের পথে অল্প হেঁটেই আমাদের ফিরে আসতে হল.
বিখ্যাত রেশমপথ
                                                                        বিখ্যাত রেশমপথ

সন্ধ্যে বেলা চিকেন এবং পমফ্রেট(শিলিগুড়ি থেকে প্যাক করে নিয়ে গেছিলাম) বার্বিকিউ সহযোগে ক্যাম্প ফায়ার এবং হুল্লোড় হল. হোমস্টের পরিচালনা ব্যবস্থা খুব ভালো এবং সবার ব্যবহার খুব আন্তরিক.

রিশি রিভার কটেজ থেকে রিশি নদী..
                                                            রিশি রিভার কটেজ থেকে রিশি নদী..

পরের দিন লুচি তরকারি খেয়ে রওনা দিলাম আমাদের পরের গন্তব্য জুলুকের উদ্দেশ্যে. মাঝে এন্ট্রি পয়েন্ট এবং রংলি বাজারে পারমিটের কারণে একটু সময় লাগলো.

এরপর পাহাড়ের পর পাহাড় পেরিয়ে পৌঁছানো গেলো কিউখোলা ফলস, এখানে কিছুক্ষনের সেলফি বিরতি নিয়ে আমরা যখন জুলুক পৌঁছালাম তখন সূর্য্যদেব বিরক্তিতে রক্ত বর্ণ ধারণ করে পাটে বসতে চলেছেন. আমরা খাওয়া দাওয়া শেষ করতে তিনিও নিদ্রা গেলেন, আর তার সাথে শুরু হল হাড় কাঁপানো ঠান্ডার দাপট. কিভাবে যে শীতকাতুরে সেই সবাইকে তুলে রাতের খাবার খাওয়ানো হয়েছিল সে কেবল আমি জানি.


তারপর রাত্রে -3ডিগ্রির কামড় সহ্য করে সকালে দাওয়াভাই এবং বৌদির নির্ভেজাল সরল আতিথেয়তা(আমরা তাঁদের ঘরের ভেতর ঢুকে উনুন ঘিরে আসর বসিয়ে ফেলেছিলাম) কে বিদায় জানিয়ে রওনা দিলাম কুপুপ এর উদ্দেশ্যে.

আজ সকাল থেকেই ভাগ্য আমাদের ভালো ছিল, গতদিনের মেঘলা ভাব কেটে গিয়ে আজ সূয্যি মামা খোশ মেজাজে ছিলেন. ফলে একটু পর থেকেই কাঞ্চনজঙ্ঘা আমাদের সঙ্গ দিতে থাকলেন. তাঁর অপরূপ রূপ দেখলাম নাথাং ভ্যালি এবং থাম্বি ভিউ পয়েন্ট থেকে. বাবা মন্দিরে বাবার সুস্বাদু প্রসাদ খেয়ে পৌঁছালাম কুপুপ লেক বা এলিফ্যান্ট লেক এ. পুরো রাস্তায় ছড়িয়ে ছিল বরফ,আর বরফ পেয়ে বাচ্চাদের আনন্দ দেখে আমরাও খানিকক্ষণের জন্য শৈশবে ফিরে গেছিলাম. প্রচুর ফটো সেশন এবং বরফ নিয়ে হৈ হুল্লোড় এর পর ফেরার পথ ধরলাম.

আজ রাত্রে আমাদের থাকার ব্যবস্থা ছিল পদমচেন এ. গত রাত্রের দুঃসহ ঠান্ডার পর পদমচেন এর রাত্রিবাস সকলকেই স্বস্তি দিয়েছিলো, তাই সেরাত্রে সবাই বেশ ফুরফুরে মেজাজেই ছিল. আমাদের আতিথেয়তার কোনো ত্রুটি হতে দেননি চাম্বা ভাই তাঁর হোমস্টে তে. এখানে সূর্যাস্তের অপূর্ব দৃশ্য সবার মন ভালো করে দিয়েছিল.

পরের দিনের যাত্রা এই রুটের সব থেকে মজার জায়গা ঋষিখোলার উদ্দেশ্যে. সেখানে রিশি নদীর ধারে মণীকুমারভাইয়ের মনভোলানো হোমস্টে. যেখানে আমাদের গ্রুপের সকল সদস্যই প্রাণ খুলে আনন্দ করেছে.রিশি নদীর ঠান্ডা জলে স্নান করে গরম ভাতের যে কি আনন্দ, সে যাঁরা করেছেন তাঁরাই জানেন. আর হোমস্টের সকলে অত্যন্ত ভালো আর অতিথিপরায়ণ, আমাদের অনুরোধে তাঁরা রিশি নদীর মাছ খাইয়েছেন, রাত্রি পর্যন্ত ক্যাম্প ফায়ার এর আবদার মেনে নিয়েছেন.

পরের দিন ফেরার পালা, রাত্রি 8টার সময় NJP থেকে ট্রেন. তাই সকালে টিফিন টা বাদ দিয়ে একেবারে ভাত খেয়ে বেরোনোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হল, হোমস্টে তে জানিয়ে দিতেই তাঁরা সঙ্গে সঙ্গে রাজি হলেন. তেনজিং আর খালিঙ দুই সারথির রথে আমরা সওয়ার হলাম.

এই যাত্রায় আমি যেহেতু পুরোনো পথিক এবং আমার মাধ্যমেই ব্যবস্থাপনা হয়েছিল, তাই সব ব্যাপারেই সবাই আমার উপর নির্ভর করেছে. এবং দায়িত্ব সামলে সবাই আনন্দ পাওয়াতে আমিও শেষ পর্যন্ত নিশ্চিন্ত হয়েছি. যাঁরা আমাদের সঙ্গে না থেকেও আমাদের ট্যুর টাকে গুছিয়ে দিয়েছেন সেই দুই দাদা গৌচ এবং শা.আ. কে অসংখ্য ধন্যবাদ.

অবশেষে শেষ হল বেড়ানোর পালা, পাহাড় থেকে বিদায় নেওয়ার সময়টা খুব কঠিন হয়ে দাঁড়ায়. তবু ফিরে না গেলে ফিরে আসাও যে আর হবেনা..

Durgasankar Chatterjee