আজ 8 ই নভেম্বর, সকাল সকাল ঘুমটা ভেঙে গেল। রিসর্টের জানালা দিয়ে দেখলাম গরুমহিষানী পাহাড়ের শ্রেণীর ওপর সূর্যের আলো যেন ঝলমল করছে । বেরিয়ে এলাম বারান্দায়। সূর্যের আলোয় চারপাশের রূপ যেন ফেটে পড়ছে।
তাড়াতাড়ি প্রস্তুত হয়ে চলে এলাম রিসর্টের রেস্টুরেন্টে । আলু পরোটা আর গরম গরম চা দিয়ে ব্রেকফাস্ট টা দারুন হলো। শুরু করে দিলাম দ্বিতীয় দিনের যাত্রা। চললাম ভ্রমণ কুণ্ড-এর দিকে। আবার সেই দুপাশে পর্বতের সারি আর জঙ্গলের পথ।
সন্ধ্যেবেলা যেটাকে খুব গ্লুমি মনে হচ্ছিল আজ তার রূপ অবর্ণনীয় হয়ে উঠেছে। এগিয়ে চললাম ভ্রমণ কুন্ডের দিকে। একটা ভাঙাচোরা ব্রিজ দিয়ে বুড়িবালাম পেরিয়ে আবার এক নতুন পথ ধরলাম। এখানে জঙ্গল যেন আরো ঘন। মাঝে মাঝে দু-একটা আদিবাসী বাড়ি ।
রাস্তায় দেখতে পেলাম আদিবাসী বাচ্চারা খেলা করছে আর মেয়েরা গৃহকর্মে নিযুক্ত। যেতে যেতে আমরা এটাই আলোচনা করছিলাম এরা সকাল-বিকেল কত সুন্দর সৌন্দর্যই না দেখতে পায়। কিন্তু পরমুহুর্তেই ভাবলাম শুধু সৌন্দর্য দিয়ে তো আর পেট ভরে না । এদের জীবন যাপনের পদ্ধতি এতটাই কঠিন যে আমরা তা কল্পনাও করতে পারি না।
ইলেকট্রিসিটি নেই, মোবাইলের টাওয়ার পর্যন্ত নেই। না আছে ভালো পানীয় জলের ব্যবস্থা । তার মধ্যেই চলেছে এদের জীবন সংগ্রাম । চলেছি জঙ্গলের মধ্য দিয়ে । চারপাশ নাম-না-জানা পাখির কলকাকলিতে পরিপূর্ণ । একটা জায়গাতে নদীর একটা চমৎকার ভিউ পেলাম। একটু দাঁড়িয়ে আবার এগিয়ে চললাম। যদিও গুগল ম্যাপ দেখাচ্ছিলো বাংড়িপোসি থেকে এটা 22 কিলোমিটার ,কিন্তু প্রায় 30 কিলোমিটার পর পৌঁছলাম ভ্রমণ কুন্ডে।
আর পৌছেই একরাশ মুগ্ধতা আমাদের ঘিরে ধরল। ছোট্ট একটা টিলার ওপর থেকে জল ঝাঁপিয়ে পড়ছে আর তাতেই সৃষ্টি হয়েছে এই কুন্ডের। জল এতটাই স্বচ্ছ, যে মাটি অব্দি পরিষ্কার দেখা যায় । চারপাশে পাথরের স্তুপ। সে এক চমৎকার দৃশ্য ।
আমরা নিজেদেরকে রেসিস্ট করতে পারলাম না । জুতো খুলে নেমে পড়লাম জলে। শুনেছিলাম ভ্রমণ কুন্ডের জলে স্নান করলে নাকি পাপ ক্ষয় হয় । পাপ ক্ষয় হল কিনা জানিনা, কিন্তু ওই জনে আমাদের মন প্রাণ জুড়িয়ে গেল ।
আর কুন্ডের জলে অসংখ্য বড় বড় মাছ । স্থানীয় লোকদের কাছে শুনলাম ,ওই মাছগুলি নাকি ভগবানের নামে উত্সর্গীকৃত । কুন্ডের চারপাশের পরিবেশ জাস্ট অসাধারণ। মনে মনে ভাবছিলাম, এখানে ক্যাম্পিং করতে পারলে দারুন হত ।
ওখানকার ওই সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে সূর্য উঠে এল মাথার ওপর। এবার ফেরার পালা। আবার সেই জঙ্গল ,আবার সেই পাহাড়, আবার সেই বুড়িবালামের তীর, চললাম রিসর্টের দিকে। স্নান সেরে, লাগেজ নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম।
গতকালের মত আজও লাঞ্চটা দারুন হলো। বিল মিটিয়ে, সিমিলিপাল রিসর্ট কে বিদায় জানিয়ে, ধরলাম বাড়ি ফেরার পথ। মনের মধ্যে রইল একরাশ মুগ্ধতা আর পরিপূর্ণ স্মৃতি। আসার পথে মুখ ঘুরিয়ে বলে এলাম, ভালো থেকো সুন্দরী বাংড়িপোসি, আবার আসিব ফিরে ।।!!

















