• Estuary of Teesta and Rangit Rivers

  • Teesta View Point

  • Chatakpur, Darjeeling

  • Chilapata Forest

Wednesday, August 11, 2021

ম্যাকলস্কিগঞ্জ, ভারতের মিনি লন্ডন - McCluskieganj, Jharkhand

 ছোটবেলায় ঋজুদার সাথে ও কৈশোরে বুদ্ধদেব গুহর সাথে বার বার করে ঘোরা -ম্যাকলস্কিগঞ্জ।উচ্চমাধ্যমিকের সিলেবাসে থাকা 'পালামৌএর পথে'তো অনেকেরই পড়া।

যেখানে নির্জন রেলস্টেশনে দাঁড়িয়ে কান পাতলে এখনো মনে হয় খোঁড়া প্যাটের ক্র্যচের শব্দ বা শাল মহুয়ার জঙ্গলে দাঁড়িয়ে মনে হয় ওইদূরে কোন সাহেব ঘোড়ায় চড়ে বন্দুক কাঁধে শিকারে চলেছে টগবগিয়ে।বড়ই প্রাণের জায়গা-এখানে প্রকৃতি যেন কথা বলে নিজের ছন্দে।রুক্ষ্ম ল্যাটেরাইট মাটির নালিক্ষয়সহ প্রকৃতির বুকে সবুজের সমারোহ।সাথে ছোট ছোট নদী ও পাহাড়।এই রূপ দেখে মুগ্ধ হয়ে সাথে খনিজ সম্পদের টানে ম্যাকলস্কি সাহেব রাঁচির রাতুর রাজার থেকে,রাঁচি থেকে 67কিমি দূরে দশ হাজার একর জমি লিজ নিয়েছিলেন এবং প্রায় তিনশো আংলো ইন্ডিয়ান পরিবারকে নিয়ে এখানে আংলো ইন্ডিয়ান জনপদ গড়ে তুলেছিলেন।যদিও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে কর্মবিমুখ ইংরেজ আর এখানে থাকেনি।তাদের আস্তানা বিক্রি করে যে যার দেশে পাড়ি দেন।কিছু আংলো পরিবার থেকে যায় জায়গাটিকে ভালোবেসে আর কিছু বাঙালিবাবু এখানে কিছু বাংলো কিনে নেয়।আগের বার স্টেশনে গিয়ে ফলবিক্রেতা কিটি ম্যামের সাথে দেখা হয়েছিল,এখন তিনি অসুস্থ শুনলাম।আগের বার অপর্না সেনের বাড়ি এখানে দেখে গিয়েছিলাম,এবার শুনলাম সেটা বিক্রি হয়ে গেছে।এখনও পথের ধারে জীর্ণ বাংলোগুলোর সামনে দাঁড়ালে মনে হয় এখানে কতো আলো ঝলমলে পরিবেশ ছিল একসময়,কান পাতলে যেন শোনা যাবে কোন ব্রিটিশ রমণীর পিয়ানোর শব্দে আকাশ বাতাস মুখরিত হয়ে উঠেছে।



                                                                    ডোগাডুগি নদী

আমরা ছিলাম শহরের একপ্রান্তে শালবনে ঘেরা রানা'জ কান্ট্রি কটেজে।রানা দম্পতি নেপাল রাজপরিবারের মানুষ।মি:রাণার বাবা কর্নেল ছিলেন,চাকরির সুবাদে এখানে থাকতে এসে জায়গাটাকে ভালবেসে এখানেই থেকে গিয়েছেন।তাদের আন্তরিক ব্যবহার মুগ্ধ করার মতই।মিসেস রানা বিশুদ্ধ বাংলায় কথা বলতে পারেন।পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ,সুসজ্জিত কটেজের পরিবেশ মুগ্ধ করবেই।আগের বার জর্ডনে ছিলাম।কিন্তু ম্যাকলস্কিগঞ্জে রাণা'জ কটেজ বেস্ট বলতে পারি।সাথে কর্মীদের সুন্দর ব্যবহার।খাবারের কথা যতো বলবো ততটাই কম বলা হবে।আমার মতো পেটুকরা শুধু খেতেই এখানে বারবার আসতে পারেন।



আমরা 6জন কলিগ সাথে দুটো বাচ্চাকে নিয়ে দোলের আগের দিন হাওড়া রাঁচি স্পেশ্যাল ট্রেনে রাত দশটা দশে রওনা দিয়ে পরেরদিন ভোর পাঁচটা চল্লিশে রাঁচি পৌঁছই।কটেজ থেকে দুটো বোলেরো গাড়ি এসে স্টেশনে দাঁড়িয়েছিল।আমরা ম্যাকলস্কিগঞ্জ পৌঁছে যাই সকাল সাড়ে সাতটায়,তবে বেলা সাড়ে নটার পর লু বইবে,বাইরে বেরোনো যাবে না কোনোভাবেই।আমরা তাই দুটো অটো বুক করে বেরিয়েছিলাম বিকেল সাড়ে তিনটের পর ।বেরিয়ে দেখে নিলাম বসন্তে শুকিয়ে যাওয়া ডোগাডুগি ও চাট্টি নদী,দুপাশে শালবন চিড়ে যাওয়া রাস্তা দিয়ে পড়ন্ত বিকেলের রোদে প্রাণ জুরিয়ে যাওয়া প্রাকৃতিক শোভা-'জাগৃতি বিহার' ।দেখতে দেখতে হারিয়ে গিয়েছিলাম সত্যি।বসন্তে প্রকৃতি এখানে তার রঙ্গিন রূপে নিজেকে সাজিয়ে প্রাণবন্ত করে তুলেছে।সেই শোভা মন ক্যামেরায় বন্দী করে রেখেছি,যতোই ক্যামেরা বন্দী থাকুক হৃদয়ের ক্যামেরা তখন পরিপূর্ণ।



পলাশ,শাল,পিয়াল,মহুয়া,কৃষ্ণচূড়া সহ আরো নাম না জানা ফুল পথের ধারে অতি অনাদরেও নিজেদের সাজিয়ে তুলেছে।সাথে দুল্লি গ্রামে সর্ব ধর্ম সমন্বয় দেখলাম।মন্দির-মসজিদ-গির্জা-গুরুদ্বার পাশাপাশি অবস্থান করছে।বর্তমান সমাজ যখন পরস্পরের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানছে ,দলাদলি চলছে,সেই পরিস্থিতিতে এখানে দাঁড়িয়ে মন শ্রদ্ধায় ভরে গেলো।এরপর সেই হেরিটেজ স্টেশন,হলুদের ওপর কালো দিয়ে লেখা-Mccluskiegunj।দাঁড়াতেই নস্টালজিক হয়ে পড়লাম।প্যাটের সেই কথা মনে পড়ে গেল
"যেসব লোক অন্যের করুণার উপর ভর করে বাঁচে, তারা দশটা পা থাকলেও চলতে পারে না। আই অ্যাম হ্যাপি দ্যাট আই ক্যান ম্যানেজ উইদাউট এনিবডি'জ হেল্প।"

                                                                            নতুন চার্চ


স্টেশনে অনেকক্ষণ বসে থাকার পর কটেজে ফিরলাম।পরের দিন ঝাড়খণ্ডে হোলির জন্য কোথাও বেড়ানো যাবে না,তাতে কি?আমাদের কটেজটাই তো অসাধারণ একটা স্পট।ভোরবেলা 'চোখ গেলো'পাখির ডাকে ঘুম ভেঙে শাল বনের সামনে দাঁড়িয়ে বুদ্ধদেব গুহর বিখ্যাত লাইন মনে পড়ে গেল 'একটু উষ্ণতার জন্য’র সেই বিখ্যাত ভাষ্য-
“এই জায়গাটায় সকাল হয় না, সকাল আসে। অনেক শিশিরঝরানো ঘাসে ভেজা পাহাড়ি পথ মাড়িয়ে, অনেক শঙ্খিনী নদী পেরিয়ে সোনা-গলানো পোশাক পরে সকাল আসে এখানে।”



সাথে বসন্ত বৈরী,কোকিল আরও নাম না জানা শত শত পাখির ডাক।এরপর সারাদিন আমরাও হোলির রঙে মেতে উঠলাম।বাচ্চারা কটেজের চারটি জার্মান শেফার্ডের সাথে সখ্যতা করে নিলো।পরদিন ব্রেকফাস্ট করে বিদায় জানালাম সাধের ম্যাকলস্কিগঞ্জকে।ফেরার সময় দুপুর পৌনে দুটোর রাঁচি-হাওড়া শতাব্দীতে হাওড়া পৌঁছেছি রাত সোয়া নটায়।
হোটেলে আমরা 6বেডরুম ঘর নিয়েছিলাম,যদিও দুজন ছোটসহ আমরা আটজন ছিলাম।6/7তিনটে খাটে কোন অসুবিধা হয়নি।ঘরে এসি না থাকলেও ফ্যান চালালে চাদর গায়ে দিতে হয়েছে দুপুরেও।যেখানে বাইরে তখন লু বইছে।আর রাতে ফ্যান বন্ধ করে চাদর মুড়ি দিয়ে শুতে হবে।যার ভাড়া 3000/প্রতিদিন আর খেতে লেগেছে 700দিন/জনপ্রতি।খাবারে কি না ছিল...ব্রেকফাস্টে আলু পরোটা,টক দই,ছোলার ঘুগনি,লাঞ্চে একদিন চিকেন,একদিন মাছ সাথে ডাল,ভাজা,সব্জি,চাটনি হোলির দিন মিষ্টিও ছিল।আর সন্ধ্যেবেলা চিকেন পকোড়া ও রাতে একদিন চিকেন,ফ্রায়েড রাইস ও একদিন মটন ও রাইস দিয়েছে।আমরা দুটো বোলেরো গাড়ি নিয়েছিলাম যাতায়াতের জন্য,কারণ রাঁচিতে 7সিটার গাড়িতে 6জনের বেশি ওঠার অনুমতি নেই।একেক পিঠের ভাড়া প্রতি গাড়ি পিছু 2100/(with AC)।সমস্ত ছবির সাথে ক্যাপশন দেওয়া রইলো।



                                                                রানা'জ কন্ট্রি কটেজ


নিচে প্রযোজনীয় কিছু তথ্য দিলাম:-
রানা'জ কন্ট্রি কটেজ:-
ম্যানেজার ইউসুফ (যাকে মুশকিল আসান বলা যায়,যখন যা চেয়েছি সঙ্গে সঙ্গে হাজির)-9534034936
বোলেরো ড্রাইভার আলম-9534122772
অটো ড্রাইভার সাদ্দাম-7667935225

Suneeta Saha