সত্যি বলতে কোনো রকম প্ল্যানিং ছাড়া বেরিয়ে পড়তে আমার খুউব ই ভালো লাগে ।এই করোনা এর চক্করে পড়ে আমার ট্রেক টাও হচ্ছে না ,তাই এই মুহুর্তে যখন আমি বাড়িতে তখন ছোট করে একটা লং ড্রাইভে এ বেরিয়ে পড়লে মন্দ হয় না।


রাত তখন ১০ টা বাজে।হেমা ( আমার স্ত্রী) কে বললাম চলো অযোধ্যা পাহাড় টা ঘুরে আসি ।তুমি অনলাইন এ হোটেল টা বুক করো।একটু নেট এ ঘাটাঘাটি করতে কুশল পল্লি রিসোর্ট টা মনে ধরলো। আর কি ,দুজনে দুটো বাগপ্যাক আর এক সেট জমা কাপড় ,আর পুচকুটার ( আমার পোলা অর্ণব- সাড়ে চার বছর) কে বগল দাবা করে ভর সাতটায় গাড়ি স্টার্ট দিলাম।বলতে ভুলে গেছি যে আমার বাড়ি বারাকপুর এ।বলি ব্রিজ টা পাস করতে করতে জয় মা করে ডান কুনি দিয়ে লেফট মারলাম । এই রোড টা বেশ ভালো।Dankuni মার্কেট এর ভিড় টা পেরোলে রাস্তা ভালই ।হেমা কয়েকটা স্যান্ডউইচ নিয়ে এসেছিল ,সেটা মেরে দিলাম। অর্ণব জাস্ট চোখ খুললো।আমি আরো কিছুটা গিয়ে বনলতা রিসোর্ট এর সামনে একটু চা খেয়ে নিলাম তারপর জয়পুর ফরেস্ট এর মধ্যে দিয়ে গাড়ি চললো।তখন সবে পলাশ ফুল ফোটা শুরু করেছে যদিও আমরা পথে সেরকম পলাশ দেখতে পেলাম না । ব্যারাকপুর থেকে অযোধ্যা পাহাড় মোটামুটি ২৯০ কিমি।পথের বিবরণ আর তেমন দিলাম না ।


যাই হোক দুপুর দুটো নাগাদ দুর থেকে পাহাড় দেখে মন টা নিচে উঠলো । কুশল পল্লী রিসোর্ট টা খুজে পেতে বেগ পেতে হলো না, বেশ সাজানো গোছানো, লোকে বেশ সময় কাটাতে ও আসে । সবুজ ঘাস এর খোলা প্রাঙ্গণ, শাল পিয়াল এ ঘেরা অনেক গুলো কটেজ আছে ,একটা প্রাকিতিক ছোট্ট ঝিল ও আছে এটায়।সব মিলিয়ে বেশ মনোরম। মুশকিল হলো মাত্র এক দিন এর প্ল্যান এ এসেছিলাম। জাস্ট একটু ফ্রেশ হয়েই গাড়ি টা নিয়ে বেরিয়ে পরলাম আপার ডাম এন্ড লোয়ার ডাম দেখতে।তখন বিকেল, সন্ধে নামবে নামবে । আপার ডাম প্র্যায় ফাকা। তোবে সন্ধে বেলায় ওই নিস্তব্দ প্রকৃতি টা অনুভব করা টা বেশ লাগলো।যাই হোক পুরো অন্ধকার নামার আগে লোয়ার ডাম টা দেখার জন্য বেরিয়ে পরলাম।ভালো লাগলো পথ টা চলতে। সন্ধ্যায় গাড়ির হেড লাইট জ্বালিয়ে পাহাড় এর আকা বাঁকা পথে চলতে কার না ভালো লাগে ।উপড়ি পাওনা ঘরে ফেরা পাখি আর ঝিঝির ডাক।যাই হোক সেদিন আর কিছু দেখা হলো না ।তবে রাতের অন্ধকারে অযোধ্যা পাহাড় এর জঙ্গলে গাড়ি চালাবার আলাদা আনন্দ আছে বৈকি।

পরদিন সকালে গেলাম ময়ুর পাহাড়। মার্বেল রক ।এটা বেশ সুন্দর ।মার্বেল খাদান এ একটা লেক হয়ে গেছে।মন্দ নয় দেখতে ।তার পরে গেলাম বামনি ফলস এ।সকাল সকাল গেছিলাম বলে লোক বেশ কম ই ছিলো। তাই ঝর্নার ধরে একাকী বসবার সুযোগ পেয়েছিলাম। পুরুলিয়া আসবো আর মুখোশ তৈরি দেখবো না ! আবার গাড়ি ছুটলো চারীদা গ্রাম এর দিকে। দেখলাম কারিগর রা তাদের সুদক্ষ হাত এ মুর্তি গুলো জীবন্ত করে তুলছে । ফিরে এলাম রিসোর্ট এ। এবার ফেরার পালা। রিসোর্ট থেকে চেক আউট করে বেরিয়ে পরলাম।রাস্তায় বড় একটা গাছ এর নিচে গাড়ি টা দার করলাম।না বাড়ি যেতে একদম ই মন চাইছে না ।
হেমা অর্ণব দুই জন ই আমার মুখের দিকে তাকিয়ে। এত জলদি আমাদের সফর শেষ হয়ে যাবে এটা ওরা বিশ্বাস ই করতে চাইছিল না।
আমিও একটু হেসে বললাম হেমা দেখো তো বুদ্ধগয়া তে হোটেল ফাঁকা আছে কিনা।
হেমা চিৎকার করে বলে উঠলো হিপ হিপ হুররে।।।।
Timir Baran Biswas