২০১২ সালের মার্চ মাসে এই গ্রামটির পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় সৌন্দর্য দেখে দাঁড়িয়ে পড়েছিলেন মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজের মোবাইলে ছবিও তুলে নেন বেশ কয়েকটি। ধুপি আর পাইনে ঘেরা লামাহাট্টা এমনই বহু প্রকৃতি প্রেমিকে আকর্ষণ করে আসছে তার সৌন্দর্যের মুগ্ধতায়। পরবর্তীতে রাজ্য সরকার এবং স্থানীয় মানুষদের সহযোগিতায় আজ লামাহাট্টা বাংলার মানচিত্রে এক দূর্দান্ত টুরিস্ট ডেস্টিনেশন। লামা কথার অর্থ বুদ্ধিস্ট মঙ্ক আর হাট্টা কথার অর্থ হাট বা ঘর।
লামাহাট্টার উচ্চতা ৫৭০০ ফুট, দার্জিলিং শহর থেকে ২৩ কিমি দূরে দার্জিলিং-কালিম্পং হাইওয়ের এর নিকটে এই অপূর্ব জনপদটি অবস্থিত। এখানে মূলত ভুটিয়া, শেরপা, ইয়ালমোস, তামাং, দুকপা প্রজাতির মানুষদের বাস। চাষ-আবাদ এবং পশুচারণ এই মূলত তাদের জীবিকা যদিও বর্তমানে টুরিস্ট স্পট হিসাবে লামাহাট্টার পরিচিতি হওয়াতে গ্রামের মানুষরাই হোমস্টে তৈরী করে অতিথি সেবার মাধ্যমেও জীবিকা নির্বাহ করছেন। লামাহাট্টার এই ইকো হাউসের ঘরে বসেই দেখা মিলবে বাঙালী ট্রাভেলারদের অতি প্রিয় কাঞ্চনজঙ্ঘার। তাছাড়া সামনের সুইমিং পুলে নেমে রিলাক্স করতে করতেও দেখতে পারেন কাঞ্চনকে। প্রকৃতির কাছাকাছি নিরিবিলিতে কাটানোর ঠিকানা খুঁজছেন যারা তাদের জন্য এই ছোট্ট পাহাড়ী জনপদটি আদর্শ হতে পারে।
প্রকৃতির ইকোলজিকাল ব্যালেন্স ও বায়োডাইভার্সিটি কে নষ্ট না করে এখানে বানিয়ে তোলা হয়েছে রোড সাইড গার্ডেন, বিভিন্ন প্রজাতির অর্কিড দেখতে পাবেন এখানে। চমৎকার সুন্দর এই গার্ডেনটিতে ঢুকতে লাগে ১০/- টাকা। পাইনের ছায়ায় কোনো প্রিয়জনের পাশে বসে পাহাড়ের মাঝে এমন সুন্দর বাগানটির সৌন্দর্যের স্বাদ নিতে নিতে আপনি হারিয়ে যাবেন কোন অজানা আস্তানায়। বাগানের এক ধারে প্রেয়ার ফ্ল্যাগ এর সারিও মন কাড়বে আপনার। এই প্রেয়ার ফ্ল্যাগের মধ্যে দিয়ে বয়ে যাওয়া ঠান্ডা বাতাসে আপনার মন হবে স্নিগ্ধ। এই বাগানটিতেই একটি 'মাচান' বা উডেন টাওয়ার রয়েছে, যা থেকে কোন পরিস্কার দিনে আপনি নামচি, দার্জিলিং, টাইগার হিল এবং কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে পাবেন। সবমিলিয়ে লামাহাট্টাযর অনুভুতি বহুদিন অবধি আপনার মনে দাগ কেটে থাকবে।
কাছেপিঠে দর্শনীয়:
রোডসাইড গার্ডেন বা লামাহাট্টা পার্ক এর কথা আগেই বলেছি এছাড়া একটি ছোট পথ লামাহাট্টা থেকে হিলটপ এ চলে গেছে যেখানে আপনি দেখা পাবেন ছোট্ট একটি লেকের। স্থানীয়দের কাছে লেকটি পবিত্র। পাইনে ঘেরা আরেকটি পথ লামাহাট্টা থেকে ৮কিমি ট্রেক করে যাওয়া যায় তাকদা পর্যন্ত। এছাড়া তাকদা অর্কিড সেন্টার এবং গাড়িদন্ডা ফোর্ট ও ঘুরে আসতে পারেন দিনে দিনেই। এছাড়া লামাহাট্টার কাছেই গ্লেনবার্ণ টি এস্টেট, রোংলি রাংলিয়ট টি এস্টেট, তাকদা টি এস্টেট ইত্যাদি টি এস্টেট গুলিও দেখবার মতো। লামাহাট্টা থেকে মাত্র ৮ কিমি দূরে পেশক ভিউ পয়েন্ট যেখান থেকে তিস্তা এবং রংগীতের সঙ্গম দেখতে পাবেন যা ত্রিবেণী নামে পরিচিত। এককথায় এর সৌন্দর্য অসাধারণ। এছাড়া কেভ টেম্পল এবং লামাহাট্টার মনাস্ট্রী টিও পাঁয়ে হেঁটেই ঘুরে দেখে নিন। এক কথায় দুদিনের এক চমৎকার ডেস্টিনেশন লামাহাট্টা।
নিউ জলপাইগুড়ি থেকে দূরত্ব- ৭০ কিমি, যেতে সময় লাগে তিন ঘন্টা।
নিউ জলপাইগুড়ি থেকে গাড়ী ভাড়া -৩৫০০/- টাকা
ইকো হাউসের খরচ-
ডাবল বেড- ৪,৫০০/- ( দুজনের সমস্ত মিল সহ)
টুইন রুম- ৫,৫০০/- ( দুজনের জন্য সমস্ত মিল সহ)
কটেজ- ৬,৫০০/- (দুজনের সমস্ত মিল সহ)
*একস্ট্রা পার্সন- ১৪০০/- জনপ্রতি।
+91 6291538880












0 comments:
Post a Comment