আমরা তিন বন্ধু মিলে ঘুরে এলাম অন্যতম বিখ্যাত একটি স্থান মায়াপুর, শ্রী চৈতন্যের শহর নবদ্বীপ এর প্রতিবেশী শহর এবং সেখান থেকে বেরিয়ে ঘুরে এলাম চুপি কাষ্ঠশালী পাখিরালয়, পূর্বস্থলী। আজ একই দিনে এই দুটি জায়গা ঘুরে এলাম। অভিজ্ঞতা সত্যিই অসাধারণ। এত ভালো কাটলো দিনটা, বলে বোঝানোর নয়।
তো সকাল সকাল উঠে একদম ফ্রেশ হয়ে, কফির কাপে চুমুক দিয়ে বেরিয়ে পড়লাম স্টেশনের উদ্দেশ্যে। সেখান থেকে আমরা তিন বন্ধু মিলে, হাওড়া কাটোয়া লোকাল ধরে নেমে পড়লাম সোজা বিষ্ণুপ্রিয়া হল্ট স্টেশনে। সেখানে নেমে একটা 'Mandatory Selfie' তুলে রওনা দিলাম খেয়াঘাটে যাওয়ার জন্য। বিষ্ণুপ্রিয়া হল্ট স্টেশনের সামনেই টোটোর ঝাঁক। সেখান থেকে একটা টোটো করে পৌঁছে যাওয়া যাবে খেয়াঘাটে। ভাড়া নেবে মাত্র ১০ টাকা মাথা পিছু। খেয়াঘাটে পৌঁছে আগে গরম চা এর কাপে চুমুক দিলাম আর তারপর সেরে নিলাম টিফিন পর্ব। পাশেই কচুরি মিষ্টির দোকান। খেয়ে দেয়ে লঞ্চের টিকিট করে আমরা সোজা উঠে পড়লাম লঞ্চে। লঞ্চের ভাড়া মাথা পিছু ৭ টাকা। রওনা দিলাম মায়াপুর এর উদ্দেশ্যে। লঞ্চে এক অসাধারণ অভিজ্ঞতার সাক্ষী হলাম। গঙ্গার ঘোলা মাটি জল থেকে রওনা হয়ে, লঞ্চটি পড়লো জলঙ্গির একদম সবুজ জলে। যেখানে দুটো জল মেশে না। দুটোকে আলাদা ভাবে দেখা যায়। সে এক অপরূপ দৃশ্য। যা ব্যক্ত করা যায় না ভাষায়। তো ৫-৬ মিনিট পর পৌঁছলাম মায়াপুর এর ঘাটে। সেখানে লঞ্চ থেকে নেমেই, খেয়াঘাট থেকে বেরোতেই পেয়ে গেলাম সামনেই বাস, মনে হলো অপেক্ষা করছে যেনো আমাদেরই জন্য। (ওখানেই মায়াপুর বাসস্ট্যান্ড) সেখান থেকে বাসে করে পৌঁছে গেলাম ইসকন মন্দিরে। ১০ মিনিটের বাস পথ। ভাড়া নেবে বাসে মাথা পিছু ৭ টাকা।
সেখানে গিয়েই আগে টোকেন করে নিলাম একটা ৫০ টাকার মহাপ্রসাদ থালির। সেই থালি তে থাকবে সাদা ভাত, ডাল, ফুলকপির রোস্ট, চানা পনির, বেগনি, পায়েস। যা দেওয়া শুরু হবে দুপুর ১২:৩০ থেকে। তখন বাজে ৯:৩০ টা সকাল। তো আমাদের হাতে অনেকটা সময়। আমরা ভেতরের সবটা ঘুরে এলাম। দর্শন করলাম সব কিছুর। তাও দেখালাম হাতে তখনও ২ ঘণ্টা বাকি।
খোঁজ পেলাম একটা অপূর্ব সুন্দর জায়গার ইসকন মন্দির থেকে ৩-৪ কিলোমিটার দূরে, "বল্লার ঢিপি"। সময় নষ্ট না করে চলে গেলাম সেখানে। একটা টোটো করলাম। মাথা পিছু ১০ টাকা করে নিল। সেখানে গিয়ে আগে ফটোশুট টা সেরে নিলাম আমরা। সেখান থেকে বেরিয়ে আবার একটা টোটো করে ফিরে এলাম ইসকন মন্দিরে। সময় হয়ে এসেছে মহাভোগের। চলে গেলাম হেঁটে গীতা ভবনে, ইসকনের ভেতরেই। সেখানে কয়েকশো লোক একসাথে বসে। কুপন জমা দিয়ে, আমরাও যোগ দিয়ে দিলাম এবং ভোগ আসার অপেক্ষা করলাম। সেখান থেকে খেয়ে বেরিয়ে সোজা চলে এলাম ইসকনের গেটের বাইরে এবং ফিরে এলাম বিষ্ণুপ্রিয়া হল্ট স্টেশনে। মায়াপুর ভ্রমন শেষ করলাম।
বিষ্ণুপ্রিয়া হল্ট থেকে কাটোয়া গামি একটি ট্রেন ধরলাম দুপুর ২:৩০ টের সময় এবং নামলাম দুটো স্টেশন পড়ে পূর্বস্থলী স্টেশনে। সেখান থেকে টোটো করে চলে গেলাম "চুপি কাষ্ঠশালী পাখিরালয়ে"। টোটো তে মাথা পিছু ভাড়া পড়বে ২০ টাকা করে। সেখানে গিয়ে রিসোর্টে কিছুটা সময় কাটিয়ে, সেখানে নৌকা ভ্রমণ করে (১৫০ টাকা নেবে, ১ ঘণ্টা ভ্রমণ করাবে), কিছু সুন্দর মুহূর্ত এবং সুন্দর জায়গা ক্যামেরাবন্দি করে রওনা হলাম আবার পুর্বস্থলী স্টেশনের দিকে। সেখান থেকে সন্ধের কাটোয়া হাওড়া গামী ট্রেন ধরে পৌঁছে গেলাম আমরা বাড়ি।
এক কথায় অনবদ্য কাটলো আজকের দিনটা। ছুটি টা খুব enjoy করলাম আজকের। আবারো কোনো একদিন ফিরে যাবো এখানে।



























