বলা হয়ে থাকে কলকাতায় পার্ক কালচার আসে ব্রিটিশদের হাত ধরেই। সেসব আজকের কথা নয়। ফোর্ট উইলিয়ামের পার্শ্ববর্তী স্থানে গড়ে ওঠে কলকাতার অন্যতম প্রাচীন দুই পার্ক।
একটি কার্জন পার্ক নামে বিখ্যাত ও অপরটি ইডেন গার্ডেন। ইডেন গার্ডেন নামের সঙ্গে কেবল কলকাতা নয়, পরিচিত এই বিশ্বের অনেক মানুষই। অথচ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামটির নাম ইডেন গার্ডেন রাখা হয় পার্শ্ববর্তী পার্কের নামে। একথা অনেকেই জানেন না। ১৮৩৬ সাল থেকে ১৮৪২ সাল পর্যন্ত ভারতের গভর্নর জেনারেল ছিলেন লর্ড অকল্যান্ড। তাঁরই মস্তিষ্কপ্রসূত এই বাগান।তিনি কলকাতার সংস্কৃতি সম্বন্ধে জানতে ও এখানকার শিল্পের ব্যাপারে ভীষণই উৎসাহী ছিলেন। এসবের বাইরেও উৎসাহ ছিল গাছ ও বাগানে। বোনেদের কলকাতায় থাকাকালীনই তাই ইডেন গার্ডেন তৈরির কাজে উদ্যোগ নেন জর্জ ইডেন (লর্ড অকল্যান্ড)। বিখ্যাত আর্কিটেক্ট ক্যাপ্টেন ফিজগেরাল্ডের তত্ত্বাবধানে ও নকশায় এই বাগানের কাজ সম্পূর্ণ হয় ১৮৪০ সালে। অকল্যান্ড সার্কাস গার্ডেন নামক এই বাগান অবশেষে ইডেন বোনেদের স্মৃতিতে নাম নেয় ইডেন গার্ডেন এবং বাগানে প্রবেশ অবাধ করে দেওয়া হয় সাধারণ মানুষের জন্য।
এবার আসা যাক বার্মিজ প্যাগোডাটির কথায়। যাঁরা একবার হলেও গেছেন এই বাগানে নিশ্চয় লক্ষ্য করেছেন এই অদ্ভুত সুন্দর প্যাগোডাটিকে। গড়ন দেখলেই বোঝা যায় এটি খাপ খায় না কলকাতার সঙ্গে। অথচ এই বাগানের বললে ভুল হবে প্রায় সমগ্র কলকাতার অন্যতম আকর্ষণ এই বার্মিজ প্যাগোডাটি।
বাগানের উত্তরাংশে এক উপদ্বীপের মাঝে দাঁড়িয়ে এই প্যাগোডা। প্রায় তিনদিকে জল দিয়ে ঘেরা সেই উপদ্বীপ। ১৮৫২ সালে বার্মার প্রোম নামক জায়গায় তৈরি এই সুসজ্জিত প্যাগোডা। প্রোমের গভর্নর মাউং হনন এর বিধবা স্ত্রীর উদ্যোগে তৈরি এই প্যাগোডা গড়ে উঠতে সময় নেয় তিন মাস। সমস্ত কাঠের কাজ মিলিয়ে খরচা হয় ১৫০০ টাকার মতো।
১৮৫৩ সালে লর্ড ডালহৌসি প্রোম নগরী ঘুরতে যান। ব্রিটিশদের দখলে তখন প্রোম। ডালহৌসির ভীষণভাবে পছন্দ হয় এই প্যাগোডা এবং তিনি সিদ্ধান্ত নেন এটিকে কলকাতায় সরিয়ে আনার। এরপরই খুলে ফেলা হয় এই প্যাগোডা এবং ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির জাহাজ ‘সোয়ে গং’-এ করে হুগলিতে এসে পৌঁছায় সেপ্টেম্বরের ২৯ তারিখ, ১৮৫৪ সালে।
প্রাথমিকভাবে ফোর্ট উইলিয়ামের ভিতর জায়গা পেলেও পরে সরিয়ে আনা হয় ইডেন গার্ডেনে। ১৮৫৬ সালে ইডেন গার্ডেনে বারো জন বার্মিজ শিল্পী তিনমাস ধরে জুড়ে দাঁড় করান এই প্যাগোডাকে। এবং সাকুল্যে খরচা হয় ৬০০০ টাকা।
পার্কটি প্রতিদিন ই খোলা থাকে সকাল ১২:৩০ থেকে বিকেল ৫ টা অব্দি।
লেখক--Akash Ganguly
ছবি--১৬/১২/২০২০











