ড্রাইভার দাদা আগের দিন রাতেই inform করেছিলেন ভোর থাকতেই বেরোতে হবে। কারণ বেলা যতই বাড়তে থাকে gurudongmar লেকের আবহাওয়া পরিস্থিতি ততই খারাপ হতে থাকে। সেজন্য আমরা রাত তিনটের সময় উঠে পড়েছিলাম। সবার রেডি হয়ে বেরোতে বেরোতে চারটে বাজলো।
ছোট্ট শহর lachen ছেড়ে আমাদের গাড়ি gurudongmar লেক এর দিকে এগিয়ে চলল। হ্যা আমরা কিন্তু কেউ হোটেলের রুম তালাদিলাম না।লাচুংয়েও একই রকম ছিল আসলে এরা চুরি জিনিসটা কি বোধয় শিখে ওঠেনি আমাদের এখানকার মত। কিছুটা এগোতেই বুঝতে পারলাম রাস্তা খুবই খারাপ আর চড়াই উৎরাই। শুধুমাত্র গাড়ীর ইন্জিন এর শব্দ আর বহু নিচে তিস্তার উপনদী লাচুংয়ের( যেটা ভুটানের Donga range থেকে উৎপত্তি) বয়ে চলার শব্দ ছাড়া তখনও পুরো পাহাড় ঘুমিয়ে আছে। আসলে দিনের বেলাও এখানে খুব বেশি কোলাহল হোয় বলে মনে হলনা।
চারদিকে অন্ধকার, হেড লাইটের আলো ছাড়া আর কোনো আলোর উৎস নেই। তখনো দুচোখ জুড়ে ঘুম, আসলে ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস তো নেই 8 টার আগে ,অসমান রাস্তায় গাড়ির ঝাকুনিতে মাথা ঠুকে ঘুম ভেঙে যাচ্ছে বার বার। সাড়ে চারটে বা 5 টা ঠিক মনে নেই ঐরকম সময় আস্তে আস্তে বাইরে আলোর রেখা দেখলাম ।শ্বেত শুভ্র স্নিগ্ধ বরফে মোড়া পাহাড়ের চূড়া গুলো যেন আলতো চোখ মেলে আকাশ পানে চেয়ে আছে আসলে বোধয় ওরাও আমার মত ঘুম কাতুরে। কিছুটা এগোতে দেখলাম পাহাড় চুড়ার বরফের সঙ্গে রোদের অপুর্ব রঙেরখেলা। Thangu পৌঁছে আমরা চা খেলাম। ড্রাইভার দাদা বেশি সময় দাঁড়াতে রাজি হলেন না অগত্যা আমাদের যাত্রা আবার শুরু হলো।
আঁকাবাঁকা চড়াই-উৎরাই রাস্তায় চলতে চলতে হঠাৎ খেয়াল করলাম পাহাড় থেকে ছোট ছোট যে জলের ধারা গুলো রাস্তায় নেমে এসেছে রাতের ঠান্ডায় সেগুলো জমে বরফে পরিণত হয়েছে আর গাড়ির চাকা পড়ার সঙ্গে সঙ্গে বরফের টুকরো গুলো দুদিকে ছিটকে যাচ্ছে বর্শা র ফলার মত। উচু থেকে নিচের রাস্তা গুলো ছবিতে দেখা জিগজ্যাগ ভালির রাস্তার সঙ্গে মিল পাচ্ছিলাম। রাস্তার পাশে যেখানে একটু সমতল জমি আছে সেখানে দেখছিলাম ইয়াক বাধা আছে ঠিক যেমন আমাদের গ্রামাঞচলে খুঁটিতে গরু বাধা থাকে। সকালের আলোয় খাদের ওপারের পাহাড় গুলোর বরফ এত সাদা লাগছিলো দেখে মনে হচ্ছিল কে যেনো পাহাড়ের গায়ের মাঝে মধ্যে সাদা চুনকাম করে গেছে। দুপারের alpain আর নামনা জানা বেগুনি ঘাসফুলের এর রূপে মোহিত হয়ে চলতে থাকলাম আমরা। আটটার মধ্যে gurudongmar lake এর আগের আর্মি ক্যাম্পে চলে আসলাম।এখান থেকে মাত্র পাঁচ কিলোমিটার দূরে ইন্দো-চায়না(তিব্বত) border।
মিলিটারি ক্যাম্পে already armyder তৎপরতা শুরু হয়েছে। সবাই কে না ছুটে হাঁটতে দেখলাম হয়ত উচ্চতার কারণে। এত উচ্চতায় এমনিতেই শ্বাস প্রশ্বাসের কষ্ট। প্রয়োজনীয় চেকিং সেরে আমদের গাড়ি একটু এগোতেই ,"যাহা দেখিলাম তা জন্ম জন্মান্তরে ও ভুলিবো না" যেন লাদাখের দৃশ্য দেখতে পেলাম ।পুরো অঞ্চল জুড়ে গাছপালার চিহ্নমাত্র নেই যতদূর চোখ যায় উচ্চ মালভূমি আর দূরে গাড়ো নীল আকাশ। প্রকৃতি পরম যত্নে যেনো ছবি একেছে তার ক্যানভাসে। যেন তার বহুদিনের সাধনার ফসল এই ছবি। চোখ ধাঁধানো সৌন্দর্য। কোন কোন পাহাড়ের চূড়া বরফে মোড়া কোনটা আবার পুরো নাড়া। এই দৃশ্যগুলো আসলে ভাষা দিয়ে ঠিক বোঝানো যায় না শুধুই অনুভব করা যায়। বারেন ল্যান্ডের যে এত রূপ থাকতে পারে না দেখলে বিশ্বাস হয় না। এত নীল পরিষ্কার আকাশ আগে দেখিনি। যাই হোক অবশেষে লেকে পৌছালাম আমরা ।
গাড়ি থেকে নেমে যান শক খেলাম এত ঠান্ডা ! Zero te snow থাকলেও তাপমাত্রা এত ঠান্ডা ছিল না। লেকের কিছুটা অংশ বাদে বাকিটা বরফ জমা। কেউ যেনো সাদা চাদর বিছিয়ে রেখেছে লেক জুড়ে। লেকের পাশে মনেস্ট্রি যদিও ভেতরটা শিখ গুরুদ্দয়ার এর মত দেখতে। আসলে এরও একটা ইতিহাস আছে শিখ রেজিমেন্ট ১৯৯৬- ৯৭ এ এখানে গুরুদ্দোয়ার স্থাপন করেন যেহেতু তাদের বিশ্বাস গুরু নানক এই অঞ্চল দিয়ে একসময় যাত্রা করেছিলেন। এই ঘটনায় সিককিমিজ রা খুদ্ধ হন কারণ তাদের বিশ্বাস এটি তাদের অর্থাৎ বৌদ্ধ দের পবিত্র স্থান।শেষে সিকিম সরকার এ ব্যাপারে উচ্চ কমিটি গঠন করেন তাদের দেওয়া রিপোর্টে এর ভিত্তিতে স্থানীয় দের দাবি মেনে নেওয়া হয় এবং ইন্ডিয়ান আর্মি ২০০১ সালে এই কনস্ট্রাকশন টিকে লাচেন মনাস্ট্রি ক হ্যান্ড over করে। Lachen মনাস্ট্রী একজন লামা নিযুক্ত করে লেক দেখাশোনার জন্যে। এই লেক এর পরিধি 5.34 কিমি কিন্তু হিলি topography জন্য অতটা অতোটা বড় দেখায় না।
হিমবাহের জল এই গুরুদাম্বার লেক কে পরিপুষ্ট করে রেখেছে,আবার পরোক্ষ ভাবে তিস্তার জলের ধারার অন্যতম উৎস এই লেকের জল। লেকের পাড় দিয়ে বরফ ঢাকা পাহাড় চূড়া।Gurudongmar lake এমন একটি হ্রদ যা হিন্দু বৌদ্ধ এবং শিখ 3 ধর্মের মানুষের কাছে পবিত্র। কথিত আছে , যেহেতু লেকের উপরিভাগ প্রায় সারাবছর বরফে জমে থাকে সেহেতু এই হ্রদের জল ব্যাবহার করা যেত না এবং স্থানীয় অধিবাসীদের পানীয় জলের খু্ব কষ্ট ছিল প্রাচীন কালে। অষ্টম শতাব্দী তে গুরু পদ্মসম্বাবা তথা গুরু Rinpoche যখন তিব্বত থেকে ফেরার সময় এখান দিয়ে যাচ্ছিলেন তখন স্থানীয়রা গুরুদেব কে তাদের কষ্টের কথা জানান এবং তিনি তাদের সাহায্যের জন্যে রাজি হন।তার হাতের লাঠির ছোঁয়ায় লেকের একটা অংশের বরফ গলিয়ে দেন এবং সেখান থেকেই লেকের ঐ অংশ শীতকালেও জমে না। স্থানীয় দের বিশ্বাস লেকের জল পান করলে সুস্থ থাকা যায়।
অন্য লোকগাথা আছে যে গুরু পদমাসাম্ভাবা এই হ্রদ কে খুবই শুভ লক্ষণ হিসেবে দেখেন এবং বর্তমান সিকিম তৎকালীন দেমজাং এ প্রবেশেকরেন।আমার তাড়াতাড়ি ফেরার কোনো ইচ্ছা ছিল না কিন্তু আমাদের সহযাত্রীদের একজনের শ্বাসকষ্ট শুরু হওয়ায় বেশিক্ষণ আর থাকতে পারলাম না ।
আর হ্যাঁ লেক থেকে অদ্ভুত গম্ভীর আওয়াজ শুনতে পাচ্ছিলাম গুম গুম করে আমাদের ড্রাইভার দাদা ব্যাপারটা রহস্যজনক ধর্মীয় ব্যাপার এর সঙ্গে জড়িয়ে দিয়েছিলেন যদিও পরে জানলাম ওটা বরফ ভাঙ্গার শব্দ আর হ্যাঁ ইন্ডিয়ান army ওখানে যে ক্যান্টিন চালায় সেটা সম্ভবত পৃথিবীর উচ্চতম ক্যান্টিন ।ফ্রী তে সবার জন্যে চায়ের ব্যাবস্থা এছাড়াও পকৌড়া কিছু স্ন্যাকস খুব সস্তায় পাওয়া যায়। ( Thank u Indian army)। ইচ্ছা রইল আবার আসবো বার বার আসবো এই সৌন্দর্যের মায়া জগতে।(২০১৭ সালের ঘুরতে যাই উইকিপডিয়া থেকে কিছু তথ্য সংগ্রহ করা একটি ছবি সিকিম tourism websiteথেকে নেওয়া)
Pranab Sana













